মানসী
প্রকাশ ১০ পৌষ ১২৯৭ বঙ্গাব্দ
দ্বিতীয় সংস্করণ ১ আষাঢ় ১৩০০
কাব্যগ্রন্থাবলী-ভুক্ত সংস্করণ ১৩০৩
পুনর্মুদ্রণ ১৯১২ খৃস্টাব্দ
কাব্যগ্রন্থ-ভূক্ত সংস্করণ ১৯১৫
পুনর্মুদ্রণ ১৯২১, ১৩৩৮
রবীন্দ্র-রচনাবলী-ভুক্ত সংস্করণ ১৩৪৬
পুনমুর্দ্রণ ১৩৪৮
নূতন সংস্করণ ২২ শ্রাবণ ১৩৫০
পুনর্মুদ্রণ জ্যৈষ্ঠ ১৩৫১, পৌষ ১৩৫৩, অগ্রহায়ণ ১৩৫৯, আশ্বিন ১৩৬১
আষাঢ় ১৩৬৫, ভাদ্র ১৩৬৭, ভাদ্র ১৩৬৯, চৈত্র ১৩৭০, ভাদ্র ১৩৭২
শ্রাবণ ১৩৭৪, পৌষ ১৩৮১, আশ্বিন ১৩৮৮, অগ্রহায়ণ ১৩৯২
অগ্রহায়ণ ১৩৯৭, ভাদ্র ১৩৯৯
শ্রাবণ ১৪০১
© বিশ্বভারতী
প্রকাশক শ্রীঅশােক মুখােপাধ্যায়
বিশ্বভারতী। ৬ আচার্য জগদীশ বসু রােড। কলিকাতা ১৭
মুদ্রক ম্যাসকট প্রেস
২৪৬ এ/বি মানিকতলা মেন রােড। কলিকাতা ৫৪
ভূমিকা
প্রথম সংস্করণ
এই গ্রন্থের অনেকগুলি কবিতায় যুক্তাক্ষরকে দুই-অক্ষর-স্বরূপ গণ্য করা হইয়াছে। সেরূপ স্থলে সংস্কৃত ছন্দের নিয়মানুসারে যুক্তাক্ষরকে দীর্ঘ করিয়া না পড়িলে ছন্দ রক্ষা করা অসম্ভব হইবে। যথা-
নিম্নে যমুনা বহে স্বচ্ছ শীতল;
উর্ধ্বে পাষাণতট, শ্যাম শিলাতল।
‘নিম্নে’ ‘স্বচ্ছ’ এবং ‘উর্ধ্বে এই কয়েকটি শব্দে তিন মাত্রা গণনা না করিলে পয়ার ছন্দ থাকে না। আমার বিশ্বাস, যুক্তাক্ষরকে দুই-অক্ষর-স্বরূপ গণনা করাই স্বাভাবিক এবং তাহাতে ছন্দের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, কেবল বাঙ্গালা ছন্দ পাঠ করিয়া বিকৃত অভ্যাস হওয়াতেই সহসা তাহা দুঃসাধ্য মনে হইতে পারে। শব্দের আরম্ভ অক্ষর-যুক্ত হইলেও তাহাকে যুক্তাক্ষর-স্বরূপে গণনা করা যায় নাই- পাঠকেরা এইরূপ আরো দুই-একটি ব্যতিক্রম দেখিতে পাইবেন।
গ্রন্থের আরম্ভভাগের কতকগুলি কবিতা ব্যতীত অবশিষ্ট সমস্ত কবিতাই রচনাকালের পর্যায়-অনুসারে শ্রেণীবদ্ধ হইয়াছে।
‘শেষ উপহার’ -নামক কবিতাটি আমার কোনো বন্ধুর রচিত এক ইংরাজি কবিতা অবলম্বন করিয়া রচনা করিয়াছি। মূল কবিতাটি এইখানে উদধৃত করিবার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু আমার বন্ধু সম্প্রতি সুদূর প্রবাসে থাকা-প্রযুক্ত তাহা পারিলাম না।
সূচনা[১]
বাল্যকাল থেকে পশ্চিমভারত আমার কাছে রোম্যাণ্টিক কল্পনার বিষয় ছিল। এইখানেই নিরবচ্ছিন্নকাল বিদেশীয়দের সঙ্গে এ দেশের সংযোগ ও সংঘর্ষ ঘটে এসেছে। বহু শতাব্দী ধরে এইখানেই ইতিহাসের বিপুল পটভূমিকায় বহু সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন এবং নব নব ঐশ্বর্যের বিকাশ ও বিলয় আপন বিচিত্র বর্ণের ছবির ধারা অঙ্কিত করে চলেছে। অনেক দিন ইচ্ছা করেছি, এই পশ্চিমভারতের কোনো এক জায়গায় আশ্রয় নিয়ে ভারতবর্ষের বিরাট বিক্ষুব্ধ অতীতযুগের স্পর্শলাভ করব মনের মধ্যে। অবশেষে এক সময়ে যাত্রার