মা/প্রথম খণ্ড/আট

উইকিসংকলন থেকে

—আট—

 পেভেলের বাড়িটা মজুরদের মস্ত বড় একটা ভরসাস্থল হ’য়ে পড়লো। কোন অবিচার অত্যাচার হ’লেই মজুররা পেভেলের কাছে বুদ্ধি নিতে আসে। পেভেলকে সবাই শ্রদ্ধা করে, বিশেষত সেই ‘কাদামাথা পেনি’র গল্পটা বের হবার পর।...

 কারখানার পেছনে একটা জলাভূমি ছিল...বুনো গাছে ভর্তি...পচা জল···গরমের দিনে তা’ পচে দুর্গন্ধ হয়, মশা জন্মায়; ফলে, চারদিকে জ্বরের ধুম লেগে যায়। জায়গাটা অবশ্য কারখানার সম্পত্তি; নতুন ম্যানেজার এসে দেখলেন, জলাটা খুঁড়লে বেশ মোটা টাকার পিট্ মিলবে, কিন্তু খুঁড়তে বড় কম খরচ হবে না। অনেক ভেবে তিনি বিনা খরচায় কাজ হাসিল করার একটা চমৎকার মতলব ঠাওরালেন।

 পল্লির স্বাস্থ্যরক্ষাকল্পেই যখন জলাটা সাফ করা আবশ্যক তখন পল্লিবাসী মজুররাই ন্যায়ত তার খরচা বহন করতে বাধ্য; অতএব তাদের মজুরি থেকে রুবেলে এক কোপেক ক’রে এই বাবদ কেটে নেওয়া হবে। মজুররা তো একথা শুনেই ক্ষেপে উঠলো, বিশেষ ক’রে যখন দেখলো কর্তার পেয়ারের কেরানীবাবুরা এ ট্যাক্স থেকে রেহাই পেয়েছে।

 যেদিন এ হুকুম হয়, পেভেল সেদিন অসুস্থতার দরুণ কারখানায় অনুপস্থিত; কাজেই সে কিছুই জানতে পারলো না। পরদিন শিজভ্‌ এবং মাখোটিন ব’লে দু’জন মজুর তার কাছে এসে হাজির হ’ল, বললো, সবাই আমাদের তোমার কাছে পাঠিয়ে দিলো এই কথাটা জানতে যে, সত্যিই কি এমন কোনো আইন আছে যাতে ম্যানেজার কারখানার মশা তাড়াবার খরচা মজুরদের কাছ থেকে জুলুম ক’রে নিতে পারে। আছে এমন কোনো আইন? তিন বছরের কথা। সেবারও স্নানাগার তৈরি করার নাম ক’রে জোচ্চোররা এমনিভাবে ট্যাক্স্ বসিয়ে তিন হাজার আটশো রুবেল ঠকিয়ে নিয়েছিল। কোথায় এখন সে রুবেল, কোথায়-বা সে স্নানাগার!...

 পেভেল তাদের বেশ ক’রে বুঝিয়ে দিলো যে, এ আইন নয়, অত্যাচার! এতে শুধু পকেট ভারি হ’বে কারখানার মালিকের।

 মজুর দু’জন মুখ ভারি ক’রে চলে গেলো।

 তারা চ’লে যেতে মা হাসিমুখে বললেন, বুড়োরাও তোর কাছে বুদ্ধি নিতে আসা শুরু করেছে, পেভেল।

 পেভেল নিরুত্তরে কাগজ নিয়ে কি লিখতে বসলো। লেখা শেষ হ’লে মাকে বললো, এক্ষুণি শহরে গিয়ে এটা দিয়ে এসো।

 বিপদ আছে কিছু? মা প্রশ্ন করলেন।

 পেভেল বললো, হাঁ। শহরে আমাদের দলের যে কাগজ ছাপা হয় তার পরবর্তী সংখ্যায় এ ‘কাদা-মাখা পেনি’ গল্পটা বেরোনো চাই।

