১৫১৩ সাল/প্রথম পরিচ্ছেদ
১৫১৩ সাল।
প্রথম পরিচ্ছেদ।
সে অনেক দিনের কথা।
একদিন সন্ধ্যার সময় চেয়ারে বসিয়া আছি, তখন আমার গৃহের টেলি-ফটোগ্রাফের (Tele-photograph-এর) ঘণ্টা বাজিয়া উঠিল। চাহিয়া দেখি উহার পর্দ্দার উপর আমার এক অতি প্রিয় বন্ধু শ্রীগুরুপ্রসাদ ঘোষালের মূর্ত্তির আবির্ভাব হইয়াছে।
কুতূহল হইয়া যন্ত্রের নিকট গেলাম। বন্ধু জিজ্ঞাসা করিলেন:—
“রজনী আছ?”
“হাঁ। ব্যাপার কি?”
“একবার আমার এখানে আসিলে ভাল হয়। বিশেষ প্রয়োজন আছে।”
“যাইতেছি”, বলিয়া receiver তুলিয়া রাখিলাম।
কিয়ৎক্ষণ পূর্ব্বে এক পশলা বৃষ্টি হইয়াছিল। এজন্য আমার রেডিওকারে (radio-carএ) না গিয়া, এ’রো (aero carএ) কারে গেলাম। দেখি অনেকে উপস্থিত। অনেকেই আমার পরিচিত। সম্ভাষণাদির পর বন্ধু অনেকের সহিত আমার পরিচয় করাইয়া দিলেন। নানা কথাবার্ত্তার পর বন্ধু আমাদের সকলকে সম্বোধন করিয়া বলিলেন:—
“আপনাদের কষ্ট দিয়া আনিয়াছি। তজ্জন্য আমার অপরাধ মার্জ্জনা করিবেন। আমি আপনাদের নিকট একটা গুরুতর প্রস্তাব উপস্থাপিত করিব। আশা করি আপনারা স্থিরচিত্তে শুনিয়া আপনাদের মতামত সুবিধা মত দিবেন। আমাদিগের বৃদ্ধ, অতি বৃদ্ধ, পিতামহদিগের একটা অখ্যাতি ছিল যে তাঁহারা বাক্সর্ব্বস্ব মাত্র ছিলেন। তাঁহাদের সন্তানেরা সেই অখ্যাতি মিথ্যা প্রমাণ করিয়াছেন। দেখুন, আজ বাঙ্গালী এক উৎসাহশীল জাতি বলিয়া পৃথিবীতে খ্যাতিলাভ করিয়াছে। সে আজ প্রায় ২০০শত বৎসরের কথা। ইহার মধ্যে কি কাণ্ড হইয়াছে, হরিনাথ বাবুর ডাইরেক্টরী খুলিয়া দেখিলেই বুঝিতে পরিবেন। দেখুন, এক বাঙ্গালীদিগের দ্বারায় প্রায় ৪০০ কাপড়ের কাল স্থাপিত হইয়াছে। ইহা ব্যতীত রঙ্, দিয়াশলাই, সাবান, প্রভৃতির বিবিধ কল কারখানা স্থাপিত হইয়াছে। দেশের অর্থ দেশে থাকিতেছে। ফলে, পূর্ব্বাপেক্ষায় গড়পড়তায় প্রায় ২০ গুণ ধন বৃদ্ধি হইয়াছে। আপনারা জানেন যে আমি অনুকরণপ্রিয় নই। আমি একটা সম্পূর্ণ নূতন অর্থাগমের পন্থা বাহির করিয়াছি। কিন্তু এ কাজ একেলা হইবে না। আমি যৌথ কারবারে কাজ করিতে ইচ্ছা করি। ইহাতে লাভ এত বেশী, যে আপনারা বোধ হয় আমার প্রস্তাবটা গাঁজাখুরী বলিয়া উড়াইয়া দিবেন। যদি একটু চিন্তা করেন তবে দেখিবেন যে কথাটা ফেলার নয়। যদি আপনারা ঘণ্টা খানেক সময় দিতে পারেন, তবে আমি উহা বিশেষরূপে বুঝাইয়া দিব। না হয়, আর একদিন সকলে মিলিয়া উহা আলোচনা করিব। আপনাদের মত কি?”
