সেক্‌সপিয়র কৃত গ্রন্থ হইতে উদ্ধৃত অপূর্ব্বোপাখ্যান/বেনিস্‌ নগরীয় বণিক্‌

উইকিসংকলন থেকে
R. D. SORNOKAR, ENGR
২২৩

বেনিস্‌ নগরীয় বণিক্‌।

বেনিস্ নগরীয় বণিক্‌।


 বেনিস নগরে সাইলক্ নামা এক জন ইহুদী বসতি করিত। সে অধিক বৃদ্ধির নিয়মে খ্রীষ্টিয়ান বণিক্‌গণের প্রতি অর্থ প্রয়োেগ করত বিপুল বিত্ত সঞ্চয় করিয়াছিল। তাহার হৃদয়ে দয়ার লেশ মাত্র ছিল না, ঋণিগণকে নিষ্ঠুররূপে নিপীড়ন পুরঃসর সমধিক সুদ লইত একারণ নগরস্থ সমস্ত লোকের অপ্রিয় হইয়াছিল। অপর উক্ত নগর নিবাসী আন্তোনিও নামা এক বণিক্ সেই হেতু তাহাকে সাতিশয় ঘৃণা করিতেন। এই সদাশয় ধনী বিপন্ন লোকদিগকে বিনা বৃদ্ধিতে ঋণ দান করাতে ধন লোভী ইহুদীও মনে২ তাঁহার বিদ্বেষ করিত। এক দিবস আন্তোনিও বণিক্ সমাজে সাইলকের সাক্ষাৎ পাইয়া জঘন্য জীবিকার নিমিত্ত ভৎর্সনা করিলে বার্দ্ধুষিক ইহুদী তৎকালে নীরব থাকিয়া মনে২ বিদ্রোহচরণ পুরঃসর বৈরশুদ্ধির উপায় চিন্তায় অস্থির হইল।

 আন্তোনিও দয়ালু স্বভাব এবং সভ্যতাচার নিমিত্ত সকলের সাতিশয় প্রিয় পাত্র ছিলেন। তাঁহার চরিত্রে রুম নগরের গৌরব বৃদ্ধিশীল হয় সুতরাং প্রতিবাসিগণ যথোচিত শ্রদ্ধা করিত। ফলতঃ সকলের সহিত তাঁহার সংপ্রীতি ছিল বিশেষতঃ বেনিস্ নগরীয় বেসানিও নামা এক সম্ভ্রান্ত পুরুষের সঙ্গে আন্তরিক সৌহৃদ্য হয়। এই ব্যক্তি অত্যুচ্চ পদস্থ অথচ স্বল্প ধন সম্পন্ন থাকাতে উত্তরাধিকারিত্বরূপে প্রাপ্ত পৈত্র্য বিভব অপমিরিত ব্যয়ে ক্ষয় করিয়া ছিলেন এতন্নিমিত্ত যখন২ অর্থ ক্লেশে পতিত হইতেন তখন আন্তোনিও তাঁহার সাহায্য করিতেন। অতএব লোকে বোধ করিত তাঁহাদের দুই বন্ধুর এক চিত্ত এবং এক ধনাগার।

 বেসানিও এক দিবস প্রিয়মিত্র আন্তোনিওর ভবনে আগমন পূর্ব্বক অন্যান্য কথোপকথনের পর কহিলেন সখে আমি এক ধনাঢ্যা কামিনীর প্রণয়োৎপাদন পুরসর পাণি গ্রহণ করিয়া আপনার নিঃস্বতা দূর করিবার মানস করিয়াছি। সেই রমণী সুরূপা সুন্দরী এবং জনকের নিধনানন্তর সংপ্রতি অতুল সম্পত্তির অধিকারিণী হইয়াছেন। মিত্র আমি সেই যুবতীর পিতার জীবদ্দশায় তদীয় আলয়ে সতত যাতায়াত করিতাম তৎকালে ভাবিনী নয়ন ভঙ্গি দ্বারা আমার প্রতি যে প্রকার ভাব প্রকাশ করিতেন তাহাতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস হয় আমার প্রতি প্রীতি বন্ধনে তাঁহারও বাসনা আছে কিন্তু সেই ধনবতী যুবতীর নায়কের উপযুক্ত বেশ ভূষা করিতে পারি আমার ঈদৃশী অর্থ সঙ্গতি নাই। প্রিয়তম তুমি আমার প্রতি নানা প্রকারে আনুকূল্য প্রকাশ করিয়া আসিতেছ যদিস্যাৎ সংপ্রতি তিন সহস্র মুদ্র ঋণ দান কর তাহা হইলে মনোরথ পূর্ণ করিতে পারি।

 আন্তোনিওর হস্তে সে সময় মুদ্রা ছিল না অতএব প্রার্থনা মাত্রে মিত্রের আনুকূল্য করিতে পারিলেন না কিন্তু স্নেহ প্রকাশ পরসর কহিলেন সখা কিয়দ্দিন বিলম্ব কর আমার বাণিজ্য দ্রব্যে পরিপূর্ণ কতিপয় অর্ণব তরি ত্বরায় আসিয়া উপস্থিত হইবেক তাহা পহুঁছিলেই বার্দ্ধুষিক সাইলক ইহুদীর সন্নিধানে বন্ধক রাখিয়া তোমার নিমিত্ত ঋণ গ্রহণ করিব।

 কিন্তু বেসানিও কালবিলম্বে অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করিতে লাগিলেন তাহাতে আন্তোনিও তাঁহাকে সমভিব্যাহারে লইয়া বৃদ্ধিজীবি সাইলকের নিকট গমন পূর্ব্বক কহিলেন আমি তোমার নিকট তিন সহস্র মুদ্রা ধার চাহি যত বৃদ্ধি লইতে বাসনা কর তাহাই দিব, আমার কএক খান অর্ণবযান বাণিজ্যের দ্রব্য সামগ্রী লইয়া কিয়দ্দিন মধ্যে আসিবে পহুঁছিবা মাত্র দ্রব্য বিক্রয় পূর্ব্বক বৃদ্ধি সহিত টাকা পরিশোধ করিব। সাইলক্ মনে বিবেচনা করিতে লাগিল এ ব্যক্তি আমাদিগের জাতিকে অতিশয় ঘৃণা করে আপনি বিনা বৃদ্ধিতে ঋণ দেয়, আমার কুশীদের কুৎসা করত বণিক্ সমাজে সর্ব্বদা অপমান করিয়া থাকে এখন ইহাকে মুষ্টির মধ্যে পাইয়াছি চিরন্তন বৈর নির্যাতন করিতে ত্রুটি করা উচিত হয় না। পরে আপনাআপনি কোপিত হইয়া মনে মধ্যে প্রতিজ্ঞা করিল আমি অবশ্য এই সুযোগে বিদ্বেষির প্রতিফল প্রদান করিব যদি ইহাকে মার্জ্জনা করি আমার জাতি যেন অভিশপ্ত হয়। আন্তোনিও বার্দ্ধুষিককে নিরুত্তর হইয়া ভাবনা করিতে দেখিয়া কহিল ওহে সাইলক্ আমার কথা শ্রবণ গোচর হইয়াছে? আমাকে কি ঋণ দিবে? ইহুদী বিস্ময় প্রকাশ পুরঃসর প্রতিবচন প্রদান করিল মহাশয় এ কি আশ্চর্য্য আপনি আমার নিকট অর্থ সাহায্য প্রার্থনা করত ঋণ যাচ্‌ঞা করিতেছেন? আপনি আমাকে কুক্কুর বলিয়া ঘৃণা করত কতবার ভূমির উপর পদাঘাত করিয়াছেন, কুক্কুরের কি টাকা কড়ি থাকে? আপনি গ্রাম্যমৃগের নিকট কি বিবেচনায় তিন সহস্র মুদ্রা ধার চাহিলেন? আমার অন্তঃকরণে শল্য প্রায় আপনার ভর্ৎসন বচন সকল নিরন্তর জাগরূক আছে স্মরণ করিয়া দেখুন দেখি, আমি বৃদ্ধি গ্রহণ পুরঃসর ধনপ্রয়োগ করি বলিয়া বণিক্‌মণ্ডলী মধ্যে কতবার কত প্রকারে আমার অপমান করিয়াছেন, সহিষ্ণুতা করা আমাদিগের জাতীয় ধর্ম্ম একারণ বিনা ক্ষোভে সমুদয় সহ্য করিয়াছি, মহাশয় আপনার কি স্মরণ হয় না সে দিন আমাকে কণ্ঠচ্ছেদি বলিয়া তর্জ্জন করত আমার ইহুদীয় পরিচ্ছদে ঘৃণা পূর্ব্বক নিষ্ঠীবন নিক্ষেপ করিলেন? আহা আপনি আমার সহিত যে প্রকার সদ্ব্যবহার করিয়া আসিতেছেন আপনার আবশ্যক সময়ে ঋণ দিয়া সহায়তা করা আমার উচিত বটে। আন্তোনিও এই সমস্ত কথা শুনিয়া কোপাবেশে বলিলেন আমি তোমার সহিত যে প্রকার ব্যবহার করিয়া থাকি তাহাতে কদাপি ক্ষান্ত হইব না যাবৎ তুমি নিপীড়ন পুরঃসর সুদ গ্রহণে নিবৃত্ত না হইবে তাবৎ তোমার অঙ্গবসনে নিষ্ঠীবন নিক্ষেপ ও কুক্কুর বলিয়া ভূভাগে পদাঘাত সর্ব্বদাই করিব। ওহে আমাকে মিত্র বোধে ধার দিবার আবশ্যক কি? বৈরি জ্ঞান করিয়া ঋণ দাও না কেন? যদি অঙ্গীকারানুসারে পরিশোধ করিতে না পারি স্বেচ্ছাক্রমে উত্তমর্ণের ব্যবহার করিয়া সুদ সমেত অর্থ লইবে। সাইলক্ এতদ্বচনাকর্ণনে প্রকৃতি গাম্ভীর্য্য প্রকটন পূর্ব্বক কহিল দেখিতে পাই আপনি বিলক্ষণ রাগিয়া উঠিয়াছেন কিন্তু আমি এখন আপনকার সহিত বিরোধ করিব না বরং প্রণয় প্রার্থনা পূর্ব্বক বন্ধুতা করিব আপনি আমাকে বিস্তর অপমান করিয়াছেন অনেক স্থানে লজ্জা দিয়াছেন এক্ষণে সকল বিস্মৃত হইব। আমি আপনাকে ঋণ দান করিতেছি কিন্তু আপনার নিকট বৃদ্ধি গ্রহণ করিব না। আন্তোনিও নির্দয় বার্দ্ধুষিকের বদনে এবম্প্রকার করুণান্বিত বচন শ্রবণ করিয়া চমৎকৃত হইলেন। পরে বার্দ্ধুষিক আন্তোনিওর প্রতি যেন যথার্থতঃ দয়ার্দ্র হইয়াছে এবং তাঁহার সহিত সম্প্রীতি করিতে আন্তরিক ইচ্ছান্বিত এবম্বিধ ভাব প্রকাশ পূর্ব্বক কহিল মহাশয় আমি আপনাকে বিনা বৃদ্ধিতে তিন সহস্র মুদ্রা ধার দিতেছি। কিন্তু আপনাকে রাজসচিবের সাক্ষাতে গমন পুরঃসর কৌতুক স্বরূপে কেবল এই রূপ একখানি ঋণ লেখ্য লিখিয়া দিতে হইবে যদি নির্দ্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না করি আমার শরীরের যে কোন স্থান ইচ্ছা করিবেন তথাকার অর্দ্ধ সের মাংস চ্ছেদন করিয়া লইবেন।

