হিন্দু মহিলাগণের হীনাবস্থা/প্রণয়

উইকিসংকলন থেকে

প্রণয়।

 আহা! এই বাক্যটী কি সুমধুর, কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে ইহা শুনিতে যেমন কোমল, আচরণ করিতে আবার তেমনি দুরূহ। এই প্রণয় ব্যতিরেকে কোন কর্ম্মই হইতে পারে না, এবং সকলেই এই প্রণয়ের প্রত্যাশা করেন। বয়স্য বয়স্যের নিকট, আত্মীয় আত্মীয়ের নিকট, ভার্য্যা ভর্ত্তার নিকট, এইরূপ সকলেই পরস্পরের নিকট এই প্রণয় প্রার্থনা করেন, কিন্তু কেহই ইহা প্রকৃতরূপে আচরণ করিতে প্রবৃত্ত হন না। অতএব যেখানে এই প্রণয় অভাবে কোন কার্য্যই নির্ব্বাহ হইতে পারে না, সেখানে এই প্রণয় অভাবে দাম্পত্য সুখ কি প্রকারে হইতে পারে?

 অস্মদ্দেশীয় মহিলাগণও অতি অল্প বয়সেই দাম্পত্য সুত্রে বদ্ধ হয়, সুতরাং এ বিষয়ে তাহাদিগের উপর দোষারোপ করা যায় না, সকল দোষই পুরুষের উপর পতিত হইতেছে। কারণ তাঁহারা অগ্রে তাহাদিগের প্রতি অকৃত্রিম প্রীতি প্রকাশ করিয়া নানা বিষয়ে সুশিক্ষিতা করিলে, বয়ঃ প্রাপ্ত হইয়া তাহারা স্বামীর সদ্ব্যবহার দর্শন ও স্মরণ করিয়া, অকৃত্রিম প্রণয়ে বদ্ধ হইতে পারগ হইবে, এবং পরম পবিত্র পদ যে পাতিব্রত্য তাহার আশ্রয় লইয়া পরমসুখে সংসার যাত্রা নির্বাহ করিতে সমর্থ হইবে। নচেৎ পতির কুব্যবহার রূপ অনলে দিবানিশি দগ্ধ হইয়া বিদ্যা-বিহীনা নারীগণ কি প্রকারে পাতিব্রত্য রূপ শ্রেষ্ঠ বর্ত্মে পদার্পণ করিতে ইচ্ছা করিবে।

 আমাদিগের দেশ হইতে দাম্পত্য প্রণয় প্রায় তিরোহিত হইবার উপক্রম হইয়াছে। প্রত্যেক গৃহেই দম্পতী কলহরূপ বিষম বিষ প্রবেশ করিয়াছে। দম্পতীর মধ্যে যথার্থ প্রণয় প্রায় দৃষ্ট হয় না, দম্পতী পরস্পরের বাহ্যিক আড়ম্বর ও অঙ্গসৌষ্ঠবাদির প্রতি তুষ্টি রুষ্টি প্রকাশ করিয়া থাকে, কেহ কাহার আন্তরিক ভাব গ্রহণ করিতে যত্ন করে না, এবং কাহার কি প্রকার অভিপ্রায় তাহা কোন ক্রমেই ব্যক্ত করিতে ইচ্ছা করে না। হায়! যেখানে উভয়ে অভেদাত্মা ও এক ব্যবসায়ী হইয়া যাবজ্জীবন একত্রে সহবাস করিতে হয়, সেখানে উভয়ে লুকাচুরি খেলিলে কি প্রকারে যথার্থ প্রণয়ের আবির্ভাব হইতে পারে, এবং কি প্রকারেই বা নারীগণ পাতিব্রত্য-ধর্ম্মানুষ্ঠানে প্রবৃত্ত হইতে পারে।

 হা বিধাতঃ! কতদিনে এই বঙ্গদেশবাসিনীগণের হৃদয়াভ্যন্তর হইতে অতি দোষাবহ কুটিল ভাবের অভাব হইবে? কত দিনে তাহাদিগের চিত্তক্ষেত্র সরলতারূপ শান্তি শলিলে অভিষিক্ত হইবে? কতদিনে তাহারা পতিপ্রাণা ও পতি-আজ্ঞানুবর্ত্তিনী হইয়া পরম সুখে সংসার যাত্রা নির্ব্বাহ করিতে সমর্থ হইবে? কত দিনে তাহাদিগের যশঃ শশাঙ্ক উদয় হইয়া দিগ্দিগন্ত উদ্দীপিত করিবে? হে দীননাথ! আমার এই কাতরোক্তি শ্রবণ কর! মহিলাগণের এই অসহ্য যন্ত্রণা হরণ কর, ও তাহাদিগের প্রতি কৃপা কটাক্ষ পাত কর।