১৯০৫ সালে বাংলা/সম্মানিত লাঞ্ছিতদের তালিকা

উইকিসংকলন থেকে


সম্মানিত লাঞ্ছিতদিগের তালিকা।

বরিশাল—হবিবপুর।

 অক্টোবর মাসে অন্যান্য কতিপয় ভদ্রলোকের সহিত (১) শ্রীযুক্ত বিপিনবিহারী গুহ, (২) শ্রীযুক্ত ললিতমোহন গুহ ও (৩) শ্রীযুক্ত ইন্দ্রচন্দ্র গুহ এই তিনজনের নামে, বরিশাল হবিবপুরে বিলাতী লবণ নষ্ট করা অপরাধে অভিযোগ উপস্থিত হয়। যাহার লবণ নষ্ট করা হইয়াছিল শুনা যাইতেছে তাহাকে মামলা মিটাইতে দেওয়া হয় নাই। যাহা হউক, বিচারে এই তিন জনের এক মাস করিয়া সপরিশ্রম কারাবাসের অনুমতি হইয়াছিল। আপীলে ফল হয় নাই।

 ইহাদিগকে সম্মানের নিদর্শন স্বরূপে রজত পদকাদি প্রদত্ত হইয়াছে। অভিযোগের বিস্তারিত বিবরণ যথাসময়ে প্রকাশিত হইয়াছে। পৌষ মাসে দণ্ডাজ্ঞা হয়।

ভোলা।

 পৌষ বা ডিসেম্বর মাসে (৪) উকীল বাবু নবীনচন্দ্রদাস ও (৫) বাবু মহেন্দ্রনাথ রায় একজন বিলাতী লবণ ব্যবসায়ীকে ভয় প্রদর্শন করিয়াছিলেন এই মর্ম্মে অভিযোগ হয়। উকীল দ্বয়ের এক মাস করিয়া সশ্রম কারারোধ ও যথাক্রমে চারিশত ও এক সহস্র মুদ্রা অর্থদণ্ড হয়। আপীলে কারাদণ্ড রহিত হইয়াছিল, কিন্তু অর্থদণ্ডের লাঘব হয় নাই। ইহাদের উভয়কেই রজতপদকাদি অনুরাগ নিদর্শন প্রদান করা হইল। গত নবেম্বরে (৬) উকীল বাবু শ্যামাচরণ দত্ত গুরখাদিগের বিরুদ্ধে মামলা লইয়াছিলেন—এই অপরাধে তাঁহাকে পাপিষ্ঠেরা গুরুতরভাবে আহত করে। কোন আসামী দণ্ড পায় নাই। শ্যামাচরণ বাবু রাজদ্বারে লাঞ্ছিত না হইলেও গুরখাদিগের হস্তে যে লাঞ্ছনা ভোগ করিয়াছেন তাহা বিশেষভাবে উল্লেখের যোগ্য। তিনি যে প্রাণে রক্ষা পাইয়াছেন ইহাই পরম মঙ্গল। তাঁহাকে অনুরাগের নিদর্শন রজতপদক প্রদান করা হয়। ডাক্তার নিশিকান্ত বসুকেও গুরখারা প্রহার করে।

নলছিটি—বরিশাল।

 ফেব্রুয়ারি মাসে, ইয়াকুব আলি ও মমতাজ আলি নামক দুইজন ইসলাম ধর্ম্মাবলম্বী বিলাতী লবণ বিক্রয়ে বাধা দেওয়া অপরাধে ভাস সাহেবের বিচারে এক মাসকাল কঠোর পরিশ্রম সহ কারাবাস করিবার জন্য আদিষ্ট হন। ইঁহাদিগের দুইজনেরই নিমিত্ত অনুরাগনিদর্শন রজত পদক প্রেরিত হইয়াছে।

 এতদ্ভিন্ন শ্রীযুক্ত সাধু ও শ্রীযুক্ত সিধু এই লবণের মামলায় আসামী হন। বিচারে ইঁহাদিগের প্রত্যেকের পঞ্চাশ টাকা করিয়া অর্থদণ্ড হয়। জরিমানার টাকা দিতে না পারিলে উভয়ের চতুর্দশ দিবসের কঠোর শ্রীঘরবাস নিৰ্দ্ধারিত ছিল। উভয়েই এই অর্থদণ্ড প্রদানে অসমর্থ হওয়ায় কারাগৃহে অবরুদ্ধ হইয়াছিলেন। পরে স্থানীয় হিন্দু ভদ্রলোকেরা এ ব্যাপার অবগত হইয়া জরিমানার টাকা তুলিয়া দেন, তখন এই দুইজনের মুক্তি লাভ ঘটে। এই দুইজনকে “বন্দেমাতরম্" অঙ্কিত রজত দোলক বা লকেট অনুরাগ নিদর্শন স্বরূপ প্রদান করা হইল।