 আন্তোনিও ইহুদীর সদয় ব্যবহার দেখিয়া এ কথা কেবল কৌতুক জ্ঞান করত মুক্তকণ্ঠে কহিলেন ভাল২ তোমার প্রস্তাবে সম্মত হইলাম উক্ত প্রকার ঋণ লেখ্য প্রস্তুত কর এখনি স্বাক্ষর করিয়া দিতেছি অতঃপর সকলের নিকট কহিব ইহুদী জাতি অতি দয়াশীল।

 বেসানিও ঋণলেখ্যের নিয়ম শ্রবণে সংশয়াকুল হইলেন এবং স্নেহবশতঃ পরম প্রণয় ভাজন মিত্রের অমঙ্গল আশঙ্কা করিতে বন্ধুকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন সখে এবম্বিধ ঋণ লেখ্যে স্বাক্ষর করা বিধেয় নহে। আন্তোনিও অর্থের নিমিত্ত ব্যগ্র থাকাতে তাঁহাকে বুঝাইয়া বলিলেন মিত্র পরিশোধার্থ নির্দ্ধারিত সময়ের অগ্রে আমার বাণিজ্য নৌকা আসিয়া পহুঁছিবে তাহাতে যে সমস্ত দ্রব্য সামগ্রী আসিতেছে ঋণীকৃত মুদ্রাপেক্ষা অনেক গুণে অধিক হইবে পরিশোধের ভাবনা নাই ঐ রূপ ঋণলেখ্যে স্বাক্ষর করাতে ক্ষতি কি?


 ইহুদী তাঁহাদের দুই বন্ধুর বাদানুবাদ শ্রবণ করিয়া বলিল আঃ খ্রীষ্টিয়ান লোকেরা কি সন্দিগ্ধ চিত্ত? আপনারদের যেমন নির্দয় মন অন্যের প্রতিও তদ্রূপ সন্দেহ করে। ওহে বেসানিও তোমাকে জিজ্ঞাসা করি যদি আন্তোনিও নিরূপিত সময়ে ঋণ পরিশোধ করিতে না পারেন ঋণলেখ্যানুসারে উক্ত প্রকারে দণ্ড বিধান করিলে আমার কি লভ্য হইবে? মানবদেহের অর্দ্ধ সের মাংস মেষ বা অন্য পশুর পলাপেক্ষা উপযোগী নয়। ওহে আমি কেবল তাহার হৃদয়ে সৌহৃদ্যের বীজ রোপণ মানসে এবম্প্রকার প্রস্তাব করিয়াছি যাহা কহিয়াছি আন্তোনিও তাহাতে সম্মত হন ভাল নচেৎ বিদায় গ্রহণ করুন।

 বেসানিও এ কথা শুনিয়াও বন্ধুকে ঈদৃশ বিপজ্জনক পণে স্বীকৃত হইতে বারম্বার নিষেধ করিলেন কিন্তু আন্তোনিও মিত্রের বাক্যে মনোযোগ করিলেন না, আপনার অন্তঃকরণে বিবেচনা করিলেন ঋণলেখ্যে উক্ত রূপ দণ্ডের পণ কেবল কৌতুকার্থ সুতরাং ইহুদীর প্রস্তাবে সম্মতি দান পুরঃসর লেখ্য প্রস্তুত করাইয়া তাহাতে তৎক্ষণাৎ স্বাক্ষর করিলেন।

 বেসানিও যে ধনবতী যুবতীর পাণিগ্রহণ করিতে মানস করেন সেই ভাবিনী বেনিস্ নগরের সন্নিহিত বেল্‌মন্ত প্রদেশে অবস্থিতি করিতেন তাহার নাম পোর্সিয়া। ব্রুতসের পরিণীতা কেতোর তনয়া যে পোর্সিয়া রূপ গুণের নিমিত্ত অবনী মণ্ডলে বিখ্যাতা হন্, যাঁহার গুণের গরিমা ইতিহাস পরম্পরায় শ্রুত হয়, তাঁহার সহিত তুলনায় এই গুণবতী পোর্সিয়া কোন অংশে নিকৃষ্টা ছিলেন না।

 মিত্রবৎসল আন্তোনিও এই রূপে আত্ম জীবন বিপদ্‌গ্রস্ত করিয়া বন্ধুর নিমিত্ত মুদ্রা সংগ্রহ করিলেন এবং অবিলম্বে বয়স্যের হস্তে সমর্পণ পূর্ব্বক কহিলেন সখা সত্বর হইয়া নায়িকার প্রণয়োৎপাদনের সজ্জা করত অভিলষিত সম্পাদন নিমিত্ত প্রস্থান কর। বেসানিও বন্ধুর বাক্যে বসন ভূষণ সংকলন পূর্ব্বক সজ্জিত হইলেন এবং শীঘ্র দল বল সংগ্রহ করত গ্রাশিয়ানো নামক এক জন সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির সমভিব্যাহারে বেল্‌মন্ত প্রদেশে যাত্রা করিলেন।

 বেসানিও মনোভাবিনী কামিনীর নিকট গমন করিলে আশু তাঁহার অভীষ্ট সিদ্ধি হইল কেননা সেই গুণবতী যুবতী তাঁহার গুণে অত্যল্প কালের মধ্যে সম্প্রীত হইয়া তাঁহার প্রতি প্রীতি নিবন্ধন পুরঃসর পাণিপ্রদান নিমিত্ত অঙ্গীকার করিলেন।

 বেসানিও নায়িকার অভিপ্রায় প্রাপ্ত হইলে তাঁহার নিকট স্বীকার করিলেন সুন্দরি প্রধান ও সম্ভ্রান্ত বংশে আমার উদ্ভব বটে কিন্তু সংপ্রতি নিঃস্ব হইয়াছি। গুণবতী যুবতী নায়কের সদ্গুণে মোহিতা হইয়া তাঁহার প্রতি স্বতঃ প্রণয় নিবন্ধন করিয়াছিলেন এবং আপনার প্রচুর ধন সম্পত্তি ছিল সুতরাং ভর্ত্তার নির্দ্ধনতায় কোন প্রকার হানি বিবেচনা করিলেন না। লজ্জা নম্রমুখে মৃদু মধুর স্বরে প্রিয়তমকে কহিতে লাগিলেন গুণনিধান আমি তোমার মনো নীতা বনিতা হইলে আপনাকে সহস্র গুণে গুণবতী অযুত গুণে ধনাঢ্যা বোধ করিয়া কৃতার্থম্মন্যা হইব। তদনন্তর আপনার কুৎসা করত কহিলেন হে দয়াময় আমি কোন প্রকার সদুপদেশ প্রাপ্ত হই নাই ইহাতে নিতান্ত অব্যবহার্য্যা হইয়া আছি কিন্তু এখনও আমার এতাদৃশ অধিক বয়স্ হয় নাই যে শিক্ষা গ্রহণে অসমর্থ, হে নাথ আপনি আমাকে উপদেশ করিবেন আমি আপনকার অধীন হইয়া আদেশানুসারে সমস্ত কার্য্য নির্ব্বাহ করিব। আপনি আপনাকে নিঃস্ব কহিলেন কেন? এক্ষণে আমি আপনকার হইয়ছি আমার ধনসম্পত্তি আপনকারই হইল। প্রভো আমি গত কল্য এই হর্ম্মের অধিকারিণী এবং এই সমস্ত ভৃত্যবর্গের কর্ত্রী ছিলাম এক্ষণে এই অট্টালিকা ও দাস দাসী সকল আপনার হইল। আমি আত্ম সর্ব্বস্ব সমেত এই অঙ্গুরী আপনাকে সমর্পণ করিতেছি। এই কথা বলিয়া স্বীয় অঙ্গুলি হইতে উন্মোচন পুরঃসর একটী অঙ্গুরী কান্তের করে প্রদান করিলেন।

