বেল্লিক রামায়ণ/পিরীতের জমাট হওন
অথ পিরীতির জমাট হওন।
একদিন দুই দিন এমনি করিয়ে।
বেল্লিক করয়ে যাতায়াত প্রীত হয়ে॥
কত মজা পায় মনে লিখনে কি যায়।
বেল্লিকে বেল্লিক প্রেম-জমাটি বাধায়॥
প্রত্যহ সন্ধ্যার কালে যাইত যে আগে।
সকল সময় এবে পূর্ণ অনুরাগে॥
দিন নাই রাত নাই সদা আনাগোনা।
খাওয়া দাওয়া আদি হয় সব খানা॥
কায়েতের ছেলে হয়ে রাঁড়ের বাড়ীতে।
কাড়িল গে হাঁড়ি মহা আনন্দিত-চিতে॥
মনে করে ইহা হতে কিবা ভাগ্য আর।
একমাত্র সার এই মধ্যে দুনিয়ার॥
যাবত জীবন রবে রবো এই স্থানে।
এমন সুখের স্থান আছে কি ভুবনে॥
হায় রে কলির লেখা-পড়া শিক্ষা-ফল।
পরিণামে ভস্ম মাত্র লাভ যে কেবল॥
আগে আগে মূর্খেতেই করিত এ কাজ।
তাহাদেরি এ কার্য্যেতে নাহি হতো লাজ॥
লেখাপড়া-শিখা লোক এ কার্য্য কি করে।
এখন সকলি উল্টা বেল্লিকবাজারে॥
উচ্ছিষ্ট অবধি সেই বেশ্যার মুখের।
ভক্ষণ করয়ে মহা আনন্দে মনের॥
পাইখানা যাবে যদি সেই সে রমণী।
সঙ্গে তার গাড়ু নিয়ে যাইবে অমনি॥
করাইয়ে জলশৌচ আপনি সে গিয়ে।
হাত ধরি আনিবেক গাটি মুছাইয়ে॥
এমনি সে ভালবাসা বেঁধেছে জমাট।
খুলেছে মনের দ্বার না লাগে কপাট॥
ক্রমাগত এইরূপে বৎসর কাটিল।
কত দিকে কতবিধ সুখাবেশ হ’ল॥
বি-এল, পরীক্ষা দিয়ে এই সময়েতে।
হইল উকীল এক জজ্ কাছারীতে॥
লােকমুখে শুনি বার্ত্তা শ্বশুর মশাই।
লইয়ে গেলেন কাছে সেই সে জামাই॥
কন্যার বয়স হবে আঠারাে তখন।
পরিপূর্ণ সব অঙ্গ উঠন্তি যৌবন॥
বাসনা সে এইবারে পাঠান কন্যারে।
জামাতার সঙ্গেতেই বিলম্ব না করে॥
করিলেন প্রস্তাব তাই জামাতার কাছে।
জামাতার মাথে কিন্তু আকাশ ভেঙ্গেছে॥
কে আছে সেথায় তারে করিতে রক্ষণ।
আবার এদিকে এক বিষম চিন্তন॥
এই নারী সঙ্গে যদি লইয়া যাইব।
দর্ম্মাহাটা সুন্দরীরে কেমনে দেখিব॥
ফেলিয়া এরেও কোথা নারিব ত যেতে।
অথচ না গেলেও নয়, সে সুখস্থানেতে॥
দেহ জাতি প্রাণ মান সব তাঁর পায়।
কেমমে বাঁচিব প্রাণে না দেখিলে তায়॥
আবার এরেও যদি নাহি লয়ে যাই।
কেমনেতে মাস মাস টাকাগুলো পাই॥
হয়েছি উকীল বটে আমি ত এক্ষণে।
পসার কোথায় কিন্তু কেবা মোরে গণে॥
যতদিন পসার না হয় ত কিঞ্চিৎ।
কেমনে বাঁচিব হলে এ অর্থে বঞ্চিত॥
হায় স্বার্থ তোরে ওরে যাই বলি হারি।
লোকের খাতির নয় খাতির টাকারি॥
টাকারি কারণে ওরে চাও লয়ে যেতে।
একটুকু বদ্ধ কিন্তু নহ নেমকেতে॥
এই যে এতটা কাল পালিল তোমায়।
সে কারণ ভয়ভক্তি না কর তাঁহায়॥
ভয় শুধু পাছে আর না পাঠায় টাকা।
তাতেই রহিলে সেজে ঠিক যেন ন্যাকা॥
জিজ্ঞাসেন শ্বশুর, “কি বল হে জামাই।”
জামাই কহিল “যাহা ভাল বুঝ তাই॥
আরাে কিছুদিন হেথা রহিলে হইত
আমার অর্জ্জিত ধন খাইতে পারিত॥
এই মাত্র সঙ্কোচ সে মনেতে আমার।
সুখের বিষয়, নহে কিবা তাহে আর॥
অন্ততঃ দুইটি মাস থাকুন এখানে।
পাঠায়েছি জননীরে বারাণসীধামে॥
আনাই তাঁহারে পুন গৃহে একবার।
তত্ত্ব-অবধান নৈলে কে করে উঁহার॥
সুখেতে মানুষ চিরদিন হয়েছেন।
দুখের আঁচটি কভু নাহি পেয়েছেন॥
হঠাৎ এভাবে যদি নিয়ে যাই সেথা।
বড়ই কষ্টেতে পড়ি হবেন ব্যথিতা॥”
শ্বশুর শুনিয়া মনে হন চমৎকার।
“কাশীতে পাঠায় মাকে অজ্ঞাতে আমার?
একবার জিজ্ঞাসা না করিল আমারে।
পাঠাব কি না পাঠাব কাশীতে মাতারে॥”
জিজ্ঞাসেন পরে, “ভাল, কোথা ভাই কটি।”
উত্তরে বেল্লিক কহে, “মরেছে সে কটি॥
হয়েছিল ওলাউঠা মরেছে তাতেই।
একমাত্র মাতা বই কেহ আর নেই॥”
শুনিয়ে শ্বশুর চিন্তান্বিত মনে মনে।
“তবে আর কন্যারে পাঠাই কেমনে॥”
ভাবি এইরূপ তবে দুই মাস পরে।
পাঠানই সিদ্ধান্ত যে করিলা অন্তরে॥
বেল্লিক বাঁচিল হাঁফ্ ছেড়ে কিছুক্ষণ।
অতঃপর কি করিবে সেই সে চিন্তন|॥
বেল্লিকের রামায়ণ অতীব আশ্চর্য্য।
বেল্লিকপনার পুণ্য আছে যায় ধার্য্য |॥