জন্যে প্রস্তুত হলুম। এত দেশ থাকতে কেন যে গাজিপুর বেছে নিয়েছিলুম তার দুটো কারণ আছে। শুনেছিলুম গাজিপুরে আছে গোলাপের ক্ষেত। আমি যেন মনের মধ্যে গোলাপবিলাসী সিরাজের ছবি একে নিয়েছিলুম। তারই মোহ আমাকে প্রবলভাবে টেনেছিল। সেখানে গিয়ে দেখলুম, ব্যাবসাদারের গোলাপের ক্ষেত, এখানে বুলবুলের আমন্ত্রণ নেই, কবির ও নেই; হারিয়ে গেল সেই ছবি। অপর পক্ষে, গাজিপুরে মহিমান্বিত প্রাচীন ইতিহাসের স্বাক্ষর কোথাও বড়ো রেখায় ছাপ দেয় নি। আমার চোখে এর চেহারা ঠেকল সাদা-কাপড়-পরা বিধবার মতো, সেও কোনো বড়ো ঘরের ঘরনী নয়।
তবু গাজিপুরেই রয়ে গেলুম, তার একটা কারণ, এখানে ছিলেন আমাদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় গগনচন্দ্র রায়, আফিমবিভাগের একজন বড়ো কর্মচারী। এখানে আমার সমস্ত ব্যবস্থা সহজ হল তাঁরই সাহায্যে। একখানা বড়ো বাংলা পাওয়া গেল, গঙ্গার ধারেও বটে, ঠিক গঙ্গার ধারেও নয়। প্রায় মাইলখানেক চর পড়ে গেছে, সেখানে যবের ছোলার শর্ষের ক্ষেত; দূর থেকে দেখা যায় গঙ্গার জলধারা, গুণ-টানা নৌকো চলেছে মন্থর গতিতে। বাড়ির সংলগ্ন অনেকখানি জমি, অনাদৃত, বাংলা দেশের মাটি হলে জঙ্গল হয়ে উঠত। ইঁদারা থেকে পূর চলছে নিস্তব্ধ মধ্যাহ্নে কলকল শব্দে। গোলক-চাঁপার ঘন পল্লব থেকে কোকিলের ডাক আসত রৌদ্রতপ্ত প্রহরের ক্লান্ত হাওয়ায়। পশ্চিম কোণে প্রাচীন একটা মহানিম গাছ, তার বিস্তীর্ণ ছায়াতলে বসবার জায়গা। সাদা ধুলোর রাস্তা চলেছে বাড়ির গা ঘেঁষে, দূরে দেখা যায় খোলার-চাল-ওয়ালা পল্লী।
গাজিপুর আগ্রা-দিল্লির সমকক্ষ নয়, সিরাজ-সমর্খন্দের সঙ্গেও এর তুলনা হয় না, তবু মন নিমগ্ন হল অক্ষুন্ন অবকাশের মধ্যে। আমার গানে আমি বলেছি, আমি সুদূরের পিয়াসী। পরিচিত সংসার থেকে এখানে আমি সেই দূরত্বের দ্বারা বেষ্টিত হলুম, অভ্যাসের স্থূলহস্তাবলেপ দূর হবা মাত্র মুক্তি এল মনোরাজ্যে। এই আবহাওয়ায় আমার কাব্যরচনার একটা নূতন পর্ব আপনি প্রকাশ পেল। আমার কল্পনার উপর নূতন পরিবেষ্টনের প্রভাব বার বার দেখেছি। এইজন্যেই আলমোড়ায় যখন ছিলুম আমার লেখনী হঠাৎ নতুন পথ নিল শিশুর কবিতায়, অথচ সে-জাতীয় কবিতার কোনো প্রেরণা কোনো উপলক্ষই সেখানে ছিল না। পূর্বতন রচনাধারা থেকে স্বতন্ত্র এ একটা নূতন কাব্যরূপের প্রকাশ। মানসীও সেইরকম। নূতন আবেষ্টনে
এই কবিতাগুলি সহসা যেন নবদেহ ধারণ করল। পূর্ববৎ ‘কড়ি ও কোমল’এর সঙ্গে এর বিশেষ মিল পাওয়া যাবে না। আমার রচনার এই পর্বেই যুক্ত-অক্ষরকে পূর্ণ মূল্য দিয়ে ছন্দকে নূতন শক্তি দিতে পেরেছি। মানসীতেই ছন্দের নানা খেয়াল দেখা দিতে আরম্ভ করেছে। কবির সঙ্গে যেন একজন শিল্পী এসে যোগ দিল।
সূচী | ||
১৭ | ||
১৯ | ||
