মহাভারত (উপক্রমণিকাভাগ)/সপ্তদশ অধ্যায়

উইকিসংকলন থেকে

সপ্তদশ অধ্যায়—আস্তীকপর্ব্ব।

উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, হে তপোধন। এই সময়ে কদ্রু ও বিনতা দুই ভগিনী অবলোকন করিলেন, উচ্চৈঃশ্রবাঃ অশ্ব তাহাদের সমীপ দেশ দিয়া গমন করিতেছে, দেবগণ হৃষ্ট চিত্তে তাহার সাতিশয় সমাদর করিতেছেন। সেই সর্বোত্তম, সৰ্বসুলক্ষণ সম্পন্ন, শ্রীমান, অজর, অমোঘবল, দিব্য, অশ্বরত্ন অমৃতমন্থন কালে উৎপন্ন হয়।

 শৌনক কহিলেন, হে সূতনন্দন! তুমি কহিলে, সেই পরম সুন্দর মহাবীর্য্য অশ্বরাজ অমৃতমন্থন কালে উৎপন্ন হয়; অতএব জিজ্ঞাসা করিতেছি, বল, দেবতারা কি নিমিত্তে ও কোন স্থানে অমৃত মন্থন করিয়াছিলেন?

 উগ্রশ্রবাঃ কহিলেন, সুমেরু নামে এক পরম সুন্দর ভূধর আছে। তাহার স্বর্ণময় উজ্জ্বল শৃঙ্গসমূহের জ্যোতির সহিত তুলনা করিলে প্রদীপ্ত সূর্য্যের প্রভাও মলিন বোধ হয়। ঐ কনকালঙ্কৃত অপ্রমেয় বিচিত্র গিরি দেবগণ ও গন্ধর্ব্বগণের আবাসভূমি। অধর্ম্মপরায়ণ লোকেরা তাহার ত্রিসীমায় যাইতে পারে না। অতিদুর্দ্দান্ত হিংস্র জন্তুগণ তদুপরি নিরন্তর পরিভ্রমণ করে। রজনীতে নানাবিধ দিব্য ওষধি[১] দ্বারা আলোকময় হয়। উচ্চতা দ্বারা দেবলোক আবরণ করিয়া অবস্থিত আছে। বহুতর তরঙ্গিণী ও তরুমণ্ডলী ঐ গিরিবারের শোভা সম্পাদন করিতেছে। অশেষবিধ মনোহর বিহঙ্গমগণ চারি দিকে অনবরত কোলাহল করিতেছে। ঐ ধরণীধর সামান্য লোকদিগের মনেরও অগম্য। তপোনিয়মসম্পন্ন মহাবল দেবগণ সেই স্বর্ণময় শৈলের শুভ শৃঙ্গে সমারূঢ় ও আসীন হইয়া অমৃতলাবিষয়ক মন্ত্রণা আরম্ভ করিলেন।

 এই রূপে দেবতাদিগকে মন্ত্রচিন্তনে সাতিশয় ব্যাসক্ত দেখিয়া নারায়ণ ব্রহ্মাকে সম্বোধিয়া কহিলেন, দেখ, দেবতারা ও অসুরগণ ঐকমত্য অবলম্বন করিয়া সমুদ্র মন্থন? আরম্ভ করুক, মন্থন করিতে করিতে সমুদ্রগর্ভ হইতে অমৃত উৎপন্ন হইবেক। অন্যুর দেবতাদিগকে কহিলেন, হে দেবগণ! তোমারা সর্ব্বপ্রকার ওষধি[২] ও সর্ব্বপ্রকার রত্ন পাইয়াও উদধি মন্থনে বিরত হইবে না, উত্তরোত্তর মন্থন করিতে করিতে তোমাদিগের অমৃত লাভ হইবেক।

  1. লতা বিশেষ, রজনীতে তাহার দীপ্তি প্রকাশ পায়
  2. ফল পক্ব হইলেই যাহারা শুষ্ক হইয়া যায়।