পাতা:গল্পগুচ্ছ (দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৪১: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
আফতাব বট (আলোচনা | অবদান)
পাইউইকিবট স্পর্শ সম্পাদনা
পাতার অবস্থাপাতার অবস্থা
-
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়নি
+
মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে
শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):শীর্ষক (অন্তর্ভুক্ত হবে না):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{rh|২৫২|গল্পগুচ্ছ|}}
পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):পাতার প্রধান অংশ (পরিলিখিত হবে):
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
{{gap}}তাহারা সখীর পীড়া আশঙ্কা করিয়া মাকে ডাকিয়া আনিল। মা আসিয়া কহিলেন, “বিন্দু, কী হয়েছে মা, এখনও দ্বার বন্ধ কেন!”
২৫২ গল্পগুচ্ছ

তাহারা সখীর পীড়া আশঙ্কা করিয়া মাকে ডাকিয়া আনিল। মা আসিয়া কহিলেন, “বিন্দ, কী হয়েছে মা, এখনও বার বন্ধ কেন!”
বিন্ধ্য উচ্ছসিত অশ্র সম্বরণ করিয়া কহিল, "একবার বাবাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসো।”
{{gap}}বিন্ধ্য উচ্ছ্বসিত অশ্রু সম্বরণ করিয়া কহিল, “একবার বাবাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসাে।”

মা অত্যন্ত ভীত হইয়া তৎক্ষণাৎ রাজকুমারবাবকে সঙ্গে করিয়া বারে আসিলেন। বিন্ধ্য বার খালিয়া তাঁহাদিগকে ঘরে আনিয়া তাড়াতাড়ি বন্ধ করিয়া দিল ।
{{gap}}মা অত্যন্ত ভীত হইয়া তৎক্ষণাৎ রাজকুমারবাবুকে সঙ্গে করিয়া দ্বারে আসিলেন। বিন্ধ্য দ্বার খুলিয়া তাঁহাদিগকে ঘরে আনিয়া তাড়াতাড়ি বন্ধ করিয়া দিল।
তখন বিধ্য ভূমিতে পড়িয়া তাহার বাপের পা ধরিয়া বক্ষ শতধা বিদীণ করিয়া কাঁদিয়া উঠিয়া কহিল, “বাবা! আমাকে মাপ করো, আমি তোমার সিন্ধক হইতে টাকা চুরি করিয়াছি।”

তাহারা অবাক হইয়া বিছানায় বসিয়া পড়িলেন। বিন্ধ্য বলিল, তাহার স্বামীকে বিলাতে পাঠাইবার জন্য সে এই কাজ করিয়াছে।
{{gap}}তখন বিন্ধ্য ভূমিতে পড়িয়া তাহার বাপের পা ধরিয়া বক্ষ শতধা বিদীর্ণ করিয়া কাঁদিয়া উঠিয়া কহিল, “বাবা! আমাকে মাপ করাে, আমি তােমার সিন্ধুক হইতে টাকা চুরি করিয়াছি।”
তাহার বাপ জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমাদের কাছে চাহিস নাই কেন ।” বিন্ধ্যবাসিনী কহিল, “পাছে বিলাত যাইতে তোমরা বাধা দেও।” রাজকুমারবাব অত্যন্ত রাগ করিলেন। মা কাঁদিতে লাগিলেন, মেয়ে কাঁদিতে লাগিল এবং কলিকাতার চতুদিক হইতে বিচিত্র সরে আনন্দের বাদ্য বাজিতে লাগিল । যে বিন্ধ্য বাপের কাছে কখনো অথ* প্রাথনা করিতে পারে নাই এবং যে সন্ত্রী স্বামীর লেশমাত্র অসন্মান পরমাত্মীয়ের নিকট হইতেও গোপন করিবার জন্য প্রাণপণ করিতে পারিত, আজ একেবারে উৎসবের জনতার মধ্যে তাহার পত্নী-অভিমান, তাহার দহিতৃসম্প্রম, তাহার আত্মমর্যাদা চণ হইয়া প্রিয় এবং অপ্রিয়, পরিচিত এবং অপরিচিত সকলের পদতলে ধলির মতো লাণ্ঠিত হইতে লাগিল। পাব হইতে পরামর্শ করিয়া, ষড়যন্ত্রপবক চাবি চুরি করিয়া, সীর সাহায্যে রাতারাতি অথঅপহরণ-পবেক অনাথবন্ধ বিলাতে পলায়ন করিয়াছে, এ কথা লইয়া আত্মীয়কুটশৈবপরিপণ বাড়িতে একটা ঢী ঢৗ পড়িয়া গেল। বারের নিকট দাঁড়াইয়া ভুবন কমল এবং আরও অনেক স্বজন প্রতিবেশী দাসদাসী সমস্ত শনিয়াছিল। রন্থদ্বার জামাতৃগহে উৎকণ্ঠিত কতগিহিণীকে প্রবেশ করিতে দেখিয়া সকলেই কৌতুহলে এবং আশঙ্কায় ব্যগ্র হইয়া আসিয়াছিল।

