ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী/১৮

উইকিসংকলন থেকে

(১৭)


দেশ।

সখিলো, সখিলো, নিকৰুণ মাধব
 মথুরাপুর যব যায়,
মনম করল পণ মানিনী রাধা,
রোয়বে না সো না দিবে বাধা,
কঠিন-হিয়া সই, হাসরি হাসয়ি
 শ্যামক দিবে বিদায়।
মৃদু মৃদু গমনে আওল মাধা,
বয়ন পান তছু চাহল রাধা,
চাহুয়ি রহল স চাহয়ি রহল,
দণ্ড দণ্ড সখি চাহয়ি রহল,
মন্দ মন্দ সখি নয়নে বহল
 বিন্দু বিন্দু জল ধার!

মৃদু মৃদু হাসে বৈঠল পাশে,
কহল শ্যাম কত, মৃদু মৃদু ভাষে,
টুটয়ি গইল পণ, টুটইল মান,
গদ গদ আকুল ব্যাকুল প্রাণ,
ফুকরয়ি কাঁদয়ি উঠইল রাধা,
গদ গদ ভাষ নিকাশল আধা,
শ্যামক চরণে বাহু পসারি
কহল, “শ্যামরে, শ্যাম হমারি,
রহ’ তুঁহু, রহ তুঁহু, নাহ গ, রহ তুঁহু,
অনুখন সাথ সাথ রে রহ পহু
তুঁহু বিনে শ্যাম গ, নাগ গ, পহু গো,
 আছয় কোন্‌ হমার!”
পড়ল ভূমি পর শ্যাম চরণ ধরি,
রাখল মুখ তছু শ্যাম চরণ পরি,
উছসি উছসি কত কাঁদয়ি কাঁদয়ি
 রজনী করল প্রভাত!

শ্যাম সবৈসল, মৃদু মৃদু হাসল,
কত অশোয়াস বচন মিঠ ভাষল,
 ধরইল বালিক হাত!
সখিলো, সখিলো, বোল’ত সখিলো
 যত দুখ পাওল রাধা,
নিঠুর শ্যাম কিয়ে আপন মনমে
 পাওল সখি তছু আধা?
হাসয়ি হাসয়ি নিকটে আসয়ি
 বহুত স প্রবোধ দেল,
হাসয়ি হাসয়ি পলটয়ি চাহয়ি
 দূর—দূর চলি গেল!
সখিলো, সখিলো, শ্যাম স হাসল,
 শ্যাম স কাঁদল না,
দাৰুণ মন-দুখ পাওল রাধা
 তবহুঁ স কাঁদল না!
বসন্ত রাতে হাসয়ি যব্ সখি
 রাধা বনমে আসে,

সুনীল অঞ্চল, নয়ন বিচঞ্চল,
 তব্‌ স কানু মৃদু হাসে;
হাত ধরয়ি তছু হিয়য়ি ঢাকি মুখ
 বালি রহই যব্‌ পাশে,
চুম্বয়ি চুম্বয়ি কপোল চুম্বয়ি
 তব্‌ স কানু মৃদু হাসে!
যব্‌ সখি আজ স রাধা কাঁদল,
 তব্‌ সখি কাঁদল না!
বেড়ি চরণ তছু তিতল চরণতল
 তবহুঁ স কাঁদল না!
অবহুঁ স মথুরাপুরক পন্থমে
 ইঁহ যব রোয়ত রাধা,
যাতে যাতে অব মনে শ্যাম কিরে
 পায় শোক তিল-আধা?
যাতে যাতে অব পথমে মাধব
 সমরণ করয় কি বেরি

তাকর বিরহে আকুল রাধা
 কাঁদি কাঁদি পথ হেরি?
বরখি আঁখিজল ভানু কহে “অতি
 দুখের জীবন ভাই!
হাসিবার তর সখা মিলে বহু
 কাঁদিবার কো নাই।”