আমরা বলিয়া উঠিলাম:—“বেশ, বলুন না? এক ঘণ্টা কেন, দুই তিন ঘণ্টা পর্য্যন্ত দিতে পারিব। আমাদের এখন বিশেষ প্রয়োজন কিছুই নাই।”
বন্ধু বলিলেন:—
“আমি বড়ই বাধিত হইলাম! যে প্রস্তাব অদ্য উপস্থিত করিতে ইচ্ছা করিয়াছি, উহা বহু চিন্তা ও গবেষণার ফল। বহুদিন পূর্ব্বে একজন বাঙ্গালী কবি গাহিয়াছিলেন, “একটা নূতন কিছু কর।” আমি যে প্রস্তাব করিতেছি তাহা সম্পূর্ণ নূতন ও অভিনব। কথাটা এই। আপনারা সকলেই বোধ হয় জানেন যে সমুদ্রের জল হইতে সুবর্ণ পাওয়া যাইতে পারে। ভূমিতে যে সুবর্ণ আছে তাহা উত্তোলন করিতে অনেক ঝঞ্ঝাট পাইতে হয়। কিন্তু আমার প্রস্তাব নির্ঝঞ্ঝাট বলিলেই হয়—”
একজন জিজ্ঞাসা করিলেন:—“কিরূপ?”
“দেখুন, খনির উৎপাদিকাশক্তির সীমা আছে। সুবর্ণ বা অন্য ধাতু তুলিতে খরচ অনেক পড়ে, যেমন ম্যানেজার, কুলী, মজুর, প্রভৃতির মাহিয়ানা, যন্ত্রাদির ক্ষয়, ইত্যাদি। তাহার উপর কঠোর আইনের গণ্ডীর ভিতর কাজ করিতে হয়। অজ্ঞাতসারে কোন আইনভঙ্গ করিলে এবং তাহা ধরা পড়িলে, খনি-পরিদর্শক-মহাশয়ের কৃপায় আদালতে যাওয়া আসা করিতে হয়। তাহার উপর সরকার বাহাদুর, জমির মালিক প্রভৃতিকে অনেক সেলামী দিতে হয়। সকল খরচ খরচা বাদে যাহা থাকে, তাহা হইতে রেস্তে কিছু রাখিয়া বাকী টাকায় শতকরা ১০ হইতে ২০ টাকা মাত্র লাভ পোষায়। এমনও প্রায় ঘটিয়া থাকে যে একটা খনি হইতে প্রথম প্রথম বেশ আয় হইতেছে, কিন্তু হঠাৎ দেখা যায় যে lodeটা শেষ হইয়া গিয়াছে। তখন অংশীদারদিগকে হাহাকার করিতে হয়। ফাঁকতালে কোম্পানী-স্থাপয়িতারা কিছু মারিয়া ল’ন। এই সকল কারণে আমি ভূমিস্থ সুবর্ণ-খনির ব্যবসায়ের পক্ষপাতী নই।”
আমি জিজ্ঞাসা করিলাম:—“আপনার প্রস্তাবের সুবিধা কি?”
উত্তরে বন্ধু বলিলেন:—
“এখন তাহা দেখাইব। আমি বলিয়াছি যে সমুদ্রে বৃহৎ যন্ত্রাদির প্রয়োজন নাই। Inspector of Mines এর উৎপাত নাই, কেননা খনি যেখানে নাই, সেখানে পরিদর্শক কি করিতে যাইবে—”
“কিরূপ?”
“আপনারা বোধ হয় জানেন যে স্বাধীন রাজার রাজ্যের সীমা হইতে তিন মাইল পরে neutral zone আরম্ভ হয়। আমরা ১০ মাইলের পর কার্য্য আরম্ভ করিব। সেখানে আমরা Monarch of all I survey হইয়া থাকিব।”
“একেবারে Selkirk হইবেন?” আমি বলিয়া উঠিলাম।
একটা হাস্যের রোল উঠিল।
বন্ধুবর বলিতে লাগিলেন:—
“আরও দেখুন। সমুদ্রে mine-gas এ মরিবার ভয় নাই। চোর, ডাকাত, ধর্ম্মঘট ইত্যাদি হইতে রেহাই পাইব। সংক্ষেপে সকল কথা বলিলাম। এখন আপনাদের মতামত শুনিতে পাইলে সুখী হইব।”
আমি প্রশ্ন করিলাম:—
“আপনার প্রস্তাব অভিনব। চিন্তা না করিয়া এ বিষয়ে মতামত দেওয়া যায় না। তবে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি। আর কেহ কি পূর্ব্বে সমুদ্রের জল হইতে সুবর্ণ উৎপাদন করিতে চেষ্টা করে নাই?”
