ভগ্নহৃদয়/চতুস্ত্রিংশ সর্গ
চতুস্ত্রিংশ সর্গ।
শয্যায় শয়ান ললিত-অনিলের প্রবেশ।
(ললিতার গান।)
বায়ু! বায়ু! কি দেখিতে আসিয়াছ হেথা?
কৌতুকে আকুল!
আমি—এক্টি জুঁই ফুল!
সারা রাত এ মাথায় পোড়েছে শিশির—
গণেছি কেবল!
প্রভাতে বড়ই শ্রান্ত ক্লান্ত হে সমীর!
অতি হীন বল!
ভাঙ্গা বৃন্তে ভর করি রয়েছি জীবন ধরি
জীবনে উদাস!
ওগো—উষার বাতাস!
শ্রান্ত মাথা পড়ে নুয়ে—চাহিয়া রোয়েছে ভূঁয়ে
মর’ মর’ এক্টি জুঁই ফুল।
কাছেতে এস’ না সোরে—এখনি পড়িবে ঝোরে
সুকুমার এক্টি জুঁই ফুল!
ও ফুল গোলাপ নয় (সুষমা সুরভিময়),
নহে চাঁপা নহে গো বকুল!
ও নহেগো মৃণালিনী—তপনের আদরিণী,
ও শুধু একটি জুঁই ফুল!
ওরে আসিয়াছ দিতে কি সংবাদ হায়—
হে প্রভাত বায়?
প্রভাতে নলিনী আজি কাঁদিছে রসে?
হাসুক্ সবসে!
শিশিরে গোলাপ গুলি কঁদিছে হরষে?
কাঁদুক্ হরষে!
ও এখনি বৃন্ত হোতে কঠিন মাটিতে
পড়িবে ঝরিয়া,
শান্তিতে মরেগো যেন মরিবার কালে
যাওগো সরিয়া!
মুখ খানি ধীরে ধীরে দেখিতেছ তুলে
দাঁড়াইয়া কাছে—
দেখিবারে—ক্ষুদ্র জুঁই মুখ নত করি
অভিমান কোরে বুঝি আছে!
নয় নয়—তাহা নয়—সে সকল খেলা নয়—
ফুরায় জীবন!—
তবে যাও—চোলে যাও—আর কোন ফুলে যাও
প্রভাত পবন!
ওরে কি শুধাতে আছে প্রেমের বারতা?
মর’ মর’ যবে?
একটি কহেনি কথা অনেক সহেছে—
মরমে মরমে কীট অনেক বহেছে—
আজ মরিবার কালে শুধাইছ কেন?
কথা নাহি ক’বে?
ও যখন মাটি পরে পড়িবে ঝরিয়া
ওরে লোয়ে খেলাস্নে তুই!
উড়ায়ে যাস্নে লোয়ে হেথা হোতে হোথা!
ক্ষুদ্র এক জুঁই!
যেথাই খসিয়া পড়ে—সেথা যেন থাকে পোড়ে
ঢেকে দিস্ শুকানো পাতার!
ক্ষুদ্র জুঁই ছিল কিনা—কেহই ত জানিত না
মরিলেও জানিবে না তায়!
কাননে হাসিত চাঁপা হাসিত গোলাপ
আমি যবে মরিতাম কাঁদি,
আজো হাসিবেক তারা শাখায় শাখায়
হাতে হাতে বাঁধি!
সে অজস্র হাসি মাঝে—সে হরষ রাশি মাঝে
ক্ষুদ্র এই বিবাদের হইবে সমাধি!
সমাপ্ত।
PRINTED BY K. K. CHAKRAVARTI AT THE VALMIKI PRESS
55, AMHERST STREET, CALCUTTA.