 যাচ্ছি এক্ষুণি, ব’লে মা গায়ের কাপড়টা ঠিক করে নিলেন। তাঁর যেন আনন্দ আর ধরে না। ছেলে এই প্রথম তাঁকে বিশ্বাস করে তাঁর ওপর জরুরী একটা কাজের ভার দিয়েছে। ছেলের কাজে তিনি লাগলেন এতদিনে।

 শহরে গিয়ে তিনি কার্যসিদ্ধি ক’রে ফিরে এলেন।

 তার পরের সোমবার—মাথা ধরেছে ব’লে পেভেল কারখানায় যায়নি। খেতে বসেছে, এমন সময় ফেদিয়া মেজিন ছু’টে এলো রুদ্ধশ্বাসে—তার মুখে উত্তেজনা এবং আনন্দ। বললো, এসো, কারখানা শুদ্ধ মজুর জেগে উঠেছে। তোমাকে ডাকতে পাঠালে তারা। শিজভ, মাখোটিন বলে, তোমার মতো করে আর কেউ বোঝাতে পারবে না। বাব্বা, কী কাণ্ড!

 পেভেল নীরবে পোশাক পরতে লাগলো।

 মেজিন বলতে লাগলো, মেয়েরা জড়ো হ’য়ে কী রকম চেঁচাচ্ছে দেখো।

 মা বললেন, তুই অসুস্থ, ওরা কি করছে কে জানে। চল, আমিও যাচ্ছি।

 পেভেল সংক্ষেপে বললো, চলো।

 নীরবে দ্রুতপদে তারা কারখানায় এসে উপস্থিত হ’ল। দুয়ারের কাছে মেয়েরা ভিড় ক’রে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ তীব্র কণ্ঠে আলোচনা চালিয়েছে। তাদের ঠেলে তিনজন কারখানার উঠানের ভেতরে এসে ঢুকলো। চারদিকে উত্তেজিত জনতার চীৎকার এবং আস্ফালন। শিজভ, মাখোটিন, ভিয়ালভ এবং আরো পাঁচ ছ’জন পাণ্ডা একটা পুরানো লৌহস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে হাত দুলিয়ে জনতাকে উত্তেজিত করছে;— সবার চোখ তাদের দিকে। হঠাৎ কে একজন চেঁচিয়ে উঠলো, পেভেল এসেছে।

 পেভেল? নিয়ে এসো।

 তৎক্ষণাৎ পেভেলকে ধ’রে ঠেলে নিয়ে যাওয়া হ’ল। মা একা পেছনে পড়ে রইলেন।

 চারদিকে কেবল শব্দ হ’তে লাগলো, চুপ, চুপ! অদূরে রাইবিনের গলা শোনা গেলো,···আমরা দাঁড়াব কোপকের জন্য নয়—ন্যায়ের জন্য। কোপেকের গায়ে যে অজচ্ছল রক্ত মাখানো, তার জন্য...

 জনতার কানে বেশ জোরে গিয়ে এ কথাটা পড়লো—সঙ্গে সঙ্গে জেগে উঠলো উত্তেজনাপূর্ণ চীৎকার, সাবাস রাইবিন, ঠিক বলেছ।

 আঃ, চুপ্‌ করনা।

 পেভেল এসেছে।

 সবগুলি কণ্ঠ একত্র মিলে সৃষ্টি হ’ল একটা তুমুল কোলাহল, সকলের শব্দ, বাষ্পের ফোঁসফোঁসানি, চামড়ার বেল্টের হাওয়াজ, সব তাতে ডুবে গেলো। চারদিক থেকে লোক ছুটে আসছে, হাত দোলাচ্ছে, তর্কাতর্কি করছে, তিক্ত তীক্ষ্ণ ভাষায় পরস্পরকে ক্ষেপিয়ে তুলছে। যে বেদনা এতদিন বের হবার কোন পথ পায়নি, শ্রান্ত বুকে চাপা রয়েছে, আজ তা’ জেগে উঠেছে, বের হতে চাচ্ছে, মুখ থেকে ফেটে পড়ছে বাক্যবাণে। আকাশে উঠছে বিরাট এক পাখীর মতো বিচিত্র পাখা দুলিয়ে, জনতাকে নখে জড়িয়ে টেনে-হিঁচড়ে, পরস্পর ঠোকাঠুকি ক’রে;—রোষ-রক্তিম অগ্নিশিখার মতো জীবন নিয়ে উদ্দীপ্ত হ’য়ে উঠেছে। জনতার মাথার উপর ধূলি এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী···সবার মুখে আগুন জ্বলছে, গাল বেয়ে পড়ছে ঘাম, কালো কালো ফোঁটায়—কালো মুখের মধ্য দিয়ে চোখ জ্বলছে, দাঁত চক্‌চক্ করছে।