 মহাধন সম্পন্ন পোর্সিয়া এবম্বিধ সদয় সদাচরণ পুরঃসর নির্ধন পুরুষকে পতিত্বে বরণ করিতে স্বীকার করিলে বেসানিও সাতিশয় বিস্ময়ান্বিত হইলেন। আনন্দ জন্য বাষ্পোদ্গমে কণ্ঠদেশ অবরুদ্ধ হওয়াতে কিয়ৎ পল আপনার হর্ষ ও যুবতীর প্রতি সমুচিত সম্মান প্রকাশ করিতে পারিলেন না। অনেক ক্ষণ পরে কেবল এই কএকটী শব্দ দ্বারা আপনার প্রণয় ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পুরঃসর অঙ্গুরী গ্রহণ করিয়া কহিলেন প্রিয়ে এ অঙ্গুরী জীবন সত্ত্বে হস্তান্তর করিব না।

 যৎকালে পোর্সিয়া বেসানিওর গুণে মোহিতা হইয়া তদীয় করে আত্ম সমপর্ণ পুরঃসর তাঁহার বনিতা হইতে অঙ্গীকার করিলেন সে সময় বেসানিওর সহচর গ্রাশিয়ানো এবং পোর্সিয়ার সহচরী নেরিস তাঁহাদের সন্নিধানে দণ্ডায়মান ছিল। গ্রাশিয়ানো প্রভুর কার্য্য নিষ্পন্ন দেখিয়া আপনার বিবাহের নিমিত্ত তাঁহাদিগের আদেশ প্রার্থনা করিল।

 বেসানিও সমভিব্যাহারি সহচরের অভ্যর্থনা শ্রবণে ব্যস্ত সমস্ত হইয়া কহিলেন গ্রাশিয়ানো যদিস্যাৎ তুমি উপযুক্ত কন্যা প্রাপ্ত হইয়া থাক আমি এক্ষণে অনুমতি দিতেছি তাহার পাণি পীড়ন কর।

 গ্রাশিয়ানো বিনীতি প্রদর্শন পুরঃসর নিবেদন করিল প্রভো কত্রী পোর্সিয়ার সহচরী নেরিসার সহিত আমার প্রণয় হইয়াছে। এই রমণী আত্ম প্রেম প্রকাশ পূর্ব্বক মুক্তকণ্ঠে ব্যক্ত করিয়াছিল যদিস্যাৎ আপনকার সহিত ঠাকুরাণীর পরিণয় হয় তাহা হইলে এ আমার বনিতা হইবেক। পোর্সিয়া এ কথার তথ্য জিজ্ঞাসু হইলেন এবং নিকটস্থ নেরিসাকে তাহার সমক্ষে জিজ্ঞাসা করিলেন কেমন তুমি এই ব্যক্তির প্রতি আসক্ত হইয়া ঐ রূপ উক্তি করিয়াছিলে? নেরিসা বিনয় বিনম্রা হইয়া উত্তর করিল হাঁ ঠাকুরাণি এ প্রকার অঙ্গীকার করিয়াছিলাম, যদি অনুমতি করেন গ্রাশিয়ানোর গলে বরমাল্য প্রদান করি। পোর্সিয়া সানন্দ চিত্তে তৎক্ষণাৎ সম্মতি প্রদান করিলে বেসানিও আহ্লাদ প্রকাশ পুরঃসর বলিলেন ওহে গ্রাশিয়ানো তবে শুভ কর্ম্ম আশু সম্পন্ন কর আমাদের পরিণয়োৎসব তোমাদের বিবাহোৎসবে গৌরবান্বিত হউক।

 এই সময়ে এক জন বার্ত্তাবহ আন্তোনিওর লিপি লইয়া উপস্থিত হওয়াতে নব প্রণয়ি নায়ক নায়িকার আনন্দানুভবে ব্যাঘাত হইল। বেসানিও বাহকের কর হইতে পত্রী গ্রহণ পুরঃসর পাঠ করিয়া বিস্ময়ে কিয়ৎ ক্ষণ নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন। সুশীলা পোর্সিয়া লিপি প্রাপ্তে কান্তকে ব্যাকুল দেখিয়া বিবেচনা করিতে লাগিলেন বোধ হয় পত্রী মধ্যে পতির কোন প্রিয় জনের অনিষ্ট সংবাদ লিখিত আছে অতএব স্বয়ং সাশঙ্ক হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন লিপিযোগে কি সমাচার প্রাপ্ত হইলেন? অন্তঃকরণ ব্যাকুল দেখি কেন? বেসানিও বিষাদ প্রকাশ পুরঃসর কহিলেন প্রিয়ে লিপিমধ্যে একটা মহা অশুভ সংবাদ প্রাপ্ত হইলাম, হে সুশীলে আমি তোমার প্রতি প্রণয় প্রকাশ করিয়া অবধি অকপট ব্যবহার করিয়াছি আমার ধন সম্পত্তির বিষয় সকল বলিয়াছি কেবল আমার ঋণের কথা তোমাকে কহি নাই কিন্তু তাহাও বলা উচিত ছিল। তদনন্তর প্রেয়সীর সন্নিধানে আগমন নিমিত্ত প্রিয় মিত্র আন্তোনিওর নিকট যে মানসে মুদ্রা যাচ্‌ঞা করেন এবং সেই মহোদার পুরুষ হৃদয়ঙ্গম বান্ধবের অভিলষিত বিষয়ে অনুকূল্য করিবার নিমিত্ত সাইল ইহুদীর সমীপে যে প্রকার নিয়মে ঋণলেখ্য লিখিয়া ঋণ গ্রহণ পূর্ব্বক মুদ্রা দেন ও নির্দ্ধারিত দিবসে ঋণ শোধ না করিতে পারিলে ঋণলেখ্যের নিয়মানুসারে বন্ধুর শরীরের মাংস উৎকর্ত্তন দ্বারা যে রূপে জীবন বিনাশের সম্ভাবনা, সমুদায় বৃত্তান্ত আনুপূর্ব্বিক বর্ণনা করিয়া শেষে পত্রী পাঠ করিতে লাগিলেন যথা হে প্রিয়তম বেসানিও আমার দুর্ভাগ্য বশতঃ বাণিজ্য তরি সকল বিনষ্ট হইয়াছে এবং ইহুদীর নিকট ঋণলেখ্য লিখিয়া দিয়া যে ধার লইয়াছিলাম তাহা পরিশোধের অঙ্গীকৃত সময় উত্তীর্ণ হইয়া গিয়াছে ঋণ সংশোধনে অক্ষমতা প্রযুক্ত জীবনে নিরাশ হইয়াছি অতএব অন্তকালে একবার তোমার সহিত সাক্ষাৎ করিবার বাসনা করি, কিন্তু মিত্র তুমি আপন মতানুসারে কার্য্য করিও, আমাকে অতিশয় ভালবাস এতন্নিমিত্ত আমার মৃত্যু দর্শন করিতে যদিস্যাৎ তোমার প্রবৃত্তি না হয় আমার অনুরোধ গ্রহণ করিও না। পোর্সিয়া পত্রার্থ অবগত হইয়া উদ্বিগ্নমনা হইলেন এবং সাতিশয় ব্যস্ততা প্রকাশ পুরঃসর প্রিয়তমকে নিবেদন করিলেন নাথ এবম্বিধ বন্ধুর বিপদ্ অতি অসহ্য, আপনি শীঘ যাত্রা করুন, ঋণ সংখ্যাপেক্ষা বিংশতি গুণাধিক স্বণ মুদ্রা আনিয়া দিতেছি লইয়া গিয়া বয়স্যকে বিপদ হইতে উদ্ধার করুন। আপনি আমার এই সাহায্য দ্বারা ক্রীত হইবেন বটে কিন্তু আমি আপনাতে যাদৃশী ভক্তি করিতেছি তাহাতে ত্রুটি হইবেক না, অবিলম্বে প্রস্থানের আয়োজন করুন, আহা যে বন্ধু আপনার নিমিত্ত বিপন্ন হইয়াছেন তাঁহাকে শীঘ্র গিয়া সাহায্য করুন। তদনন্তর তরুণী আপনার ধন সম্পত্তির উপরে প্রিয়তমের অধিকার স্থাপন নিমিত্ত বিদায় দানের অগ্রে পাণি দানের মানস করিলেন তাহাতে সেই দিনেই তাঁহাদের এবং সহচর সহচরীর বিবাহ সম্পন্ন হইল। বেসানিও পাণি গ্রহণ হইবামাত্র সহচর গ্রাশিয়ানো সমভিব্যাহারে সত্বর, বেনিস্ নগরে প্রস্থান করিলেন। সেখানে উপস্থিত হইয়া দেখিলেন প্রিয়মিত্র ঋণের দায়ে কারাগারে রুদ্ধ রহিয়াছেন।

