বিষয়বস্তুতে চলুন

সেই সব শহীদেরা/শহীদ বিষ্টু ঠাকুর: এক দুরন্ত অগ্নিঝড়

উইকিসংকলন থেকে

শহীদ বিষ্টু ঠাকুর : এক দুরন্ত অগ্নিঝড়

একএকটা মুহূর্ত আসে যা তৈরি করে ইতিহাস
এমনও মৃত্যু আসে যা জীবনকে করে মৃত্যুঞ্জয়ী
এমন কিছু কিছু শব্দ সৃষ্টি হয় যা কোনো স্তবগানের চেয়েও মহত্তের
এমনও মানুষ আছেন যারা ঘোষণা করেন নতুনের জন্মবার্তা।

-তোহু(ভিয়েতনামীকবি)

 বিশ্ব ইতিহাস সৃষ্টির চালিকাশক্তি কেবলমাত্র জনগণ। তারাই বিপ্লবীযুদ্ধের জয় পরাজয়ের নির্ধারক উপাদান, কোনো মানুষ একা ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারেন না, ইতিহাসকে প্রভাবিত করেন মাত্র। কিন্তু তাঁর চিন্তাশীলতা, ত্যাগ এবং জনগণের লড়াইয়ে বৈপ্লবিক অবদান তাকে ইতিহাস পুরুষের মর্যাদা দান করে! তিনি হয়ে ওঠেন মৃত্যুঞ্জয়ী। এমনই একজন মানুষ ছিলেন বিষ্টু ঠাকুর। বাংলার কৃষক আন্দোলনের কিংবদন্তী মহানায়ক। যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন মেহনতি জনতার স্বার্থে।

 বিষ্ণু ঠাকুরের জন্ম ১৯১০ সালের এপ্রিল মাসে খুলনার খানকা গ্রামের সম্ভ্রান্ত জমিদার বংশে। আসল নাম বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়। বাল্যকাল কেটেছে মাতুলালয়ে, ডুমুরিয়া থানার সাহস গ্রামে। ছোটবেলা থেকেই বোহেমিয়ান বিষ্ণু নৈহাটি (পূর্ব বাংলার) স্কুলে পড়ার সময় সাধুসংগের ঝোঁকে বাড়ি ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যান! বেশ কিছুকাল সন্ন্যাস জীবন যাপন করবার পর সে পথে আগ্রহ হারিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। উচ্চ সামন্ত বংশের ছেলে হলেও ভাইবোনেদের অনেকেই গোপনে ব্রিটিশবিরোধী সংগঠনের সাথে অল্পবিস্তর যুক্ত ছিলেন। তাঁর এক ভাই নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় ও বোন ভানুদেবী ইংরেজ বিরোধীতার জন্য কারারুদ্ধ হয়েছেন, নির্যাতিত হতে হয়েছে তাঁদের। এর প্রভাব পড়েছিল বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়ের ওপর। যশোর-খুলনা এলাকায় জাতীয় বিপ্লববাদী কার্যকলাপ বিশের দশকের প্রথম ভাগেই মাথাচাড়া দিয়েছিল। যুগান্তর ও অনুশীলন সমিতি উভয় দলের প্রভাবে সেখানকার তরুন বিপ্লবীরা ‘যশোর-খুলনা যুবসংঘ' (Jes- sore-Khulna Youngman's Association) নামে একটি স্বতন্ত্র বিপ্লবী গোষ্ঠী গড়ে তোলেন ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে। এর সাথে জরিত হয় পড়েন বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়। পুলিশ একে কমিউনিস্ট-টেররিস্ট গ্রুপ বলে অভিহিত করে। এই সংগঠন জনকল্যাণমুলক কাজকর্মের আড়ালে অস্ত্র এবং অর্থসংগ্রহ করতো কারণ রাজনৈতিক ডাকাতি ও সশস্ত্র বিপ্লববাদী কাজের মাধ্যমে ইংরেজ বিতাড়ন ছিল তাঁদের মূল লক্ষ্য। কমিউনিস্ট পারটিতে যোগদান করবার আগে পর্যন্ত বিষ্ণু ছিলেন এই গুপ্তসমিতির সর্বক্ষণের কর্মী, থাকতেন খালিশপুরে স্বরাজ আশ্রমে যেখানে কৃষিকাজ, শরীরচর্চা, পঠন পাঠন ইত্যাদি সামাজিক কাজের অছিলায় সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সশস্ত্র অভুত্থ্যানের প্রস্তুতি চলত! যদিও পরবর্তীতে ভবানী সেন, শচীন মিত্র প্রমুখ কমিউনিস্ট নেতৃবর্গের প্রভাবে ‘রাজনৈতিক ডাকাতি'র পথ পরিত্যাগ করে সসস্যর সমাজতান্ত্রিক চিন্তার আলোকে মার্কসবাদী চক্র গড়ে তোলার দিকে এগিয়ে যান। স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে গণসংযোগ গড়ে তোলার মূল স্থপিত ছিলেন তরুন বিষ্ণু। তিনি ও তাঁর সাথীরা নিজেরাই কৃষিকাজে হাত লাগান, উদ্বৃত্ত ফসলের অংশ হাটে বিক্রি করার পাশাপাশি স্থানীয় শ্রমজীবী মানুষকে রাজনীতি সচেতন করতে থাকেন। তাঁর নেতৃত্বে সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী পাইকগাছা অঞ্চলে প্রান্তিক শ্রেণীর মানুষদের জন্য সাক্ষরতা কর্মসূচী নেওয়া হয়।

