বিষয়বস্তুতে চলুন

হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা

উইকিসংকলন থেকে
হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা

HINDU FEMALES.


BY

KOYLASBASINEY DAVI.


AND PUBLISHED

BY

D U R G A C H A R A N A G U P T A.


CALCUTTA:

PRINTED AT THE 'GUPTA PRESS' No., 16 MIRZAFFER'S LANE.

1863.


Sold by Gupta Brothers, No. 86 College Street.

হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা।


শ্রীমতী কৈলাসবাসিনী কর্ত্তৃক

প্রণীত।


এবং তৎস্বামী

শ্রীযুক্ত বাবু দুর্গাচরণ গুপ্ত কর্ত্তৃক

প্রকাশিত।


কলিকাতা।

গুপ্ত যন্ত্রে মুদ্রিত।

১৭৮৫ শক।

 উক্ত যন্ত্রালয় মির্জ্জাফর্স লেন ১৬ নং ভবনে, অথবা গুপ্ত ব্রাদর্শদিগের গ্রন্থালয় কালেজ স্ট্রীট ৮৬ নং ভবনে, এবং সকল গ্রন্থালয়ে ও পুস্তক ব্যবসায়ীর নিকট পাওয়া যায়।

 আমি যে মহাত্মার কৃপাবলে এতাদৃশ সাহসিক কার্য্যে প্রবৃত্তা হইয়াছিলাম, প্রথমত তাঁহার নিকট আমার সমধিক কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা কর্ত্তব্য বোধে আমি সর্ব্বসাধারণ সন্নিধানে আত্ম পরিচয় প্রদান করিতে বাধ্য হইলাম। আমি বাল্যাবস্থায় পিত্রালয়ে একটী বর্নও শিক্ষা করি নাই এবং শিক্ষা বিষয়ে আমার অভিলাষও ছিল না। অধিক কি কহিব কেহ নারীগণের বিদ্যা বিষয়ক কোন কথা উথাপন করিলে আমি বিরক্ত হইতাম এবং বিদ্যাভ্যাস করিলে যে অচিরাৎ বিধবা হয়, প্রাচীন পরম্পরাগত এই পুরাতন বাক্যটি অতি প্রযত্ন সহকারে হৃদয় ভাণ্ডারে ধারণ করিতাম। এইরূপে কিছুকাল গত হইলে পর অমার স্বামি শ্রীযুক্ত বাবু দুর্গাচরণ গুপ্ত মহাশয় আমাকে বিদ্যা শিক্ষা করাইবার নিমিত্ত অতিশয় ব্যগ্র হইলেন, কিন্তু আমি এক প্রকার বিদ্যাবিরোধিনী ছিলাম; সুতরাং তাঁহারং সেই যত্ন আমার পক্ষে অতিশয় কষ্টদায়ক হইল। আমি কোন মতেই তাঁহার উপদেশ বাক্য গ্রহণ করিতাম না, কিন্তু তিনি তাহাতেও নিরস্ত না হইয়া বরং আরও অধিক পরিমাণে চেষ্টিত হইলেন। পরে আমি অগত্যা তাঁহার সেই উপদেশ গ্রহণ করিলাম। তিনি বচনাতীত সন্তোষ সহকারে আমাকে শিক্ষা দিতে আরম্ভ করিলেন।

