পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓዓõ প্রবাসী—চৈত্র, ১৩৩৬ [ ২৯শ ভাগ, ২য় খণ্ড শিবপদ আশ্চৰ্য্য হইয়া গেল । অলকা বোলোয় পড়িয়াছে, অবিসম্বাদী সত্য। কিন্তু অলকার বয়সের সঙ্গে তার নিজের বিবাহ করার কি সম্বন্ধ আছে ভাবিয়া পাইল না। রমাপদ বলিল,—“দু’বছর ধরে ওর সম্বন্ধ চলছে, আজ পৰ্য্যন্ত একটি পাত্র স্থির হল ন! ৷ টাকা না হলে যে কোনে দিন হবেও না সেটাও ভাল করেই বুঝতে পারছি। দু'বছর আগে আমার ধারণা ছিল, রূপগুণ যে পরিমাণে থাকে, মেয়েদের বিয়েতে টাকাটাও সেই পরিমাণে কম লাগে। এ দু’বছরে আমার সে ধারণা ভেঙে গেছে। অলকার রূপগুণ শিক্ষাদীক্ষার এতটুকু মূল্যও যে কোনো ছেলের বাব দেবে না, এই সত্যটা ভাল করে উপলব্ধি করছি। অন্তপযুক্তের হাতে দেওয়া যায়, কিন্তু তার চেয়ে ওর হাত প। বেঁধে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়াই আমি ভাল মনে করি। আমাদের ওই একটি মাত্র বোন, ওর কথা ভেবে স্বর্গে গিয়েও মা বাবার আত্মা বোধ হয় শাস্তি পাচ্ছে না। যাকে তাকে ধরে কোন মতে ওর বিয়ে দেওয়া চলে না, এটা বোধ হয় স্বীকার কর ?” এ কি প্রশ্ন : শিবপদ নতদূষ্টতে মেঝের দিকে চাহিয়৷ রহিল। একটু চুপ করিয়া থাকিয় রমাপদ বলিতে লাগিল, “বিয়ে ওর দিতে হবে এবং সংপাত্রের সঙ্গে। তাতে টাকার প্রয়োজন, সে টাকা আমাদের নেই। হঠাৎ আকাশ ফুড়ে কতকগুলি টাকা পাব তারও কোনো সম্ভাবনা দেখছি না । সতীশবাবুর ছেলেট এম-বি পাশ করেছে, তার সঙ্গে আমি অলকার বিয়ে দিতে চাই। সতীশবাবু যা দাবী জানিয়েছেন, আড়াই হাজারের কমে হবে না। তোমার যে সম্বন্ধ অ্যাম স্থির করেছি তারা দেড় হাজার নগদ দেবে, বাকী হাজার টাকা তোমার বৌদির দু একথান গয়ন। বেচে আর ধার করে আমি যোগাড় করতে পারব। আড়াই হাজার টাকা সৃংগ্রহ করবার সাধ্য আমার নেই, কাজেই তুমি যদি বিয়ে করতে রাজী না হও, অলকার এ সম্বন্ধ ভেঙে দিতে হবে। এত কম টাকায় এমন পাত্র হয়ত আর জুটবে না। অলকাকে আইবুড়ো করে রাখা চলবে না, শেষ পৰ্য্যন্ত বাধ্য হয়ে এমন পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে যে সারাজীবন চোখের জলে ভাসবে ।” একটু থামিয়া ভাইকে অবস্থাটা উপলব্ধি করিবার সম দিয়া বলিল, “বিয়ে করতে তোমার আপত্তিই বা কি, আঃি ত ভেবে পাচ্ছি না। আজ ঝোকের মাথায় না কর, ছুদি পরে করবে, মাঝখান থেকে আমাদের একটিমাত্র বোনৰে আমরা স্বর্থী করতে পারব না। বিয়ে করে লোকে বি দেশের কাজ করতে পারে না ? বড় হয়েছ, তোমায় বেশী বলবার প্রয়োজন নেই, নিজের জন্ত না কর, অলকার জন্ত তোমায় এ বিয়ে করতে হবে । তাড়াতাড়ি কিছু নেই, কট দিন বুঝে দ্যাখে । 8 শিবপদ বুঝিয়া দেখিতে লাগিল। এমন বোঝাই বুঝতে লাগিল যে তার রাত্রির ঘুম পর্যাস্ত টুটিয়া যাইবার উপক্রম হইল । সে বিবাহ করিবে,–টাকা লইয়া । সেই ট্যকায় অলকার সংপাত্রের সহিত পরিণয় সম্ভব হইবে, অলকা স্বর্থী হইবে। কথাটা এই । অত্যন্ত সরল ও সহজবোধ্য। কিন্তু কি কঠিন সমস্তার রূপ ধরিয়াই তার জীবনে দেখা দিল ! জীবনসাগরের এক একটা প্রকাগু ঢেউ প্রচুর শব্দ ও বিভীষিক লইয়। তার উপরে আছড়াইয়া পড়িতেছে, এতটুকু খেলনার মত তাকে তুলিয়া ডুবাইয়া ঘুরপাক দিয়া মিলাইয়া বাইতেছে ; রাখিয়া যাইতেছে স্মৃতির ছোট ছোট অসংখ্য উৰ্ম্মি-স্পন্দন। বিপৰ্য্যয় আঘাতটা সামলাইয়া সে ভাবিতেছে, এই শেষ, ছোট ছোট ঢেউয়ের তালে তালে ছলিয়া তার পাড়ি জমিবে ভাল । হঠাৎ ভাগ্য দানবের দুরন্ত নিঃশ্বাসে উদ্বেলিত সাগরের বুকে জাগিয়া উঠিতেছে তেমনি শব্দ ও বিভীষিকা লইয়া আর একটি বিপুল ঢেউ ! আশ্চৰ্য্য ! স্নেহ করা কি এমন একটা অপরাধ যে তার এত বড় শাস্তির ব্যবস্থা করিয়া রাখিয়াছে বিধাতা ? বিয়ে করেও লোকে দেশের কাজ করতে পারে— পারে কি ? পারিলেও সে সাধনায় সমগ্র মনপ্রাণ ঢালিয়া দেওয়া চলে কি ? যে দাসত্ত্বের শৃঙ্খল সে পায়ে পরিয়াছে, যে-কোনো মুহূৰ্বে তার বন্ধন হইতে সে মুক্ত হইতে পারে, —তার সান্থনাও তাই। কিন্তু এ বাধনের হাত হইতে কিছুতেই যে মুক্তি নাই। আজীবন স্বর্ণপৃথলের বাধন অটুট হইয়া থাকিবে, দিনে দিনে দৃঢ় হইবে, বাধনের পাক