লেখন/পরিশিষ্ট

উইকিসংকলন থেকে

লুয়া ত্রুটি মডিউল:Header_template এর 348 নং লাইনে: bad argument #1 to 'next' (table expected, got nil)।  লেখন বাংলা ১৩৩৩ সনে যুরোপে মুদ্রিত ও ১৩৩৪ সালে এ দেশে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থ সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথ প্রবাসীতে যে প্রবন্ধ প্রকাশ করেন তাহা এ স্থলে সংকলিত হইল।—

‘লেখন’


 যখন চীনে জাপানে গিয়েছিলেম প্রায় প্রতিদিনই স্বাক্ষরলিপির দাবি মেটাতে হত। কাগজে, রেশমের কাপড়ে, পাখায় অনেক লিখতে হয়েছে। সেখানে তারা আমার বাংলা লেখাই চেয়েছিল, কারণ বাংলাতে এক দিকে আমার, আবার আর-এক দিকে সমস্ত বাঙালী জাতিরই স্বাক্ষর। এমনি করে যখন-তখন পথে-ঘাটে যেখানে-সেখানে দু-চার লাইন কবিতা লেখা আমার অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। এই লেখাতে আমি আনন্দও পেতুম। দু-চারটি বাক্যের মধ্যে এক-একটি ভাবকে নিবিষ্ট করে দিয়ে তার যে-একটি বাহুল্যবর্জিত রূপ প্রকাশ পেত তা আমার কাছে বড়ো লেখার চেয়ে অনেক সময় আরো বেশি আদর পেয়েছে। আমার নিজের বিশ্বাস বড়ো বড়ো কবিতা পড়া আমাদের অভ্যাস বলেই কবিতার আয়তন কম হলে তাকে কবিতা বলে উপলব্ধি করতে আমাদের বাধে। অতিভোজনে যারা অভ্যস্ত, জঠরের সমস্ত জায়গাটা বোঝাই না হলে আহারের আনন্দ তাদের অসম্পূর্ণ থাকে; আহার্যের শ্রেষ্ঠতা তাদের কাছে খাটো হয়ে যায় আহারের পরিমাণ পরিমিত হওয়াতেই। আমাদের দেশে পাঠকদের মধ্যে আয়তনের উপাসক অনেক আছে— সাহিত্য সম্বন্ধেও তারা বলে: নাল্পে সুখমস্তি। নাট্য সম্বন্ধেও তারা রাত্রি তিনটে পর্যন্ত অভিনয় দেখার দ্বারা টিকিট কেনার সার্থকতা বিচার করে।

 জাপানে ছোটো কাব্যের অমর্যাদা একেবারেই নেই। ছোটোর মধ্যে বড়োকে দেখতে পাওয়ার সাধনা তাদের— কেননা, তারা জাত-আর্টিস্ট্। সৌন্দর্য-বস্তুকে তারা গজের মাপে বা সেরের ওজনে হিসাব করবার কথা মনেই করতে পারে না। সেই জন্যে জাপানে যখন আমার কাছে কেউ কবিতা দাবি করেছে, দুটি-চারটি লাইন দিতে আমি কুণ্ঠিত হইনি। তার কিছুকাল পূর্বেই আমি যখন বাংলাদেশে গীতাঞ্জলি প্রভৃতি গান লিখছিলুম, তখন আমার অনেক পাঠকই লাইন গণনা করে আমার শক্তির কার্পণ্যে হতাশ হয়েছিলেন— এখনো সে দলের লোকের অভাব নেই।

 এইরকম ছোটো ছোটো লেখায় একবার আমার কলম যখন রস পেতে লাগল তখন আমি অনুরোধ নিরপেক্ষ হয়েও খাতা টেনে নিয়ে আপন মনে যা-তা লিখেছি এবং সেই সঙ্গে পাঠকদের মন ঠাণ্ডা করবার জন্যে বিনয় করে বলেছি—


আমার লিখন ফুটে পথধারে
ক্ষণেক কালের ফুলে,
চলিতে চলিতে দেখে যারা তারে
চলিতে চলিতে ভুলে।

 কিন্তু ভেবে দেখতে গেলে এটা ক্ষণিক কালের ফুলের দোষ নয়, চলতে চলতে দেখারই দোষ। যে জিনিষটা বহরে বড়ো নয় তাকে আমরা দাঁড়িয়ে দেখি নে, যদি দেখতুম তবে মেঠো ফুল দেখে খুশি হলেও লজ্জার কারণ থাকত না। তার চেয়ে কুমড়োফুল যে রূপে শ্রেষ্ঠ তা নাও হতে পারে।