বিন্ধ্যবাসিনী কাহাকেও মুখ দেখাইল না। বার রন্ধ করিয়া অনাহারে বিছানায় পড়িয়া রহিল। তাহার সেই শোকে কেহ দুঃখ অনুভব করিল না। ষড়যন্ত্রকারিণীর দণ্টেবধিতে সকলেই বিক্ষিমত হইল। সকলেই ভাবিল, বিন্ধ্যর চরিত্র এতদিন অবসরাভাবে অপ্রকাশিত ছিল। নিরানন্দ গহে পাজার উৎসব কোনো প্রকারে সম্পন্ন হইয়া গেল ।
{{gap}}তাঁহারা অবাক হইয়া বিছানায় বসিয়া পড়িলেন। বিন্ধ্য বলিল, তাহার স্বামীকে বিলাতে পাঠাইবার জন্য সে এই কাজ করিয়াছে।

{{gap}}তাহার বাপ জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমাদের কাছে চাহিস নাই কেন।”

{{gap}}বিন্ধ্যবাসিনী কহিল, “পাছে বিলাত যাইতে তােমরা বাধা দেও।”

{{gap}}রাজকুমারবাবু, অত্যন্ত রাগ করিলেন। মা কাঁদিতে লাগিলেন, মেয়ে কাঁদিতে লাগিল এবং কলিকাতার চতুর্দিক হইতে বিচিত্র সুরে আনন্দের বাদ্য বাজিতে লাগিল।

{{gap}}যে বিন্ধ্য বাপের কাছে কখনাে অর্থ প্রার্থনা করিতে পারে নাই এবং যে স্ত্রী স্বামীর লেশমাত্র অসম্মান পরমাত্মীয়ের নিকট হইতেও গােপন করিবার জন্য প্রাণপণ করিতে পারিত, আজ একেবারে উৎসবের জনতার মধ্যে তাহার পত্নী-অভিমান, তাহার দুহিতৃসম্ভ্রম, তাহার আত্মমর্যাদা চূর্ণ হইয়া প্রিয় এবং অপ্রিয়, পরিচিত এবং অপরিচিত সকলের পদতলে ধূলির মতাে লুণ্ঠিত হইতে লাগিল। পূর্ব হইতে পরামর্শ করিয়া, ষড়যন্ত্রপূর্বক চাবি চুরি করিয়া, স্ত্রীর সাহায্যে রাতারাতি অর্থ-অপহরণ-পুর্বক অনাথবন্ধু বিলাতে পলায়ন করিয়াছে, এ কথা লইয়া আত্মীয়কুটুম্বপরিপূর্ণ বাড়িতে একটা ঢী ঢী পড়িয়া গেল। দ্বারের নিকট দাঁড়াইয়া ভুবন কমল এবং আরও অনেক স্বজন প্রতিবেশী দাসদাসী সমস্ত শুনিয়াছিল। রুদ্ধদ্বার জামাতৃগহে উৎকণ্ঠিত কর্তাগৃহিণীকে প্রবেশ করিতে দেখিয়া সকলেই কৌতুহলে এবং আশঙ্কায় ব্যগ্র হইয়া আসিয়াছিল।

{{gap}}বিন্ধ্যবাসিনী কাহাকেও মুখ দেখাইল না। দ্বার বন্ধ করিয়া অনাহারে বিছানায় পড়িয়া রহিল। তাহার সেই শোকে কেহ দুঃখ অনুভব করিল না। ষড়যন্ত্রকারিণীর দুষ্টবুদ্ধিতে সকলেই বিস্মিত হইল। সকলেই ভাবিল, বিন্ধ্যর চরিত্র এতদিন অবসরা-ভাবে অপ্রকাশিত ছিল। নিরানন্দ গৃহে পূজার উৎসব কোনাে প্রকারে সম্পন্ন হইয়া গেল।
{{nop}}

০৫:১৯, ২৪ জুলাই ২০১৯ তারিখে সংশোধিত সংস্করণ

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫২
গল্পগুচ্ছ

 তাহারা সখীর পীড়া আশঙ্কা করিয়া মাকে ডাকিয়া আনিল। মা আসিয়া কহিলেন, “বিন্দু, কী হয়েছে মা, এখনও দ্বার বন্ধ কেন!”

