সুকুমার রায় সমগ্র রচনাবলী (দ্বিতীয় খণ্ড)/কবিতাগুচ্ছ/মূর্খমাছি

উইকিসংকলন থেকে

মূর্খমাছি





মাকড়সা । সানবাঁধা মোর আঙিনাতে——
জাল বুনেছি কালকে রাতে,
ঝুল ঝেড়ে সব সাফ করেছি বাসা ।
আয়-না মাছি, আমার ঘরে
আরাম পাবি বসলে পরে,
ফরাস পাতা দেখবি কেমন খাসা ।


মাছি । থাক্, থাক্, থাক্, আর বলে না,
আনকথাতে মন গলে না——
ব্যবসা তোমার সবার আছে জানা ।
ঢুকলে তোমার জালের ঘেরে,
কেউ কোনোদিন আর কি ফেরে ?
বাপ্ রে ! সেথায় ঢুকতে মোদের মানা ।



মাকড়সা । হাওয়ায় দোলে জালের দোলা,
চারদিকে তার জাল‌্না খোলা,
আপনি ঘুমে চোখ যে আসে জুড়ে !
আয়-না হেথা, হাত পা ধুয়ে
পাখনা মুড়ে থাক্-না শুয়ে—
ভন্ ভন্ ভন্, মরবি কেন উড়ে ?


মাছি । কাজ নেই মোর দোলায় দুলে,
কোথায় তোমার কথায় ভুলে
প্রাণটা নিয়ে টান পড়ে ভাই শেষে ।
তোমার ঘরে ঘুম যদি পায়
সে ঘুম কভু ভাঙবে না হায়—
সে ঘুম নাকি এমন সর্বনেশে !


মাকড়সা । মিথ্যে কেন ভাবিস মনে ?
দেখ্-না এসে ঘরের কোণে,
ভাঁড়ার ভরা খাবার আছে কত ।
দে টপাটপ্‌ ফেলবি মুখে,
নাচবি, গাবি, থাকবি সুখে
ভাবনা ভুলে বাদশা-রাজার মতো


মাছি । লোভ দেখালেই ভুলবে ভবি,
ভাবছ আমায় তেমনি লোভী !
মিথ্যে দাদা, ভোলাও কেন খালি ?
করব কি ছাই ভাড়ার দেখে ?
প্রণাম করি আড়াল থেকে—
আজকে তোমার সেই গুড়ে ভাই বালি ।



মাকড়সা । নধর কালো বদন ভরে
রূপ যে কত উপছে পড়ে !
অবাক দেখি মুকুটমালা শিরে ।
হাজার চোখে মানিক জ্বলে ।
ইন্দ্রধনু পাখার তলে –
ছয় পা ফেলে আয়-না দেখি ধীরে


মাছি । মন ফুর‌্ফুর্ ফুর্তি নাচে——
একটুখানি যাই-না কাছে !
যাই যাই যাই—বাপ্ রে এ কি ধাঁধা !
ও দাদাভাই, রক্ষে কর !
ফাঁদ পাতা এ কেমনতরো !
আটকা পড়ে, হাত-পা হ’ল বাঁধা ।


দুষ্টুলোকের মিষ্টি কথায়
নাচলে লোকের স্বস্তি কোথায় ?
এমনি দশাই তার কপালে লেখে ।
কথার পাকে মানুষ মেরে
মাকড়জীবী ঐ যে ফেরে
গড় করি তায় অনেক তফাত থেকে ৷৷

( বিখ্যাত ইংরেজি কবিতার অনুসরণে ) 


সন্দেশ-শ্রাবণ, ১৩২৫