পোকা-মাকড়/পঞ্চম শাখার প্রাণী/জোঁক: সংশোধিত সংস্করণের মধ্যে পার্থক্য

উইকিসংকলন থেকে
বিষয়বস্তু বিয়োগ হয়েছে বিষয়বস্তু যোগ হয়েছে
"{{শীর্ষক | শিরোনাম = ../../ | লেখক = জগদানন্দ রায় | অনুবাদক = |..." দিয়ে পাতা তৈরি
 
সম্পাদনা সারাংশ নেই
 
১ নং লাইন: ১ নং লাইন:
<pages index="পোকা-মাকড়.pdf" from=114 to=118 header=1/>
{{শীর্ষক
| শিরোনাম = [[../../]]
| লেখক = জগদানন্দ রায়
| অনুবাদক =
| অনুচ্ছেদ = পঞ্চম শাখার প্রাণী, জোঁক
| আদ্যক্ষর =
| পূর্ববর্তী = [[../পরাশ্রিত অকেজো প্রাণী/]]
| পরবর্তী = [[../ক্রিমি/]]
| বছর =
| টীকা =
| প্রবেশদ্বার =
}}

<pages index="পোকা-মাকড়.pdf" from=114 to=118/>
{{page break|label=}}

১২:৩৯, ১৭ জুলাই ২০২১ তারিখে সম্পাদিত সর্বশেষ সংস্করণ

জোঁক

 জোঁক হয় ত তোমরা অনেকেই দেখিয়াছ। জলে কখনো কখনো ভিজে মাটিতে ও গাছপালায় ইহারা থাকে। কি বিশ্রী প্রাণী! ইহাদের দেখিলেই লোকে দূরে পালাইয়া

চিত্র ১৮—জোঁক

যায়। গরু-বাছুর কুকুর-শিয়ালেরাও ইহাদের ভয় করে। বড় বড় প্রাণীর গরম রক্ত জোঁকের প্রিয় খাদ্য। কিন্তু এ-রকম খাবার সকল সময়ে জোটে না, কাজেই অন্য জিনিস খাইয়া তাহাদের বাঁচিয়া থাকিতে হয়। ছোট মাছ, গুগ্‌লি, এবং শামুক ছোট পোকা জোঁকের প্রধান খাদ্য। শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য ইহাদের দেহে বিশেষ যন্ত্র নাই। কেঁচোরা যেমন গায়ের চামড়া দিয়া বাতাসের অক্সিজেন চুষিয়া লয়, ইহারাও তাহাই করে এবং শরীর হইতে লালার মত জিনিস বাহির করিয়া চামড়া ভিজে রাখে। কিন্তু কেবল লালায় গা ভিজে থাকে না; এজন্য ডাঙার জলা জায়গায় জোঁক থাকে। খট্‌খটে শুক্‌নো ডাঙায় রাখিলে জোঁক বাঁচে না।

 এখানে জোঁকের একটা ছবি দিলাম। চিৎ করিয়া ফেলিয়া শরীরটাকে লম্বালম্বি চিরিলে, জোঁককে যে-রকম দেখায়, ছবিটি সেই রকম করিয়া আঁকা আছে। ইহাদের

চিত্র-১৯।

দেহে স্নায়ুগুলি কি-রকমে সাজানো আছে, ছবি দেখিলেই তাহা বুঝিতে পারিবে। দেহে এক জোড়া স্নায়ু মাঝামাঝি দিয়া লেজ হইতে মাথা পর্য্যন্ত উঠিয়াছে। তা ছাড়া প্রত্যেক স্নায়ু হইতে ছোট ছোট শাখা স্নায়ু বাহির হইয়া সমস্ত শরীরকে আচ্ছন্ন রাখিয়াছে। ডাইনে স্নায়ুর সজ্জা যে রকম, বাম দিকে অবিকল সেই রকম।

 প্রত্যেক শাখায় যে এক একটা মোটা রকমের অংশ দেখিতেছ,—উহাকে স্নায়ু-গ্রন্থী অর্থাৎ স্নায়ুর গাঁট বলে। কেঁচোর দেহেও এই রকম গ্রন্থী আছে। স্নায়ুর কাজ কি, তাহা তোমরা আগে শুনিয়াছ,—ইহা টেলিগ্রাফের তারের মত খবর বহিয়া লইয়া যায়। গাঁটগুলি যেন সেই টেলিগ্রাফের ছোট আফিস্। এই সব আফিস্ হইতে ছোট ছোট সূতা দিয়া সর্ব্বাঙ্গের মাংসপেশীতে খবর পাঠানো হয় এবং সেই খবর জানিয়া জোঁকেরা নড়াচড়া করে। দেশে অনেক টেলিগ্রাফ আফিস্ থাকিলে সকলের উপরে একটা হেড আফিস্ রাখা হয়। জোঁকের শরীরের স্নায়ু দিয়া যে টেলিগ্রাফ চলে তাহারো একটা হেড-আফিস্ আছে। জোঁকেরা মাথায় কতকগুলি স্নায়ুর সূতা তাল পাকাইয়া হেড্ আফিসের সৃষ্টি করিয়াছে। বড় বড় প্রাণীদের মাথায় যে মস্তিষ্ক আছে ইহা তাহারি অঙ্কুর।