 গেলবারে যখন ইটালিতে গিয়েছিলুম, তখন স্বাক্ষরলিপি খাতায় অনেক লিখতে হয়েছিল। লেখা যাঁরা চেয়েছিলেন তাঁদের অনেকেরই ছিল ইংরেজি লেখারই দাবি। এবারেও লিখতে লিখতে কতক তাঁদের খাতায় কতক আমার নিজের খাতায় অনেকগুলি ওইরকম ছোটো ছোটো লেখা জমা হয়ে উঠল। এইরকম অনেক সময়ই অনুরোধের খাতিরে লেখা শুরু হয়, তার পরে রোক চেপে গেলে আর অনুরোধের দরকার থাকে না।

 জার্মানিতে গিয়ে দেখা গেল, এক উপায় বেরিয়েছে তাতে হাতের অক্ষর থেকেই ছাপানো চলে। বিশেষ কালী দিয়ে লিখতে হয় এল্যুমিনিয়মের পাতের উপরে, তার থেকে বিশেষ ছাপার যন্ত্রে ছাপিয়ে নিলেই কম্পোজিটারের শরণাপন্ন হবার দরকার হয় না।

 তখন ভাবলেম, ছোটো লেখাকে যাঁরা সাহিত্য হিসাবে অনাদর করেন তাঁরা কবির স্বাক্ষর হিসাবে হয়তো সেগুলোকে গ্রহণ করতেও পারেন। তখন শরীর যথেষ্ট অসুস্থ, সেই কারণে সময় যথেষ্ট হাতে ছিল, সেই সুযোগে ইংরেজি বাংলা এই ছুটকো লেখাগুলি এল্যুমিনিয়ম পাতের উপর লিপিবদ্ধ করতে বসলুম।

 ইতিমধ্যে ঘটনাক্রমে আমার কোনো তরুণ বন্ধু বললেন, ‘আপনার কিছুকাল পূর্বেকার লেখা কয়েকটি ছোটো ছোটো কবিতা আছে। সেইগুলিকে এই উপলক্ষে যাতে রক্ষা করা হয় এই আমার একান্ত অনুরোধ।’

 আমার ভোলবার শক্তি অসামান্য এবং নিজের পূর্বের লেখার প্রতি প্রায়ই আমার মনে একটা অহেতুক বিরাগ জন্মায়। এই জন্যই তরুণ লেখকরা সাহিত্যিক পদবী থেকে আমাকে যখন বরখাস্ত করবার জন্যে কানাকানি করতে থাকেন তখন আমার মন আমাকে পরামর্শ দেয় যে, ‘আগেভাগে নিজেই তুমি মানে মানে রেজিগ্‌নেশন-পত্র পাঠিয়ে যৎসামান্য কিছু পেন্‌সনের দাবি রেখে দাও।’ এটা যে সম্ভব হয় তার কারণ আমার পূর্বেকার লেখাগুলো আমি যে পরিমাণে ভুলি সেই পরিমাণেই মনে হয় তারা ভোলবারই যোগ্য।

 তাই প্রস্তুত হয়েছিলেম, আমার বন্ধু পুরোনো ইতিহাসের ক্ষেত্র থেকে উঞ্ছস্বরূপ যা-কিছু সংগ্রহ করে আনবেন আবার তাদেরকে পুরোনোর তমিস্রলোকে বৈতরণী পার করে ফেরত পাঠাব।

 গুটিপাঁচেক ছোটো কবিতা তিনি আমার সম্মুখে উপস্থিত করলেন। আমি বললেম ‘কিছুতেই মনে পড়বে না এগুলি আমার লেখা’, তিনি জোর করেই বললেন, ‘কোনো সংশয় নেই।’

 আমার রচনা সম্বন্ধে আমার নিজের সাক্ষ্যকে সর্বদাই অবজ্ঞা করা হয়। আমার গানে আমি সুর দিয়ে থাকি। যাকে হাতের কাছে পাই তাকে সেই সদ্যোজাত সুর শিখিয়ে দিই, তখন থেকে সে গানের সুরগুলি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমার ছাত্রের। তার পর আমি যদি গাইতে যাই তারা এ কথা বলতে সংকোচমাত্র করে না যে, আমি ভুল করছি। এ সম্বন্ধে তাদের শাসন আমাকে বারবার স্বীকার করে নিতে হয়।