 ১৭৭১ শকের শ্রাবণ মাসে আমাকে বর্ণমালার প্রথম ভাগের উপদেশ দেন; আমি সেই অবধি গোপন ভাবে কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ অধ্যয়ন করিতাম এবং গুরুজন ভয়ে ভীত হইযা বিদ্যাকে অতি দুস্কর্ম্ম বোধে লুক্কায়িত রাখিতে চেষ্টা করি- তাম;এবং বিদ্যা বিষয়ে কোন প্রকার কথা লইয়া আমার গুরু জনেরা যদি আমার প্রতি বিরক্ত হইতেন, তবে সেই যন্ত্রণা সহয করিতে না পারিয়া পাঠ্য পুস্তকাদি সমুদয় নিক্ষেপ করিয়া শিক্ষকের প্রতি কতই বিরক্ত হইতাম, কিন্তু তিনি কোন প্রকারেই আমাকে তদ্ধিষয়ে নিরস্ত হইতে দিতেন না। সুতরাং আমি উভয় অনুরোধ রক্ষা করিবার মানসে, দিবাভাগে সাংসারিক কার্য্যাদি সম্পন্ন করিয়া সায়ংকালীন অবকাশ পাইয়া যৎকিঞ্চিং শিক্ষা করিতাম। কিন্তু আমার অদৃষ্ট বশতঃ তাঁহার আশা সম্পর্ণ সফল হয় নাই, কারণ আমি অবকাশাভাবে কিছুই শিখিতে পারি নাই, এবং সেই জন্য এপর্য্যন্ত কোন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি নাই। একবার প্রভাকরে কোন একটী প্রবন্ব লিখিতে আমাকে আমার বন্ধুজনেরা অনুরোধ করিয়াছিলেন, কিন্তু আমি তৎকালে এতাদৃশ দুঃসাহসিক বিষয়ে সাহস করিতে পারি নাই, কি জানি মহৎ পদ আশ্রয় করিতে গিয়া পাছে শিখিপুচ্ছধারী বায়সের ন্যায় হাস্যাস্পদ হই। কিন্তু এক্ষণে অনেকের নিকট নিতান্ত অনুরদ্ধা হইয়া, অগত্যা এই বাতু- লতা প্রকাশ করিতে বাধ্য হইলাম। অতএব হে গুণিবর মহেহাদয় পাঠকগণ! আপনারা মহত্গুণে আমার এই প্রগলভ বাক্য প্রয়োগের প্রতি বিরক্ত না হইয়া আমার এই “হীনাব- স্থার প্রতি কৃপাদৃষটি পাত করিলে চরিতার্থ হই।


 কলিকাতা

 ১৭৮৫ শক॥

শ্রীকৈলাসবাসিনী।

গ্রন্থ প্রকাশকের উক্তি


 গ্রন্থ রচয়িত্রী রচনা আরম্ভ করিয়া উহা মুদ্রিত ও সাধারণ্যে প্রকাশ করিতে আমাকে অনুরোধ করেন, কিন্তু ইহাঁর এতাদৃশ সাহস দেখিয়া আমি তাহা এক প্রকার অগ্রাহ্য করিয়াছিলাম, যেহেতু ইনি একাল পর্যন্ত কখন কোন সন্দর্ভ লিখিতে কালি কলম একত্র করিয়াছেন কিনা সন্দেহ, তাহাতে যে ইহাঁঁর প্রথম লেখা একেবারে প্রকাশ যোগ্য হইবে এমত বিশ্বাস কখনই হয় নাই। কিন্তু যখন রচনা সমাপন করিয়া এক দিবস আমার নিকট উহা পাঠ করিতে লাগিলেন, তখন ইঁহার রচনার পারিপাট্য শ্রবণে চমৎকৃত হইলাম, এবং অনেক প্রকাশিত গ্রন্থ অপেক্ষা ইঁহার রচনা শ্রেষ্ঠ বোধে আমি অবিকল মুদ্রিত করিয়া প্রকাশ করিলাম। এখন সাধারণের গ্রাহ্য যোগ্য হইবে কি না তাহা আমি বালিতে পারি না, কিন্তু সাধারণের নিকট উৎসাহ পাইলে যে ইনি এতদ্বিষয়ে প্রথমা বলিয়া গণ্য হইবেন তাহা বলা বাহুল্য।

 গ্রন্থ রচয়িত্রীর ভাষা বিষয়ে অসামান্য ক্ষমতার বিষয় কিঞ্চিৎ সাধারণের গোচর না করিয়া আমি ক্ষান্ত থাকিতে পারিলাম না। দ্বাদশ বর্ষ বয়ঃক্রম পর্যন্ত ইনি বর্ণ মাত্র শিক্ষা করেন নাই, পরে আমার নিকট কিঞ্চিৎকাল বর্ণ বিষয়ে উপদেশ পাইয়া, স্বয়ং বাঙ্গলা গ্রন্থ সমুদয় পাঠ করত, অল্প দিনের মধ্যেই যে পরিমাণে তদ্বিষয়ক জ্ঞানোপার্জ্জন করিয়াছেন, তাহা অনেকে বহু কাল বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অধীন থাকিয়াও পারেন কি না সন্দেহ। সমস্ত দিবা সংসার ও সন্তান সন্ততিগণের কার্য্যে ক্ষেপণ করিয়া সায়ং কালে যে কিঞ্চিৎ অরকাশ পাইতেন, তাহাতেই এক পক্ষ মধ্যে এই গ্রন্থ খানি রচনা করিয়াছেন।