 যাহা হউক, মাথার হেড আফিস্ ছোট ছোট আফিস্‌গুলিতে হুকুম চালায় এবং ছোট আফিস্ সেই হুকুম সর্ব্বত্র প্রচার করে। কিন্তু তাই বলিয়া ছোট আফিস্‌গুলি একেবারে পরাধীন নয়। দরকার হইলে হেড আফিসের হুকুম না লইয়াই তাহারা স্নায়ুর উপরে নিজেদের হুকুম চালায়। ছুরি দিয়া যদি জোঁকের দেহ দুই ভাগে ভাগ করা যায়, তবে লেজের অংশ মাথার অংশ হইতে পৃথক হইয়াও কিছুক্ষণ নড়চড়া করে। লেজের অংশে জায়গায় জায়গায় যে স্নায়ুর গাঁট আছে, তাহাই হুকুম চালাইয়া লেজ নাড়ায়। এই জন্য মস্তিষ্কশূন্য হইয়াও জোঁকেরা কিছুক্ষণ জীবিত থাকে।

 স্নায়ুর গাঁটের এই কাজটা কেঁচো হইতে আরম্ভ করিয়া উই, পিঁপ্‌ড়ে, মশা, মাছি প্রভৃতি অনেক প্রাণীতেই দেখা যায়। কেঁচো ও জোঁকের শরীরে ইহার আরম্ভ-মাত্র হইয়াছে। প্রাণীরা যেমন ধাপে ধাপে উন্নত হইয়া পড়িয়াছে, ইহাদের শরীরের স্নায়ুর কাজও তেমনি সুন্দর হইয়াছে।

 জোঁকের স্নায়ুর কথা বলিতেই অনেক সময় কাটিয়া গেল। এখন ইহাদের অন্য কথা বলিব। ছবিতে দেখ,—জোঁকের মুখ ও পিছন দুই দিকেই দু’টা মোটা ফাঁক আছে। কিন্তু পিছন দিক্ দিয়া ইহারা রক্ত চুষিয়া খাইতে পারে না। জোঁকের পিছন দিক্‌টা দেখিতে একটি বাটির মতো, ভিতরের সঙ্গে তাহার যোগ নাই। ইহা দিয়া মাটি আট্‌কাইয়া তাহারা চলিয়া বেড়ায়। মুখের চোয়ালে তিন সারি করাতের মত ধারালো দাঁত আছে; তাহা দিয়া ইহারা শিকারের গায়ের চামড়া কাটিয়া ছিদ্র করে। তার পরে শরীটাকে এমন করিয়া বাঁকায় যে, তাহা আংটির মত গোলাকার হইয়া পড়ে। ইহার পরে মুখ দিয়া সেই কাটা ঘা হইতে জোরে রক্ত চুষিতে আরম্ভ করে। রক্ত খাইলে তাহাদের দেহটা রবারের মত ফাঁপিয়া মোটা হইয়া পড়ে। কেঁচোর চোখ নাই, ইহা তোমরা আগে শুনিয়াছ; ইহারা মাটির তলায় অন্ধকারে থাকে, কাজেই চোখের দরকারও হয় না। কিন্তু জোঁকের মাথার উপরে দশবারোটা করিয়া ছোট চোখ আছে।

 ডিম হইতে জোঁকের বাচ্চা হয়। শরীর হইতে আঠার মত এক রকম লালা বাহির করিয়া ইহারা তাহারি মধ্যে ডিম পাড়ে। ইহাতে ডিমে ও গায়ের রসে জড়ানো এক রকম গুটি তৈয়ার হয়। এইগুলি জোঁকেরা বিল বা পুকুরের কাদার মধ্যে ফেলিয়া রাখে। কিছুদিন পরে ডিম ফুটিলে তাহা হইতে জোঁকের ছোট বাচ্চা বাহির হয়।

 ছিনে জোঁক তোমরা দেখিয়াছ কি? আমাদের দেশের যে-সব জায়গা নীচু ও জলা, সেখানে ডাঙায় এই জোঁক দেখা যায়। ইহারা এক ইঞ্চি বা দেড় ইঞ্চির বেশি লম্বা হয় না। ছোট গাছপালা বা ঘাসের উপরে ইহারা শিকারের জন্য প্রতীক্ষা করিয়া বসিয়া থাকে; শিকার দেখিলেই দৌড়িয়া তাহার গায়ের রক্ত চুষিতে আরম্ভ করে। ইহাদের পা নাই তাহা তোমরা জান,—অথচ দৌড়ানো চাই। ইহাদের দৌড়ানোর উপায় বড় মজার। কেঁচো যেমন দেহকে সঙ্কুচিত ও প্রসারিত করিয়া ছুট্ দেয়, ইহারা তাহা পারে না। প্রথমে মুখ দিয়া ইহারা জোরে মাটি চাপিয়া ধরে। তার পরে লেজটা মুখের কাছে আনিয়া শরীরটাা ধনুকের মত বাঁকাইয়া ফেলে। ইহার পর লেজের সেই বাটির মতো মুখ দিয়া মাটি চাপিয়া আসল মুখটা আগাইয়া দেয়। এই রকমে শরীরটাকে একবার বাঁকা এবং একবার সোজা করিতে করিতে যেখানে ইচ্ছা সেখানে যাইতে পারে।