 বরিশাল আমাদিগের আন্দোলনে তীর্থক্ষেত্র স্বরূপ ও সর্ব্বাগ্রগণ্য হইয়াছে। সুতরাং আমরা বরিশালের লাঞ্ছিত স্বদেশানুরাগীদিগের নাম করিয়া শেষ করিতে পারি না। যে কয়েকজন মহাপুরুষ কার্য্যক্ষেত্রে আমাদিগের স্মৃতিগোচর হইয়াছিলেন তাঁহাদিগেরই নাম উল্লিখিত হইল।

ঢাকা।

 ঢাকা, নরসিংদি গ্রামে, দেশহিতৈষী মহাত্মা ললিত বাবুর হাটে দুইজন মুসলমান গত ৮ই ডিসেম্বর বিলাতী লবণ বিক্রয় করিতে যায় ইহাতে বাধা দেওয়ায় জমিদারের দেওয়ান (৭) বাবু রাজকুমার চক্রবর্ত্তী ও তাঁহার পদাতিক (৮) লালু বাদ্যকর অভিযুক্ত হন। নিম্ন আদালতের বিচারে যে কোন বিক্রেতা হাটে যাহা ইচ্ছা বিক্রয় করিতে পারিত, সেইজন্য বিক্রয়ে বাধা প্রদান এবং অবৈধ জনতা ও গুরুতর আঘাত দ্বারা আসামীরা কঠোর অপরাধ করিয়াছে সুতরাং রাজকুমার বাবুর তিন শত টাকা অর্থদণ্ড এবং তিন মাস কঠোর কারাবাসের আজ্ঞা হয়। লালু বাদ্যকরের এক শত টাকা জরিমানা ও দেড়মাস সপরিশ্রম অবরোধের আদেশ হইয়াছিল।

 গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি আপীল আদালত স্থির করিয়াছেন যে হাটের অধিকারী যাহা ইচ্ছা বিক্রয়ে বাধা দিতে বা নিষেধ করিতে পারেন তবে সে জন্য তাঁহার কর্ম্মচারীরা অবৈধজনতা ঘটাইতে বা কাহাকেও প্রহার করিতে পারেন না। এই নিমিত্ত অবশিষ্ট কারাবাস রহিত করিয়া দেওয়া হইল। যে কয়দিন খাটা হইয়াছে তাহাই যথেষ্ট বিবেচিত হইয়াছে। অর্থদণ্ড প্রভৃতিতে হস্তক্ষেপ করা হইল না। সম্মান নিদর্শন স্বরূপ রাজকুমার বাবুকে রজত পদক ও সেখ লালু বাদ্যকরকে রৌপ্য লকেট প্রদান করা হইয়াছে। ঢাকা প্রকাশ্য সভায় শ্রীযুক্ত বাবু আনন্দচন্দ্র রায় সভাপতিত্বে সুরেন্দ্র বাবু স্বয়ং এই সম্মান নিদর্শন প্রদান করেন।

ফরিদপুর-মাদারিপুর।

 শ্রীমান অনন্তমোহন দাস নামক একটী ছাত্র ক্যাটেল সাহেবের নামে প্রহারের অভিযোগ উপস্থিত করে। ক্যাটেল সাহেব ও অনন্তমোহনের নামে এবং কালীনাথ, নেপালচন্দ্র, সুধন্য, ভূইমালি, ভুবনমোহন গুহ এবং বসন্তকুমার গুহ নামক কতিপয় বালক ও যুবকের বিরুদ্ধে লোষ্ট্র ক্ষেপের অভিযোগ করেন। বিচারে ক্যাটেল সাহেব অবশ্যই নিষ্কৃতি পাইয়াছেন। অনন্তমোহন ছয় সপ্তাহের জন্য শ্রীঘরে প্রেরিত হন। আপীলে ফলোদয় হয় নাই। সম্মান নিদর্শন রজতপদক অনন্তমোহনের নিকট প্রেরিত হইল।

