রূপসী বাংলা/৪৬
অবয়ব
(পৃ. ৫৬)
পৃথিবীর পথে আমি বহুদিন বাস ক’রে হৃদয়ের নরম কাতর
অনেক নিভৃত কথা জানিয়াছি; পৃথিবীতে আমি বহুদিন
কাটায়েছি; বনে বনে ডালপালা উড়িতেছে—যেন পরী জিন্
কথা কয়; ধূসর সন্ধ্যায় আমি ইহাদের শরীরের ’পর
খইয়ের ধানের মতো দেখিয়াছি ঝরে ঝর্ ঝর্
দু’-ফোঁটা মাঘের বৃষ্টি,—শাদা ধুলো জলে ভিজে হয়েছে মলিন,
ম্লান গন্ধ মাঠে ক্ষেতে—গুবরে পোকার তুচ্ছ বুক থেকে ক্ষীণ
অস্পষ্ট করুণ শব্দ ডুবিতেছে অন্ধকারে নদীর ভিতর:
এই সব দেখিয়াছি; দেখিয়াছি নদীটিরে—মজিতেছে ঢালু, অন্ধকারে;
সাপমাসী উড়ে যায়; দাঁড়কাক অশ্বত্থের নীড়ের ভিতর
পাখ্নার শব্দ করে অবিরাম; কুয়াশায় একাকী মাঠের ঐ ধারে
কে যেন দাঁড়ায়ে আছে: আরো দূরে দু’-একটা স্তব্ধ খোড়ো ঘর
প’ড়ে আছে; খাগড়ার বনে ব্যাং ডাকে কেন—থামিতে কি পারে;
(কাকের তরুণ ডিম পিছলায়ে প’ড়ে যায় শ্যাওড়ার ঝাড়ে।)