ভানুসিংহের পত্রাবলী/৫১

উইকিসংকলন থেকে

৫১

 তুমি-যে তোমার লজিকের খাতার পাতা ছিঁড়ে আমাকে চিঠি লিখেচো তা’তে বু’ঝ্‌তে পার্‌চি, লজিক সম্বন্ধে আলোচনা প’ড়ে তোমার উপকার হ’য়েচে। লজিক যেমনি পড়া হ’য়ে যায় অম্‌নি তা’র আর কোনো প্রয়োজন থাকে না। যে-কলাপাতায় খাওয়া হ’য়ে যায়, সে-কলাপাতা ফেলে দিলে ক্ষতি হয় না। কিন্তু যে-তালপাতার উপর মেঘদূত লেখা হ’য়েচে সেটা ফেল্‌বার জিনিস নয়।

 আমরা এবার দু-তিন দিন ধ’রে বর্ষামঙ্গল ক’রেচি। তা’র ফল কী হ’য়েচে, একবার দেখো। আজ ভাদ্রমাসের আঠারই তারিখ, অর্থাৎ শরৎকালের আরম্ভ, কিন্তু বর্ষার আয়োজন এখনো ভরপুর র’য়েচে। আকাশ ঘন মেঘে কালো হ’য়ে আছে,—থেকে থেকে ঝমাঝম্ বৃষ্টি হ’চ্চে। আমার কবিত্বের এই আশ্চর্য্য প্রভাব দেখে আমি নিজেই অবাক্ হ’য়ে গেচি। এমন কি, শুন্‌তে পাই, আমার এই বর্ষামঙ্গলের জোর কাশী পর্য্যন্ত পৌঁচেচে। সেখানেও বৃষ্টি চ’ল্‌চে। বোধ হ’চ্চে, আমরা যখন শারদোৎসব ক’র্‌বো তা’রপর থেকেই শরতের আরম্ভ হবে। শারদোৎসবের রিহার্সালে আমাকে অস্থির ক’রেচে। রোজ দুপুরবেলায় বিভূতি এসে একবার ক’রে আমার কাছ থেকে আগাগোড়া পাঠ নিয়ে যায়; ছোটো ছেলেরা যে-রকম পড়া মুখস্থ করে আমাকে তাই ক’র্‌তে হয়। কিন্তু এমনি আমার বুদ্ধি, তবু রিহার্সালের সময় কেবল ভুলি—ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা পর্য্যন্ত হাসে—এত অপমান সে আর কী ব’ল্‌বো।

 যাই হোক্, যদি তুমি আমার শারদোৎসব দেখ্‌তে আসো তা হ’লে বোধ হয় দেখ্‌বে, ঠিক ঠিক মুখস্থ ব’লে যাচ্চি। তোমার বাবাকে শারদোৎসব দেখ্‌বার জন্যে আস্‌তে ব’লে দিয়েচি। কিন্তু যে-রকম ব্যস্ত মানুষ, তাঁর মনে থাক্‌লে হয়। ঐ বিভূতি এলো—এইবার আমার পড়া দিইগে যাই। ১৮ই ভাদ্র, ১৩২৯।