 ১৯২৯ সালের গোড়ায় মিথ্যা ডাকাতির মামলা দিয়ে পুলিশ বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়কে, প্রথম ভৌমিক ও যুবসংঘের অন্যান্য কর্মীদের সাথে গ্রেপ্তার করে। কিছুকাল পড়ে প্রমাণাভাবে মুক্তি পেলেও আইন অমান্য আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবার জন্য পরের বছরই অর্থাৎ ১৯৩০ এর ২রা মে, Bengal Criminal Law(Amendment) Act, 1930-এ বন্দী করে। বন্দী হন তাঁর ভাই নারায়ণও। জেলে থাকাকালীন তিনি বিশিষ্ট কমিউনিস্ট নেতা আব্দুর রেজ্জাক খাঁর সাহচর্যে সমাজতান্ত্রিক আদর্শে প্রাণিত হন, ১৯৩৭ সালে স্বগৃহে অন্তরীণ থাকার শর্তে মুক্তি পেয়ে মার্কসবাদের প্রতি অবিচল আস্থা নিয়ে যোগ দেন কমিউনিস্ট পারটিতে। খুলনা জেলাকমিটির সদস্য হিসাবে কাজ করতে থাকেন গ্রামাঞ্চলে।

 ৪০-এর দশক থেকে যশোর-খুলনা সাথক্ষীরা শোভনা এলাকায় তেভাগার দাবিতে বর্গাদার ও সাধারণ ভাগচাষীরা তিব্র আন্দোলন শুরু করেন। পুরোভাগে ছিলেন কমঃ বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়। স্বতঃস্ফূর্ত এই আন্দোলনকে সাংগঠনিক রুপ দেওয়ার জন্য বিরামহীনভাবে জেলার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত ছুটে চললেন তিনি। 'জান দেব তবু ধান দেব না' শ্লোগান আক্ষরিক অর্থেই বাস্তবে পরিণত হয়েছিল সেদিন।