 মাদারিপুরের আদর্শ শিক্ষক বাবু কালীপ্রসন্ন দাস অনন্যসাধারণ সৎসাহস ও সুদৃষ্টান্তে ঐ স্থানে স্বদেশী আন্দোলন অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছিলেন তাহারই ফলে তিনি কর্ম্মচ্যুত পর্য্যন্ত হন। তাঁহার প্রতি বঙ্গদেশের অধিবাসী প্রত্যেকেরই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। সেই কৃতজ্ঞতার নিদর্শন স্বরূপ রজত নির্ম্মিত “বন্দেমাতরম্” ব্রুচ বা বন্ধনী তাঁহার নিকট প্রেরিত হইল।

 মাদারিপুরের ছাত্রগণের মোকদ্দমার পরিণাম ও বিবরণ সংবাদপত্রে এইরূপে বিবৃত হইয়াছে:–অনন্ত মোহন দাস গত অক্টোবর মাসে মিঃ ক্যাটেল সাহেব কর্ত্তৃক প্রহৃত হয়; তাহাতে তাহার নাসিকায় বিলক্ষণ আঘাত লাগে। সেই জন্য সে মিঃ ক্যাটেলের বিরুদ্ধে এক অভিযোগ আনয়ন করে। ডিষ্ট্রীক্ট ম্যাজিষ্ট্রেট সেই মোকদ্দমা ডিস্মিস্ করেন এবং আসামী ক্যাটেল সাহেবকে অব্যাহতি দেন। গত নবেম্বর মাসে মিঃ ক্যাটেল উক্ত আনন্দমোহন ও অপর কয়েকজন ছাত্রের বিরুদ্ধে এক অভিযোগ উপস্থিত করেন। পুলিশ ৭, ৮, ১০, ১৬ ও ১৭ বৎসর বয়স্ক কতিপয় ছাত্রকে চালান দেয়। মাদারিপুরের জয়েণ্ট ম্যাজিষ্ট্রেট অনন্তমোহন ব্যতীত আর সকলকেই অব্যাহতি দেন—অনন্তমোহনের প্রতি ছয় সপ্তাহ সশ্রম কারাবাসের আদেশ দেওয়া হয়। অনন্ত ফরিদপুরের সেসন জজের নিকট আপীল করে। জজ সাহেব আপীল ডিস্মিস্ করিয়াছেন।” অনন্তের নামে আবার একটী মামলা রুজু হইয়াছিল।

ফরিদপুর—রাজবাড়ী।

 মোহর মোল্লা রাজবাড়ীর বাজারের ইজারাদার। রাজবাড়ী গ্রাম বেণী বাবুদিগের জমিদারীর অন্তর্গত। লক্ষ্মীকোলের রাজা সূর্য্যকুমার গুহের সহিত বহুকাল হইতে তাঁহাদিগের বিবাদ চলিতেছিল। সূর্য্যকুমার বাবুর পক্ষীয় দুইজন মুসলমান একদিন হাটের সময় বিলাত লবণ বিক্রয় করিতে যায়। বাজারের যে অংশ লবণ বিক্রয়ের জন্য নির্দ্দিষ্ট আছে, তাহারা সে স্থানে না বসিয়া অন্য স্থানে বসে। অন্যান্য সকলে তাহাতে আপত্তি করে। সেইজন্য উক্ত ইজারদার তাহাদিগকে নির্দ্দিষ্ট স্থানে যাইতে বাধ্য করিবার জন্য তাহাদিগকে তুলাদণ্ড ও বাটখারাগুলি যথাস্থানে লইয়া যায় এবং তাহাদিগের স্থান নির্দ্দেশ করিয়া দেয়। কিন্তু মুসলমান দুইটি সেই স্থানে না যাইয়া সবডিভিসনাল অফিসার মহাশয়ের নিকট গমন করে এবং মোহর মোল্লার বিরুদ্ধে অভিযোগ উপস্থিত করে। সবডিভিসনাল অফিসার বাবু প্রসন্নকুমার দাস স্বয়ং এই ঘটনার তদন্ত করে এবং স্বয়ং মোকদ্দমার বিচার করেন। তিনি ভারতীয় দণ্ড-বিধির ৩৫২ ও ৩৭৯ ধারা অনুসারে মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করিয়া তাহার ৫০ টাকা অর্থদণ্ড করেন। ফরিদপুরের সেশন জনের নিকট এই দণ্ডের বিরুদ্ধে আপীল করা হইয়াছিল।

 এই মোকদ্দমা পরে ঘটায় পূর্ব্বতন মহাসভায় উল্লিখিত হইতে পারে নাই। কিন্তু পরিশেষে সভার সম্পাদক ইহাকে স্বতন্ত্র একটী রৌপ্য দোলক বা রূপার লকেট দিয়াছিলেন।

