ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী/১৬

উইকিসংকলন থেকে

(১৬)


ভৈরবী।

 হম সখি দারিদ নারী!
জনম অবধি হম পীরিতি করনু
 মোচনু লোচন-বারি।
রূপ নাহি মম, কছুই নাহি গুণ
 দুখিনী আহির জাতি,
নাহি জানি কছু বিলাস-ভঙ্গিম
 যৌবন গরবে মাতি।
অবলা রমণী, ক্ষুদ্র হৃদয় ভরি
 পীরিত করনে জানি;
এক নিমিখ পল, নিরখি শ্যাম জনি
 সোই বহুত করি মানি।
কুঞ্জ পথে যব নিরখি সজনি হম,
 শ্যামক চরণক চীনা,

শত শত বেরি ধূলি চুম্বি সখি,
 রতন পাই জনু দীনা।
নিঠুর বিধাতা, এ দুখ-জনমে
 মাঙব কি তুয়া পাশ!
জনম অভাগী, উপেখিতা হম,
 বহুত নাহি করি আশ,—
দুর থাকি হম রূপ হেরইব,
 দূরে শুনইব বাঁশি।
দূর দূর রহি সুখে নিরীখিব
 শ্যামক মোহন হাসি।
শ্যাম-প্রেয়সি রাধা! সখিলো!
 থাক’ সুখে চিরদিন।
তুয়া সুখে হম রোয়ব না সখি
 অভাগিনী গুণ হীন।
অপন দুখে সখি, হম রোয়ব লো,
 নিভৃতে মুছইব বারি।

কোহি ন জানব, কোন বিষাদে
 তন-মন দহে হমারি।
ভানু সিংহ ভনয়ে, শুন কালা
 দুখিনী অবলা বালা—
উপেখার অতি তিখিনী বাণে
 না দিহ না দিহ জ্বালা।