রূপসী বোম্বেটে/দ্বিতীয় খণ্ড/দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

উইকিসংকলন থেকে

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ


প্রায় তিন সপ্তাহ পরে ‘ডেন্‌লি কাস্‌ল’ ইংলণ্ডে পঁহুছিল। স্মিথ লণ্ডনে পদার্পণ করিয়াই বেকার স্ট্রীটে প্রভুর গৃহে যাত্রা করিল।

 স্মিথ গৃহকত্রী মিসেস্‌ বার্ডেলের নিকট শুনিল, মিঃ ব্লেক এ পর্য্যন্ত কোনও সংবাদ পাঠান নাই; তবে তাহার নামে একখানি টেলিগ্রাম আসিয়াছে।—মিসেস্‌ বার্ডেল তাহা টেবিলের উপর রাখিয়া দিয়াছিল।

 স্মিথ তৎক্ষণাৎ কক্ষান্তরে গিয়া টেবিল হইতে টেলিগ্রামখানি - লইয়া তাহা পাঠ করিল,

 “এস-এম্‌এর নিকট যাইবে।”

 মিঃ ব্লেকই যে এই টেলিগ্রাম পাঠাইয়াছেন, এ বিষয়ে স্মিথের কিছু মাত্র সন্দেহ রহিল না; সে মিসেস্‌ বার্ডেলকে কোনও কথা না বলিয়া ব্যগ্রভাবে গৃহত্যাগ করিল, এবং পথে আসিয়া একখানি গাড়ী লইয়া সিনর মেন্‌ডোজার সহিত সাক্ষাৎ করিতে চলিল। সে বুঝিয়াছিলএস—এ সিনর মেন্‌ডোজা ভিন্ন অন্য কেহ নহেন।

 সিনর মেন্‌ডোজা তখন আফিসে ছিলেন না, সুতরাং স্মিথ তাঁহার বাসগৃহে উপস্থিত হইল।

 স্মিথকে দেখিয়া সিনর সহাস্যে বলিলেন, “তোমাকে আমি অধিক বার না দেখিলেও চিনিয়াছি, তুমি মিঃ ব্লেকের সহকারী; কয়েক দিন হইতে তোমার প্রতীক্ষা করিতেছি। এস, আমার কন্যা কারমেনের সহিত তোমার পরিচয় করিয়া দিই।”  সিনর মেনডোজার কন্যা একখানি চেয়ারে বসিয়াছিলেন; তাঁহার মুখ অত্যন্ত বিষন্ন, তিনি স্নান, হাস্যে স্মিথকে অভিবাদন করিলেন। স্মিথ তাঁহার মর্ম্ম-পীড়ার কারণ জানিত, সহানুভূতিতে তাহার হৃদয় পূর্ণ হইল।

 দুই একটি কথার পর স্মিথ সিনর মেন্‌ডোজাকে তার আগমনের কারণ বলিল।

 সিনর মেন্‌ডোজা বলিলেন, “হাঁ, আমি তোমাকে দিবার জন্য একখানি পত্র পাইয়াছি বটে, মিঃ ব্লেকের অনুরোধ ছিল পত্রখানি যেন তোমার হাতে দেওয়া হয়।”—অনন্তর তিনি কন্যার দিকে চাহিয়া বলিলেন, “কারমেন্, আমাদের কোনও গোপনীয় পরামর্শ আছে, তোমার তাহা শুনিবার আবশ্যক নাই।”

 কারমেন তৎক্ষণাৎ উঠিয়া সেই কক্ষ ত্যাগ করিলেন।

 স্মিথ দ্বাররুদ্ধ করিয়া বলিল, “আপনার অনুমতি হইলে আমি পত্রখানি পাঠ করিতে পারি।”

 সিনর মেন্‌ডোজা বলিলেন, “সচ্ছন্দে; পত্রে মিঃ ব্লেক তোমাকে কি লিখিয়াছেন জানিবার জন্য আমারও বড় আগ্রহ হইয়াছে।”

 পত্রে গালা-মোহর করা ছিল। স্মিথ পত্রখানি খুলিয়া পাঠ করিতে লাগিল; অতি দীর্ঘ পত্র। পত্রখানি রুদ্ধ, নিঃশ্বাসে পাঠ করিয়া স্মিথ সিনর মেন্‌ডোজার বলিল, “মিঃ ব্লেক আমাকে লিখিয়াছেন, আমি ইচ্ছা করিলে এই পত্রের মর্ম্ম আপনার গোচর করিতে পারি। পত্রের প্রথমাংশে আমার সম্বন্ধে যে সকল ব্যক্তিগত কথা আছে, তাহা আপনাকে জ্ঞাপন করা অনাবশ্যক।—অন্যান্য যে সকল কথা আছে তাহাই শুনুন।”