২২ | ||
২৫ | ||
২৮ | ||
৩০ | ||
৩৪ | ||
৩৭ | ||
৪১ | ||
৪৪ | ||
৪৭ | ||
৪৮ | ||
৫০ | ||
৫৩ | ||
৫৫ | ||
৬০ | ||
৬৪ | ||
৬৯ | ||
৭৩ | ||
৭৯ | ||
৮২ | ||
৮৩ | ||
৮৪ | ||
৮৫ | ||
৮৯ | ||
৯৫ | ||
৯৭ | ||
১০১ | ||
১০২ | ||
১০৪ | ||
১০৫ | ||
১০৮ | ||
১১২ | ||
১১৫ | ||
১১৯ | ||
১২৬ | ||
১৩১ | ||
১৪০ | ||
১৪৬ | ||
১৫৫ | ||
১৬০ | ||
১৬৫ | ||
১৭৩ | ||
১৭৬ | ||
১৮২ | ||
১৮৮ | ||
১৯৬ | ||
২০০ | ||
২০২ | ||
২০৫ | ||
২০৭ | ||
২০৯ | ||
২১১ | ||
২১৩ | ||
২১৫ | ||
২১৭ | ||
২১৯ | ||
২২৬ | ||
২৩০ | ||
২৩১ | ||
২৩৫ | ||
২৩৭ | ||
২৩৯ | ||
২৪১ | ||
২৪৩ | ||
২৪৬ |
প্রথমমুদ্রণাবধি এই গ্রন্থে রচনার তারিখ বাংলা মতে
এবং বৎসর খৃস্টীয় গণনা-অনুযায়ী দেওয়া হইয়াছে।
প রি শি ষ্ট
পাঠান্তর : নিষ্ফল উপহার ২৫১
আলােচনা : মানসী[২] ২৫৫,২৫৬
আলােচনা : মেঘদূত[৩] ২৫৭
সাময়িক পত্রে প্রকাশ ২৬৩
নিষ্ফল উপহার: পাঠান্তর[৪]
নিম্নে আবর্তিয়া ছুটে যমুনার জল।
দুই তীরে গিরিতট, উচ্চ শিলাতল।
সংকীর্ণ গুহার পথে মূর্ছি জলধার
উন্মত্ত প্রলাপে গর্জি উঠে[৫] অনিবার।
এলায়ে জটিল বক্র নির্ঝরের বেণী
নীলাভ দিগন্তে ধায় নীল গিরিশ্রণী।
স্থির তাহা, নিশিদিন তবু যেন চলে,
চলা যেন বাঁধা আছে অচল শিকলে।
মাঝে মাঝে শাল তাল রয়েছে দাঁড়ায়ে,
মেঘেরে ডাকিছে গিরি ইঙ্গিত বাড়ায়ে।
তৃণহীন সুকঠিন শতদীর্ণ ধরা,
রৌদ্রবর্ণ বনফুলে কাঁটাগাছ ভরা।
দিবসের তাপ ভূমি দিতেছে ফিরায়ে;
দাঁড়ায়ে রয়েছে[৬] গিরি আপনার ছায়ে
পথশূন্য, জনশূন্য, সাড়াশব্দহীন।
ডুবে রবি যেমন সে ডুবে প্রতিদিন।
রঘুনাথ হেথা আসি যবে উতরিলা[৭]
শিখগুরু পড়িছেন ভগবৎ-লীলা।
রঘু কহিলেন নমি চরণে তাঁহার,
‘দীন আনিয়াছে, প্রভু, হীন উপহার।’
বাহু বাড়াইয়া গুরু শুধায়ে কুশল
আশিসিলা মাথায় পরশি[৮] করতল।
কনকে-মাণিক্যে-গাঁথা বলয় দুখানি
গুরুপদে দিলা রঘু জুড়ি দুই পাণি।
ভূমিতল হতে বালা লইলেন তুলে,
দেখিতে লাগিলা প্রভু ঘুরায়ে অঙ্গুলে।
হীরকের সূচীমুখ শতবার ঘুরি
হানিতে লাগিল শত আলোকের ছুরী।
ঈষৎ হাসিয়া গুরু পাশে দিলা রাখি,
আবার সে পুঁথি ’পরে নিবেশিলা আঁখি।
সহসা একটি বালা শিলাতল হতে
গড়ায়ে পড়িয়া গেল যমুনার স্রোতে।
‘আহা আহা’ চীৎকার করি রঘুনাথ
ঝাঁপায়ে পড়িল জলে বাড়ায়ে দু হাত।
আগ্রহে সমস্ত তার প্রাণ মন কায়
একখানি বাহু[৯] হয়ে ধরিবারে যায়[১০]।
বারেকের তরে গুরু না তুলিয়া মুখ,
নিভৃত হৃদয়ে[১১] তাঁর জাগে পাঠসুখ।
কালো জল কটাক্ষিয়া চলে ঘুরি ঘুরি,
যেন সে ছলনাভরা সুগভীর চুরি।
দিবালোক চলে গেল দিবসের পিছু,
যমুনা উতলা করি না মিলিল কিছু।
সিক্তবস্ত্রে রিক্তহাতে শ্রান্তনতশিরে
রঘুনাথ গুরুকাছে আসিলেন ফিরে!