বৰ্দ্ধমান—মানকর।

 গত অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম সপ্তাহে মানকরের জমীদার বাবু রাজকৃষ্ণ দীক্ষিতের অনুমতি ক্রমে তাঁহার লোক একজন মোদকের বাটীতে গিয়া বিলাতী চিনি ফেলিয়া দিতে বলে। মোদক “আমি দোকানে বিলাতী চিনি রাখিয়া অপরাধ করিয়াছি” এই বলিয়া দোকান হইতে চিনি বাহির করিয়া দেয়। এ ব্যাপারে কোন প্রকার দাঙ্গা হাঙ্গামা হয় নাই, কিন্তু পুলিশ মোদককে হস্তগত করিয়া রাজকৃষ্ণ বাবু ও তদীয় কর্ম্মচারীদিগের বিরুদ্ধে, জুলুম, অনধিকার প্রবেশ প্রভৃতি দোষারোপ করে। আদালতে রাজকৃষ্ণ বাবুর একশত টাকা অর্থদণ্ড ও এজলাস ভাঙ্গার সময় পর্য্যন্ত অবরোধের আদেশ হয়। রাজকৃষ্ণ বাবুকে সম্মান প্রদর্শনার্থ রজত পদকাদি প্রদত্ত হইয়াছিল।

জলপাইগুড়ি।

 অগ্রহায়ণ মাসে বাবু দুর্গাদাস চক্রবর্ত্তী, চণ্ডীদাস চক্রবর্ত্তী ও আদ্যনাথ মিত্র বিলাতী কাপড় বিক্রয়ে বাধা দেওয়ার জন্য নিগৃহীত হন। দুর্গাদাস বাবুর বিরুদ্ধে ২৫৫ ধারা এবং অপর দুই জনের বিরুদ্ধে ১৭৬ ধারা অনুসারে অভিযোগ হয়। থানায় অবস্থান কালে পুলিস সুপারিণ্টেণ্ডেণ্ট কুইণ্টনবারণ দুর্গাদাস বাবুকে প্রহার পর্য্যন্ত করিয়াছিলেন এরূপ কথাও উক্ত হইয়াছিল। বিচারে দুর্গাদাস ও আদ্যনাথ বাবু উভয়ের প্রতিই দুই সপ্তাহ করিয়া কঠোর কারাবাসের আদেশ হয়। চণ্ডীদাস অর্থ দণ্ডেই অব্যাহতি প্রাপ্ত হন। চণ্ডীদাস বাবুকে রৌপ্যদোলক এবং দুর্গাদাস ও আদ্যনাথ বাবুকে রজতপদক প্রদান করিয়া অনুরাগ প্রকাশ করা হইয়াছিল। হাইকোর্টের শেষ আপীলে .৮ই এপ্রেল স্থির হইয়াছিল দুর্গাদাস বাবুর দোষ দণ্ডবিধি অনুসারে অপরাধ বলিয়া গণ্য হইতে পারে না।

ভট্টপল্লী।

 শ্রীযূক্ত ভূতনাথ ভট্টাচার্য্য কলিকাতায় বাসা করিয়া থাকিতেন ও হাওড়ায় চাকরী করিতেন। জাহাজে গঙ্গাপার হইবার সময়ে তাঁহাকে পরিচ্ছদের জন্য উপযুক্ত স্থানে উঠিতে দেওয়া নাই। এই সময়ে ভূতনাথ বাবু “বন্দেমাতরম্” বলায় অনেকে তাঁহার সহায় হয় এবং অবজ্ঞাকারীরা রীতিমত প্রহৃত হয়। কলিকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সি মাজিষ্ট্রেটের বিচারে ভূতনাথের প্রতি বার দিন কঠোর কারাবাসের আদেশ হইয়াছিল। হাইকোর্টে আপীলে ফল হয় নাই বরং একজন জজ এ দণ্ড লঘু হইয়াছে বলিয়া মত প্রকাশ করেন।

 পুত্রের কারাদণ্ডের কথা শুনিয়া ভূতনাথের জননী কাঁদিতে কাঁদিতে মণিরামপুরে সুরেন্দ্র বাবুর নিকট গমন করেন। সুরেন্দ্র বাবু তাঁহাকে এই বলিয়া আশ্বাস দিলেন আমি দুই মাসের জন্য জেলে গিয়াছিলাম, আমার মা সে জন্য কাঁদেন নাই। আপনার পুত্র চুরি ডাকাতি, জালিয়তি করিয়া জেলে যায় নাই, ভাল কার্য্যের নিমিত্তই গিয়াছে, কয়টা দিন বাদে হাসিতে হাসিতে ফিরিয়া আসিবে। ইহা শুনিয়া শোকাকুলা জননী অশ্রু সংবরণ করিলেন। ভূতনাথ বাবুকে রৌপ্য পদক দানে সম্মানিত করা হইল।