 এই পত্রে মিঃ ব্লেক তাঁহার সাল্‌ভেরিটা-যাত্রার কাহিনী লিখিয়াছিলেন; তিনি কি ভাবে শক্র কর্তৃক আহত হইয়াছিলেন, সে কথাও ছিল। উপসংহারে তিনি জানাইয়াছিলেন, তিনি ফ্লোর-ডি-লিজ্‌ জাহাজের সন্ধানে যাত্রা করিলেন। তিনি ভাল্‌পারেসোতে একবার নামিয়া সেই জাহাজের সন্ধান লইবেন; তাহার পর সুভা পর্য্যন্ত যাইবেন।—স্মিথ সুভায় তাঁহার নিকট টেলিগ্রাম করিয়া যেন সৈয়দ বন্দরে গিয়া তাঁহার সংবাদের প্রতীক্ষা করে।

 স্মিথ পত্রখানি সিনর মেন্‌ডোজাকে শুনাইয়া তাহা পকেটে ফেলিল, তাহার পর তাঁহাকে বলিল, “মিঃ ব্লেক মনে করিয়াছেন, আমি সমুদ্রে ডুবিয়া মরিয়াছি; কিন্তু যদি কোন উপায়ে আমার প্রাণরক্ষা হয়, তাহা হইলে আমি লণ্ডনে ফিরিয়া আসিব তাহা-তিনি বুঝিয়াছিলেন; তাই অতঃপর আমার কি কর্ত্তব্য, তৎসম্বন্ধে উপদেশ দিয়াছেন। আজ রাত্রেই আমি সৈয়দ বন্দরে যাত্রা করিব।”

 সিনর মেন্‌ডোজা বলিলেন, “মিঃ ব্লেক অদ্ভুত মানুষ! এত অল্প সময়ের মধ্যে তিনি যে এই গুপ্ত রহস্যের সূত্র আবিস্কার করিতে পারিবেন, ইহা কল্পনা করি নাই। যাহা হউক, আমি তোমাকে একখানি পত্র দেখাইব, স্মরণ রাখিও—ইহা অতি গোপনীয় পত্র।”।

 সিনর মেন্‌ডোজা উঠিয়া ডেক্সের ভিতর হইতে একখানি পত্র বাহির করিলেন, এবং তাহা স্মিথের হাতে দিয়া বলিলেন, “পড়িয়া দেখ।” .

 আমেলিয়া কার্টার প্রেসিডেণ্ট পিয়ারসনের সহিত সাক্ষাতের পর সিনর মেন্‌ডোজা কন্যাকে যে পত্র লিখিয়াছিলেন,—ইহা সেই পত্র। পত্র পানি পাঠ করিয়া স্মিথের বিস্ময়ের সীমা রহিল না।

 পত্রপাঠ শেষ হইলে স্মিথ বলিল, “অদ্ভুত বটে! এই পত্র আপনি কত দিন ঘূর্ব্বে পাইয়াছেন?”

 সিনর মেন্‌ডোজা বলিলেন, “কাল পাইয়াছি। এই পত্র পাইয়াই বুঝিয়াছি, মিঃ ব্লেক জটিল রহস্যের প্রকৃত সন্ধান পাইয়াছেন, তিনি ঠিক পথেই চলিতেছেন। মিঃ ব্লেক আমাকে অনুরোধ করিয়াছিলেন, তিনি যে এই গুপ্ত রহস্য-ভেদের ভার লইয়াছেন, এ কথা যেন আমার কন্যার নিকটেও প্রকাশ না করি। কিন্তু আর ত’ কোন কথা তাহার নিকট গোপন করা চলে না! আমি মনে করিতেছি, সকল কথা তাহাকে খুলিয়া বলিব। এ সম্বন্ধে তোমার কি মত? আশা করি ইহাতে তোমার আপত্তি হইবে না।”

 স্মিথ বলিল, “আমি কি বলিব বলুন? মিঃ ব্লেক যে কথা আপনার। কন্যার নিকট প্রকাশ করিতে নিষেধ করিয়াছেন, আমি কি আপনাকে। সে অনুরোধের অন্যথা করিতে বলিতে পারি?”

