হিতদীপ/সূর্য্য

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন

হিতদীপ।

সূর্য্য।

কে তুমি উজল কর সোণার কিরণে
নিত্যনিশা-অবসানে পূরব-গগনে,
পরে প্রাচী পরিহরি পশ্চিম আকাশ
ক্রমশঃ আপন করে কর সুবিকাশ?
নিরখি তোমায়, পায় নবীন জীবন
সুবোধ অবোধ জীব, তরু লতা গণ,
তাই হে তোমার গুণ বিহগ-নিকর
মধুর কাকলী যোগে গায় নিরন্তর,
সুশীতল সমীরণ বহে ধীরে ধীরে,
ত্যজে তরু আনন্দ-জনিত আঁখি-নীরে,
বিকাশে কুসুম কলি অলি-শোভমান,
রজতে সুনীল মণি যেন বিদ্যমান।
বকুল সুরভি ফুল করি বরিষণ,
শেফালিকা সনে করে তোমার পূজন।

প্রফুল্ল অন্তরে ধায় প্রান্তরে গো-কুল
হেরিতে তোমায় কেবা না হয় আকুল?
মানব——নিখিল-জীব বরীয়ান যত
তাদেরো অনেকে তোমা পূজে বিধিমত।
পূজিতে বিজ্ঞানবিদ্‌ নাহি দেয় সায়
নাহি পূজে সচন্দন কুসুমে তোমায়
সত্য বটে; কিন্তু তারা তব গুণচয়
দেবের অধিক করি গায় মহীময়।
কে তুমি? কেমনে তব জানি বিবরণ?
কোথা হ’তে পাও তুমি এ হেন কিরণ?
যাহে আলোকিত কর নিখিল সংসার,
বিতরিয়া তাপে, শীত নিবার সবার।
প্রতিদিন হয় যেন সৃষ্টি অভিনব,
তোমার প্রসাদে দেব বিচিত্র এ ভব;
দিবা-নিশা ভেদ হয় তোমারি কৃপায়,
ঋতুভেদ তব গুণে হেরি এ ধরায়।
হরষে বরষে বারি বারিদ মণ্ডলে
—জীবের জীবন, শুধু তব কৃপাবলে;
মহীর দূষিত বায়ু শোধন কারণ
ঝটিকা তোমারি তরে, কুশল সাধন!
সুধাংশুর সুধাময় কিরণ-নিচয়
তব তেজঃ প্রতিবিম্ব বিনা কিছু নয়,

বিশ্বের সুদৃশ্য যত তোমারি কারণ,
তোমারি দয়ায় হয় কাল-নিরূপণ!
জগত-সবিতা তুমি জীবের নয়ন,
তুমি হে করুণাসিন্ধু, জগত-জীবন।
তব গুণ বর্ণিবারে কে পারে ভুবনে,
জীবিত, ফলিত যত তোমারি কারণে।
কিন্তু তুমি প্রতিবিম্ব প্রকৃতি দর্পণে
অনাদি অনন্ত যেই জ্যোতি-পরশনে,
সে জ্যোতি কেমন জ্যোতি ওহে জ্যোতির্ম্ময়?
বারেক বল হে মেরে করিয়া নিশ্চয়।