সুনির্মল বসুর শ্রেষ্ঠ কবিতা/ভোম্‌রায় গায়

উইকিসংকলন থেকে

ভোম্‌রায় গায়

শোন্ ওই—গুন্ গুন
ভোম্‌রায় গায়—
ওলো  গুলবিবি, ফুল্‌রাণী
তোমরা কোথায়?
শোনো ভোম্‌রায় গায়।
ঘুরে’ দারু-বীথিকায়
তারা চারু গীতি গায়।
ওই গুঞ্জন ভেসে আসে
হাওয়ায় হাওয়ায়।
শোনো ভোম্‌রায় গায়।

পউষ-উষায় আজ হিম ঝুরেছে,—
তারা ঝিম-লাগা নিম ফলে মৌ ঢুঁড়েছে
তারা  গান জুড়েছে।
তারা ঘুম ভাঙালো,
মহা ধুম লাগালো,
স্নেহে চুম খায় ঘুম-যাওয়া
ঝুমকো গাঁদায়।
শোনো ভোম্‌রায় গায়।

গগনের গায় লাল ছোপ লাগে নি,
ওরে ঢুলু ঢুলু চোখ কার—ঘুম ভাঙে নি।
কার  ঘুম ভাঙে নি!
পাস গীতের আভাস?
বয় শীতের বাতাস,

আসে হাস্‌না-হানার বাস
হাওয়ার হাওয়ায়।
ওই ভোম্‌রায় গায়।

জাগো জাগো ফুলরাণী, ঘুমাস্ নে লো,
দ্যাখ, তোর দোরে আজ ভোরে অতিথি এলো,
ওই  অতিথি এলো।
তারা ভৈরবী গায়,
তোরা কৈ র’বি, হায়—
আহা খোঁজাখুঁজি ক’রে বুঝি
ফিরে চলে যায়।
শোন্ ভোম্‌রায় গায়।

ঝর্ ঝর্ ঝরে মৌ মউয়া-বনায়,
তাই মৌমাছি লুটে নেয় কণায় কণায়
নেয়  কণায় কণায়,
কেরে জর্দা ভোরে
নীল পর্দা তোড়ে!
ওই রং জাগে গগনের
নীল পর্দায়,—
শোনো ভোম্‌রায় গায়।


শোনো ভোম্‌রায় গায়।
ওই পুষ্পে লতায়
তার মধু-গুঞ্জন
আজ হরে প্রাণ মন;

যেন ওস্তাদে গায়,
বীণে মীড় খেলে’ যায়।
তারা নৃত্য করে
তাতে চিত্ত হরে,—
তার প্রাণে কি আশা?
চির মৌ-পিয়াসা।
ফুলে তাই ছুটে যায়,
দুলে’ আনন্দে মৌ লুটে
পিপাসা মিটায়।
আর  গুন্ গুন্ এন্তার
গুণ তার গায়।
সাথে  রুম্ ঝুম ঝুম ঝুম্
ঘুঙর বাজায়,
শোনো ভোমরায় গায়,
শোনো ভোমরায় গায়॥