পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/২৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 প্রবাসী-কাৰ্ত্তিক, ১৩৩৬ [ २5° उांशं, २ग्न थं७ পঞ্চাশ হাজার সশস্ত্র লোক এক মাস ধরিয়া অতি শাস্ত ও সাধুভাবে বিদেশ পার হষ্টয়া চলিল, কাহারও একগাছি তৃণ বা এক দানা শস্তে হাত দিল না । ইহাতে চারিদিকে শিবাজীর স্বনাম ছড়াইয়া পড়িল । কুতুব শাহ প্রস্তাব করেন যে তিনি রাজধানী হইতে কয়েক ক্রোশ পথ অগ্রসর হইয়া শিবাজীকে অভ্যর্থনা করিবেন। কিন্তু শিবাজী নম্রভাবে তাহাকে নিষেধ করিয়া পাঠাইলেন ; বলিলেন, “আপনি আমার জ্যেষ্ঠ ; এতটা পথ আগুয়ান হুইয়া কনিষ্ঠকে সন্মান করা গুরুজনের পক্ষে অঙ্কুচিত।” স্বতরাং শুধু মাদর, তাহার ভ্রাত আকয়া এবং হায়দরাবাদের সব বড় বড় লোকেরা শহর হইতে পাঁচ ছয় ক্রোশ বাহিরে আসিয়া শিবাজীকে । অভ্যর্থনা করিয়া রাজধানীতে আনিলেন । শিবাজীর অভ্যর্থনার জন্য রাজধানী হায়দরাবাদ আজ অতি সুন্দর বেশ ধারণ করিয়াছে। রাস্ত ও গলিগুলি কুকুম ও জাফরানে লালে লাল। স্থানে স্থানে ফুল পাতা ও নিশানে সজ্জিত খিলান ও ধ্বজদণ্ড তৈয়ারি করা হইয়াছে। লক্ষ লক্ষ নাগরিকের ভাল ভাল পোষাক পরিয়া পথের ধারে দাড়াইয়া, আর বারান্দাগুলি সাজগোছ করা মহিলায় ভরা। শিবাজীও তাহার সৈন্তগণকে এই দিনের জন্য চমৎকার বেশভূষা পরাইয়াছেন। জমকাল পোষাক ও অস্ত্রে র্তাহার সেনানীগণকে ধনী ওমরাদের মত দেখাইতেছিল। বাছা বাছা সিপাহীর পাগড়ীতে মোতির ঝালর (‘তোড়া ), হাতে সোনার কড়া, গায়ে উজ্জল বৰ্ম্ম ও জরির পোষাক । দুই রাজার মিলনের জন্য নির্দিষ্ট শুভদিনে সেই পঞ্চাশ হাজার মারাঠী-সৈন্ত হায়দরাবাদে ঢুকিল। তাহাদের বীরত্বের কাহিনী এতদিন দাক্ষিণাত্যে লোকমুখে প্রচারিত, কত গাথায় ( ব্যালাঙে ) গীত হইয়া আসিতেছিল । আজি লোকে অবাক হইয়৷ সেই সব বিখ্যাত বীর নেতা ও সিপাহীদের দিকে তাকাইতে লাগিল ; এতদিন তাছাদের নাম শুনিয়া আসিতেছিল, আজ তাহাদের চেহারা দেখিল । সকলের চোখ পড়িল সেনাপতি মন্ত্রী ও রক্ষীদের মধ্যস্থলে বীরশ্ৰেষ্ঠ শিবাণীর প্রতি। তাঁহার শরীর মাঝারি রকমের লম্বা এবং পাতলা । গত বৎসরের অম্বথে এবং এই এক মাস ধরিয়া নিত্য কুচ করার ফলে র্তাহাকে আরও পাতলা দেখাইতেছিল। কিন্তু র্তাহার গৌরবর্ণ মুখে সদাই হাসি লাগিয়া আছে, তীক্ষ উজ্জল চোক দুটি ও চোখাল নাক এদিকে ওদিকে ফিরিতেছে । নগরবাসীরা আনন্দে “জয় শিব ছত্রপতির জয়” ধ্বনি করিতে •লাগিল। মহিলারা বারান্দা হইতে সোনা- . রূপার ফুল বৃষ্টি করিতে লাগিলেন, অথবা ছুটিয়া আসিয়া র্তাহার চারিদিকে প্রদীপ ঘুরাইয়া আরতি করিলেন, অভ্যর্থনার শ্লোক ও আশীৰ্ব্বাদ-বাণী উচ্চারণ করিলেন । শিবাজীও দু-পাশের জনতার মধ্যে মোহর ও টাকা ছড়াইতে লাগিলেন, এবং প্রত্যেক পাড়ার প্রধান নাগরিকগণকে খেলাৎ ও অলঙ্কার উপহার দিলেন। . এইরূপে শোভাযাত্রা কুতুব শাহের বিচার-প্রাসাদ– দাদ-মহলের সামনে আসিয়া পৌছিল। সেখানে আর সকলে শাস্ত সংঘত ভাবে রাস্তায় দাড়াইয়া রহিল ; শুধু শিবাজী পাচজন প্রধান কৰ্ম্মচারীর সহিত সিড়ি বাহিয়া দরবার-গৃহে উঠিলেন। সেখানে কুতুব শাহ প্রতীক্ষা করিতেছিলেন ; তিনি দরজা পধ্যস্ত উঠিয়া আসিয়া শিবাজীকে আলিঙ্গন করিলেন এবং হাত ধরিয়া লইয়া গিয়া গদীর উপর নিজ পাশে বসাইলেন। মন্ত্রী মাদন্নাকে ফরাসে বসিতে অনুমতি দেওয়া হইল ; আর সকলে দাড়াইয়া রহিল। অন্তঃপুরে বেগমের দুই পাশের পাথরের জাফরিকাট, জানালার ফাক দিয়া মহা কুতূহলে এই অপূৰ্ব্ব দৃপ্ত দেখিতে লাগিলেন। কুতুব শাহ তিন ঘণ্টা ধরিয়া কথাবাৰ্ত্ত কহিলেন, এবং শিবাজীর মুখে তাহার জীবনের আশ্চৰ্য্য ঘটনা ও বীর কীৰ্ত্তিগুলির বিস্তারিত বিবরণ মুগ্ধ হইয়া শুনিলেন। পরে তিনি স্বহস্তে শিবাজীকে পান আতর দিয়া, এবং মারাঠা মন্ত্রী ও সেনাপতিদের খেলাৎ অলঙ্কার হাতী ঘোড়৷ উপহার দিয়া বিদায় করিলেন ; স্বয়ং শিবাজীর সঙ্গে সঙ্গে সিড়ির নীচ তলা পৰ্য্যস্ত গেলেন। সেখান হইতে পথে টাকা ছড়াইতে ছড়াইতে শিবাজী বাসাবাড়ীতে পৌছিলেন।