 বেসানিও ইহুদীর নিকট গমন করিয়া কহিলেন অহে বার্দ্ধুষিক বৃদ্ধি সহিত এই ঋণ গ্রহণ কর আমার মিত্র আন্তোনিওকে এখনি মুক্ত করিয়া দাও। নিষ্ঠুর ইহুদী মুদ্রা স্পর্শ করিল না, কহিতে লাগিল ঋণ পরিশোধের নিরূপিত সময় অতীত হইয়া গিয়াছে এখন লইব কেন? ঋণলেখ্যের অঙ্গীকারানুসারে অধমর্ণের অঙ্গের অর্দ্ধ সের মাংস উৎকর্ত্তন করিয়া লইব। বেসানিও ইহাতে আপত্তি উত্থাপন পূর্ব্বক বাদানুবাদ করিতে প্রবৃত্ত হইলে ইহুদী বিচারালয়ে গিয়া বিচার প্রার্থনা করিল এবং রাজাজ্ঞায় বিচারের দিন অবধারিত হইল তাহাতে বেসানিও বিচারে কি আজ্ঞা হয় এতন্নিমিত্ত উৎকলিকাকুল হইলেন এবং অতি ভগ্ন চিত্তে বিচার দিনের প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন।

 বেসানিওর বনিতা পোর্সিয়া প্রিয়তমকে বিদায় দান সময়ে বলিয়া দিলেন মিত্রকে বিপদ্ হইতে উদ্ধার করিয়া প্রত্যাগমন কালে সমভিব্যাহারে আনিবেন। স্বামী প্রস্থান করিলে একাকিনী হওয়াতে আন্তোনিওর বিষয় স্মরণ পূর্ব্বক শঙ্কান্বিত চিত্তে চিন্তা করিতে লাগিলেন পতির প্রিয় বান্ধবের জীবন সংশয়াপন্ন, দেখি আমি এ বিষয়ে কোন উপায় করিতে পারি কি না, যদিস্যাৎ চিন্তা করিয়া কোন পন্থা দেখিতে পাই, প্রিয়তমের হৃদয়ঙ্গম সুহৃদের প্রাণ পরিরক্ষণ নিমিত্ত অবশ্য অবলম্বন করিব। যদিও তরুণী আপন নায়কের সহিত প্রণয় বন্ধন সময়ে নম্রতা প্রকাশ পূর্ব্বক অঙ্গীকার করিয়াছিলেন আপনার আত্মা পর্য্যন্ত প্রিয়তমে সমর্পণ করিলাম অনন্তর সকল বিষয়ে আপনকার পরতন্ত্রা হইয়া থাকিব তথাচ এক্ষণে স্বামি বয়স্যের বিপদ্ সময়ে সাহায্য করণে ইচ্ছুক হওয়াতে স্বাতন্ত্র্য অবলম্বনে কিঞ্চিন্মাত্র প্রতিবন্ধক জ্ঞান করিলেন না। অতএব বিবেচনা পূর্ব্বক স্থির করিলেন বেনিস্ নগরে যাত্রা করিয়া বিচারালয়ে প্রবেশ পুরঃসর আন্তোনিওর পক্ষে বক্তৃতা করি।

 পোর্সিয়ার সহিত বেলারিও নামক এক জন সম্ভ্রান্ত ব্যবস্থাপকের সম্পর্ক ছিল। তরুণী আন্তোনিওর বিষয় ও আদ্যোপান্ত বর্ণন পূর্ব্বক তাঁহার সমীপে পরামর্শ জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইলেন এবং তাঁহার পরিচ্ছদ পাইবার নিমিত্ত প্রার্থনা করিলেন। তাহাতে সেই ব্যবস্থাপকের নিকট হইতে ঐ বিষয়ের সদ্‌যুক্তি লিপিবদ্ধ হইয়া আসিল এবং কামিনী তদীয় পরিচ্ছদও প্রাপ্ত হইলেন।

 অনন্তর বুদ্ধিমতী যুবতী সহচরী নেরিসার সহিত পুরুষের আকৃতি ধারণ পুরঃসর ব্যবস্থাপকের পরিচ্ছদ পরিধান করিয়া বেনিস্ নগরে যাত্রা করিলেন। তত্রস্থ বিচারাগারে রাজা ও নগরীয় সভ্য জনসমক্ষে আন্তোনিওর বিষয়ে বিচারের উদ্যোগ হইতেছে এতদসরে তথায় গিয়া উপস্থিত হইলেন এবং অবিলম্বে ধর্ম্মাধিকরণ প্রবেশ পূর্ব্বক বেলারিও ব্যবস্থাপকের লিপি রাজার হস্তে প্রদান করিলেন। ব্যবস্থাবিশারদ বেলারিও ঐ লিপি মধ্যে এই লিখিয়াছিলেন স্বয়ং উপস্থিত হইয়া আন্তোনিওর নিমিত্ত বাদানুবাদ করিব ইচ্ছা ছিল শারীরিক অসুস্থতা প্রযুক্ত অক্ষম হইলাম পত্রবাহক বাল্‌থাসার সংজ্ঞক এই সুবিজ্ঞ যুবককে প্রতিনিধি পাঠাইতেছি আমার পরিবর্ত্তে ইঁহার প্রতি বাদানুবাদ করণের আদেশ হয়। রাজা বেলারিও ব্যবস্থাপকের বিদ্যা বুদ্ধি স্মরণ করিয়া তাঁহার প্রার্থনা গ্রাহ্য করিলেন কিন্তু অপরিচিত তরুণ পুরুষের অদ্ভুত রূপ লাবণ্য দর্শনে মনোমধ্যে সাতিশয় চমৎকৃত হইতে লাগিলেন। পোর্সিয়া ব্যবস্থাপকের পরিচ্ছদ পরিধান করাতে তাঁহার অঙ্গনাকৃতির পরিবর্ত্ত হইয়া অপরূপ আকার হইয়াছিল।

 তদনন্তর বিচারালয়ে উপস্থিত অভিযোগের গুরুতর বিষয়োপলক্ষে বিচার আরম্ভ হইল। ব্যবস্থাপকের বেশধারি পোর্সিয়া রাজাজ্ঞায় বিচারকমণ্ডলী মধ্যে উপবিষ্টা হইয়া চতুর্দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপানন্তর অবলোকন করিলেন নব প্রণয় ভাজন বেসানিও বন্ধুর বিপদ্ জন্য বিষণ্ণ বদনে আন্তোনিওর পার্শ্বে দণ্ডায়মান আছেন। কিন্তু কামিনী ছদ্মবেশ ধারণ করাতে বেসানিও তাঁহাকে চিনিতে পারিলেন না।

 পোর্সিয়া সাতিশয় সাহস প্রকাশ পুরঃসর স্বীয় সংকল্পিত দুঃসাধ্য সাধনে প্রবৃত্ত হইলেন। প্রথমতঃ বার্দ্ধুষিক ইহুদীর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ পূর্ব্বক কহিলেন ঋণী আন্তোনিও নির্দিষ্ট সময়ে ঋণানপাকরণাপরাধে বেনিস্ নগরীয় ব্যবস্থানুসারে আপনার অঙ্গীকৃত দণ্ড পাইবার যোগ্য বটে কিন্তু দয়ার অতি মহৎ ফল এই বলিয়া সুমধুর ভাষায় করুণার গুণ কীর্ত্তন করিতে লাগিলেন। তদনন্তর বক্তৃতা করিয়া কহিলেন যাহার প্রতি অনুকম্পা করা যায় কেবল সেই ব্যক্তি কৃপা নিমিত্ত মঙ্গলাস্পদ হয় এমত নহে অনুগ্রহ বিতরণকারী পুরুষও কল্যাণাশ্রয় হন্। অপিচ দয়ার্দ্রতা রাজমুকুটাপেক্ষা বিশেষ শোভাকর ভূষণ, অতএব জগদীশ্বর ক্ষিতীশ্বরদিগের অন্তঃকরণে অধিক পরিমাণে করুণা স্থাপন করিয়াছেন। তদনন্তর বার্দ্ধুষিককে সম্বোধন করিয়া কহিলেন ওহে সাইলক্ বিবেচনা করিয়া দেখ আমরা সকলেই অনুগ্রহ প্রাপ্তি নিমিত্ত প্রার্থনা করিয়া থাকি অতএব অন্যের প্রতি করুণা বিতরণ আমাদিগেরও কি কর্ত্তব্য হয় না? ইহুদী উত্তর দিল সময়াতিক্রম নিমিত্ত অধমর্ণ স্বয়ং যে দণ্ড ঋণলেখ্যে স্বীকার করিয়াছে আমি তন্মাত্র প্রার্থনা করিতেছি। পোর্সিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন আন্তোনিও কি ঋণ পরিশোধ করিতে অক্ষম? সাইলক্ এতৎ প্রশ্নের উত্তর না করিতে২ বেসানিও কহিতে লাগিলেন ধর্ম্মাবতার তিন সহস্র মাত্র মুদ্রা ঋণীকৃত, নিরূপিত সময়ে পরিশোধ করিতে পারি নাই, কিন্তু এক্ষণে যত গুণ অধিক টাকা চাহে দিতে প্রস্তুত আছি। সাইলক্ কহিল এখন মুদ্রা লইব কেন? খাদকের অঙ্গীকারানুসারে তদীয় অঙ্গের অর্দ্ধ সের মাংসই গ্রহণ করিব। তদনন্তর বেসানিও অনুরোধ করিলেন এ বিষয়ে ব্যবস্থাভাব দর্শাইবার উপায়ান্বেষণ করুন। তাহাতে পোর্সিয়া প্রবীণত্ব প্রকাশ পূর্ব্বক উত্তর দিলেন ব্যবস্থা এক বার স্থাপিত হইলে তাহার পরিবর্ত্তন হয় না। ইহুদী ব্যবস্থাপকের পরিচ্ছদধারি পোর্সিয়ার প্রমুখ ব্যবস্থা পরিবর্ত হয় না এই কথা শুনিয়া মনে২ বিবেচনা করিল এ ব্যক্তি ব্যবস্থাজ্ঞ এবং আমার সপক্ষ। অতএব আহ্লাদ প্রকাশ পূর্ব্বক কহিল আহা এই ধর্ম্মাধিকরণে সাক্ষাৎ ধর্ম্মাবতারের আগমন হইয়াছে। হে জ্ঞানি সুবিবেচক যুবক তোমার প্রতি আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা জন্মিয়াছে তুমি বয়সে কনিষ্ঠ বট কিন্তু জ্ঞান ও বিবেচনায় যে কত বৃদ্ধ তাহার ইয়ত্তা করা যাইতে পারে না।

