সঞ্চয়িতা/আমার ফুলবাগানের ফুলগুলিকে

উইকিসংকলন থেকে

আমার ফুলবাগানের ফুলগুলিকে

আমার ফুলবাগানের ফুলগুলিকে বাঁধব না আজ তোড়ায়—
রঙবেরঙের সুতোগুলো থাক্‌,
থাক্ পড়ে ওই জরির ঝালর।
শুনে ঘরের লোকে বলে,
‘যদি না বাঁধো জড়িয়ে জড়িয়ে
ওদের ধরব কী করে—

ফুলদানিতে সাজাব কোন্ উপায়ে?’
আমি বলি,
‘আজকে ওরা ছুটি পাওয়া নটী,
ওদের উচ্চহাসি অসংযত,
ওদের এলোমেলো হেলাদোলা
বকুলবনে অপরাহ্ণে,
চৈত্রমাসের পড়ন্ত রৌদ্রে।
আজ দেখো ওদের যেমন-তেমন খেলা,
শোনো ওদের যখন-তখন কলধ্বনি,
তাই নিয়ে খুশি থাকো।’

বন্ধু বললে,
‘এলেম তোমার ঘরে
ভরা-পেয়ালার তৃষ্ণা নিয়ে
তুমি খেপার মতে। বললে,
আজকের মতো ভেঙে ফেলেছি
ছন্দের সেই পুরোনো পেয়ালাখানা!
আতিথ্যের ত্রুটি ঘটাও কেন?’
আমি বলি, ‘চলো-না ঝর্নাতলায়,
ধারা সেখানে ছুটছে আপন খেয়ালে—
কোথাও মোটা, কোথাও সরু।
কোথাও পড়ছে শিখর থেকে শিখরে,
কোথাও লুকোলো গুহার মধ্যে।
তার মাঝে মাঝে মোটা পাথর
পথ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বর্বরের মতো,
মাঝে মাঝে গাছের শিকড়
কাঙালের মতো ছড়িয়েছে আঙুলগুলো—
কাকে ধরতে চায় ওই জলের ঝিকিমিকির মধ্যে!’

সভার লোকে বললে,
‘এ যে তোমার আবাঁধা বেণীর বাণী—
বন্দিনী সে গেল কোথায়?’
আমি বলি, ‘তাকে তুমি পারবে না আজ চিনতে;
তার সাতনলী হারে আজ ঝলক নেই,
চমক দিচ্ছে না চুনি-বসানো কঙ্কণে।’
ওরা বললে, ‘তবে মিছে কেন?
কী পাব ওর কাছ থেকে?’
আমি বলি, ‘যা পাওয়া যায় গাছের ফুলে—
ডালে-পালায় সব মিলিয়ে।
পাতার ভিতর থেকে তার রঙ দেখা যায় এখানে সেখানে,
গন্ধ পাওয়া যায় হাওয়ার ঝাপ্‌টায়।
চার দিকের খোলা বাতাসে দেয় একটুখানি নেশা লাগিয়ে
মুঠোয় ক’রে ধরবার জন্যে সে নয়,
তার অসাজানো আটপহুরে পরিচয়কে
অনাসক্ত হয়ে মানবার জন্যে
তার আপন স্থানে।’