‘এখনো উঠাতে পারি’ করজোড়ে যাচে,
‘যদি দেখাইয়া দাও কোন্খানে আছে।’
দ্বিতীয় কঙ্কণখানি ছুঁড়ি দিয়া জলে
শুরু কহিলেন, ‘আছে ওই নদীতলে।’
মানসী
মানসী সম্বন্ধে যে লিখেছ যে, তার মধ্যে একটা despair এবং resignation -এর ভাব প্রবল, সেই কথাটা আমি ভাবছিলুম। প্রতি দিনই আমি দেখতে পাচ্ছি, নিজের রচনা এবং নিজের মন সম্বন্ধে সমালোচনা করা ভারি কঠিন। আমি বের করতে চেষ্টা করছিলুম এই despair এবং resignation -এর মূলটা কোন্খানে। আমার চরিত্রের কোন্খানে সেই কেন্দ্রস্থল আছে যেখানে গিয়ে আমার সমস্তটার একটা পরিষ্কার মানে পাওয়া যায়। কড়ি ও কোমলের সমালোচনায় আশু[১২]
যখন বলেছিলেন জীবনের প্রতি দৃঢ় আসক্তিই আমার কবিত্বের মূলমন্ত্র তখন হঠাৎ একবার মনে হয়েছিল: হতেও পারে। আমার অনেকগুলো লেখা তাতে করে পরিস্ফুট হয় বটে। কিন্তু, এখন আর তা মনে হয় না। এখন এক-একবার মনে হয় আমার মধ্যে দুটো বিপরীত শক্তির দ্বন্দ্ব চলছে। একটা আমাকে সর্বদা বিশ্রাম এবং পরিসমাপ্তির দিকে আহ্বান করছে, আর-একটা আমাকে কিছুতে বিশ্রাম করতে দিচ্ছে না। আমার ভারতবর্ষীয় শান্ত প্রকৃতিকে য়ুরোপের চাঞ্চল্য সর্বদা আঘাত করছে— সেইজন্যে এক দিকে বেদনা, আর-এক দিকে বৈরাগ্য। এক দিকে কবিতা, আর-এক দিকে ফিলজাফি। এক দিকে দেশের প্রতি ভালোবাসা, আর-এক দিকে দেশহিতৈষিতার প্রতি উপহাস। এক দিকে কর্মের প্রতি আসক্তি, আর-এক দিকে চিন্তার প্রতি আকর্ষণ। এইজন্যে সবসুদ্ধ জড়িয়ে একটা নিষ্ফলতা এবং ঔদাস্য।২
ভালো করে ভেবে দেখতে গেলে, মানসীর ভালোবাসার অংশটুকুই কাব্যকথা— বড়ো রকমের সুন্দর রকমের খেলা মাত্র— ওর আসল সত্যি কথাটুকু হচ্ছে এই যে, মানুষ কী চায় তা কিছু জানে না— এক-ঘটী জল চায় কি আধখানা বেল চায় জিজ্ঞাসা করলে বলতে পারে না; আমি এমন অবস্থায় মনের সঙ্গে আপসে বোঝাপড়া করে কল্পনার কল্পবৃক্ষের মায়াফল পাড়বার চেষ্টা করছি। জানি সত্য একে নিতান্ত অসন্তোষজনক, তার উপরে আবার রূঢ়ভাবে মানবমনের মুখের উপর সর্বদা জবাব করে— তাই ধ্যানভরে কল্পনাসিদ্ধ হবার চেষ্টা করা যাচ্ছে— কল্পনার কাছ থেকেও পুরো ফল পাওয়া যায় না, কিন্তু সত্যের চেয়ে সে চের বেশি আজ্ঞাবহ! তাই জন্যেই সাধ যায়, ‘সত্য যদি হত কল্পনা’— আমি দুটো যদি এক করতে পারতুম! অর্থাৎ, আমি যদি ঈশ্বর হতে পারতুম! মানুষের মনে ঈশ্বরের মতো অসীম আকাঙ্ক্ষা আছে, কিন্তু ঈশ্বরের মতো অসীম ক্ষমতা নেই— কেউ-বা বলছে আছে, ব’লে বহির্জগতে চেষ্টা করে বেড়াচ্ছে— কেউ-বা জানে নেই, তাই আকাঙ্ক্ষার রাজ্যে বসেই অর্ধনিরাশ্বাস ভাবে কল্পনাপুত্তলী গড়িয়ে তাকে পুজো করছে। একেই বলো ভালোবাসা? আমার ভালোবাসার লোক কই? আমি ভালোবাসি অনেককে— কিন্তু মানসীতে যাকে খাড়া করেছি সে মানসেই আছে, সে আর্টিস্টের হাতে রচিত ঈশ্বরের প্রথম অসম্পূর্ণ প্রতিমা। ক্রমে সম্পূর্ণ হবে কি?
