সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/কৃষ্ণা-তিথির সন্ধ্যা

উইকিসংকলন থেকে

কৃষ্ণা-তিথির সন্ধ্যা

আমলকি-বন ধারে ধারে
বাতাস চলে বারে বারে,
বন-মেহেদীর ঝাড়ে-ঝাড়ে জোনাক জ্বালে দীপ;
এই, থেমে যাও নদীর পাশে,—
কৃষ্ণা-তিথির সন্ধ্যা আসে,
তাকিয়ে দেখ ঐ আকাশে-সন্ধ্যা-তারার টিপ।
থামো, থামো-একটু রোসো
বালুর চরে একটু বোসো
ভাই;
তাড়াতাড়ি বাড়ি যাবার একটু তাড়া নাই!

প্রতিপদের কৃষ্ণা-তিথি,
এমন তো আর হয় না নিতি,
প্রাণে যেন জাগছে গীতি,—একটু ধরো গান;
দুইজনে আজ বালুর চরে
বসবো কিছুক্ষণের তরে,—
জাগবে শশী একটু পরে,—উঠবে মেতে প্রাণ।
প্রতিপদের চাঁদ দেখনি?
দেখতে পাবে আজ এখনি,
ভাই;
কৃষ্ণা-তিথির প্রথম চাঁদের ওঠার আভাস পাই।

আঁধার এলো ঘনিয়ে আরো,—
এবার চেয়ে দেখতে পারো—
পূরের আকাশ ঐ যে গাঢ় তরল হয়ে যায়;
কিসের যেন স্বপন দেখে
মাতলো গগন মুহূর্তেকে,—
হাসছে যেন থেকে থেকে কিসের ইসারায়।
বন্ধু, তুমি জাদুর খেলা
দেখবে এখন সন্ধ্যাবেলা,
ভাই;
শালের বনের কোণের দিকে অবাক হয়ে চাই।

ঐ যে দেখ পূব-গগনে
আলোর প্রলেপ সঙ্গোপনে,—
ছোপ লেগে যায় শালের বনে, জাগছে শিহরণ,
আবছায়া ঐ পলাশ-গাছে—
ফুলগুলি তার ঘুমিয়ে আছে,—

ঝিলমিলিয়ে তাদের কাছে ও কার আগমন?
ঐ যে দেখ আলোর বেশে
বন্ধু তাদের আসলো হেসে,
ভাই;
নাচে নাচে গাছে গাছে ফুল-পাতা সব-ঠাঁই

চাঁদ ওঠে ঐ প্রতিপদী,—
হেথায় এসে দেখবে যদি—
বালুর চড়ায় শীর্ণা নদী আড়মোড়া দেয় ওই,
সন্ধ্যা-সমীর হাই তুলেছে,
বইতে যেন তাই ভুলেছে,—
কোকিল আবার মুখ খুলেছে, পায় না খুশির থই।
কে এলো রে পুলক-ভরা—
আলোক-ছাওয়া, আকুল-করা,
ভাই;
সন্ধ্যারাতের তানপুরাতে কি তান ওঠে তাই।

চাঁদ উঠেছে পাতার ফাঁকে,—
ঢিল মারে কে আলোর চাকে?
জ্যোৎস্না-ভোমর ঝাঁকে ঝাঁকে ঘিরলো চারিদিক্,
কোন্ অরূপের রূপের মায়ায়
রঙ ধরেছে ঝাপসা ছায়ায়,—
ফিনিক ফোটে আবছা-কায়ায়—করছে সে ঝিক্‌মিক্‌।
অদূরে ঐ মধুর বাঁশি
সুর ধরেছে ভীম-পলাশী,
ভাই;
পলাশ-তলায় ‘উলকি’ আলোর, বলিহারি যাই।

চাঁদ-কবি ঐ আকাশ থেকে
জ্যোৎস্না-আলোর কাব্য লেখে,—
এই নিরালায় যাচ্ছে রেখে ছন্দ চমৎকার,
শালের বনে, পাহাড় পরে
বর্ণ-বাহার ঝর্না ঝরে,
স্বর্ণ-চাঁপার ফুল যেন রে ছড়ায় পরাগ তার।
দেখ, দেখ বন্ধু তুমি—
মাতলো সকল বিজন-ভূমি,
ভাই;
এসো, এসো, ছন্দে-তানে আমরা নাচি গাই।