 সিনর মেন্‌ডোজা বলিলেন, “তা বটে; কিন্তু আমার অনুমান, পাছে আমার কন্যা এ কথা অন্যের নিকট প্রকাশ করে, এই আশঙ্কায় মিঃ ব্লেক আমাকে এরূপ অনুরোধ করিয়াছিলেন। কিন্তু আমি নিশ্চয়ই বলিতে পারি, কারমেন্ এ কথা কাহারও নিকট প্রকাশ করিবে না। আমি মনে করিতেছি, আমি কারমেন্‌কে লইয়া তোমার সঙ্গে সৈয়দ বন্দর পর্যন্ত যাইব। এখানে থাকিলে মেয়েটা দুশ্চিন্তায় মারা যাইবে। পিয়ারসনের উদ্ধারের জন্য যে যথাসাধ্য চেষ্টা হইতেছে, ইহার প্রমাণ। পাইলেও যে অনেকটা সুস্থ হইবে। সৈয়দ বন্দরে উপস্থিত হইয়া তুমি মিঃ ব্লেককে টেলিগ্রাম করিয়া জানাইও—আমরাও তোমার সঙ্গে সেখানে গিয়াছি। এই সংবাদে যদি তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন, তাহা হইলে আমরা অবিলম্বে লণ্ডনে ফিরিয়া। আসিব। আর যদি তাঁহার আপত্তি না থাকে, তাহা হইলে,তাঁহার সহিত সাক্ষাতের জন্য তুমি যেখানে বাইবে, আমরাও সেইখানে যাই।” স্মিথ বলিল, “আপনার প্রস্তাব অসঙ্গত মনে হয় না; আশা করি মিঃ ব্লেকের ইহাতে আপত্তি হইবে না।”

 সিনর মেন্‌ডোজা জিজ্ঞাসা করিলেন, “এখান হইতে কবে যাত্রা করা তোমার ইচ্ছা?”

 স্মিথ বলিল, “মিঃ ব্লেকের উপদেশানুসারেই কাজ করিতে হইবে। তাঁহাকে সুভায় টেলিগ্রাম করিয়া আজ রাত্রেই চেয়ারিং-ক্রশ ষ্টেশনে ট্রেণে চাপিব।”

 সিনর মেন্‌ডোজা বলিলেন, “বেশ কথা। আমিও আমার কন্যাকে লইয়া আজই যাত্রার জন্য প্রস্তুত হইব। তুমি রাত্রে এখানে আসিয়া আহারাদি করিবে; তাহার পর তিনজনে একত্র যাইব।”

 স্মিথ উঠিয়া বলিল, “ধন্যবাদ মহাশয়; আপনার যেরূপ অভিপ্রায়, তাহাই হইবে।”

 স্মিথ সিনর মেন্‌ডোজার নিকট বিদায় লইয়া মিঃ ব্লেকের নিকট টেলিগ্রাম করিতে চলিল।—সে দিন সে অনেকটা নিশ্চিন্ত হইল।

  *  *  *  *

 সেইদিন রাত্রে স্মিথ, সিনর মেন্‌ডোজা ও তাঁহার কন্যা কারমেন্‌ তিনজনে সৈয়দ বন্দরে যাত্রা করিকার জন্য চেয়ারিং-ক্রশ ষ্টেশনে ট্রেণে চাপিলেন।

 যথাসময়ে সকলে সৈয়দ বন্দরে উপস্থিত হইলেন।—স্মিথ সেখানে মেলবোণ নগর হইতে মিঃ ব্লেকের এক সুদীর্ঘ টেলিগ্রাম পাইল। স্মিথ যে আটলাণ্টিক সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত হইয়া নিশ্চয়-মৃত্যুর কবল হইতে উদ্ধার লাভ করিয়াছে, এ সংবাদে মিঃ ব্লেক যৎপরোনাস্তি আনন্দ প্রকাশ করিয়া জানাইয়াছিলেন, তিনি বোম্বেটে জাহাজের সন্ধানে হংকং অভিমুখে যাত্রা করিলেন। তনি স্মিথকে অবিলম্বে তাঁহার অনুসরণ করিতে আদেশ দিয়াছিলেন।—তিনি আরও জানাইয়াছিলেন, সিনর মেন্‌ডোজা ও তাঁহার কন্যা যদি তাহার সহিত যাইবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন, তবে তাঁহাদের নিরাশ করিবার আবশ্যক নাই।