মেঘদূত
এখানে আজকাল খুব ঝড়বৃষ্টি বাদলের প্রাদুর্ভাব হয়েছে। এ জায়গাটা ঠিক ঝড়বৃষ্টির উপযুক্ত। সমস্ত আকাশময় মেঘ করে, অর্থাৎ সমস্ত আকাশটা দেখতে পাওয়া যায়, ঝড় সমস্ত মাঠটাকে আপনার হাতে পায়— বৃষ্টি মাঠের উপর দিয়ে চলে চলে আসে, দূরে থেকে বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখা যায়। বর্ষার অন্ধকার-ছায়াটাকে আপনার চতুর্দিকে প্রকাণ্ড ভাবে বিস্তৃত দেখতে পাওয়া যায়। খুব দুর থেকে হূহুঃ শব্দ করতে করতে ধুলো শুকনো-পাতা এবং ছিন্নবিচ্ছিন্ন স্তূপাকার মেঘ উড়িয়ে নিয়ে অকস্মাৎ আমাদের এই বাগানের উপর মস্ত একটা ঝড় এসে পড়ে— তার পরে, বড়ো বড়ো গাছগুলোর ঝুঁটি ধরে যে নাড়া দিতে থাকে সে এক আশ্চর্য দৃশ্য। ফলে-পরিপূর্ণ আমগাছ তার সমস্ত ডালপালা নিয়ে ভূমিতে লুটিয়ে লুটিয়ে পড়ে— কেবল শালগাছগুলো বরাবর খাড়া দাঁড়িয়ে আগাগোড়া থর্থর্ করে কাঁপতে থাকে। মাঠের মাঝখানে আমাদের বাড়ি— সুতরাং চতুর্দিকের ঝড় এরই উপরে এসে প’ড়ে ঘুরপাক খেতে থাকে; সেদিন তো একটা দরজা টুকরো টুকরো করে ভেঙে আমাদের ঘরের মধ্যে এসে উপস্থিত— যে কাণ্ডটা করলেন তার থেকে স্পষ্টই বোঝা গেল অরণ্যই এঁর উপযুক্ত স্থান— ভদ্রলোকের ঘরের মধ্যে প্রবেশ করবার মতো সহবত শিক্ষা হয় নি; অবিশ্যি, কার্ড পাঠিয়ে ঢোকা প্রভৃতি নব্যরীতি এঁর কাছ থেকে প্রত্যাশা করাই যেতে পারে না, কিন্তু ভিজে পায়ে ঢুকে গৃহস্থঘরেব জিনিসপত্র সমস্ত লণ্ডভণ্ড করে দেওয়াই কি সনাতন প্রথা? কিন্তু, এরকম অশিষ্টাচরণ সত্ত্বেও লেগেছিল ভালো।
বহুকাল এরকম রীতিমত ঝড় দেখি নি। এখানকার লাইব্রেরিতে একখানা মেঘদূত আছে; ঝড় বৃষ্টি দুর্যোগে, রুদ্ধদ্বার গৃহপ্রান্তে তাকিয়া আশ্রয় করে দীর্ঘ অপরাহ্ণে সেইটি সুর করে করে পড়া গেছে— কেবল পড়া নয়- সেটার উপরে ইনিয়ে বিনিয়ে বর্ষার উপযোগী একটা কবিতা লিখেও ফেলেছি। মেঘদূত পড়ে কি মনে হচ্ছিল জান? বইটা বিরহীদের জন্যেই লেখা বটে— কিন্তু এর মধ্যে আসলে বিরহের বিলাপ খুব অল্পই আছে— অথচ সমস্ত ব্যাপারটা ভিতরে ভিতরে বিরহীর আকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ। বিরহাবস্থার মধ্যে একটা বন্দীভাব আছে কিনা— এইজন্যে বাধাহীন আকাশের মধ্যে মেঘের স্বাধীন গতি দেখে অভিশাপগ্রস্ত যক্ষ আপনার দুরন্ত আকাঙ্ক্ষাকে তারই উপরে আরোপণ ক’রে বিচিত্র নদী পর্বত বন গ্রাম নগরীর উপর দিয়ে আপনার অপার স্বাধীনতার সুখ উপভোগ করতে করতে ভেসে চলেছে। মেঘদূত কাব্যটা সেই বন্দীহৃদয়ের বিশ্বভ্রমণ। অবশ্য, নিরুদ্দেশ্য ভ্রমণ নয়, সমস্ত ভ্রমণের শেষে বহুদূরে একটি আকাঙ্ক্ষার ধন আছে, সেইখানে চরম বিশ্রাম— সেই একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য দূরে না থাকলে এই লক্ষ্যহীন ভ্রমণ অত্যন্ত শ্রান্তি ও ঔদাস্যের কারণ হত। কিন্তু, সেখানে যাবার তাড়াতাড়ি নেই— রয়ে বসে আপনার স্বাধীনতাথ সম্পূর্ণ উপভোগ করে— পথিমধ্যস্থিত বিচিত্র সৌন্দর্ধের