 কবিতা কয়টি যে আমারই সেও আমি স্বীকার করে নিলেম। পড়ে বিশেষ তৃপ্তি বোধ হল— মনে হল ভালোই লিখেছি। বিস্মরণশক্তির প্রবলতা-বশত নিজের কবিতা থেকে নিজের মন যখন দূরে সরে যায় তখন সেই কবিতাকে অপর সাধারণ পাঠকের মতোই নিরাসক্তভাবে আমি প্রশংসা এবং নিন্দাও করে থাকি। নিজের পুরোনো লেখা নিয়ে বিস্ময় বোধ করতে বা স্বীকার করতে আমার সংকোচ হয় না— কেননা, তার সম্বন্ধে আমার অহমিকার ধার ক্ষয় হয়ে যায়। পড়ে দেখলাম—


তোমারে ভুলিতে মোর হল না যে মতি,
এ জগতে কারো তাহে নাই কোনো ক্ষতি।
আমি তাহে দীন নাহি, তুমি নহ ঋণী,
দেবতার অংশ তাও পাইবেন তিনি।

 নিজের লেখা জেনেও আমাকে স্বীকার করতে হল যে, ছোটোর মধ্যে এই কবিতাটি সম্পূর্ণ ভরে উঠেছে। পেটুকচিত্ত পাঠকের পেট ভরাবার জন্যে একে পঁচিশ-ত্রিশ লাইন পর্যন্ত বাড়িয়ে তোলা যেতে পারত— এমন-কি, একে বড়ো আকারে লেখাই এর চেয়ে হত সহজ। কিন্তু লোভে পড়ে একে বাড়াতে গেলেই একে কমানো হত। তাই নিজের অলুব্ধ কবিবুদ্ধির প্রশংসাই করলেম।

 তার পরে আর-একটা কবিতা—


ভোর হতে নীলাকাশ ঢাকে কালো মেঘে,
ভিজে ভিজে এলোমেলো বায়ু বহে বেগে।
কিছুই নাহি যে হায় এ বুকের কাছে—
যা-কিছু আকাশে আর বাতাসেতে আছে।

 আবার বললেম, শাবাশ! হৃদয়ের ভিতরকার শূন্যতা বাইরের আকাশ-বাতাস পরিপূর্ণ করে হাহাকার করে উঠছে একথাটা এত সহজে এমন সম্পূর্ণ করে বাংলা সহিত্যে আর কে বলেছে? ওর উপরে আর একটি কথাও যোগ করবার জো নেই। ক্ষীণদৃষ্টি পাঠক এতটুকু ছোটো কবিতার সৌন্দর্য দেখতে পাবে না জেনেও আমি যে নিজের লেখনীকে সংযত করেছিলেম এজন্যে নিজেকে মনে মনে বলতে হল, ধন্য!

 তার পরে আর-একটি কবিতা—


আকাশে গহন মেঘে গভীর গর্জন,
শ্রাবণের ধারাপাতে প্লাবিত ভুবন।

কেন এতটুকু নামে সোহাগের ভরে
ডাকিলে আমারে তুমি? পূর্ণ নাম ধরে
আজি ডাকিবার দিন, এহেন সময়
শরম সোহাগ হাসি কৌতুকের নয়।
আঁধার অম্বর পৃথ্বী পথচিহ্নহীন,
এল চিরজীবনের পরিচয়-দিন।

 ‘মানসী’ লেখবার যুগে— সে আজকের কথা নয়— এই ভাবের দুই একটা কবিতা লিখেছিলেম বলে মনে পড়ে। কিন্তু কোন্ অণিমাসিদ্ধি দ্বারা ভাবটি তনু আকারেই সম্পূর্ণ হয়ে প্রকাশ পেয়েছে!