শ্রীদুর্গাচরণ গুপ্ত।

প্রতিষ্ঠা পত্র।

কল্যাণতমা শ্রীমতী কৈলাস বাসিনী

অতুলকীর্ত্তিমতীষু।

 বৎস! তুমি আমার নিকট সংশোধনার্থ এই গ্রন্থের শেষ মাত্র পাঠানতে আমি তাহা পাঠ করিয়া অধিক কাটিতে না হওয়া জন্য প্রথমত মনে করিয়াছিলাম যে ইহার রচনা ও প্রুফ সংশোধন বিষয়ে অবশ্যই শ্রীযুক্ত দুর্গাচরণ বাবুর সাহায্য থাকিবে, কিন্তু পরে যখন প্রফে কাটা অক্ষর দেখিলাম ও কম্পোজিটরদিগের নিকট তাহা তোমারই স্বহস্তের কাটা লেখা শুনিলাম এবং কাহারও সাহায্য না থাকার বিষয় দুর্গাচরণ বাবুর নিকট অবগত হইলাম, তখন রচনা নৈপুণ্যের প্রতি বিশিষ্টরূপ মনোভিনিবেশ হওয়াতে আমার মন যে কিরূপ বিস্মিত ও আহ্নাদিত হইয়াছিল, তাহা ব্যক্ত করিবার শব্দ নাই। অতএব ঈশ্বরের নিকট এই প্রার্থনা যে তুমি সাবিত্রী সমানা হইয়া পতি পুত্রাদির সহিত চির সুখিনী ও বঙ্গাঙ্গনগণের বিদ্যা শিক্ষা বিষয়ে পথপ্রদর্শিনী রূপে সচ্চরিত্রতার সহিত ভাবি কাল অতিবাহিত কর ইতি।

শ্রীআনন্দচন্দ্র বেদান্তবাগীশ।

 সম্প্রতি এতদ্দেশীয় অবলাকুলের বিদ্যাভ্যাসের নিমিত্ত কি বিদেশীয় কি স্বদেশীয় বিদ্যোৎসাহি মহোদয়গণ অতিশয় যত্ন প্রকাশ করিতেছেন, এবং কামিনীগণের উৎসাহ বর্দ্ধনের নিমিত্ত কতশত প্রধান প্রধান সদাশয় ব্যক্তিগণ রত্নালঙ্কারাদি পারিতোষিক প্রদানে বিদ্যাবতী কামিনীগণের চিত্ত পরিতৃপ্ত করিতেছেন। আমি এই সমস্ত মহৎ ব্যাপার সংবাদ পত্রাদিতে পাঠ ও লোক মুখে শ্রবণ করত বিবেচনা করিলাম আমিও ত এই নারীকুলের বিদ্যা বিষয়ের একজন উৎসাহিনী, আমার ত তাহাদিগকে উৎসাহ প্রদান করা কর্ত্তব্য, কিন্তু আমি সর্ব্ব বিষয়ে দুর্ব্বল, কি অর্থ, কি বিদ্যা, কি বুদ্ধি কিছুতেই সবল নহি, তবে কোন্ উপায় অবলম্বন করিয়া নারীগণকে উৎসাহ প্রদান করি, এরূপ চিন্তা করত পরিশেষে নিতান্ত নিরুপায় হইয়া শিশুর কেবল রোদনই বল, এই সাধারণ বাক্যটী স্মরণ হওয়াতে বালকবৎ নিতান্ত অজ্ঞান আমি, কেবল সেই রোদন করিতেই প্রবৃত্ত হইলাম, এবং বালকগণ যেমন একটা বোল ধরিয়া রোদন করিতে আরম্ভ করে, আমিও সেইরূপ আপনাদিগের অবস্থা ও দেশের আচার ব্যবহারদি ধরিয়া ক্রন্দনে প্রবৃত্ত হইলাম, অতএব হে বিজ্ঞ গুণজ্ঞ ধনী মানী পাঠকবর্গ! তোমরা আমার এই রোদনের চীৎকার শব্দে বিরক্তি প্রকাশ না করিয়া আমার রোদনকে সফল কর।