 তদনন্তর পোর্সিয়া আন্তোনিওর ঋণ লেখ্যের রচনা দর্শন করিবার অভিপ্রায়ে সাইলকের নিকট ঐ লিপি প্রার্থনা করিলেন এবং গ্রহণ পূর্ব্বক পাঠ করিয়া বলিলেন হাঁ ঋণ শোধের অঙ্গীকৃত কাল অতিক্রান্ত হইয়াছে ব্যবস্থানুসারে উত্তমর্ণ ঋণিকের অর্দ্ধ সের মাংস লইতে পারেন। পরে ইহুদীর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ পূর্ব্বক কোমল বচনে কহিলেন ওহে বার্দ্ধুষিক করুণা বিতরণ পুরঃসর মুদ্রা গ্রহণ কর। আমাকে অনুমতি দাও এই লেখ্য পত্র ছিন্ন করিয়া ফেলি। কিন্তু নির্দয় ইহুদী তাঁহার অভ্যর্থনায় সম্মত না হইয়া বলিল আমি আপন জীবাত্মার শপথ করিয়াছি এ বিষয়ে মত পরিবর্ত্ত করিব না। তখন পোর্সিয়া আন্তোনিওর প্রতি কটাক্ষ করিয়া কহিলেন তবে তুমি আপন অঙ্গীকারের ফল অনুভব করিবার নিমিত্ত প্রস্তুত হও। সাইলক্ এতৎ শ্রবণে চিরবিদ্বেষি আন্তোনিওর বক্ষঃস্থলের মাংস চ্ছেদন করিয়া লইবার নিমিত্ত ব্যস্ত সমস্ত হইয়া এক খান অস্ত্র তীক্ষ্ণ করিতে বসিল। এতদসরে পোর্সিয়া আন্তোনিওকে জিজ্ঞাসা করিলেন তোমার কিছু বক্তব্য থাকে ব্যক্ত কর। আন্তোনিও জীবিতে নিরাশ হওয়াতে অতি মৃদু স্বরে কহিলেন আমার আর বক্তব্য কি, মৃত্যু স্থির হইল। পরে বন্ধুর প্রতি সজল নয়ন নিক্ষেপ পূর্ব্বক কহিতে লাগিলেন মিত্র নিকটে আইস জন্ম শোধ আলিঙ্গন করিয়া বিদায় হই, তোমার নিমিত্ত আমার এ বিপদ্ ঘটিল বলিয়া শোক করিও না। তোমার সম্ভ্রান্তা বনিতার সন্নিধানে আমার কথা কহিও এবং আমাদের পরস্পর যেরূপ সৌহৃদ্য ছিল জ্ঞাপন করিও। বেসানিও অকৃত্রিম মিত্রের নৈরাশ্য বাক্য শ্রবণ করিয়া মর্ম্মান্তিক দুঃখ প্রাপ্ত হইলেন এবং আক্ষেপ প্রকাশ পূর্ব্বক কহিতে লাগিলেন প্রিয় সুহৃদ্ আমার অভিনব পরিণীতা বনিতা প্রাণ তুল্য প্রিয়া বটেন কিন্তু তুমি আমার প্রাণ প্রণয়িণী এবং সমস্ত ধন সম্পদপেক্ষা প্রিয়তর। এই দুরাত্মা ইহুদী যদি আমার এই সমস্ত গ্রহণ করিয়াও তোমাকে পরিত্যাগ করে তাহাতেও আমি স্বীকৃত আছি।

 দয়াশীলা পোর্সিয়া স্বামিকে বয়স্যের প্রতি এবম্প্রকারে স্নেহ বচন প্রয়োগ করিতে দেখিয়া যদিও মনোমধ্যে কিঞ্চিন্মাত্র দুঃখিত হইলেন না তথাপি শেষের প্রস্তাবে প্রতিবচন প্রয়োগ করিতে নিরস্ত হইতে পারিলেন না, বেসানিওকে সম্বোধন করিয়া কহিলেন ওহে যদিস্যাৎ তোমার বনিতা এস্থানে উপস্থিত থাকিত তবে তোমার এই প্রতিজ্ঞায় তোমাকে অত্যল্প ধন্য বাদ করিত। বেসানিওর সহচর গ্রাশিয়ানো সর্ব্ব বিষয়ে আনুকূল্য করিত প্রভুর মনের ভাব ব্যক্ত করত বক্তৃতা করিয়া কহিল আমি ভার্য্যাকে অতিশয় ভাল বাসি কিন্তু বাসনা করি তিনি স্বর্গে থাকিয়া কোন দেবতার উপাসনা পূর্ব্বক এই নির্দয় ইহুদীর চিত্ত পরিবর্ত্তিত করিয়া দেন। নেরিস পোর্সিয়ার লেখক স্বরূপে বিচারাগারে উপস্থিত ছিল আপন প্রিয়তমের এতদ্রূপ উক্তি শ্রবণ করিয়া তাহাকে কহিল তুমি স্বীয় প্রণয়িনীর অসাক্ষাতে এই অভিলাষ করিলে মঙ্গলের বিষয়, নচেৎ এই কথায় তাহার সহিত তোমার মহা দ্বন্দ্ব হইত।

 অনন্তর ইহুদী অধৈর্য্য প্রকাশ পূর্ব্বক বিচারক সন্নিধানে নিবেদন করিল, অনর্থক কালক্ষেপ হয় আমার অভিযোগের বিষয়ে আজ্ঞা প্রচারে অবধান হউক। ইহুদীর এতদভ্যর্থনায় ধর্ম্মাধিকরণ স্থিত সমস্ত ব্যক্তি সাতিশয় সন্ত্রস্ত হইল এবং সকলের অন্তঃকরণ আন্তোনিওর নিমিত্ত শোকে মহা ব্যাকুল হইল।

 পোর্সিয়া সময়াতিবাহনের মানসে জিজ্ঞাসা করিলেন এখানে কি পল পরিমাণ নিমিত্ত তুলাদণ্ড প্রস্তুত আছে? পরে ইহুদীর প্রতি বলিলেন যদি দেহের মাংস গ্রহণের আগ্রহ ত্যাগ না হইল তবে এক জন অস্ত্রচিকিৎসক আনাইয়া উপস্থিত কর কি জানি মাংস কর্ত্তন করিতে গেলে যদি ইহার মূর্চ্ছা অথবা অধিক যন্ত্রণা হয় চিকিৎসক নিকটে থাকিলে সঙ্গে চিকিৎসা করিয়া অপমৃত্যু নিবারণ করিতে পারিবে। ইহুদী আন্তোনিওর জীবন বিনাশ নিমিত্তই ইচ্ছান্বিত ছিল এ কথা শুনিয়া উত্তর করিল ঋণলেখ্যে এ প্রকার কিছু লেখা নাই। পোর্সিয়া বলিলেন ঋণপত্রে ঈদৃশী কথার উল্লেখ না থাকুক একটা প্রাণির, প্রতি করুণা করিয়া এই মত করিলে ভাল হয়। ইহাতে ইহুদী পুনর্ব্বার এতাবন্মাত্র উক্তি করিল লেখ্যে এরূপ কোন নিয়ম দেখি না। পোর্সিয়া আপাততঃ তাহাকে সন্তুষ্ট করণাশয়ে কহিল তবে আন্তোনিওর বক্ষঃস্থলের অর্দ্ধ সের পলই তোমার প্রাপ্য, তাহার উরোদেশ হইতে কর্ত্তন করিয়া লও। ইহাতে ইহুদী আহ্লাদে প্রফুল হইয়া উচ্চস্বরে ধন্যবাদ করণাশয়ে কহিল আহা এই বিচারলয়ে যেন সদ্বিচারক মহাত্মা দানিএলের আগমন হইয়াছে। এই কথা বলিয়া দীর্ঘ কর্ত্তরী গ্রহণ পূর্ব্বক ত্বরায় তীক্ষ্ণ করিতে লাগিল এবং আন্তোনিওর প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ পূর্ব্বক বলিল শীঘ্র প্রস্তুত হও।

