মহুয়া/সবলা

উইকিসংকলন থেকে

সবলা

নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার
কেন নাহি দিবে অধিকার,
হে বিধাতা?
পথপ্রান্তে কেন রবে জাগি’
ক্লান্ত ধৈর্য প্রত্যাশার পূরণের লাগি’
দৈবাগত দিনে?
শুধু শূন্যে চেয়ে রবো? কেন নিজে নাহি লবো চিনে
সার্থকের পথ?
কেন না ছুটাবো তেজে সন্ধানের রথ
দুর্দ্ধর্ষ অশ্বেরে বাঁধি’ দৃঢ় বল্‌গা পাশে?
দুর্জ্জয় আশ্বাসে
দুর্গমের দুর্গ হ’তে সাধনার ধন
কেন নাহি করি আহরণ
প্রাণ করি’ পণ?

যাবো না বাসর কক্ষে বধূবেশে বাজায়ে কিঙ্কিণী,—
আমারে প্রেমের বীর্যে করো অশঙ্কিণী।
বীর হস্তে বরমাল্য লবো একদিন
সে-লগ্ন কি একান্তে বিলীন
ক্ষীণদীপ্তি গোধূলিতে?
কভু তা’রে দিব না ভুলিতে
মোর দৃপ্ত কঠিনতা।
বিনম্র দীনতা
সম্মানের যোগ্য নহে তা’র,—
ফেলে দেবো আচ্ছাদন দুর্ব্বল লজ্জার।
দেখা হবে ক্ষুব্ধ সিন্ধুতীরে;
তরঙ্গ গর্জ্জনোচ্ছ্বাস, মিলনের বিজয়ধ্বনিরে
দিগন্তের বক্ষে নিক্ষেপিবে।
মাথার গুণ্ঠন খুলি’ কবো তা’রে, মর্ত্ত্যে বা ত্রিদিবে
একমাত্র তুমিই আমার।
সমুদ্র পাখীর পক্ষে সেইক্ষণে উঠিবে হুঙ্কার
পশ্চিম পবন হানি’,
সপ্তর্ষি আলোকে যবে যাবে তা’রা পন্থা অনুমানি’।

হে বিধাতা আমারে রেখো না বাক্যহীনা
রক্তে মোর জাগে রুদ্র বীণা!
উত্তরিয়া জীবনের সর্ব্বোন্নত মুহূর্ত্তের ’পরে
জীবনের সর্ব্বোত্তম বাণী যেন ঝরে
কণ্ঠ হ’তে
নির্ব্বারিত স্রোতে।
যাহা মোর অনির্ব্বচনীয়
তা’রে যেন চিত্ত মাঝে পায় মোর প্রিয়।
সময় ফুরায় যদি, তবে তা’র পরে
শান্ত হোক্ সে-নির্ঝর নৈঃশব্দ্যের নিস্তব্ধ সাগরে।

৭ ভাদ্র, ১৩৩৫