 আর-একটি ছোটো কবিতা—


প্রভু, তুমি দিয়েছ যে ভার
যদি তাহা মাথা হতে
এই জীবনের পথে
নামাইয়া রাখি বার বার
জেনো তা বিদ্রোহ নয়,
ক্ষীণ শ্রান্ত এ হৃদয়,
বলহীন পরান আমার।

 লেখাটি একেবারেই নিরাভরণ বলেই এর ভিতরকার বেদনা যেন বৃষ্টিক্লান্ত জুঁইফুলের মতো ফুটে উঠেছে।

 আমি বিশেষ তৃপ্তি এবং গর্বের সঙ্গেই এই কবিতা কয়টি এল্যুমিনিয়মের পাতের উপর স্বহস্তে নকল করে নিলেম। যথাসময়ে আমার অন্যান্য কবিতিকার সঙ্গে এ-কয়টিও আমার লেখন-নামধারী গ্রন্থে প্রকাশিত হয়ে গেল।


 আজ প্রায় মাস-খানেক পূর্বে কল্যাণীয়া শ্রীমতী প্রিয়ম্বদাদেবীর কাছে ‘লেখন’ একখণ্ড পাঠিয়ে দিয়েছিলেম। তিনি যে পত্র লিখেছেন সেটা উদ্ধৃত করে দিই—

 ‘লেখন’ পড়লাম। এর কতকগুলি ছোটো ছোটো কবিতা বড়ো চমৎকার— দু-চার ছত্রে সম্পূর্ণ। কিন্তু যেন এক-একটি সুসংস্কৃত মণি, আলো ঠিকরে পড়ছে। লেখনে দেখলাম ২৩ এর পৃষ্ঠায় আমার চারটি কবিতা সম্পূর্ণ গেছে, আর একটির প্রথম দু লাইন।’ যথা—


১. তোমারে ভুলিতে মোর হল নাকো মতি
২. ভোর হতে নীলাকাশ ঢাকা ঘন মেঘে

৩. আকাশে গহন মেঘে গভীর গর্জন
৪. প্রভু তুমি দিয়েছ যে ভার
৫. শুধু এইটুকু সুখ অতি সুকুমার (প্রথম দু লাইন)[১]

 সবগুলিই ‘পত্রলেখা’য় ছাপা হয়ে গিয়েছে, ১৯০৮ সালে। তবে এ নিয়ে আর কাউকে যেন কিছু বলেবেন না।


 তখন আমার মনে পড়ল যখন ‘পত্রলেখা’র পাণ্ডুলিপি প্রথম আমি পড়ে দেখি তখন প্রিয়ম্বদার বিরলভূষণ বাহুল্যবর্জিত কবিতার আমি যথেষ্ট সাধুবাদ দিয়েছি। বোধ করি, সেই কারণেই কবিতাগুলি যথোচিত সম্মান লাভ করে নি। অন্তত ‘পত্রলেখা’র কয়েকটি কবিতা সম্বন্ধে আমার ভ্রান্তিকে[২] নিজের হাতের অক্ষরে আমার আপন রচনার মধ্যে স্থান দিয়ে তাঁর কবিতার প্রতি সমাদর প্রকাশ করতে পেরেছি বলে খুশি হলেম।

—রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রবাসী, কার্তিক ১৩৩৫

জন্মশতবর্ষে ‘লেখন’ বিশ্বভারতীর সংস্করণে বিশ্বভারতীর গ্রন্থনবিভাগের প্রসঙ্গকথা

 এই প্রসঙ্গে এ কথা উল্লেখ করা যাইতে পারে যে, বস্তুতঃ ‘চীনে জাপানে’ ‘এই লেখনগুলি শুরু’ হয় নাই, চীনে জাপানে যাইবার পূর্বেও কবিকে ‘স্বাক্ষরলিপির দাবি’ বহুবার মিটাইতে হইয়াছে, তাহা ছাড়া লেখনের সব কবিতাই এইরূপ অন্যের দাবির বশে রচিত হয় নাই। লেখনের শেষাংশে, ‘একা একা শূন্যমাত্র নাহি অবলম্ব’ হইতে শেষ পর্যন্ত, অধিকাংশ কবিতা ১৯১২-১৩ সালে বিদেশভ্রমণের সময় জাহাজে, আরোগ্যশালায়, নানা স্থানে রচিত। এই কবিতাগুচ্ছ ‘দ্বিপদী’ নামে ১৩২০ সালের প্রবাসীতে মুদ্রিত।

 ১৩৩৪ সালে লেখন প্রকাশিত হইবার পরেও, উহার অনেকগুলি খুচরা পৃষ্ঠা উদ্বৃত্ত থাকে। রবীন্দ্রনাথের হস্তাক্ষরে মুদ্রিত গ্রন্থ অল্পাধিক অসম্পূর্ণ হইলেও আদরণীয় হইবে মনে করিয়া, ১৩৫৮ সালের ৭ই পৌযে শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ের পঞ্চাশদ্বর্ষপূর্তি উৎসব উপলক্ষে অসম্পূর্ণ লেখনের ঐরূপ কতকগুলি কপি পুনঃপ্রচারিত হয়।