 পরে ইহুদী আন্তোনিওর বক্ষঃস্থল বিদারণের উপক্রম করিলে পোর্সিয়া কহিলেন কিঞ্চিৎ বিলম্ব কর একটা কথা আছে। অধমর্ণের অঙ্গীকারানুসারে তদীয় অঙ্গের অর্দ্ধ সের মাংস মাত্র ছেদন পূর্ব্বক গ্রহণে তোমার ক্ষমতা আছে তাহাই গ্রহণ কর কিন্তু ইহার শরীরের শোণিত পাতনে তোমার অধিকার নাই ঋণলেখ্যে কেবল মাংসচ্ছেদনের কথা লিখিত আছে রক্তপাত করিবার কথা নাই অতএব কেবল মাংসচ্ছেদন কর কিন্তু যদিস্যাৎ খ্রীষ্টধর্মপরায়ণ আন্তোনিওর দেহ হইতে এক বিন্দু রক্তপাত হয় তবে ব্যবস্থানুসারে তোমার সম্পত্তি রাজসাৎ হইবেক। বিনা রক্তপাতে জীবিত শরীরের মাংসচ্ছেদন কি প্রকারে হইতে পারে সুতরাং ইহুদী অস্ত্রশস্ত্র তীক্ষ্ণ করিয়া নৈরাশ্যে পড়িল। এইরূপে নবীন ব্যবস্থাপকের সুতীক্ষ বুদ্ধি কৌশলে আন্তোনিওর জীবন রক্ষার সম্ভাবনা হইলে বিচারাগারস্থ সমস্ত ব্যক্তি এই তর্ক ও যুক্তির নিমিত্ত পোর্সিয়ার অগণ্য ধন্যবাদ করিল এবং গ্রাশিয়ানো সাইলক্ ইহুদীর বাক্য উচ্চারণ করত উচ্চস্বরে কহিল এই ব্যবস্থাপক কি সুক্ষ্ম বিচারক, ওহে ইহুদী তুমি যাহা কহিলে তাহাই সত্য অদ্য এই ধর্ম্মাধিকরণে সাক্ষাৎ ধর্ম্মাবতার মহাত্মা দানিএল্ যেন উপস্থিত হইয়াছেন।

 দুষ্ট ইহুদী আপনার অসৎ সংকল্প সিদ্ধ করণে নিরাশ হইয়া বিমর্ষভাবে মুদ্রার কথা উত্থাপন করিল। বেসানিও বন্ধুর জীবন রক্ষা জন্য আনন্দে মগ্ন থাকাতে টাকার কথায় উচ্চস্বরে কহিলেন এই মুদ্রা সমভিব্যাহারে আছে। কিন্তু পোর্সিয়া তাঁহার প্রতি ভ্রূভঙ্গি করিয়া সঙ্কেতে ব্যস্ত হইতে বারণ করলেন। পরে স্পষ্ট বাক্যে কহিতে লাগিলেন এবিষয়েরও বিচার করিতে হইবেক ঋণ পত্রের মর্ম্মানুসারে পরিশোধ কালাতিক্রম হওয়াতে উত্তমর্ণ অধমর্ণের অর্দ্ধ সের দেহ মাংস মাত্র প্রাপ্ত হইতে পারেন টাকার কথা কোথায়? তাহার প্রসঙ্গ নাই, অতএব ওহে সাইলক্ মুদ্রার কথা কেন কহিতেছ? অস্ত্র তীক্ষ্ম করিলে ঋণির মাংস ছেদন করিয়া লও কিন্তু সাবধান যেন শোণিত দর্শন না হয়। অপর অর্দ্ধ সেরের ন্যূন বা অতিরিক্ত কর্ত্তন করিও না যদিস্যাৎ পরিমাণ কালে তুলাকোটি চুল পরিমাণে নত হয় তাহা হইলেও বেনিস্ নগরের ব্যবস্থানুসারে দোষী হইবে এবং তোমার সমস্ত সম্পত্তি গ্রহণানন্তর প্রাণ দণ্ড করা যাইবেক। সাইলক্ এতৎশ্রবণে পুনর্ব্বার বলিল আমার মূল ধন দাও আপনার ভবনে গমন করি। বেসানিও বিপদ্বিনাশে আনন্দিত থাকাতে কহিলেন এই যে তোমার নিমিত্ত তাবৎ টাকা সংকলিত হইয়া প্রস্তুত আছে।

 ইহুদী মুদ্রা গ্রহণার্থ কর প্রসারণ করিলে পোর্সিয়া পুনর্ব্বার তাহাতে বাধা দিয়া তাহাকে কহিলেন কিঞ্চিৎ বিলম্ব কর সংপ্রতি তোমার বিরুদ্ধে আর এক অভিযোগ আছে তুমি ঋণলেখ্যের অদ্ভুত নিয়ম করিয়া এতন্নগরীয় এক জন মনুষ্যের জীবন বিনাশের সংকল্প করিয়াছিলে স্পষ্টরূপে প্রমাণ হইল অতএব তোমার সমুদায় সম্পত্তি রাজকোষে নিবিষ্ট হইবে এক্ষণে তোমার জীবনও নৃপতির অধীন কেননা এবম্বিধ অপরাধে সর্ব্বস্ব হরণ পুরঃসর প্রাণ দণ্ডের বিধান আছে যদি প্রাণ দান চাহ ভূপতির সমীপে জানু পাতিয়া উপবেশন পূর্ব্বক করপুটে ক্ষমা প্রার্থনা কর।

 অনন্তর ভূপাল সাইলক্‌কে ক্ষমা করিয়া কহিলেন ওহে ইহুদী খৃীষ্টধর্ম্মাবলম্বিদিগের কেমন সৎ স্বভাব বিবেচনা করিয়া দেখ তুমি ক্ষমা প্রার্থনা না করিতে২ তোমাকে জীবন দান করিলাম। কিন্তু ঈদৃশ গুরুতর দোষ বিনা দণ্ডে মার্জ্জনা করা উচিত হয় না এ নিমিত্ত অর্থ দণ্ড করিয়া তোমার সম্পত্তির অর্দ্ধাংশ আন্তোনিওকে পুরস্কার স্বরূপে প্রদান করিব অপরার্দ্ধ রাজকোষে সমর্পিত হইবেক।

 নরনাথের এই কথা শুনিয়া আন্তোনিও বিনীতি প্রদর্শন পুরঃসর নিবেদন করিলেন মহারাজ সাইলকের সম্পত্তি গ্রহণে আমার অভিলাষ নাই যদিস্যাৎ এ ব্যক্তি আপনার বিভব ত্যাগ করিতে পারে তবে বরং দান পত্র লিখিয়া তাহার দুহিতা ও জামাতাকে ঐ বিষয় প্রদান করুক, এই ইহুদীর এক মাত্র কন্যা আছে সে ইহার অবাধ্যা হইয়া লরেঞ্জ নামক এক জন খ্রীষ্টিয়ান যুবকের সহিত প্রণয় করত তাহাকে পাণি দান করিয়াছে। ঐ যুবার সহিত আমার সংপ্রীতি থাকাতে এই ক্রূর স্বীয় তনয়ার প্রতি নির্দ্দয় হইয়া আপনার বিত্তবিভবে তাহাকে অনধিকারিণী করিয়াছে।

 ইহুদী দেখিল আপনার বিষয় সম্পত্তি সকল যায় তনয়া অর্দ্ধেক পাইলেও বংশের মধ্যে কিছু থাকিতে পারে অতএব ঐ প্রস্তাবে সম্মত হইল কিন্তু বৈর নির্যাতনে নিরাশ এবং রাজ দণ্ডে ধন নাশ হওয়াতে খিন্ন হইয়া শারীরিক রোগের ব্যপদেশ করত কহিল মহারাজ আমার একটা পীড়া উপস্থিত হইল অনুমতি হউক গৃহে প্রস্থান করি দানপত্র প্রস্তুত হইলে প্রেরণাজ্ঞা হইবেক স্বাক্ষর করিয়া সম্পত্তির অর্দ্ধাংশ কন্যাকে সমপর্ণ করিব। রাজা পীড়ার কথা শুনিয়া কহিলেন তবে এক্ষণে বিদায় হও কিন্তু দানপত্রে স্বাক্ষর করিও পরে তাহাকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন ওহে সাইলক্ তুমি যদিস্যাৎ নিষ্ঠুরাচার পরিত্যাগ পুরঃসর ধর্মনিষ্ঠ হও তবে রাজ দণ্ডে দণ্ডিত তোমার সম্পত্তির অর্দ্ধ পুনর্ব্বার তোমাকে প্রদান করা যাইবে।

 আন্তোনিও এই রূপে প্রান্তিক দণ্ডের দায় হইতে পরিত্রাণ পাইলে রাজা বিচারসভা ভঙ্গ করত সভাসদ্গণকে বিদায় দিলেন এবং যুবা ব্যবস্থাপকের বুদ্ধির বিস্তর প্রশংসা করিয়া তাঁহার সম্মান নিমিত্ত রাজসদনে ভোজনের নিমন্ত্রণ করিলেন। কিন্তু পোর্সিয়ার স্বামী না যাইতে২ অগ্রে বেল্‌মন্তস্থ আপন ভবনে গমনের অভিপ্রায় ছিল অতএব বিনয় পুরঃসর নৃপতিকে নিবেদন করিলেন মহারাজ এই অনুকম্পা নিমিত্ত চিরকাল ধন্যবাদ করিব। বিশেষ প্রয়োজনানুরোধে আশু আলয়ে গমন করিতে বাসনা করি এ বার বিদায় দানে আজ্ঞা হয়। রাজা যদিও একত্র ভোজন করিয়া তাঁহার সহিত অমোদ প্রমোদ করিতে অভিলাষ করিয়াছিলেন তথাপি তাঁহার অনবকাশ ও বিশেষ প্রয়োজনের কথায় আর অনুরোধ করিলেন না। পরে আন্তোনিওর প্রতি কটাক্ষ নিক্ষেপ পূর্ব্বক কহিতে লাগিলেন ওহে তোমার উচিত হয় এই সম্ভ্রান্ত ব্যবস্থাপকের পুরস্কার কর, ইহাঁর বুদ্ধি কৌশলে তোমার মহোপকার হইয়াছে।