 ডুমুরিয়া থানা এলাকার বিপুল সংখ্যক খেতমজুর, ভাগচাষী, মাঝারি কৃষক সকলেই তেভাগার উত্তাল আহ্বানে হিন্দু-মুসলমান ভেদনীতিকে চূর্ণ করে কমঃ বিষ্ণুর সাথে যোগ দিলেন। তিব্র জঙ্গী আন্দোলন আতঙ্কিত করে তুলল শাসকশ্রেণীকে। পুলিশের গুলিতে প্রাণ দিলেন হাজারীপদ মণ্ডল। কয়েক হাজার কৃষক একত্রিত হয়ে বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে শোভনার ‘সিখাবাহী নদীর বাঁধ ও ‘নবেকী'র বাঁধ বেঁধে দিলো বন্দুকধারী পুলিশ ও জমিদারের ভাড়াটে গুন্দাবাহিনীর সামনেই। জমিদারেরা বহুকাল ধরে দুর্নীতিগ্রস্ত আমলাদের সাহায্যে চাসজমিতে নোনাজল ঢুকিয়ে ভাতে মারার ব্যাবস্থা করত কৃষকদের, এই বর্বর প্রথা রুখে দিয়ে স্থানীয় শ্রমজীবী জনতার চোখের মণি হয়ে উঠলেন তিনি, দৈনন্দিন সংগ্রামে সুখদুঃখের সাথী। ২১ হাজার বিঘা জমি দখল করে ভূমিহীনদের বিলি করলেন! ততদিনে বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায় হয়ে উঠেছেন বিষ্ণু ঠাকুর! জেলা জুড়ে প্রচার হয়ে গেল ‘বিষ্ণু ঠাকুরের আইন’ চালু হয়েছে! চাষিদের আর কোনো ভয় নেই। তাঁর অভূতপূর্ব সাংগঠনিক ক্ষমতা, সাহস, কিংবদন্তীর আকারে ছড়িয়ে পড়লো সাধারণ মানুষের ভিতরে। পুলিশের বেষ্টনী ভেদ করে পালানো, কুমীর কামঠ ভর্তি ভদ্রা নদী পার হয়ে যাওয়া, দুর্ধর্ষ লাঠিয়াল ও জোতদারদের ভাড়াটে বাহিনীর সামনাসামনি মোকাবিলা ইত্যাদি ঘটনায় সরলপ্রাণ কৃষকের ধারণা হল বিষ্টু ঠাকুর জাদু জানুন! তাকে ধরবার সাধ্য পুলিশের নেই, গুলি তাঁর গায়ে লাগে না, ইচ্ছে করলে হাওয়ায় মিশে যান, তিনি অমর, অক্ষয়, অব্যয়! যে বাঁধের ওপর দিয়ে এই মানুষটি হেঁটে যান তা ভাঙ্গে সাধ্য কার? অপরিসীম ভালোবাসা, বিশ্বাস আর জনগণের সাথে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা থাকলে তবেই এই উচ্চতায় পৌছানো যায়! বিষ্ণু ঠাকুরের সে গুণাবলী ছিল যা একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবীর প্রধান সম্পদ।

 তেভাগার অন্যতম নেতা কৃষ্ণবিনোদ রায়ের ভাষায় “কর্মবীর বিষ্টু চট্টোপাধ্যায় কৃষকদের যেই ঐক্য গড়ে তুলেছিলেন সংঘাতের পর সংঘাতে তা দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হল, ক্ষুদ্র এলাকায় যা ব্যপ্ত ছিল তা প্রসারিত হল আরো বড়ো আয়তন জুড়ে......লড়াইয়ের মধ্যে দিয়েই কৃষকদের একতাবদ্ধ সংগ্রাম তাঁর নেতৃত্বে গোটা ডুমুরিয়া, সাহস ও বতেঘাটায় ছড়িয়ে পড়লো। বিষ্টুদার ডাক আসতে থাকলো প্রতি থানা, প্রতি এলাকা থেকে। সেদিন বিষ্টু চট্টোপাধ্যায়কে যাদুকর মনে হয়েছিল।”

 ১৯৩১ ও ১৯৪৪ সালে দুটি জেলা কৃষক সম্মেলন সফল করার প্রধান কারিগর ছিলেন তিনি তারই উদ্যগে মৌভাগ এলাকায় প্রাদেশিক কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬-এ বহুবার বন্দী হয়েছেন, বিনা বিচারে জেল হয়েছে, নিগৃহীত হয়েছেন। বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সামন্ততান্ত্রিক শাসন ও অত্যাচারকে প্রায় মুছে ফেলেছিলেন এই অসমসাহসী যোদ্ধা! অভিজাত বংশগৌরবকে পায়ে দলে মিশে গিয়েছেন লড়াকু জনতার মাঝে, তাদেরই একজন হয়ে। জনগণের কাছ থেকে শিখেছেন আবার তাদেরই বিলিয়ে দিয়েছেন। মানুষের ভালোবাসা বীর বিরসা মুণ্ডাকে যেমন ‘ভগবান’-এর আসনে বসিয়েছিলেন তেমনই বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায় হয়ে গিয়েছিলেন ‘ঠাকুর’।