 আমি এই স্থলে শ্রীমতী বামাসুন্দরী দেবীকে ধন্যবাদ প্রদান করিতে এবং বর্ণ ও বিদ্যাশ্রেষ্ঠ প্রযুক্ত প্রণাম করিতে বাধ্য হইলাম। বামাসুন্দরী আমাদিগের পথ প্রদর্শিকা রূপে এই বঙ্গভূমিতে অবতীর্ণা হইয়া আমার মনকে উত্তেজনা করিলেন, আমি তাঁহার সেই উত্তেজনায় লজ্জিতা হইয়া এইরূপ ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হইলাম, তিনি এই বঙ্গভূমিতে জন্ম গ্রহণ করত আমাদিগকে আকর্ষণ করিলেন, আমরা তাঁহারই আকর্ষণে আকৃষ্ট হইয়া পদ চারণে পারগ হইলাম। তিনি এই বঙ্গদেশে আবির্ভূতা হইয়া আমাদিগের লোচন হইতে লজ্জাবরণ মোচন করিলেন। আমিও সেই প্রফুল্ললোচনার কৃপাবলে এ তাদৃশ সাহসিক পথে পদার্পণ করিতে সমর্থ হইলাম। তাঁহারই যশঃ শশাঙ্কের বিমল কিরণ দর্শনে আমরা বিষম তামসীর বিভীষিকা দর্শন হইতে মুক্ত হইলাম। তিনি উৎসাহিনী না হইলে আমরা কখন এই ভাব। প্রাপ্ত হইতাম না, চির কালই জড় পদার্থের ন্যায় অবস্থিতি করিতাম, এবং আমাদিগের মনোগত ভাব সকল বাক‍্শক্তি রহিত ব্যক্তির স্বপ্নের ন্যায় মনেতেই লয় পাইত। তাঁহার অনুকম্পা প্রাপ্ত না হইলে আমার এই হাঁড়ি বেড়ি ধরা হাত কখনই লেখনী ধারণ করিতে ইচ্ছুক হইত না।

 যেমন আমি এতাবৎ কাল কেবল একজন অগ্রবর্ত্তিনীর অনুসন্ধান করিতে ছিলাম, এবং ঈশ্বরানুকম্পায় সেই প্রার্থনীয় অগ্রবর্ত্তিনী প্রাপ্ত হইয়া তাঁহার অনুগামিনী হইলাম, তদ্রুপ আমাদিগের মত অন্যান্য ভগিনীগণ আপনাপন গুণ পনা প্রকাশ করিলে কৃতার্থ হই।

শ্রীকৈলাস বাসিনী।

পরিচ্ছেদসমূহ (মূল গ্রন্থে নেই)

সূচীপত্র

এই লেখাটি বর্তমানে পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত কারণ এটির উৎসস্থল ভারত এবং ভারতীয় কপিরাইট আইন, ১৯৫৭ অনুসারে এর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। লেখকের মৃত্যুর ৬০ বছর পর (স্বনামে ও জীবদ্দশায় প্রকাশিত) বা প্রথম প্রকাশের ৬০ বছর পর (বেনামে বা ছদ্মনামে এবং মরণোত্তর প্রকাশিত) পঞ্জিকাবর্ষের সূচনা থেকে তাঁর সকল রচনার কপিরাইটের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। অর্থাৎ ২০২৪ সালে, ১ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালের পূর্বে প্রকাশিত (বা পূর্বে মৃত লেখকের) সকল রচনা পাবলিক ডোমেইনের আওতাভুক্ত হবে।