রবীন্দ্রশতবর্ষপূর্তি উৎসব উপলক্ষে বর্তমানে লেখন গ্রন্থের এই নূতন সংস্করণ প্রকাশিত হইল। কলিকাতা স্কুল অব প্রিণ্টিং টেক্‌নলজির কর্তৃপক্ষ অনুগ্রহপূর্বক বিনামূল্যে এই গ্রন্থের প্রতিলিপি প্রস্তুত ও মুদ্রণের ব্যবস্থা করিয়া দিয়াছেন,তাহারই ফলে সুলভ মূল্যে এই সংস্করণ প্রচার করা সম্ভবপর হইল; এই আনুকূল্য ও সহযোগিতার জন্য বিশ্বভারতী উক্ত বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ, ছাত্রবৃন্দ ও শিক্ষকগণের নিকট কৃতজ্ঞ।

  1. এই পাঁচটি কবিতাই রবীন্দ্ররচনাবলীর চতুর্দশ খণ্ডে সংকলিত ‘লেখন’ এবং লেখন কাব্যের বর্তমান সংস্করণ হইতে বর্জিত। কবিতা-কয়টি ১৩০৯ সনের বঙ্গদর্শনে লেখক বা লেখিকার নাম বাদ দিয়াই মুদ্রিত হয়।

     প্রিয়ম্বদাদেবীর পত্রলেখা কাব্যের (পৃ ৬১) ‘বিসর্জ্জন’ কবিতা—


    এতটুকু ক্ষণিকের সুখ সুকুমার
    তারি তরে কি আগ্রহ কত হাহাকার?
    সকলি গিয়াছে চলে, অত টুকু হায়
    অবোধ শিশুর মত রেখনা লুকায়
    প্রাণপণে ক্ষীণবল মুঠির ভিতরে—
    হাত খুলে সমুখেতে দাও তুলে ধরে
    নিষ্ঠুর নিয়তি ধীরে প্রশান্ত হৃদয়ে
    সর্ব্ব অবশেষ টুকু যাক্ কেড়ে লয়ে।

    রবীন্দ্রনাথ-সম্পাদিত ১৩০৯ আশ্বিন বঙ্গদর্শন পত্রে (পৃ ৩২৫) মুদ্রিত, উহার রূপান্তরিত পাঠ—


    শুধু এইটুকু সুখ, অতি সুকুমার,
    তারি তরে কি আগ্রহ, কত হাহাকার।
    সকলি গেছে ত চলে, এইটুকু বাকি,
    অবোধ শিশুর মত রাখিয়ো না ঢাকি’।
    স্থির হয়ে সহ্য কর পরিপূর্ণ ক্ষতি,
    শেষটুকু নিয়ে যাক্ নিষ্ঠুর নিয়তি।

    লেখন কাব্যের জন্য ধাতুপত্রে অনুলেখন-সময়ে বঙ্গদর্শনে-মুদ্রিত ‘বিসর্জ্জন’ কবিতারও মাঝের দুটি ছত্র ত্যাগ করা হয়, ইহা ছাড়া ‘কি’ স্থানে ‘কী’, ‘কর’ স্থানে ‘করো’ প্রভৃতি আক্ষরিক পরিবর্তনও ছিল ইহা বলাই বাহুল্য।

     প্রসঙ্গক্রমে বলা চলে, পত্রলেখা ও লেখনের তুলনা করিলে বর্তমান তালিকার প্রথম, তৃতীয় এবং চতুর্থ কবিতায় পরিবর্তন অতি অল্পই দেখা যায়; কিন্তু পঞ্চম কবিতার ন্যায় বিশেষভাবে পরিবর্তিত হয় দ্বিতীয় কবিতাটি, পত্রলেখার ছয়-ছত্র হইতে (পৃ ১৯) বঙ্গদর্শনে (কার্তিক ১৩০৯) বা লেখনে মাঝের দুইটি ছত্র বর্জিত।

  2. ভ্রান্তিতে?


^**  প্রথম সুরঞ্জনা প্রকাশনীর সংস্করণে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিক সংস্করণকেই অনুসরণ করা হল।
—প্রকাশিকা