“করিবে না কেন? ১৯০৪ খৃষ্টাব্দে ইংলণ্ডের কোন একজন বিখ্যাত বৈজ্ঞানিকের তত্ত্বাবধানে সুবর্ণ উৎপাদন করিবার জন্য এক কোম্পানী স্থাপিত হয়। তাহার কিছুদিন পূর্ব্বে Gulf of Mexico হইতে সুবর্ণ উৎপাদন করিতেছে বলিয়া একজন পাদরী বিজ্ঞাপন দেয়। সেই বিজ্ঞাপনের চটকে ভুলিয়া অনেকে তাহার কারবারের অংশ কেনে। পরে একদিন সে গা’ ঢাকা দেয়। তখন তাহার জুয়াচুরী বাহির হইয়া পড়ে। সন্ধানে জানা যায় ষে খানিকটা সোনা সংগ্রহ করিয়া তাহা চূর্ণ করিয়া সমুদ্র হইতে উৎপাদন করিতে পারিয়াছে বলিয়া সে প্রকাশ করিয়াছে। এই কয়েক বৎসর অনেকে চেষ্টা করিয়াছেন, কিন্তু কিরূপ কৃতকার্য্য হইয়াছেন তাহা জানার উপায় নাই। কেননা তাঁহারা যে কোম্পানী করিয়াছেন তাহা public নহে, private, তাঁহাদের balance sheets বাহিরে প্রকাশ হয় নাই।”
যোগেন্দ্র বাবু জিজ্ঞাসা করিলেন:—
“বুঝিলাম। এখন আপনি যে প্রস্তাব করিতেছেন তাহা গবেষণার ফল, না অন্য কিছু।”
বন্ধুবর ব্যথিতভাবে উত্তর দিলেন:—
“আপনি এমন বলিবেন, তাহা আশা করি নাই। আপনারা সকলেই জানেন যে আমার জীবন বিজ্ঞান-চর্চ্চায় অতিবাহিত হইয়াছে। আমি যে তারহীন বার্ত্তাপ্রেরণের (wireless telegraphy র) উন্নতি করিয়াছি, তাহা ইউরোপে সকলেই স্বীকার করিয়াছেন। আমার Rotophone, Adometer, প্রভৃতি যন্ত্রের কথা আপনারা সকলেই জানেন। এজন্য উহাদের বিস্তৃত বিবরণ দেওয়া নিষ্প্রয়োজন। নিজের গুণ নিজমুখে গাহিলাম। এজন্য যে দোষ করিয়াছি তাহা মাফ করিবেন। আমি কোন কার্য্য দৃঢ়নিশ্চয় না হইয়া বলি না, বা করি না। আপনার যদি দেখিতে ইচ্ছা করেন, এখনই আপনাদের সম্মুখে সমুদ্রের জল হইতে সুবর্ণ উৎপাদন করিয়া দেখাইতে পারি।”
অমনি আমি বলিয়া উঠিলাম:—“তাহা হইলে অনেকের চক্ষুকর্ণের বিবাদ ভাঙ্গিয়া যায়।”
বন্ধুবর আমাদিগকে তাঁহার বিজ্ঞানাগারে লইয়া গেলেন। তাহার পার্শ্বে একটী বৃহৎ ঘর। সেই ঘরে একটা বৃহৎ মারবেলের চৌবাচ্চা রহিয়াছে। তাহার সহিত একটী porcelain পাত্রের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নলের দ্বারা যোগ আছে।
বন্ধুবর বলিলেন:—
“দেখুন, এই চৌবাচ্চার জল বঙ্গোপসাগর হইতে আজ সাত দিন হইল আনীত হইয়াছে। এই চৌবাচ্চার সহিত কয়েকটী নল সংযুক্ত দেখিতেছেন। এই পথে জল pump করিয়া আমার বিজ্ঞানাগারে লইয়া যাই। এখন কি উপায়ে সুবর্ণ উৎপাদন করি সকলে দেখুন।”