 এই সময় সৈয়দ বন্দর হইতে সিংহল দ্বীপের কলম্বো বন্দরে একখানি জাহাজ ছাড়িতেছিল। স্মিথ, সিনর মেন্‌ডোজা ও তাঁহার কন্যাসহ সেই জাহাজে উঠিয়া পড়িল। সিনর মেন্‌ডোজা জাহাজে উঠিয়া জানিতে পারিলেন, তাঁহারা কলম্বো বন্দরে উপস্থিত হইবার দুই দিন পূর্ব্বে একখানি জাহাজ কলম্বো হইতে হংকং যাত্রা করিবে। —সিনর মেন্‌ডোজা সেই জাহাজখানিকে তাঁহাদের প্রতীক্ষায় দুই দিন কলম্বোর বন্দরে আট্‌কাইয়া রাখিবার চেষ্টা করিলেন।—বহু মুদ্রা ব্যয়ে তাঁহার সে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হইল।

 কলম্বো বন্দরে পদার্পণ করিয়া তাঁহারা সেই হং-কং-গামী ষ্টীমারে: উঠিলেন। স্মিথ একাকী বাইলে এত শীঘ্র তাহার হং-কং-গামী জাহাজ পাইবার আশা ছিল না; সিনর মেন্‌ডোজার বিপুল অর্থব্যয়ে তাহার এই আশা পূর্ণ হইল দেখিয়া তাহার আনন্দের সীমা রহিল না; সে সিনর মেন্‌ডোজার অত্যন্ত পক্ষপাতী হইয়া উঠিল। মেন্‌ডোজার কন্য কারমেন্‌ও অনেকটা আশ্বস্ত হইলেন। জাহাজের উপর স্মিথ সেই সুন্দরী যুবতীর সহিত নানা গল্পে সময় কাটাইত। সে মিঃ ব্লেকের গোয়েন্দাগিরির অনেক অদ্ভুত গল্প বলিত; কিন্তু নিজের বাহাদুরীর কথা যতখানি পারিত গোপন করিত।

 জাহাজ হং-কংএ উপস্থিত হইলে স্মিথ জাহাজ হইতেই দেখিতে পাইল, মিঃ ব্লেক ‘টাইগার’কে সঙ্গে লইয়া জেঠিতে দাঁড়াইয়া আছেন। -জাহাজ জেঠির নিকটে অসিলে মিঃ ব্লেক জাহাজের উপর আসিয়া সিনর মেন্‌ডোজার অভ্যর্থনা করিলেন। স্মিথ শিশুর ন্যায় তাঁহাকে জড়াইয়া ধরিয়া অশ্রুত্যাগ করিতে লাগিল; সেই সকরুণ দৃশ্যে অনেকেরই চক্ষু অশ্রুপূর্ণ হইল।—টাইগার স্মিথের চারি দিকে ঘুরিয়া, তাহার পায়ে মাথা ঘসিয়া, লেজ নাড়িয়া আনন্দ প্রকাশ করিতে লাগিল।

 স্মিথ প্রথমে তাহার বিপদের কাহিনী বর্ণনা করিল।—স্মিথের কথা শেষ হইলে মিঃ ব্লেক তাঁহার কার্য্য-বিবরণ সক্ষেপে বর্ণনা করিয়া বলিলেন, “আমি আরোগ্য লাভ করিয়া সাল্‌ভেরিটা হইতে কর্শেয়ার জাহাজে পূর্ণ বেগে ভাল্‌পারেশোর দিকে চলিলাম। জাহাজখানি সেই বন্দরে এক স্নণ্টার জন্য থামাইয়া ছিলাম, কিন্তু সেখানে বোম্বটে জাহাজের কোনও সন্ধান করিয়া উঠিতে পারিলাম না; তখন পর্য্যন্ত তোমারও কোন সংবাদ নাই!—আমি বিমর্ষ চিত্তে আবার জাহাজ ছাড়িলাম।

 “বুঝিয়াছিলাম বোম্বেটে জাহাজ ফ্লোর-ডি-লিজ্‌ অনেক পূর্ব্বেই সেই পথে সুভায় গিয়াছে, সুতরাং আমি সুভায় উপস্থিত হইয়াও যে তাহাকে দেখিতে পাইব—সে আশা ত্যাগ করিলাম। এই নয় দিনের মধ্যে ফ্লোর-ডি-লিজ্‌ সুভা ছাড়িয়া কত দূর গিয়া পড়িবে, কে জানে? তথাপি সুভাতে কোনও সংবাদ পাইতে পারি ভাবিয়াই সেই দিক চলিলাম।

