ভগ্নহৃদয়/ষড়্‌বিংশ সর্গ

উইকিসংকলন থেকে

ষড়্‌বিংশ সর্গ।

নলিনী।

আজ তার সাথে দেখা হ’ল,
মুখ ফিরাইয়া চ’লে গেল।
হা অদৃষ্ট, কাল মোরে হেরিয়া যে জন,
নলিনী নলিনী বলি হ’ত অচেতন,
নিমেষ ভূলিত আঁখি, পূরিত না আশ,
আমার সৌন্দর্য্য রাশি করিত যে গ্রাস,
মোর রাঙ্গা চরণের ধূলি হইবার
হৃদয়ের একমাত্র সাধ ছিল যার,
ধূলিতে যে পদচিহ্ন করিত চুম্বন,
মুখ ফিরাইয়া আজ গেল সেই জন!
আঁখির পিপাসা তার, হৃদয়ের আশা তার
নলিনীরে দেখে সেও ফিরালে নয়ন!
পাশ দিয়া চ’লে গেল স্পর্দ্ধিত-গমন?
বিশ্বাসঘাতক যদি কাল পুন আসে
নলিনী নলিনী বলি ফিরে পাশে পাশে,
ভালবাসা ভালবাসা করে দিন রাত,
তাহার পানে কি আর ফিরে চাই একবার!
করিনা কি বজ্র সম কটাক্ষ নিপাত।

হাসির ছুরিকা দিয়ে বিঁধি তার মন
দারুণ ঘৃণার বিষে করি অচেতন।
ভিখারী বালক সেই, দিবস রজনী যেই
একটি হাসির তরে ছিল মুখ চেয়ে
একটি ইঙ্গিত পেলে আসিত যে ধেয়ে,
আজ মোরে—নলিনীরে—হেরি সেই জন
চলে গেল একে বারে ফিরায়ে নয়ন!
যেন আজ আমিরে নলিনী নই আর,
কাল যাহা ছিল আজ কিছু নাই তার!
এ হৃদে আঘাত দিবে মনে করে সে কি!
সে যদি ফিরে না চায়, সে যদি চলিয়া যায়,
তাহ হলে নলিনী এ কেঁদে মরিবে কি!
এই যে উড়াই ধূলা চরণের ঘায়
বায়ুভরে এওত পশ্চাতে চ’লে যায়,
তাই নলিনীর আঁখি অশ্রু বরষিবে নাকি!
হা কপাল, এও সে কি ছিল মনে ক’রে,
কথা না কহিয়া সেও ব্যথা দিবে মোরে!
এ যে হাসিবার কথা, সেও মোরে দিবে ব্যথা,
কাল যারে নিতান্ত ক’রেছি অবহেলা,
কৃপা ক’রে দেখিতাম যার প্রেম খেলা,
সেও আজ ভাবিয়াছে ব্যথিবে এ মন
শুধু কথা না কহিয়া, ফিরায়ে নয়ন!