কোনোটিকেই অনাদরে উল্লঙ্ঘন না ক’রে— রীতিমত Oriental রাজমাহাত্ম্যে যাওয়া যাচ্ছে। যক্ষের দিক থেকে দেখতে গেলে সেটা হয়তো ঠিক ‘ড্রামাটিক’ হয় না— একটা দক্ষিণে ঝড় উঠিয়ে একেবারে হুস করে সেখানে গিয়ে পড়লেই বোধ হয় তার পক্ষে ঠিক হত, কিন্তু তা হলে পাঠকদের অবস্থা কী হত বলো দেখি। আমরা এই বর্ষার দিনে ঘরে বন্ধ হয়ে আছি— মনটা উদাস হয়ে আছে— আমাদের একবার মেঘের মতো মহা স্বাধীনতা না দিলে অলকাপুরীর
অতুল ঐশ্বর্যের বর্ণনা কি তেমন ভালো লাগত? আজ বর্ষার দিনে মনে হচ্ছে পৃথিবীর কাজকর্ম সমস্ত রহিত হয়ে গেছে, কালের মস্ত ঘড়িটা বন্ধ, বেলা চলছে না। তবুও আমি বন্ধ হয়ে আছি, ছুটি পাচ্ছি নে। আজ এই কর্মহীন আষাঢ়ের দীর্ঘ দিনে পৃথিবীর সমস্ত অজ্ঞাত অপরিচিত দেশের মধ্যে বেরিয়ে পড়লে বেশ হয়— আজ তো আর কোনো দায়িত্বের কাজ কিছুই নেই, সংসারের সহস্র ছোটোখাটো কর্তব্য আজকের এই মহাদুর্যোগে স্থানচ্যুত হয়ে অদৃশ্য হয়েছে, আজ তেমন সুযোগ থাকলে কে ধরে রাখতে পারত! যে-সকল নদী গিরি নগরীর সুন্দর বহু প্রাচীন নাম বহুকাল থেকে শোনা যায় মেঘের উপরে বসে সেগুলো দেখে আসতুম। বাস্তবিক, কী সুন্দর নাম! নাম শুনলেই টের পাওয়া যায় কত ভালোবেসে এই নামগুলি রাখা হয়েছিল, এবং এই নামগুলির মধ্যে কেমন একটি শ্রী ও গাম্ভীর্য আছে। রেবা শিপ্রা বেত্রবতী গন্তীরা নির্বিন্ধ্যা, চিত্রকূট আম্রকূট বিন্ধ্য, দশার্ণ বিদিশা অবন্তী উজ্জয়িনী, এদেরই সকলের উপরে নববর্ষার মেঘ উঠেছে; এদেরই যুথীবনে বৃষ্টি পড়ছে এবং জনপদবধূরা কৃষিফলের প্রত্যাশায় স্নিগ্ধনেত্রে মেঘের দিকে চাচ্ছে। এদের জম্বুকুঞ্জের ফল পেকে আকাশের মেঘের মতো কালো হয়ে উঠেছে; দশার্ণ গ্রামের চতুর্দিকে কেয়াগাছের বেড়াগুলিতে ফুল ধরেছে, সেই ফুলগুলির মুখ সবে একটুখানি খুলতে আরম্ভ করেছে। মেঘাচ্ছন্ন রাত্রে উজ্জয়িনীর গৃহস্থঘরের ছাদের নীচে পায়রাগুলি সমস্ত ঘুমিয়ে রয়েছে; রাজপথের অন্ধকার এমনি প্রগাঢ় যে, সূচী দিয়ে ভেদ করা যায়। কবির প্রসাদে আজকের দিনে যদি মেঘের রথ পাওয়াই গেল, তা হলে এ-সব দেশ না দেখে কি যাওয়া যায়? যক্ষের যদি এতই তাড়া ছিল, তা হলে ঝোড়ো বাতাসকে কিম্বা বিদ্যুৎকে দূত করলেই ঠিক হত; যক্ষ যদি উনবিংশ শতাব্দীর হয় তা হলে টেলিগ্রাফের উল্লেখ
করা যেতে পারে। সেকালের দিনে যদি এখনকার মতো তীক্ষ্ণদর্শী ক্রিটিক-সম্প্রদায় থাকত, তা হলে কালিদাসকে মহা জবাবদিহিতে পড়তে হত, তা হলে এই ক্ষুদ্র সোনার তরীটি লিরিক ড্রামাটিক ডেস্ক্রিপ্টিভ প্যাস্টোরাল প্রভৃতি ক্রিটিক্দের কোন্ পাহাড়ে ঠেকে ডুবি হত বলা যায় না। আমি এই কথা বলি, যক্ষের পক্ষে কবির আচরণ যেমনই হোক, আমার পক্ষে ভারি সুবিধে হয়েছে। ক্রিটিকের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত হয়ে বলছি dramatic হয় নি। কিন্তু, আমার বেশ লাগছে। আমার আর- একটা কথা মনে পড়ছে— যে সময়ে কালিদাস লিখেছিল সে সময়ে কাব্যে-লিখিত