 “সুভায় উপস্থিত হইয়া জানিতে পারিলাম, ফোর-ডি-লিজ্‌ চারিদিন পূর্ব্বে সুভা হইতে মেলবোর্ণের দিকে যাত্রা করিয়াছে। কিন্তু আমি তাড়াতাড়ী তাহার অনুসরণ করিতে পারিলাম না; কর্শেয়ারের জীর্ণ-সংস্কারের আবশ্যক হইয়াছিল, সেই জন্য সেখানে কিছু বিলম্ব হইয়া গেল। ফ্লোর-ডি-লিজ্‌ প্রকৃতই বোম্বটে জাহাজ কি না তদ্বিদয়ে তখন পর্য্যন্ত নিঃসন্দেহ হইতে পারি নাই; আমি কেবল অনুমানে নির্ভর করিয়াই ছুটিতেছিলাম, এক এক সময় সন্দেহ হইত, হয় ত। আমি ভ্রান্তিবশে মরীচিকার অনুসরণ করিতেছি।

 “মেলবোর্নে গিয়া শুনিলাম, ফ্লোর-ডি-লিজের সুন্দরী আরোহিনী সেখানে কতকগুলি বৈজ্ঞানিক যন্ত্রাদি সংগ্রহ করিয়া হংকং অভিমুখে যাত্রা করিয়াছে। পরদিন আমিও হংকং যাত্রা করিলাম। হং-কংএ আসিয়া শুনিলাম, ফ্লোর-ডি-লিজ্‌ পূর্ব্ব-দিন ব্যাটেভিয়ার দিকে গিয়াছে। এইবার আমার সন্দেহ প্রতীতিতে পরিণত হইল; বুঝিলাম, ফ্লোর-ডি-লিজ্‌ আমার পূর্ব্ব-পরিচিত বোম্বেটে জাহাজ ভিন্ন অন্ কোনও জাহাজ নহে। ঝেম্বেটেদের, ধরিতে পারিলে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক রাজ্যের পোতাধ্যক্ষগণের আতঙ্ক দূর করিতে পারিব।”

 স্মিথ সিনর মেন্‌ডোজাকে বলিল “আপনি যে পত্রখানি আমাকে, দেখাইয়াছিলেন, তাহা কর্ত্তাকে দেখাইবেন না?”

 সিনর মেন্‌ডোজা বলিলেন, “তাই ত পত্রধানির কথা যে ভুলিই। গিয়াছিলাম! এখনই গুহা মিঃ ব্লেককে দেখাইতেছি।”

 সিনর মেন্‌ডোজা আমেলিয়ার লিখিত পত্রখানি কোটের পকেট হইতে বাহির করিয়া মিঃ ব্লেকের হস্তে প্রদান করিলেন।

 মিঃ ব্লেক একাগ্র মনে পত্রখুনি পাঠ করিলেন, তাহার পর মাথা তুলিয়া বলিলেন, “আমার অনুমান যে সত্য, এই পত্রই তাহার আর এক প্রমাণ। যেমন করিয়া হউক ফ্লোর-ডি-লিজ্‌ কে ধরিতেই হইবে।”

 সিনর মেন্‌ডোজা সসঙ্কোচে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে এ পুত্র লিখিয়াছে, তাহা বুঝিয়াছেন কি?—তাহার নাম বলিতে কোনও - বাধা আছে?”  মিঃ ব্লেক বলিলেন, “আপনি এখন ইহা জানিবার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করিবেন না, তাহাতে কোনও লাভ নাই। তবে আপনাকে এইমাত্র বলিতে পারি, যিনি এই পত্র লিখিয়াছেন, তাঁহার সহিত আমার পরিচয় আছে। তাঁহার বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা বিস্ময়কর; এমন, চাতুর্য্য, কার্য্যকুশলতা আমি আর কোথাও দেখি নাই। সময়ান্তরে আপনাকে সে সকল কথা জানাইব। আপনি পত্রখানি সঙ্গে আনিয়া আমার অনেক উপকার করিয়াছেন; এখন আমি নিঃসন্দেহে কার্য্যক্ষেত্রে অবতরণ করতে পারিব। জাহাজ ছাড়িবার আর বিলম্ব নাই; আসুন, আমরা হং-কংএর নিকট বিদায় গ্রহণ করি।”