অব্যক্ত/দীক্ষা

উইকিসংকলন থেকে
দীক্ষা

 আমরা সকলেই শিক্ষার্থী, কার্য্যক্ষেত্রে প্রত্যহই শিখিতেছি, দিন দিন অগ্রসর হইতেছি এবং বাড়িতেছি।

 জীবন সম্বন্ধে একটি মহাসত্য এই যে, যেদিন হইতে আমাদের বাড়িবার ইচ্ছা স্থগিত হয় সেই দিন হইতেই জীবনের উপর মৃত্যুর ছায়া পড়ে। জাতীয় জীবন সম্বন্ধে একই কথা। যেদিন হইতে আমাদের বড় হইবার ইচ্ছা থামিয়াছে সেদিন হইতেই আমাদের পতনের সূত্রপাত হইয়াছে। আমাদিগকে বাঁচিতে হইবে, সঞ্চয় করিতে হইবে এবং বাড়িতে হইবে। তাহার জন্য কি করিয়া প্রকৃত ঐশ্বর্য্য লাভ হইতে পারে একাগ্রচিত্তে সেই দিকে লক্ষ্য রাখিবে।

 দ্রোণাচার্য্য শিষ্যগণের পরীক্ষার্থ জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, ‘গাছের উপর যে পাখীটি বসিয়া আছে তাহার চক্ষুই লক্ষ্য; পাখীটি কি দেখিতে পাইতেছ?’ অর্জ্জুন উত্তর করিলেন, ‘না, পাখী দেখিতে পাইতেছি না, কেবল তাহার চক্ষুমাত্র দেখিতেছি।’ এইরূপ একাগ্রচিত্ত হইলেই বাহিরের বাধা-বিঘ্নের মধ্যেও অবিচলিত থাকিয়া লক্ষ্য ভেদ করিতে সমর্থ হইবে।
 তবে সেই লক্ষ্য কি? লক্ষ্য, শক্তি সঞ্চয় করা, যাহা দ্বারা অসাধ্যও সাধিত হয়।

 জীবন সম্বন্ধে পরীক্ষা করিয়া দেখা যায় যে, শক্তি সঞ্চয় দ্বারাই জীবন পরিস্ফুটিত হয়। তাহা কেবল নিজের একাগ্র চেষ্টা দ্বারাই সাধিত হইয়া থাকে। যে কোনরূপ সঞ্চয় করে না, যে পরমুখাপেক্ষী, যে ভিক্ষুক, সে জীবিত হইয়াও মরিয়া আছে।

 যে সঞ্চয় করিয়াছে সেই-ই শক্তিমান্, সেই-ই তাহার সঞ্চিত ধন বিতরণ করিয়া পৃথিবীকে সমৃদ্ধশালী করিবে। কে এই সাধনার পথ ধরিবে?

 এজন্য কেবল অল্প কয়জনকেই আহ্বান করিতেছি। দুই এক বৎসরের জন্য নহে; সমস্ত জীবনব্যাপী সাধনার জন্য। দেখিতেছ না ধূলিকণার ন্যায়, কীটের ন্যায় নিয়ত কত জীবন পেষিত হইতেছে। ভীষণ জীবনচক্রের গতি দেখিয়া ভীত হইয়াছ? স্বভাবের নির্ম্মম ও কাণ্ডারীহীন কার্য্য-কারণ সম্বন্ধ বুঝিতে না পারিয়া ম্রিয়মাণ হইয়াছ? কিন্তু তোমাদেরই অন্তরে দৈব দৃষ্টি আছে, তাহা উজ্জ্বল কর। হয়ত প্রকৃতির মধ্যে একটা দিশা, একটা উদ্দেশ্য দেখিতে পাইবে। দেখিতে পাইবে যে, এই বিশ্ব জীবন্ত, জড়পিণ্ড মাত্র নহে। তাহার আহার উল্কাপিণ্ড, তাহার শিরায় শিরায় গলিত ধাতুর স্রোত প্রবাহিত হইতেছে। সামান্য ধূলিকণাও বিনষ্ট হয় না, ক্ষুদ্র শক্তিও বিনাশ পায় না; জীবনও হয়ত তবে অবিনশ্বর। মানসিক শক্তিতেই জীবনের চরমোচ্ছ্বাস। দেখ, তাহারই বলে এই পুণ্য দেশ সঞ্জীবিত রহিয়াছে। সেবা দ্বারা, ভক্তি দ্বারা, জ্ঞান দ্বারা মানুষ একই স্থানে উপনীত হয়। তোমরাও তাহার একটি পথ গ্রহণ কর। জীবন ও তাহার পরিণাম, এই জগৎ ও অপর জগৎ তোমাদের সাধনার লক্ষ্য হউক। নির্ভীক বীরের ন্যায় জীবনকে মহাহবে নিক্ষেপ কর।