পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬ষ্ঠ সংখ্যা ] ছেলেমানুষ আছ বুঝতে পারেন নি। সত্যি তোমার মত নেই ঠাকুরপো ?” কয়েক মুহূৰ্ত্ত মাধবী দেবরের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। কতকগুলি মিনতি ও অনুরোধের বাণী উচ্চারণ করিতে যাইতেছিল, করিল না। শুধু "আচ্ছা বলিগে ওঁকে, বলিয়৷ চলিয়া গেল। শিবপদ চুপ করিয়া বসিয়া রহিল। অন্ধকূপের মত রান্নাঘর, পিছনের একটা গলির দিকে একটি মোটে রান্নাঘর । গলির ও-পাশের দেয়ালটা বাড়ীর যেন জানালায় আসিয়া ঠেকিয়াছে, গলিটির পরিসর এতই বেশী। কোথা দিয়া বাতাস আসিতেছিল বলা কঠিন, কেরাসিনের ডিবরির স্বম্পষ্ট শিখাটি থর থর করিয়া কঁাপিতেছিল। ডিব রির নীচের অন্ধকারে একটা ফাটলের ভিতরে শরীরের আধখানা অন্তরালে রাখিয়া একটা আরশোলা শুড় নাড়িতেছিল। সেদিকে চাহিয়া থাকিতে থাকিতে একটা উদ্ভট কল্পনা শিবপূদর মুখে হাসি ফুটাইয়া তুলিল। মাধবীর অনুরোধ নীতিকে মনে পড়াইয়া দিল । বিবাহ ? কত বড় হাসির কথা ! হোক হাসির কথা, ধর সে বিবাহ করিল। মনে মনে বিবাহ করিতে আর আপত্তিটা কি ? আর যখন কল্পনার বিবাহ তখন বৌদির এই খাসা মেয়েটিকে টানাটানি না করিয়া নীতিকে কনের আসনে বসাইয়া দিলেই বা এমন কি ক্ষতি ? ধর নীতি হইল এ বাড়ীর ছোটবেী। বড় জ-এর সঙ্গে বন্ধু নীতি এই রান্নাঘরে আসিয়া বসিল । ফাটলের ভিতর হইতে আরশোলাটা বাহির হইয়া সর সর করিয়া নীতির গ বাহিয়া ফর ফর করিয়া উড়িয়া গেল। আতঙ্কে শিহরিয়া নীতি বলিয়া উঠিল—“মাগে৷ ”

  • বিদ্ব্যতালোকে উদ্ভাসিত দামী কাপেট-পাত সোফা চেয়ার পিয়ানো অর্গান অয়েলপেপ্টিং সমাকীর্ণ ড্রয়িংরূমে ঝলমলে মাদ্রাজী শাড়ী পরা নীতিকে আধময়লা মিলের শাড়ীতে মাধবীর মত বন্ধুবেশে সজ্জিত করিয়া কেরোসিনের ডিবরির আলোয় আলোকিত, চোকলা-ওঠা মেৰে ও ফাটলধরা দেয়ালযুক্ত রান্নাঘরে টানিয়া আনিয়া তার গায়ে আরশোলা ছাড়িয়া দিয়া শিবপদ অত্যন্ত আমোদ বোধ করিল।

छां*ीं जांऎ}न ፃፃ¢ এই রকম হইয়াছিল আজকাল তার। অফুরন্ত কর্মের মাঝে হঠাৎ তার দেহের যে পরিমাণ বিশ্রাম জুটিয়াছে, কল্পনার প্রসার তেমনি বাড়িয়া গিয়াছে,— সম্ভব অসম্ভবের সীমা ছাড়াইয়া। শুধু দেহ দিয়া কাজ হয় না, মনকেও প্রয়োজন হয়। দেহ খাটে, মন খাটায় । যখন দেহটাকে বিশ্রামের অবসর না দিয়া যন্ত্রের মত খাটাইত, মনও তার সেই কাজের ভিতরে ঘুরিয়া বেড়াইত, কৰ্ম্মকোলাহুলের অসংখ্য ছোট-বড় বৈচিত্র্যময় স্বরে তার চিত্ত পূর্ণ হষ্টয়া থাকিত , অবসাদ ও উৎসাহের দোলায় সে দুলিত। এগন কাজ নাই, সারাদিন দেহ এক রকম নিশ্চেষ্ট হইয় থাকে। আপিসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তুচ্ছ হিসাবনিকাশের অনভ্যস্ত আলিঙ্গনে মন তার ক্লিষ্ট হইয়া যায়। মুক্তি পাইবামাত্র দিগ্বিদিক জ্ঞান হারাইয়া কেবলি ছোটাছুটি করে, কল্পনার জ্যোংস্কালোকে নাচিয়া বেড়ায়। খুশীর নাচ, বুদ্ধির সঙ্গত নাই, বাস্তবের সমালোচনা নাই, যেখানে খুনী যেমন করিয়া খুশী পা ফেলে আর তাহাতেই আনিৰ্ব্বচনীয় তৃপ্তি পায় । হৃদয়বীণার একটি তার কল্পনা যেন একটি বিশেষ স্বরে বাধিয়া দিয়াছে। যখনই আঘাত লাগে একই স্বর বাজে—নীতি ! যে কাজের নেশায় হৃদয়ের আন্তনাদকে উপেক্ষা করিয়া নীতিকে জীবনে অনাবশ্বক বলিয়া দুরে । সরাইয়া দিয়াছিল, সে কাজের ম্রোতে ভাটা পড়িয়াছে। তেমন করিয়া নেশা আর জমে মা ! চাওয়াকে না পাওয়া অভাব। কাজ সে চায়, পায় না । এবং সেই অভাববোধকে আর-একট-চাওয়াকে-না-পাওয়ার বেদনা বড় বেশী মূৰ্ত্ত করিয়া তোলে। আর প্রকৃতির চিরঞ্জন নিয়মের বশে সেই বেদনার স্ত্রীত্ৰত প্রশমিত করিতে সে স্বপ্নের জলি বোনে, কল্পনার মাঝে সাম্ভুনা গোজে । প্রেম তার মনের—রিক্তভা মনে। মনের কল্পনা দিয়াই সে সেই রিক্ততার পূর্ণতা পাইতে চায়। শিশুর মত সব কল্পনাকেই গ্রহণ করে,—বাছেন, বিচার করে না । মাধবী ফিরিয়া আসিল। বলিল, “উনি ডাকছেন ঠাকুরপো ।” শিবপদ কাছে গিয়া দাড়াইতে রমাপদ বলিল, “অলকা ষোলোয় পড়েছে।” 齒