 দীর্ঘ জেলজীবন তাঁর শরীরকে ভেঙ্গে দিয়েছিল, গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় জেল থেকে মুক্তি পান। এরপর বিজ্ঞানসম্মত চাষের কৌশল, বিভিন্ন ফসল কিভাবে আরো উন্নত আকারে উৎপন্ন করা যায় সে নিয়ে গবেষণা করেছেন। শিখেছিলেন গাছে কলম বাঁধার বহু উপায়, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছচাষ, পশুচিকিৎসা। ভেষজ গাছগাছড়া, কুটিরশিল্প ইত্যাদি নিয়েছিল গভীর আগ্রহ। একজন অভিজ্ঞ চাষীর মতোই জানতেন মাটির প্রকৃতি, সারের ব্যবহার, ফসলের গুণাগুণ! বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বিষ্টু ঠাকুর পারদর্শী ছিলেন এস্রাজ বাজানোতে, ‘মেহনতি মানুষ' নাম দিয়ে তাঁর লেখা একটি প্রবন্ধ সংকলন প্রকাশিত হয়। কৃষক আন্দোলনের পটভূমিকায় কিছু ছোটো গল্প লিখেছেন। যাদের জন্য সারাটা জীবন উৎসর্গ করেছেন সেই গরীব কৃষকদের জন্য স্কুল, বয়স্কদের নৈশ বিদ্যালয়, বিশ্বভারতীর লোকশিক্ষা সংসদের পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন করেছিলেন তিনি।

 এই সর্বস্ব ত্যাগী মহান কমিউনিস্ট বিপ্লবীর শেষজীবন বড়ই মর্মান্তিক! বেদনার। দেশভাগের পর একে একে তাঁর অনেক সাথীই দেশ ছেড়ে চলে এসেছেন ভারতবর্ষের নিরাপদ আশ্রয়ে, আসেননি তিনি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ থেকে শুরু করে দেশি শাসকদের বিরুদ্ধে সাহসী যোদ্ধা, আজীবন বিপ্লবী স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে চুপ করে থাকেননি। শেষ পর্যন্ত ১৯৭১-এর ১১ই এপ্রিল, নির্জন দুপুরে ইয়াহিয়া খানের প্রতিক্রিয়াশীল ঘাতকবাহিনী চে গেভারা সদৃশ এই মানুষটিকে নির্মমভাবে হত্যা করে! অবিভক্ত বাংলার লাখো লাখো শ্রমজীবী জনতার প্রিয় বিষ্ণু ঠাকুরের জীবন দীপ নিভে গেল এভাবেই! “Entire section of the world history have no other existence than what the oppressor permitted us to know of them.”-ঐতিহাসিক জ্যাঁ শ্যেনোস (Jean Chesnequx)

 ভারতবর্ষের কৃষক জনসাধারণের ইতিহাস, সামন্ততান্ত্রিক শোষণ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে শ্রেণীসংগ্রামের ইতিহাস। বেশিরভাগ ঐতিহাসিকেরাই এই গৌরবোজ্জল অধ্যায়টিকে চাতুর্যের সাথে এড়িয়ে গেছেন, অবহেলা করেছেন। একইভাবে অবহেলিত, বিস্মৃত হয়েছেন কমঃ বিষ্ট ঠাকুর। নিজেও প্রচারবিমুখ ছিলেন তাই জীবদ্দশায় তাঁর নাম বাংলার তথাকথিত বিপ্লবী-বুদ্ধিজীবী মহলে প্রচার পায়নি।