দেশ-দেশান্তরের নানা লোক প্রবাসী হয়ে উজ্জয়িনী রাজধানীতে বাস করত, তাদেরও তে বিরহব্যথা ছিল। এইজন্য অলকা যদিও মেঘের terminus, তথাপি বিবিধ মধ্যবর্তী স্টেশনে এই-সকল বিরহী হৃদয়দের নাবিয়ে দিয়ে দিয়ে যেতে হয়েছিল। সে-সময়কার নানা বিরহকে নানা দেশ-বিদেশে পাঠাতে হয়েছিল, তাই জন্যে অলকায় পৌঁছতে একটু দেরি হয়েছিল। এজন্যে হতভাগ্য যক্ষের এবং তদপেক্ষা হতভাগ্য ক্রিটিকের নিকট কবির সমুচিত apology করা হয় নি; কিন্তু সেটাকে তাঁরা যদি public grievance বলে ধরেন, তা হলে ভারি ভুল করা হয়। আমি তো বলতে পারি, আমি এতে খুশি আছি। বর্ষাকালে সকল লোকেরই কিছু না কিছু বিরহের দশা উপস্থিত হয়, এমন-কি, প্রণয়িনী কাছে থাকলেও হয়; কবি নিজেই লিখেছেন-
মেঘালোকে ভবতি সুখিনােহপান্যথাবৃত্তি চেতঃ
কণ্ঠাশ্লেষে প্রণয়িনিজনে কিং পুনর্দূরসংস্থে।
অর্থাৎ, মেঘলা দিনে প্রণয়িনী গলায় লেগে থাকলেও সুখী লোকের মন উদাসীন হয়ে যায়, দূরে থাকলে তো কথাই নেই। অতএব কবিকে বর্ষার দিনে এই জগদ্ব্যাপী বিরহীমণ্ডলীকে সান্ত্বনা দিতে হবে, কেবল
ক্রিটিক্কে না। এই বর্ষার অপরাহ্ণে ক্ষুদ্র আত্মকোটরের মধ্যে অবরুদ্ধ বন্দীদিগকে সৌন্দর্যের স্বাধীনতাক্ষেত্রে মুক্তি দিতে হবে। আজকের সমস্ত সংসার দুর্যোগের মধ্যে রুদ্ধ হয়ে অন্ধকার হয়ে, বিষন্ন হয়ে বসে আছে।
মেঘদূত পড়তে পড়তে আর-একটা চিন্তা মনে উদয় হয়:— সেকালেই বাস্তবিক বিরহী-বিরহিণী ছিল, এখন আর নেই। পথিকবধুদের কথা কাব্যে পড়া যায়, কিন্তু তাদের প্রকৃত অবস্থা আমরা ঠিক অনুভব করতে পারি নে। পোস্ট্-অফিস এবং রেলগাড়ি এসে দেশ থেকে বিরহ তাড়িয়েছে। এখন তো আর প্রবাস বলে কিছু নেই— তাই জন্যে বিরহিণীরা আর কেশ এলিয়ে আর্দ্রতন্ত্রী বীণা কোলে করে ভূমিতলে পড়ে থাকে না। ডেস্কের সামনে বসে চিঠি লিখে মুড়ে টিকিট লাগিয়ে ডাকঘরে পাঠিয়ে দেয়, তার পরে নিশ্চিন্তমনে স্নানাহার করে। এমন-কি, ইংরাজ রাজত্বেও কিছুদিন পূর্বে যখন ভালোরূপ রাস্তাঘাট যানবাহনাদি ও পুলিসের বন্দোবস্ত হয় নি, তখনো প্রবাস বলে একটা সত্যিকার জিনিস ছিল; তাই—
প্রবাসে যখন যায় গো সে
তারে বলি বলি আর বলা হল না!
কবিদের এ-সকল গানের মধ্যে এতটা করুণা প্রবেশ করেছিল। তুমি মনে কোরো না, আমি এতদূর নির্লজ্জ কৃতঘ্ন যে চিঠির মধ্যেই পোস্ট্ অফিসের বিরুদ্ধে নিন্দাবাদ করছি। আমি পোস্ট্-অফিসের বিশেষ পক্ষপাতী, কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও স্বীকার করছি যে, যখন মেঘদূত বা কোনো প্রাচীন কাব্যে বিরহিণীর কথা পড়ি তখন মনের মধ্যে ইচ্ছে করে ঐরকম সত্যিকার বিরহিণী আমার জন্যে যদি কোনো প্রবাসে বিরহশয়ানে বিলীন হয়ে থাকে এবং আমি যদি জড় অথবা চেতন কোনো
দূতের সাহায্যে অথবা কল্পনার প্রভাবে সেটা জানতে পারি— তা হলে বেশ হয়! স্বদেশেই থাক্, বিদেশেই থাক্, এবং ভালোবাসা যেমনই থাক্— সকলেই বেশ comfortably কালযাপন করছে, এটা কী রকম গদ্যোপযোগী শোনায়!
