শিশু/অস্তসখী

উইকিসংকলন থেকে

অস্তসখী

রজনী একাদশী  পোহায় ধীরে ধীরে,
রঙিন মেঘমালা  উষারে বাঁধে ঘিরে।
আকাশে ক্ষীণ শশী  আড়ালে যেতে চায়,
দাঁড়ায়ে মাঝখানে  কিনারা নাহি পায়॥

এ-হেন কালে যেন  মায়ের পানে মেয়ে
রয়েছে শুকতারা  চাঁদের মুখে চেয়ে।
কে তুমি মরি মরি,  একটুখানি প্রাণ-
এনেছ কী না জানি  করিতে ওরে দান॥

মহিমা যত ছিল  উদয়-বেলাকার
যতেক সুখসাথী  এখনি যাবে যার,
পুরানো সব গেল—  নূতন তুমি একা
বিদায়কালে তারে  হাসিয়া দিলে দেখা॥

ও চাঁদ যামিনীর  হাসির অবশেষ,
ও শুধু অতীতের  সুখের স্মৃতিলেশ,
তারারা দ্রুতপদে  কোথায় গেছে সরে-
পারে নি সাথে যেতে,  পিছিয়ে আছে পড়ে॥

তাদেরি পানে ও যে  নয়ন ছিল মেলি,
তাদেরি পথে ও যে  চরণ ছিল ফেলি,

এমন সময়ে কে  ডাকিলে পিছু-পানে
একটি আলোকেরি  একটু মৃদু গানে॥

গভীর রজনীর  রিক্ত ভিখারিকে
ভোরের বেলাকার  কী লিপি দিলে লিখে
সোনার-আভা-মাখা  কী নব আশাখানি
শিশিরজলে ধুয়ে  তাহারে দিলে আনি॥

অস্ত-উদয়ের  মাঝেতে তুমি এসে
প্রাচীন নবীনেরে  টানিছ ভালোবেসে—
বধূ ও বর রূপে  করিলে এক-হিয়া
করুণ কিরণের  গ্রন্থি বাঁধি দিয়া॥

[আলমোড়া
১ ভাদ্র? ১৩১০]