 অনন্তর ভূপতি অমাত্যবর্গ সমভিব্যাহারে বিচারাগার হইতে প্রস্থান করিলে বেসানিও যথেষ্ট সম্মান করত পোর্সিয়াকে কহিতে লাগিলেন হে যুবক ব্যবস্থাজ্ঞ আমার পরম বন্ধু আন্তোনিও আপনার বুদ্ধি প্রভাবে প্রাণান্তিক দণ্ড হইতে পরিত্রাণ পাইলেন বিনীতি পূর্ব্বক নিবেদন করি আপনি এই তিন সহস্র মুদ্রা গ্রহণ করুন ইহুদীর নিকট আমাদের ঋণ ছিল অবশ্য দিতে হইত আপনার তর্ক বলে সে বঞ্চিত হইয়াছে ইহা আপনার পুরস্কার হউক। অপরন্তু আমরা তোমার গুণে চির বাধিত আছি নিরন্তর প্রত্যুপকার করণে প্রস্তুত থাকিব।

 পোর্সিয়া তাঁহাদের পারিতোষিক গ্রহণে বারম্বার অস্বীকার করিতে লাগিলেন কিন্তু বেসানিওর প্রতিজ্ঞা হইল কিঞ্চিৎ গ্রহণ না করিলে ত্যাগ করিবেন না। অতএব পোর্সিয়া অগত্যা কহিলেন বেসানিও যদি নিতান্তই আমার পুরস্কার করিবে তোমার দস্তানা আমাকে সমর্পণ কর আমি তোমাদের স্মরণার্থ নিরন্তর কর দ্বয়ে ধারণ করিব। বেসানিও তৎক্ষণাৎ হস্ত হইতে তাহা উন্মোচন করিলে পোর্সিয়া আপনার প্রদত্ত অঙ্গুরী তাঁহার অঙ্গুলী পর্ব্বে দেখিতে পাইলেন এবং পুনর্ব্বার সাক্ষাৎ হইলে কান্তের সহিত কৌতুক করণাশয়ে সেই অঙ্গুলি ভূষণ গ্রহণের মানস করিলেন। তরুণী এই অভিপ্রায়েই দস্তানা প্রার্থনা করিয়াছিলেন অতএব বেসানিও দস্তানা অনিয়া উপস্থিত করিলে তাঁহাকে কহিলেন যদি পুরস্কার লইতে হইল তবে তোমার অঙ্গুরীটী প্রদান কর। বেসানিও মহোপকারি ব্যবস্থাপকের এই প্রার্থনা পূর্ণ করণে অক্ষমতা প্রযুক্ত অপ্রতিভ হইয়া বলিলেন আমি এ অঙ্গুরী দিতে পারিব না, আমার প্রণয়িনী নূতন প্রণয়ের নিদর্শন স্বরূপ ইহা আমাকে দিয়াছেন। অধিকন্তু আমি তাঁহার নিকট শপথ পূর্ব্বক অঙ্গীকার করিয়াছি কখন হস্তান্তরে অর্পণ করিব না আপনার নিমিত্ত বেনিস্ নগরে ঘোষণা দিয়া বহু মূল্য অঙ্গলি ভূষণ এখনি ক্রয় করিয়া আনিতেছি। পোর্সিয়া এ কথায় অভ্যর্থনা ভঙ্গে যেন অপমানিত হইলেন এবম্প্রকার ভাব প্রকাশ করত এতাবন্মাত্র উক্তি করিয়া বিদায় হইলেন মহাশয় যাচকদিগকে কি প্রকারে উত্তর দান করিতে হয় আপনার নিকট তদ্বিষয়ে শিক্ষা পাইলাম।

 আন্তোনিও মহোপকারি ব্যবস্থাপকের এই অনুযোগে বেসানিওকে কহিতে লাগিলেন প্রিয় মিত্র আমাদের নিমিত্ত এই সুবুদ্ধি যুবক যথেষ্ট পরিশ্রম স্বীকার করিয়াছেন এবং আমার সহিত তোমার আন্তরিক প্রণয় অতএব ভার্য্যার অসন্তুষ্টি অপেক্ষা এই দুই বিষয় গুরুতর জ্ঞান করত এই অঙ্গুরীটী ব্যবস্থাবিশারদের সন্নিধানে প্রেরণ কর। বেসানিও বন্ধুর এতদ্বচনে আপনাকে কৃতত্ন বোধ করিয়া লজ্জিত হইলেন এবং তৎক্ষণাৎ সম্মত হইয়া গ্রাশিয়ানোর হস্তে সেই অঙ্গুলি ভূষণ সমপর্ণ পূর্ব্বক পোর্সিয়াকে দিবার নিমিত্ত তাঁহার অনুপদে প্রেরণ করিলেন। গ্রাশিয়ানো অর্দ্ধ পথে তাঁহার দর্শন পাইয়া তাঁহাকে বেসানিওর অঙ্গুরী প্রদান করিলে তদীয় সহচরী নেরিসা আপন প্রেমাস্পদ গ্রশিয়ানোকে যে অঙ্গুরী প্রদান করিয়াছিল তাহা তাহার হস্তে দেখিয়া যাচ্‌ঞা করিল। গ্রাশিয়ানো আপনার প্রভুকে বদান্যতায় শ্রেষ্ঠ হইতে না দিবার মানসে তৎক্ষণাৎ তাহা উন্মোচন পূর্ব্বক নেরিসার হস্তে প্রদান করিল। অনন্তর সে বিদায় হইলে দুই কামিনী হাস্য করত কহিতে লাগিল আমাদের স্বামী ভবনে প্রত্যাগমন করিলে এই অঙ্গুরীর নিমিত্ত মহা কৌতুক হইবেক। প্রণয়ের নিদর্শন অঙ্গুলি ভূষণ হস্তান্তর করিয়াছ বলিয়া অভিমান করত যথোচিত অনুযোগ পুরঃসর কহিব অন্য অঙ্গনার প্রেমে আসক্ত হইয়া তাহাকে প্রদান করিয়াছ।

 পরে পোর্সিয়া সহচরী সমভিব্যাহারে আবাসে প্রস্থান করিলেন এবং একটা মহৎ সৎকর্ম্ম সম্পন্ন করিয়া আসাতে মনোমধ্যে সাতিশয় আনন্দ অনুভব করিতে লাগিলেন। অন্তঃকরণের প্রফুল্লতা প্রযুক্ত যে দিকে দৃষ্টি পাত করিলেন সেই দিকেই হর্ষের কারণ প্রকাশমান হইতে লাগিল। তাঁহার মনে হইল ইতি পূর্ব্বে চন্দ্র এক্ষণকার ন্যায় উজ্জ্বল রশ্মি বিতরণ করেন নাই, ইদানী আনন্দ চন্দ্রের উদয় হওযাতে আপনার ভবনস্থ একটা দীপ দর্শনে পুলকিত হইয়া সহচরীকে সম্বোধন পূর্ব্বক কহিতে লাগিলেন এই বর্ত্তিকা আমার ভবনের দালানে জ্বলিতেছে আহা কি উজ্জ্বল জ্যোতিঃ, ইহাতে কত দূর পর্য্যন্ত আলোকময় করিয়াছে, নেরিসা এই অসার সংসারে সৎকর্ম্মও ঈদৃশ দীপ্তি বিস্তার করে। পরে আপনার বাটীর বাদধ্বনি শ্রবণ করিয়া বলিলেন সহচরি দিবা অপেক্ষা রজনীযোগের তূর্য্য নিনাদ কি মধুর।

 তদনন্তর পোর্সিয়া এবং নেরিসা অন্তঃপুরে প্রবেশ পূর্ব্বক পুরুষের পরিচ্ছদ পরিত্যাগ করিলেন এবং পূর্ব্ববৎ বেশ ভূষা করিয়া স্ব২ কান্তের আগমন প্রতীক্ষায় পথ নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। কিয়ৎক্ষণ পরে বেসানিও এবং গ্রাশিয়ানো আন্তোনিও সমভিব্যাহারে আসিয়া উপস্থিত হইলে আনন্দিত হইয়া তাঁহাদের অভ্যর্থনা করিতে গেলেন। বেসানিও প্রেয়সীর সন্নিধানে বয়স্যের পরিচয় দিয়া কহিলেন প্রিয়ে ইঁহার নাম আন্তোনিও, কেবল দেহ পৃথক্ দেখিতেছ আমাদের উভয়ের একই জীবন। পোর্সিয়া স্বামির কথার অভিপ্রায় হৃদয়ঙ্গম করিয়া তাঁহাকে সাতিশয় সমাদর পুরঃসর গ্রহণ করিলেন এবং বিবিধ মিষ্টালাপ করিতে লাগিলেন। এতদবসরে নেরিসা এক পার্শ্বে দণ্ডায়মান হইয়া আপন প্রিয়তম গ্রাশিয়ানাের সঙ্গে কথােপকথন করিতে ছিল হঠাৎ তাহাদের বাক্‌কলহ উপস্থিত হওয়াতে পাের্সিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন দ্বন্দ্ব বাধিল না কি? কলহ করিতেছ কেন? গ্রাশিয়ানাে উত্তর দিল ঠাকুরাণি আপনার সহচরী সুবর্ণ মণ্ডিত একটা সামান্য অঙ্গুরী প্রদান করিয়াছিল আমি তাহা এক ব্যক্তিকে বিতরণ করাতে কোপ প্রকাশ করিতেছে। সেই অঙ্গুলি ভূষণে কর্ম্মকারের দ্বারা এই কএকটী অক্ষর অঙ্কিত ছিল যথা “আমাকে ভালবাসিও কদাপি পরিত্যাগ করিও না।”