 মূর্তি, রাস্তা, ফলক না থাকলেও, পুরষ্কার, মানপত্র, ভাতা কিচ্ছুটি না জুটলেও মহান মানুষ চিরকালই মহান থাকেন। কৃষ কবীর বিষ্টু ঠাকুর জনতার কাছে এসেছিলেনএক দুরন্ত অগ্নিঝড়ের ন্যায়। ভয়ঙ্কর উৎপীড়ন ও অত্যাচারের সময়, লড়াইয়ের চড়াই-উৎরাইয়ে, জয় পরাজয়ে, প্রতিটি রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছেন সেনাপতির ভূমিকায়, কখনও তাঁদের পরিত্যাগ করেননি। জীবনের ২৪টা বছর কাটিয়েছেন পাকিস্তানের কারাগারে! সেই সংগ্রামী অতীত ভাঙ্গিয়ে নেমে পড়েননি ব্যাবসায়, তাঁর ও আরো অনেক সাথীদের মতো! ফ্যাশনচল বিপ্লবী বা শৌখিন কমিউনিস্টদের ন্যায় ‘ঘোড়ার পিঠে চড়ে ফুলের শোভা' দেখেননি তিনি বরং শ্রেণীসংগ্রামের মধ্যে দিয়ে আয়ত্ত করেছেন মার্কসবাদ। যা রুপ নিয়েছিল জীবন সত্যে।

 লেনিন বলেছিলেন,”একজন বিপ্লবী হওয়া বা সমাজতন্ত্রের ভক্ত হওয়া অথবা সাধারনভাবে কমিউনিস্ট হওয়াটাই যথেষ্ট নয়, প্রতিটি নির্দিষ্ট মুহূর্তে তাকে সক্ষম হতে হবে শৃঙ্খল-মালার মধ্যে নির্দিষ্ট যোগসূত্রটি খুঁজে বার করতে, সর্বশক্তি দিয়ে তাকে আত্মস্থ করতে যাতে করে সমগ্র শৃঙ্খল- মালাটিকে ধরে রাখা যায় এবং দৃঢ়তার সাথে প্রস্তুত হওয়া যায় পরবর্তী যোগসূত্রে উত্তরণ ঘটাবার জন্য”।

 সন্দেহ নেই কমঃ বিষ্ণু চট্টোপাধ্যায় ছিলেন সেই বিরল কমিউনিস্টদের প্রতিচ্ছবি।

 ঔপনিবেশিক ভারত দেখেছিল অসংখ্য শ্রমিক কৃষক বিদ্রোহ, অজস্র গণ অভ্যুত্থান। যার আগুন আজও নেভেনি, নেভার কথাও নয় কারণ শাসকের বিরুদ্ধে শাসিতের যে লড়াই তাঁর নিবৃত্তি ঘটে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের পরই। একটি আপাত ব্যর্থ বিদ্রোহের অগ্নিশিখা জ্বালিয়ে দেয় নতুন বিদ্রোহের আগুন এবং মানুষ স্বপ্ন দেখে।

 রক্তিম ভোরের স্বপ্ন দেখেছিলেন কমঃ বিষ্টু ঠাকুর। হয়ত কোনো একদিন, সেই স্বপ্নের ভোরে আগামীদিনের শৈশব পাঠক রবে মুক্তির মহাকাব্য, যেখানে থাকবে না হারেমবাসী সুলতান, অত্যাচারী রাজা কিংবা চাটুকার, বিশ্বাসঘাতকদের জীবনকথা। থাকবে লাখো লাখো নামহিন বিপ্লবী জনতার ত্যাগ ও আত্মবলিদানের ইতিহাস। গরম রক্তের প্রবাহের ভেতর সামান্য মানুষের অসামান্য জীবনেতিহাস। সেখানে নিশ্চয় লেখা থাকবে এই মহানায়কের জীবনকাহিনী। —— অবিভক্ত বাংলায় কমিউনিস্ট আন্দোলন (সুচনাপর্ব)-অমিতাভচন্দ্ৰ বাংলার তেভাগা, তেভাগার সংগ্রাম-জয়ন্ত ভট্টাচার্য সংসদ বাঙালী চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড।

(আবাদভূমি পৌষপার্বণ সংখ্যা ১৪২০)