এই বলিয়া তিনি দেওয়ালের গাত্রস্থিত একটী রবারের বোতামের উপর দুইটা আঘাত করিলেন। তৎক্ষণাৎ একটা শব্দ হইয়া বিজ্ঞানাগারের dynamo চলিতে আরম্ভ করিল। শীঘ্রই জল পম্প হইয়া পূর্ব্বোক্ত porcelain পাত্রের ভিতর দিয়া আর একটা মারবেলের চৌবাচ্চায় পড়িতে লাগিল। দুই এক মিনিট পরে সেই জল টগ্ বগ্ করিয়া ফুটিতে লাগিল। কিয়ৎক্ষণ পরে সেই জল বাষ্পাকারে উড়িয়া গেল। অবশিষ্ট গুঁড়ার মত কি পড়িয়া থাকিল। তাহাই সযত্নে চামচে উঠাইয়া লইয়া বন্ধুবর একটা test tube এ রাখিয়া দিলেন; পরে তাহার সহিত কি একটা গুঁড়া মিশাইয়া একটা spirit lampএর উপর কিয়ৎক্ষণ জ্বাল দিলেন। তাহার পর tube এর উপরের খানিকটা গুঁড়া ফেলিয়া দিয়া tubeটা আমায় দিয়া বলিলেন:—
“এই যে হরিদ্রাবর্ণের দ্রব্যটী পড়িয়া আছে, উহাই সুবর্ণ। বিশ্বাস না হয় কোন জহুরীর নিকট যাচাই করিয়া আনুন।”
সকলেই আমার দিকে ঝুঁকিয়া পড়িলেন। একে একে সকলে ঐ দ্রব্যটী দেখিলেন এবং উহা যে সোণা তাহা কাহারও বুঝিতে বাকী রহিল না। আমরা তাঁহাকে ধন্যবাদ দিলাম।
বন্ধুবর আমাদিগকে নমস্কার করিয়া বলিলেন:—
“আজি প্রায় দশ বৎসর হইতে আমি পরীক্ষা করিয়া আসিতেছি। এ পরীক্ষার কথা কাহাকেও জানাই নাই, কেন না যদি কৃতকার্য্য না হই, তাহা হইলে আমায় হাস্যাস্পদ হইতে হইবে। অনেক চিন্তা ও অর্থ ব্যয় করিয়া আমি সফলতা লাভ করিয়াছি। তাহার প্রমাণ দিলাম। এখন আপনাদের কার্য্য করুন।”
“Processটা কি জানিতে পারি?” আমি জিজ্ঞাসা করিলাম।
“মাফ করিবেন। উহা এখন অপ্রকাশ থাকিবে।”
নগেন্দ্র বাবু প্রশ্ন করিলেন:—“এখন আপনার প্রস্তাব কি?”
“আমার প্রস্তাব এই যে একটা যৌথ কারবার করিয়া সুবর্ণ প্রস্তুত করিব। আমার এমন সামর্থ্য নাই যে একাই এই কার্য্যে প্রবৃত্ত হই। একটা private কোম্পানী করিতে ইচ্ছা করি, কেননা যতটা মূলধনের আবশ্যক, তাহা আপনারা কয়েক জনেই ইচ্ছা করিলে দিতে পারেন। সুতরাং লাভটা আপনাআপনির মধ্যেই পাকিবে।”
আমি বলিলাম:—
“আপনার প্রস্তাব সুন্দর। আমি সাধ্যমত সাহায্য করিতে ত্রুটী করিব না। আপনি ইতিমধ্যে একটা আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রস্তুত করুন। আর একদিন আমরা সকলে মিলিয়া সিদ্ধান্ত স্থির করিব।”
বন্ধুবর হাসিয়া বলিলেন:—