 শিজভ, মাখোটিন যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখানে উঠে দাঁড়ালো পেভেল, তার কণ্ঠ থেকে ধ্বনিত হ’ল, কমরেড:

 কথাটা উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে পেভেলের মধ্যে জাগলো একটা অদম্য আত্মপ্রত্যয়, সংগ্রামেচ্ছা, জনতার কাছে হৃদয় খু’লে ধরার আগ্রহ।

 ‘কমরেড’—কথাটা তাকে আনন্দে, শক্তিতে উদ্বুদ্ধ ক’রে তুললো। ‘আমরা মজুররা গির্জা এবং কারখানা গড়ে তুলি, শৃঙ্খল বানাই, মুদ্রা তৈরি করি, পুতুল গড়ি, কলকব্জা নির্মাণ করি···আমরা সেই জীবন্ত শক্তি, যা’ আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত দুনিয়াকে বাঁচিয়ে রাখে—আহার এবং আনন্দ জুগিয়ে। সর্বকালে, সর্বস্থানে, কাজ করার বেলায় আমরাই সবার প্রথমে কিন্তু জীবনের অধিকারে সেই আমরাই সর্বপশ্চাতে। কে কেয়ার করে আমাদের? কে আমাদের ভালো করতে চায়? কে আমাদের মানুষ ব’লে স্বীকার করে?—কেউ না।

 জনতাও প্রতিধ্বনি ক’রে উঠলো, কেউ না।

 শান্ত, সংযত, গম্ভীর, সরল ভাষায় পেভেল বক্তৃতা দিতে লাগলো। জনতা ধীরে ধীরে তার কাছে ঘিঁষে এক কালো ঘন সহস্র-শির বপুর মতো হ’য়ে দাঁড়ালো, তাদের শত শত উৎসুক চোখ পেভেলের দিকে নিবদ্ধ। পেভেলের কথাগুলো যেন তারা নির্বাক আগ্রহে গিলছে। পেভেল বলতে লাগলো, শ্রেষ্ঠতর জীবন আমরা কিছুতেই লাভ করতে পারব না ততদিন—যতদিন না আমরা উপলব্ধি করি, আমরা কমরেড, আমরা বন্ধু, এক অভিন্ন সংকল্পে পরস্পরে বাঁধা—সে সংকল্প কি জানো?—আমাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম।

 মার কাছ থেকে কে একজন ব’লে উঠলো, কাজের কথা বলো।

 অমনি সঙ্গে সঙ্গে রব হ’ল, গোলমাল করো না, চুপ কর।

 একজন মন্তব্য করলো, সোশিয়ালিস্ট, কিন্তু বোকা নয়।

 আর একজন বললো, বেশ জোর গলায় বলছে কিন্তু।

 তারপর আবার পেভেলের গলা,—‘বন্ধুগণ, আজ দিন এসেছে, আমাদের শ্রমভোজী ঐ যে লোভী লক্ষপতির দল, ওদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হ’বে, আমাদের আত্মরক্ষা করতে হ’বে, বুঝতে হ’বে, আমাদের রক্ষা করতে পারব একমাত্র আমরা, অপর কেউ নয়। শত্রুকে যদি ধ্বংস করতে হয় তবে একমাত্র নীতি গ্রহণ করতে হবে আমাদের—প্রত্যেকের জন্য সকলে, সকলের জন্য প্রত্যেকে।