গৌরীবেড়।

 শ্রীমান্ জানকী নাথ দত্ত, কলিকাতার উত্তর পূর্ব্বে পরেশনাথ মন্দিরের সমীপবাসী বাবু বসন্তকুমার দত্তের পুত্র। নভেম্বর মাসে “বন্দেমাতরম্” বলিয়া চীৎকার করা অপরাধে এই বালককে বেত্রাঘাত করা হয়। কলিকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সী ম্যাজিষ্ট্রেট এই অদ্ভুত দণ্ডাজ্ঞায় যে সহৃদয়তা প্রকাশ করিয়াছেন তদ্দর্শনে সকলেই বিস্মিত হইয়াছিল। বেত মারা তদ্দণ্ডেই হইয়া গেল, তখন আর আপীলে কি হইবে? জানকী নাথকে সম্মান নিদর্শন রৌপ্যপদক দেওয়া হয়।

 পৌষ মাসে শ্রীমান্ সুরথ কুমার বসু, শ্রীমান্ নরেন্দ্রনাথ 

ভবানীপুরের দাঙ্গা।

সেন ও শ্রীমান্ সুবোধচন্দ্র ঘোষ এই তিন জন যুবক বিদেশী দ্রব্যের বিক্রয়ে বাধা দেওয়া অপরাধে পুলিশ দ্বারা প্রহৃত ও অভিযুক্ত হন। শেষোক্ত দুইজন অতি তরুণ বয়স্ক, কলেজের ছাত্র। সুরথ কুমারের একমাস কঠোর কারাবাস ও দেড়শত টাকা জরিমানা, এবং ছাত্র দুইজনের এক শত টাকা করিয়া অর্থদণ্ড হইল।

 প্রথম আদালতের বিচারের বিরুদ্ধে চব্বিশ পরগণার জজের নিকট আপীল হয়। জজ সুরথের কারাদণ্ড অক্ষুণ্ণ রাখেন তবে জরিমানার টাকার পরিমাণ দেড়শতের পরিবর্ত্তে একশত স্থির করিয়া দেন। হাইকোর্টের চরম মীমাংসার যে কয়দিন [১৭ দিন] কারাদণ্ড ভোগ হইয়াছে তাহাই যথেষ্ট স্থির হইল। অর্থদণ্ড রহিত হইল, সুরথ বাবুর দোষ সাব্যস্তই রহিল, এক বৎসর মুচলেখার আদেশও পূর্ব্ববৎ বজায় রহিল।

 ছাত্রদ্বয়ের আপীল না-মঞ্জুর হইয়াছিল। সুরথ বাবুকে সম্মান নিদর্শন রজত পদক প্রদান করা হইয়াছিল, এবং ছাত্রদ্বয়ের নিকট রৌপ্য পরিদোলক লকেট প্রেরিত হইয়ছিল।



নোয়াখালি।

 নোয়াখালিতে একজন চতুর ব্যক্তি স্বদেশবৎসল সাজিয়া যুবক দিগকে বলে “বন্দেমাতরম্” আমাদিগের ইষ্ট মন্ত্র, সুতরাং গুরুদত্ত  ইষ্ট মন্ত্রের ন্যায় মনে রাখিতে হয়, মুখে আনিতে নাই। নোয়াখালির নবীন জমীদার বাবু নগেন্দ্রনাথ গুহরায় বয়সে বালক হইলেও উত্তর করেন মুমূর্ষুকালে ইষ্টমন্ত্র রাম নাম চীৎকার করিয়া বলিতে হয়। আমরা যে মরণাপন্ন, অতি চীৎকার করিয়া না বলিলে আমাদিগের মর্ম্মস্থলে ইষ্টমন্ত্র প্রবেশ করান সম্ভবপর নহে। শুনা যায় কোর্ট অফ ওয়ার্ডের কর্ত্তারা ইহাকে স্বদেশী আন্দোলন ত্যাগ করিতে বলেন, ইনি স্বীকৃত হন নাই। ইনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারেন নাই।

 নগেন্দ্র বাবুকে সম্মানের নিদর্শন “বন্দেমাতরম্” রজত-বন্ধনী [বা ব্রুচ] প্রদত্ত হয়।