হিতদীপ/মৃত্যু

উইকিসংকলন থেকে
মৃত্যু।

ওহে নাথ! দয়াময় জগতী-কারণ!
যে দিকে যখন প্রভু ফেলি দুনয়ন,
তাতেই তোমার কীর্ত্তি হেরি দীপ্যমান
সকলি কল্যাণ-তরে, করুণা-নিধান!
বিশেষ শরীর-শেষ মৃত্যুর সৃজন,
প্রকাশে অসীম দয়া তব, নিরঞ্জন!
যে মৃত্যু-স্মরণে হিয়া কাঁপে থর থরি,
যে মৃত্যু নিখিল সুখ লয়ে যায় হরি,
যে মৃত্যুর সনে সবে দেয় উপমান
যতেক কঠোর ক্লেশ আছে বিদ্যমান।
যে মৃত্যু ঘটনে দুখ-জলধি-জীবনে,
জীবন মগন করে পরিবারগণে,

হায়রে, এহেন মৃত্যু সুখের কারণ,
কেমনে বিশ্বাস-হীন বলে এ বচন?
কিন্তু, যার হৃদাকাশে তব করুণায়
জ্ঞানের বিমল শশী বিকাশে ত্বরায়,
যাহার মানস-অলি সুধার কারণ
চরণ-কমল তব করে অন্বেষণ,
বিশ্বাস, ভকতি, প্রীতি যাহার ভূষণ
নিশ্চয় এ বাণী সেই বলে অনুক্ষণ।
পাপময় তাপময় ভুবন-ভিতরে
মৃত্যুর অভাব হ’লে ক্ষণেকের তরে
হায়রে, কত যে দুখ উপজে অধিক
না বুঝে বিবাদে যেই, তারে শত ধিক।
পরিহরি পুরাতন মলিন বসন,
নূতন বসন যথা পরি নরগণ
কিংবা দেশান্তরগত আপন ভবনে
আগত হইয়া যথা সুখী হয় মনে,
তেমতি মৃত্যুর পরে সুখরাশি হায়!
আ মরি! এ হেন মৃত্যু কেবা নাহি চায়?
দেখ, দেশান্তর-গত কুমার যেমন
স্ব-কার্য্য সাধিয়া দেশে করিলে গমন,
আনন্দিত হয় সবে তার আগমনে,
আগত কুমার সুখে রহে অনুক্ষণে,

কিন্তু, যদি পরিহরি করণীয় যত,
দেশান্তর হতে গৃহে হয় সমাগত,
তা’হলে তাহার কেহ না করে আদর
অসুখে জীবন যাপে সদা সে পামর।
তেমতি অকাল-মৃত্যু অতি দুখময়,
তাই ত তাহার সেবা সমুচিত নয়।
কিন্তু, যথাকালে আহা! দেহ-পরিহার
অসীম সুখের সেতু, শান্তির আগার।