 মাখোটিন চীৎকার করে উঠলো, সাঁচ্চা কথা বলছে। শোন ভাইসব, সত্য কথা শোনো।

 পেভেল বললো, এক্ষুণি ম্যানেজারকে ডাকবো আমরা, ডেকে জিগ্যেস করব।

 পলকে যেন ঘূর্ণিবাত্যায় আহত হ’য়ে জনতা দুলে উঠলো, অজস্র কণ্ঠে চীৎকার হ’ল, ম্যনেজার! ম্যানেজার! সে এসে জবাব দিক।

 প্রতিনিধি পাঠাও।...তাকে এখানে হাজির কর।

 বহু বাদ-বিতর্কের পর প্রতিনিধি নির্বাচিত হ’ল শিজভ্‌, রাইবিন এবং পেভেল। তারা যাত্রা করবে, হঠাৎ জনতার মধ্যে জেগে উঠলো একটা অনুচ্চ ধ্বনি, ম্যানেজার নিজেই আসছে।

 জনতা দু’ফাঁক হ’য়ে পথ ক’রে দিলো, তার মধ্য দিয়ে ম্যানেজার ঢুকলেন। হাত ঈষৎ দুলিয়ে, লোক সরিয়ে পথ ক’রে নিচ্ছেন তিনি; কিন্তু কাউকে স্পর্শ করছেন না। লম্বা-চওড়া শরীর, কুঞ্চিত চোখ, শাসনকর্তাসুলভ তীক্ষ্ণ-সন্ধানী দৃষ্টি বিস্তার করে তিনি মজুরদের মুখ দেখে নিচ্ছেন। মজুররা সসম্ভ্রমে টুপি খুলে হাতে নিচ্ছে, তিনি তাদের অভিবাদন যেন অগ্রাহ্য ক’রে চলে যাচ্ছেন। তার উপস্থিতিতে জনতা চুপ করে গেলো, ঘাবড়ে গেলো। সবার মুখে উদ্বেগের হাসি, কণ্ঠে অস্ফুট ধ্বনি,—শিশু যেন তার ছেলেমির জন্য অনুতপ্ত। ম্যানেজার সেই লৌহস্তূপের ওপর পেভেল, শিজভের সামনে দাঁড়িয়ে নিস্তব্ধ জনতার দিকে চেয়ে বললেন, এসব হল্লার মানে কি? কাজ ফেলে এসেছ কেন?

 সব চুপ-চাপ। কয়েক সেকেণ্ড গেলো, কোন জবাব নেই। শিজভ মাথা নীচু করে দাঁড়ালো।

 ম্যানেজার বললে, যা’ জিগ্যেস করছি তার জবাব দাও।

 পেভেল তার সামনে এগিয়ে গিয়ে শিজভ্‌, রাইবিনকে দেখিয়ে বললো, আমরা এই তিন জন শ্রমিক-বন্ধুদের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছি, আপনাকে সেই কোপেক-ট্যাক্সটা রদ করতে বলার জন্য।

 কেন? পেভেলের দিকে না চেয়ে ম্যানেজার প্রশ্ন করলো।

 পেভেল বেশ জোরের সঙ্গেই বললো, এরকম ট্যাক্স আমরা ন্যায়সঙ্গত বলে মনে করিনা।

 ওঃ, তাহলে আমার জলা সাফ করবার প্রস্তাবটায় তুমি দেখতে পাচ্ছ শুধুই মজুরদের শোষণ করবার ফন্দি,—তাদের মঙ্গলেচ্ছা নয়। এই তো?

 হাঁ।

 আর, তুমি?—ম্যানেজার রাইবিনকে জিগ্যেস করলেন।

 আমারো ঐ একই কথা!

 শিজভকে প্রশ্ন করতে সেও ঐ জবাব দিলো।

 ম্যানেজার ধীরে ধীরে জনতার দিকে চেয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে পেভেলকে বিদ্ধ করে বললেন, তোমাকে দেখে বেশ চোখা লোক মালুম হচ্ছে। তুমি কি প্লানটার উপকারিতা বুঝতে পাচ্ছ না?

