মহাভারত (উপক্রমণিকাভাগ)/একপঞ্চাশ অধ্যায়

উইকিসংকলন থেকে


একপঞ্চাশ অধ্যায়— আস্তীকপর্ব্ব।

উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, অনন্তর রাজা জনমেজয় মন্ত্রিগণের সহিত পরামর্শ স্থির করিয়া সৰ্পসত্রানুষ্ঠানের প্রতিজ্ঞা করিলেন, এবং পুরোহিত ও ঋত্বিকৃদিগকে আহ্বান করিয়া জিজ্ঞাসিলেন, যে দুরাত্মা তক্ষক পিতার প্রাণহিংসা করিয়াছে, এক্ষণে আমি কি উপায়ে তাহাকে, যথোচিত প্রতিফল দিতে পারি, আপনার। তাহা বলুন। আপনারা এমন কোনও কর্ম্ম জানেন কি না যে, তদ্বারা আমি তাহাকে তাহার বন্ধুবর্গের সহিত প্রদীপ্ত অনলে নিক্ষিপ্ত করিতে পারি। সে যেমন আমার পিতাকে বিষবহ্নি দ্বারা দগ্ধ করিয়াছে, আমিও সেই পাপিষ্ঠকে তদ্রুপ দগ্ধ করিতে বাসনা করি। ঋত্বিগণ কহিলেন, মহারাজ! পুরাণে সপসত্রনামে এক মহৎ যজ্ঞের উল্লেখ আছে। দেবতারা তোমার নিমিত্তই ঐ যজ্ঞের সৃষ্টি করিয়াছেন। পৌরাণিকেরা কহেন, তোমা ভিন্ন ঐ যজ্ঞ করিবার অন্য লোক নাই, আর আমরাও ঐ যজ্ঞের অনুষ্ঠান করিতে জানি।

 রাজা এই কথা শ্রবণ করিয়াই তক্ষককে প্রদীপ্ত অগ্নিমুখে প্রবিষ্ট ও দগ্ধ বোধ করিলেন, এবং সেই মন্ত্রজ্ঞ ব্রাহ্মণদিগকে কহিলেন, আমি সেই যজ্ঞ করব, আপনারা সমুদায় আয়োজন করুন। তদনুসারে সেই বেদবি বহুজ্ঞ ঋত্বিকগণ, শাস্ত্র প্রমাণ পরিমাণ করিয়া পরম সমৃদ্ধিযুক্ত প্রভূতধনধান্যাদিসম্পন্ন অভি প্রায়ানুরূপ যজ্ঞায়তন নির্মাণ পূর্বক, রাজাকে সপত্রে দীক্ষিত করিলেন। কিন্তু প্রথমতই যজ্ঞের বিঘ্নকর এক মহৎ লক্ষণ উপস্থিত হইয়াছিল। যজ্ঞায়তননির্ম্মাণকালে বাস্তুবিদ্যাবিশারদ পুরাণবেত্তা বুদ্ধিজীবী সূত্রধার কহিল, যে স্থানে ও যে সময়ে যজ্ঞায়তনের মাপন আরম্ভ হইল, তাহাতে বোধ হইতেছে, এক ব্রাহ্মণকে উপলক্ষ করিয়া এই যজ্ঞের ব্যাঘাত জন্মিবেক। রাজা এই কথা শ্রবণ করিয়া, দীক্ষিত হইবার পূর্ব্বে, দ্বারপালকে এই আদেশ দিলেন, যেন কোনও ব্যক্তিই আমার অজ্ঞাতসারে প্রবেশ করিতে না পারে।