মহুয়া/নাম্নী/মূরতী

উইকিসংকলন থেকে

মুরতী

যে-শক্তির নিত্যলীলা নানা বর্ণে আঁকা;
যে-গুণী প্রজাপতির পাখা
যুগ যুগ ধ্যান করি’ একদা কী খনে
রচিল অপূর্ব্ব চিত্রে বিচিত্র লিখনে—
এই নারী
রচনা তাহারি।
এ শুধু কালের খেলা,
এর দেহ কী আলস্যে বিধাতা একেলা
রচিলেন সন্ধ্যাকালে
আপনার অর্থহীন ক্ষণিক খেয়ালে—
যে-লগনে
কর্ম্মহীন ক্লান্তক্ষণে
মেঘের মহিমা-মায়া মুহূর্তেই মুগ্ধ করি’ আঁখি
অন্ধরাত্রে বিনা ক্ষোভে যায় মুখ ঢাকি’,
শরতে নদীর জলে যে-ভঙ্গিমা,
বৈশাখে দাড়িম্ব-বনে যে রাগ-রঙ্গিমা
যৌবনের দাপে
অবজ্ঞা-কটাক্ষ হানে মধ্যাহ্নের তাপে,
শ্রাবণের বন্যাতলে হারা
ভেসে-যাওয়া শৈবালের যে-নৃত্যের ধারা,

মাঘশেষে অশ্বত্থের কচি পাতাগুলি
যে-চাঞ্চল্যে উঠে দুলি’,
হেমন্তের প্রভাত-বাতাসে
শিশিরে যে-ঝিলিমিলি ঘাসে ঘাসে,
প্রথম আষাঢ়-দিনে গুরু গুরু রবে
ময়ুরের পুচ্ছপুঞ্জ উল্লসিয়া উঠে যে-গৌরবে
তাই দিয়ে রচিত সুন্দরী;
লতা যেন নারী হ’য়ে দিল চক্ষু ভরি’।

রঙীন বুদ্বুদ সে কি, ইন্দ্রধনু বুঝি,
অন্তর না পাই খুঁজি’—
সকলি বাহির,
চিত্ত অগভীর।
কারো পথ চেয়ে নাহি থাকে,
কারে না-পাওয়ার দুঃখ মনে নাহি রাখে।
মুগ্ধ প্রাণ-উপহার
অনায়াসে নেয়, আর অনায়াসে ভোলে দায় তা’র
সরস্বতী রচিলেন মন তা’র কোন্ অবসরে
রাগহীন বাণীহীন গুঞ্জনের স্বরে;
অমৃতে মাটিতে মেশা সৃজনের এ কোন্ সুরতি,—
—নাম কি মূরতি?