সাময়িক পত্রে প্রকাশ
‘মানসী’র যে কবিতাগুলি ‘ভারতী ও বালক’ পত্রিকায় প্রকাশিত, তাহার তালিকা নিম্নে দেওয়া গেল—
পৃষ্ঠা | কবিতা | প্রথম প্রকাশ | পত্রিকায় নামান্তর |
১৯ | ভুলে | আষাঢ় ১২৭৪ পৃ ১৬৪ | এসেছি ভুলে |
২৫ | বিরহানন্দ | জ্যৈষ্ঠ ১২৯৪ পৃ ৮৩ | বিফল মিলন[১৩] |
২৮ | ক্ষণিক মিলন | জ্যৈষ্ঠ ১২৯৪ পৃ ৮৩ | বিফল মিলন[১৪] |
৩০ | শূন্য হৃদয়ের আকাঙ্ক্ষা | শ্রাবণ ১২৭৪ পৃ ২০৩ | নূতন প্রেম[১৫] |
৬৯ | পত্র | বৈশাখ ১২৯৪ পৃ ৫৬ | |
৭৩ | সিন্ধুতরঙ্গ | শ্রাবণ ১২৯৪ পৃ ২০৩ | মগ্ন তরী[১৬] |
৭৯ | শ্রাবণের পত্র | আশ্বিন ১২৪৪ পৃ ৩৫২ | শ্রাবণে পত্র[১৭] |
৯৭ | জীবনমধ্যাহ্ন | বৈশাখ ১২৯৬ পৃ ৫৩ |
এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।
- ↑ দ্বিতীয় খণ্ড। রবীন্দ্র-রচনাবলী
- ↑ ১ রবীন্দ্রনাথের লেখা দুইখানি চিঠি।
- ↑ ১ রবীন্দ্রনাথের লেখা একখানি চিঠি।
তিনখানি পত্রই প্রমথ চৌধুরীকে লেখা;
এই গ্রন্থে অংশতঃ সংকলিত। - ↑ ইণ্ডিয়ান প্রেস -কর্তৃক প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে (১৯১৫ খৃস্টাব্দ) মুদ্রিত মানসী’তে ‘নিষ্ফল উপহার’ কবিতার এই রূপান্তরিত পাঠটি দেখা যায়। কথা ও কাহিনী’র ‘কাহিনী’ অংশে এই পাঠটিই কয়েকটি পরিবর্তন-সহ মুদ্রিত হইয়া থাকে।
- ↑ ২ উঠে গর্জি; ওঠে গর্জি: কথা ও কাহিনী
- ↑ হেরিছে: পাণ্ডুলিপি
- ↑ উত্তরিল: কথা ও কাহিনী
- ↑ সঁপিয়া: পাণ্ডুলিপি
- ↑ হাত: পাণ্ডুলিপি
- ↑ ধায়: পাণ্ডুলিপি এবং কথা ও কাহিনী
- ↑ অন্তরে: কথা ও কাহিনী
- ↑ আশুতোষ চৌধুরী
- ↑ ‘বিরহানন্দ’ কবিতায় ‘বিফল মিলন’ রচনাটির প্রথম ও দ্বিতীয় স্তবক বর্জন করিয়া অবশিষ্ট অংশ কিছু কিছু পরিবর্তনসহ গৃহীত হইয়াছে।
- ↑ ‘বিফল মিলন’এর দ্বিতীয় স্তবকটির সহিত ‘ক্ষণিক মিলন’ কবিতার তৃতীয় স্তবকের যথেষ্ট মিল আছে।
- ↑ ‘মানসী’তে সংকলন-কালে ‘নূতন প্রেম’এর তৃতীয় পঞ্চম ও সপ্তম স্তবক বর্জন ও অল্পস্বল্প পাঠপরিবর্তন করা হইয়াছে।
- ↑ ‘মানসী’র পাঠ পত্রিকায় প্রকাশিত পাঠ হইতে বহুশঃ ভিন্ন।
- ↑ ‘শ্রাবণের পত্র’ কবিতার সূচনায় অষ্টম ছত্রের পর সাময়িক পত্রিকায় ছিল—
রাজছত্র ফেলো শ্যাম এসো এই ব্রজধাম
কলিকাতা যার নাম কিম্বা ক্যাল্কাটা।
ঘুরেছিলে এইখেনে কত রোডে কত লেনে,
এইখেনে ফেলো এনে জুতোসুদ্ধ পা’টা।ঐরূপ এই গ্রন্থের ৮০ পৃষ্ঠায় নিম্ন হইতে গণনা করিলে চতুর্থ ও পঞ্চম ছত্রের অন্তরে পত্রিকায় যা ছিল—
আষাঢ় কাহার আশে বর্ষে বর্ষে ফিরে আসে,
নয়নের নীরে ভাসে দিবসরজনী!
আছে ভাব, নাই ভাষা— আছে শস্য, নাই চাষা—
আছে নস্য, নাই নাসা— এও যে তেমনি।‘ছিন্নপত্র’ গ্রন্থের অষ্টম পত্রে এই কবিতাটি আছে; ‘মানসী’ হইতে বর্জিত ছত্রগুলি সেখানে বাদ পড়ে নাই।