 পেভেল জোর গলায় বললো, আমরা বুঝতুম, কারখানার নিজের খরচে যদি জলা সাফ করা হ’ত।

 ম্যানেজার রুক্ষ জবাবে বললে, কারখানাটা দাতব্যাগার নয়। আমার হুকুম, এক্ষুণি—এই মুহূর্তে কাজে যাও। এই ব’লে কারও দিকে দৃকপাত না ক’রে ম্যানেজার নীচে নাবতে গেলেন।—জনতার মধ্য থেকে একটা অসন্তুষ্টির চাপা গুঞ্জন শুনে হঠাৎ তিনি দাঁড়িয়ে পড়ে বললেন, কী!

 সব চুপ চাপ। দুর থেকে একটি কণ্ঠ ভেসে এলো, তুমি নিজে কাজ করগে।

 ম্যানেজার স্পষ্ট ভাষায় বেশ একটু কড়া সুরে বললো, পনেরো মিনিটের মধ্যে যদি কাজ শুরু না কর তাহ’লে তোমাদের প্রত্যেককে বরখাস্ত করা হবে। এই বলে তিনি ভিড় ঠেলে বেরিয়ে গেলেন। তার যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সোরগোল উঠলো।

 ওঁকে বলোনা।

 ন্যায়বিচার চাইতে গিয়ে এই পেলুম...এতো দেখছি ফ্যাসাদ আরও বাড়লো।

 পেভেলের দিকে চেয়ে একজন চেঁচিয়ে বললো, কি হে মাতব্বর উকিল, এখন কি হবে? খুব তো বক্তৃতার পর বক্তৃতা দিচ্ছিলে, কিন্তু যেই ম্যানেজার এলো, অমনি সব ফাঁক্কা।

 তাইতো, কি করা যায় এখন?

 গোলমাল এমনি করে বেড়ে উঠতে পেভেল হাত তুলে বললো, বন্ধুগণ, আমি প্রস্তাব করি যে, কোপেক-ট্যাক্স বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট করে থাকি।

 জবাবে শোনা গেল উত্তেজিত কণ্ঠ কোলাহল, আমাদের বোকা পেয়েছ আর কি!

 আমাদের এই করা উচিত।

 ধর্মঘট?

 এক কোপেকের জন্য?

 না কেন? ধর্মঘট করব না?

 আমাদের দল সুদ্ধুর কাজ যাবে!

 তা’হলে কাজ করবে কে?

 নতুন লোকের অভাব কি।

 কারা? যুডাসেরা?

 ফি বছর মশা তাড়াবার জন্যে আমাদের ত তিন রুবেল ষাট কোপেক খরচ করতেই হয়।

 সবাইকেই তা’ দিতে হবে।

 পেভেল নেবে গিয়ে মার পাশটিতে দাঁড়ালো। রাইবিন তার কাছে এসে বললো, ওদের দিয়ে ধর্মঘট করাতে পারবে না। একটা পেনির ওপরও ওদের লোভ দুরন্ত, অত্যন্ত ভীতু ওরা; বড় জোর তিন’শকে তুমি দলে টানতে পারো, আর নয়। একগাদা গোবর কি একটা শলা দিয়ে তোলা যায়?

 পেলে চুপ ক’রে রইলো, মজুররা সব পেভেলের বাগ্মীতার প্রশংসা করলো কিন্তু ধর্মঘটের সাফল্যে সন্দেহ প্রকাশ ক’রে কাজে গিয়ে যোগ দিলো। পেভেল মন্‌মরা হ’য়ে পড়লো, তার মাথা ঘুরছে...আত্মশক্তিতে আর তার বিশ্বাস নেই। ভাবতে ভাবতে সে বাড়ি ফিরে এলো।

 সেইদিন রাত্রেই পেভেল গ্রেপ্তার হ’ল।