 বিন্ধ্য উচ্ছ্বসিত অশ্রু সম্বরণ করিয়া কহিল, “একবার বাবাকে সঙ্গে করে নিয়ে এসাে।”

 মা অত্যন্ত ভীত হইয়া তৎক্ষণাৎ রাজকুমারবাবুকে সঙ্গে করিয়া দ্বারে আসিলেন। বিন্ধ্য দ্বার খুলিয়া তাঁহাদিগকে ঘরে আনিয়া তাড়াতাড়ি বন্ধ করিয়া দিল।

 তখন বিন্ধ্য ভূমিতে পড়িয়া তাহার বাপের পা ধরিয়া বক্ষ শতধা বিদীর্ণ করিয়া কাঁদিয়া উঠিয়া কহিল, “বাবা! আমাকে মাপ করাে, আমি তােমার সিন্ধুক হইতে টাকা চুরি করিয়াছি।”

 তাঁহারা অবাক হইয়া বিছানায় বসিয়া পড়িলেন। বিন্ধ্য বলিল, তাহার স্বামীকে বিলাতে পাঠাইবার জন্য সে এই কাজ করিয়াছে।

 তাহার বাপ জিজ্ঞাসা করিলেন, “আমাদের কাছে চাহিস নাই কেন।”

 বিন্ধ্যবাসিনী কহিল, “পাছে বিলাত যাইতে তােমরা বাধা দেও।”

 রাজকুমারবাবু, অত্যন্ত রাগ করিলেন। মা কাঁদিতে লাগিলেন, মেয়ে কাঁদিতে লাগিল এবং কলিকাতার চতুর্দিক হইতে বিচিত্র সুরে আনন্দের বাদ্য বাজিতে লাগিল।

 যে বিন্ধ্য বাপের কাছে কখনাে অর্থ প্রার্থনা করিতে পারে নাই এবং যে স্ত্রী স্বামীর লেশমাত্র অসম্মান পরমাত্মীয়ের নিকট হইতেও গােপন করিবার জন্য প্রাণপণ করিতে পারিত, আজ একেবারে উৎসবের জনতার মধ্যে তাহার পত্নী-অভিমান, তাহার দুহিতৃসম্ভ্রম, তাহার আত্মমর্যাদা চূর্ণ হইয়া প্রিয় এবং অপ্রিয়, পরিচিত এবং অপরিচিত সকলের পদতলে ধূলির মতাে লুণ্ঠিত হইতে লাগিল। পূর্ব হইতে পরামর্শ করিয়া, ষড়যন্ত্রপূর্বক চাবি চুরি করিয়া, স্ত্রীর সাহায্যে রাতারাতি অর্থ-অপহরণ-পুর্বক অনাথবন্ধু বিলাতে পলায়ন করিয়াছে, এ কথা লইয়া আত্মীয়কুটুম্বপরিপূর্ণ বাড়িতে একটা ঢী ঢী পড়িয়া গেল। দ্বারের নিকট দাঁড়াইয়া ভুবন কমল এবং আরও অনেক স্বজন প্রতিবেশী দাসদাসী সমস্ত শুনিয়াছিল। রুদ্ধদ্বার জামাতৃগহে উৎকণ্ঠিত কর্তাগৃহিণীকে প্রবেশ করিতে দেখিয়া সকলেই কৌতুহলে এবং আশঙ্কায় ব্যগ্র হইয়া আসিয়াছিল।

 বিন্ধ্যবাসিনী কাহাকেও মুখ দেখাইল না। দ্বার বন্ধ করিয়া অনাহারে বিছানায় পড়িয়া রহিল। তাহার সেই শোকে কেহ দুঃখ অনুভব করিল না। ষড়যন্ত্রকারিণীর দুষ্টবুদ্ধিতে সকলেই বিস্মিত হইল। সকলেই ভাবিল, বিন্ধ্যর চরিত্র এতদিন অবসরা-ভাবে অপ্রকাশিত ছিল। নিরানন্দ গৃহে পূজার উৎসব কোনাে প্রকারে সম্পন্ন হইয়া গেল।