 নেরিসা পোর্সিয়ার সমক্ষে কোপাবেশে স্বামিকে কহিতে লাগিল অঙ্গুরীর মূল্য ও তদুপরি অঙ্কিত পদ সকলের সামান্যতায় কি করে? আমি যখন তােমাকে দিয়াছিলাম তুমি শপথ পূর্ব্বক অঙ্গীকার করিয়াছিলে যাবজ্জীবন যত্ন পূর্ব্বক রক্ষা করিবে এখন বলিতেছ এক ব্যক্তিকে প্রদান করিয়াছি? এ কেমন কথা? আমার নিশ্চয় বােধ হইতেছে কোন নায়িকার নবানুরাগে আসক্ত হইয়া শপথ ভঙ্গ করিয়াছ। গ্রাশিয়ানো উত্তর করিল আমি দিব্য করিয়া বলিতেছ একটা বালককে দিয়াছি সে তােমা অপেক্ষা উচ্চ হইবেক না, যে ব্যবস্থাপকের বুদ্ধি কৌশলে আন্তোনিওর জীবন রক্ষা হয় তাঁহার সঙ্গে গমন করিয়াছিল। সেই বালক আমাদের সাহায্য করিয়া বেতন স্বরূপে আমার নিকট অঙ্গুরী প্রার্থনা করাতে আমি প্রদানে অস্বীকার করিতে পারি নাই। পোর্সিয়া বলিলেন গ্রাশিয়ানো তুমি প্রণয়িনীর প্রেম নিবন্ধনের নিদর্শনাঙ্গুরী অন্যকে সমপর্ণ করিয়াছ ইহাতে দোষী হইতে পার, আমি আপনার প্রভু, বেসানিওর সহিত প্রণয় বন্ধন পুরঃসর তাহার চিহ্ণ স্বরূপ যে অঙ্গুরীটী প্রদান করিয়াছি নিশ্চয় বলিতে পারি প্রভু যদিস্যাৎ ত্রিভুবনের আধিপত্য প্রাপ্ত হন তথাপি সে অঙ্গুলিভূষণ কখন হস্তান্তরে অর্পণ করিবেন না। গ্রাশিয়ানো স্বীয় দোষ হইতে নিস্তার প্রাপ্তি নিমিত্ত কহিতে লাগিল ঠাকুরাণি বেসানিও সেই অঙ্গুরীটী ব্যবস্থাপককে বিতরণ করিয়াছেন। ব্যবস্থাপকের সমভিব্যাহারি বালক আন্তোনিওর নিমিত্ত অনেক বিষয় লিপি করণে ক্লেশ স্বীকার করিয়া আমার নিকট পুরস্কার স্বরূপে অঙ্গুরী প্রার্থনা করাতে আমিও তাহাকে আপনার অঙ্গুরীয়ক প্রদান করি।

 পোর্সিয়া আপন কান্তের অঙ্গুরী পরিত্যাগের কথা শ্রবণমাত্রে অতিশয় ক্রুদ্ধ হইয়া উঠিলেন এবং স্বামির প্রতি যথেষ্ট অনুযোগ করত কহিতে লাগিলেন নেরিসা যাহা কহিল তাহাতে আমার প্রত্যয় হইতেছে আপনকার অঙ্গুরীও অপর কোন বিলাসিনী লাভ করিয়া থাকিবেক। বেসানিও প্রেয়সীকে অসন্তুষ্ট করিতে অনিচ্ছু হইয়া কাতর স্বরে কহিলেন সুন্দরি যথার্থ কহিতেছি কোন রমণীকে তোমার প্রণয়াঙ্গুরী প্রদান করি নাই যে বিশেষ বিজ্ঞ ব্যবস্থাপকের ব্যবস্থা কৌশলে আমার প্রাণাধিক প্রিয়তম প্রাণদান প্রাপ্ত হন তাঁহাকে প্রদান করিতে বাধ্য হইয়াছি প্রিয়ে সেই ব্যবস্থা বিশারদ নবীন যুবার পুরস্কার নিমিত্ত প্রথমতঃ তিন সহস্র মুদ্রা প্রদান করিয়াছিলাম তিনি তাহা গ্রহণ না করিয়া আমার অঙ্গুরীটা যাচ্‌ঞা করিলেন। আমি অঙ্গুরীর বৃত্তান্ত বর্ণন পূর্ব্বক প্রদানে অস্বীকার করাতে মহোপকারি ব্যবস্থাপক ক্ষুণ্ণমনা হইয়া প্রস্থান করেন সে সময় কি করি অগত্যা লোক লজ্জায় অঙ্গুলি হইতে উন্মোচন পুরঃসর তাঁহার নিকট পাঠাইয়া দিতে হইল। বিধুমুখি আমাকে এ বিষয়ের নিমিত্ত ক্ষমা কর আমি নিঃসন্দেহ কহিতে পারি যদিস্যাৎ তৎকালে স্বয়ং উপস্থিত থাকিতে তাহা হইলে ব্যবস্থাপকের অভিমান দেখিয়া তুমিই আমার হস্ত হইতে অঙ্গুরী লইয়া তাঁহাকে সমর্পণ করিতে।

 দম্পতীর দ্বন্দ শ্রবণ করিয়া আন্তোনিও বিষাদ প্রকাশ পূর্ব্বক বলিলেন হায় আমিই এই অসুখকর কলহের মূল। পোর্সিয়া তাঁহাকে সন্তাপ করিতে নিষেধ করিয়া বিনয় পূর্ব্বক কহিলেন আপনি এ বিবাদে কর্ণপাত করিয়া বিরক্ত হইবেন না। আন্তোনিও বলিলেন আমি প্রিয়মিত্র বেসানিওর নিমিত্ত একবার শরীর বন্ধক দিয়াছিলাম, তোমার স্বামী যে মহাত্মাকে অঙ্গুরী বিতরণ করিয়াছেন তিনি বিচারালয়ে উপস্থিত না হইলে আমার প্রাণ দণ্ড হইত। অতএব পুনর্বার তোমার নিকট এই দেহ আধি করত সাহস পূর্ব্বক বলিতেছি ইনি তোমার প্রতি কদাপি অপ্রত্যয়ের কর্ম্ম করিবেন না। পোর্সিয়া হাস্য করত কহিলেন তবে মহাশয় ইহাঁর প্রতিভূ হইলেন। অনন্তর আপনার অঙ্গুলি হইতে একটী অঙ্গুরী উন্মোচন পূর্ব্বক তাঁহার হস্তে দিয়া কহিলেন আপনার মিত্রকে এই অঙ্গুরীয়কটী যত্ন করিয়া রাখিতে কহুন পুনর্বার এটী যেন কাহাকেও দেন না।


 বেসানিও অঙ্গুরী নিরীক্ষণ করিয়া বিস্ময়াপন্ন হইলেন এবং মুক্তকণ্ঠে ব্যক্ত করিলেন ইহা যে আমার সেই অঙ্গুরী, আমি ব্যবস্থাপককে প্রদান করিয়াছিলাম কিরূপে প্রিয়তমার হস্তগত হইল? অনন্তর পোর্সিয়া আনন্দ গদ্গদ স্বরে কহিতে লাগিলেন নাথ আমিই ব্যবস্থাপকের বেশ ধারণ পুরঃসর রাজসভায় গমন করি এবং আমার সহচরী নেরিসা কর্ম্মচারী হইয়া আমার সঙ্গে গিয়া ছিল। বেসানিও এতৎ শ্রবণে সাতিশয় চমৎকৃত হইলেন পরে আহ্লাদ সাগরে মগ্ন হইয়া আপনা আপনি ধন্যবাদ করত কহিতে লাগিলেন ধন্য আমি, আমার ঈদৃশী বনিতা, ইহাঁর সাহস ও বুদ্ধি প্রভাবে আমার জীবিতাধিক বন্ধু জীবন রক্ষা পাইয়াছেন।

 পরিশেষে পোর্সিয়া আন্তোনিওকে সংবাদ দিলেন মহাশয় আপনকার কতিপয় লিপি দৈবাৎ আমার হস্তগত হইয়াছে গ্রহণ পূর্ব্বক অবলোকন করুন। আন্তোনিও সেই লিপিযোগে অবগত হইলেন তাঁহার বাণিজ্য তরণী জল মগ্না হয় নাই নির্বিঘ্নে ঘাটে আসিয়া পহুঁছিয়াছে। অতএব সেই ঐশ্বর্য্যশালি বণিকের দুর্ভাগ্য দুরীভূত হইয়া পুনর্বার সৌভাগ্যের উদয় হইল তাহাতে তাঁহার পূর্ব্ব দুর্গতি বিস্মরণ পুর্ব্বক সকলে আনন্দ সাগরে নিমগ্ন হইলেন। বেসানিও ও গ্রাশিয়ানো স্ব২ পত্নীকে বিচারালয় মধ্যে চিনিতে পারেন নাই অতএব অঙ্গুরীর বৃত্তান্ত উপলক্ষে পরিচয় দিয়া উভয় রমণীতে তাহাদিগের সহিত কৌতুক করিতে লাগিলেন। গ্রাশিয়ানো পত্নীর নিকট অঙ্গুরী গ্রহণ পূর্ব্বক রসিকতা করিয়া শপথ করত এই কবিতা পড়িল।

পৃথ্বী মধ্যে যত কাল জীবিত থাকিব।
নেরিসার অঙ্গুরীটী যতনে রাখিব।
মনোমধ্যে এই মাত্র করি মহা ভয়।
কি জানি বিপাকে ইহা পাছে নষ্ট হয়।