“হিসাব প্রস্তুত আছে। এই লউন।” এই বলিয়া একটা দেরাজ হইতে কয়েকখানা ছাপান কাগজ লইয়া আমার হস্তে দিলেন ও বলিলেন:—“প্রথম পৃষ্ঠায় কোম্পানীর উদ্দেশ্য বর্ণিত আছে। ইহার নাম Sea Gold Syndicate Ltd. রাখিয়াছি। মূলধন ২৫ লক্ষ যথেষ্ট। তৃতীয় পৃষ্ঠায় ব্যয়ের হিসাব দেখুন। একটা তড়িৎ চালিত জাহাজ চাই। টারবাইনের (turbineএর) আমি পক্ষপাতী নহি। বোম্বায়ের হাসানজী কোম্পানী বলিয়াছেন যে আমার আবশ্যক অনুযায়ী একটী জাহাজ প্রস্তুত করিতে প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা খরচ পড়িবে। ইহাই বৃহৎ খরচ। যন্ত্রাদি খাতে ৫ লক্ষ যথেষ্ট। বাকী ৫ লক্ষ চলতি খরচ বাবত হস্তে মজুত থাকিবে। বৎসরে নয় মাস কার্য্য চলিবে। আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, এই তিন মাস কার্য্য বন্ধ থাকিবে। বুঝিতে পারিতেছেন কেন? আমরা মাসে ২৬ দিনে ৯ ঘণ্টা করিয়া কার্য্য করিবে। দৈনিক যতটা সুবর্ণ পাওয়া যাইবে তাহা দ্বারায় বৎসরের খরচ খরচা বাদে শতকরা ৫০ হইতে ২০০ টাকা লাভ থাকিবে নিশ্চিত। ৫ বৎসরের মধ্যে মূলধন উঠিয়া যাইবে আশা করা যায়। এ ব্যবসায়ে লোকসান হইবে না নিশ্চিত। রাতারাতি বড় মানুষ হওয়ার এই এক উত্তম সুযোগ। আপনারা চিন্তা করিয়া দেখুন। সুবিধামত যত শীঘ্র পারেন, আপনাদের মনোগত ভাব জানাইয়া বাধিত করিবেন।”
চারুবাবু বলিলেন:—
“দেখুন, আপনার উপর আমাদের কোনই অবিশ্বাস নাই। আপনার প্রস্তাবের সহিত আমাদের সকলের সহানুভূতি আছে। এখন প্রত্যেক অংশের মূল্য কত করিয়া ধরিয়াছেন?”
“তাহা আপনাদের উপর নির্ভর করিতেছে। আমি প্রস্তাব করি আপনারা প্রত্যেকে কত টাকা ফেলিতে প্রস্তুত আছেন তাহাও এক এক খণ্ড কাগজে লিখিয়া আমায় দিন। তাহা হইলে আমি প্রত্যেক অংশের মূল্য নির্দ্ধারণ করিতে সক্ষম হইব। আমি এক লক্ষ টাকা দিতে প্রস্তুত আছি।”
সকলে শ্লিপ দিলে পর বন্ধুবর টাকার সমষ্টি করিয়া আনন্দ সহকারে বলিলেন:—
“আমি ২৫ লক্ষ চাহিয়া ছিলাম। আপনারা ৩০ লক্ষ দিয়াছেন। তবে আর ভাবনা কি? কোম্পানী private রাখিলেই চলিবে। আমার ইচ্ছা এই মাসের মধ্যেই কোম্পানী রেজেষ্ট্রী করিয়া জাহাজের অর্ডার লই। শীতকাল সম্মুখে উপস্থিত। আমাদের কার্য্যারম্ভের জন্য ইহাই প্রশস্তকাল। আপনারা আমার আন্তরিক ধন্যবাদ জানিবেন। এখন মধুরেণ সমাপয়েৎ। অনুমতি হইলেই হয়।”
“না, আজ থাক,” আমরা বলিয়া উঠিলাম।
বন্ধুবর বলিলেন—“তই কি হয়,” এবং সঙ্গে সঙ্গে দেওয়ালে স্থিত একটী রবারের বোতাম টিপিলেন। আমনি মধুর বাদ্য বাজিয়া উঠিল ও কয়েকটী বালক ছোট ছোট aluminium পাত্রে সভ্য সমাজে প্রচলিত বিবিধ খাদ্যের tabloids ও এক এক গ্লাস জল দিয়া গেল। ভোজনাদির পর বন্ধুর নিকট বিদায় লইয়া আমরা স্ব স্ব গৃহে প্রত্যাবর্ত্তন করিলাম।