পাতা:প্রবাসী (ঊনত্রিংশ ভাগ, দ্বিতীয় খণ্ড).djvu/৮৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳԳե প্রবাসী—চৈত্র, ১৩৩৬ [ ২৯শ ভাগ, ২য় খণ্ড মুখ ফিরাইয়া শিবপদ দেখিল, সলিলের মুখের হাসি মিলাইয়া গিয়াছে, চোপ ছল ছল করিয়া আসিয়াছে। অস্তরের স্বতীব্র বেদনার ছাপ এমন স্পষ্টভাবে তার মুখে ফুটয়া উঠিয়াছে যে, দেখিয়া শিবপদর বুক টন টন করিয়া উঠিল । সলিলের মুখ কোনে দিন এক মুহূর্টের জন্যও সে হাসি ছাড়া দেখে নাই, কি যে তার অস্তৰ্ব্বেদন| ভাবিয়া অত্যন্ত বিস্ময় অল্পভব করিল। একটুখানি মান হাসিবার চেষ্টা করিয়া সলিল বলিল, “মাকে বলেছিলাম ভাই, মত হয়নি । অস্থত: মারও যদি মত থাকৃত বাবার অমতেও রমাদার কাছে অলকাকে আমি ভিক্ষা চেয়ে নিতাম। কিন্তু মার মনে দুঃখ দেবার সাধ্য আমার নেই ভাই ।” এক মূহূৰ্ত্ত চুপ করিয়া থাকিয়৷ পুনরায় বলিল,“তোদের বাড়ী আর যাক্ট ন বলে রাগ করিস্ কিন্তু আমি যেতে পারি না, আমার ক্ষমতায় কুলোয় না।” সলিলের মুখের দিকে চাহিয়া অকস্মাং শিবপদ আবিষ্কার করিল, মেঙ্গের দাবী কতদিকে ক্ষতভাবে কত রূপান্তরিত অভিশাপের মৃষ্টি লইয়া সৰ্ব্বগ্রাসী ক্ষুধার হাত বাড়াইয়াছে ! বাড়ী ফিরিতে ফিরিতে শিবপদ ভাবিল, সে আর বাকী থাকে কেন ? মেঙ্গেরই জয় হোক তবে । বাড়ী ফিরিয়াই দাদাকে জানাইল তার মত আছে । রমাপদ খুশী হইল। শিবপদর মুখের ভাবটা না দেগিয়া সেপ্লিাসে মাধবী উলুধ্বনি করিয়া উঠিল । মাৰ মাসের সীতাশে তারিখে শিবপদর বিবাহ হুইয়া গেল এবং তার মাস দুষ্ট পরে বৈশাখের এক শুভলগ্নে অলকার ও বাঙ্গালী গুহস্থকন্যার জীবনের সব চেয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাপারটি সমাপ্ত হইয়া গেল । & সাত বৎসর পরের কথা । এই সাত বৎসরের ইতিহাস অত্যস্ত মৰ্ম্মান্তিক রকমের অত্যন্ত সাধারণ। বাঙালী জীবনের ইতিহাস কবেই বা অসাধারণ হয় ! - রমাপদ বছর-ভিনেক মারা গিয়াছে। দুটি ছেলে লইয়া মাধবী বিধব হুইয়াছে। শিবপদর দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে হইয়াছে । আর একটি ছেলে কিংবা মেয়ে শীঘ্রই পৃথিবীতে আসিবে বলিয়া নোটস দিয়াছে। শিবপদ মাহিনা পায় সত্তর। দুটি ট্রাসনি করিয়া কুড়ি, সে টাকাটা বাড়ীভাড়া দিতেই যায়। শিবপদর বড় ছেলেটি চিররশ্ন, টানাটানি করিয়া বাচাইয়া রাগিবার জন্ত ঔষপ এবং ডাক্তারের পিছনে প্রতিমাসে কিছু টাক ঢালিতে হয়। তার এবং মাধবীর অন্য সন্তানগুলিকে ৪ মমের রোগদূতের মাঝে মাঝে ধরিয়া টানাটানি করিতে ছাড়ে না। শিবপদর স্ত্রী আরতির এই সেদিন টাইফয়েড হক্টয় গেল। কিছু ধার তুষ্টয়াছিল, শোধ হয় নাই । মাসে মাসে পাচ দশ টাকা করিয়া পরিশোধ ন করিলে ঋণদাতা ছাড়ে না। আরও অসংখ্য খুটিনাটি খরচ । সত্তরটি টাকা হক্টতে এত পরচ করিয়া তিনটি পূৰ্ণবয়স্কের এবং পাচটি শিশুর আহারের আয়োজন করিতে হয়, পরিচ্ছদের ব্যবস্থা করিতে হয় । কি করিয়া হয় বলিবার প্রয়োজন নাই, সকলেই জানে। ভাল করিয়া জানে বাংলার দুর্ভাগ্য তরুণেরা, মধ্যবিস্তু সংসারের যুবকের—অক্টোপাসের মত সংসার যাদের কুক্ষিগত করে, ধৌবনের স্বপ্ন যাদের আরম্ভ ন৷ হইতেই টুটিয়া যায়, জীবনে অপরিসর গণ্ডীর মাঝে অনস্থ চিস্তা এবং অফুরন্ত দুর্ভাবনার জেলপানায় যাদের বৈচিত্রা তান প্রাণহীন বর্ণীজীবন যাপন করিতে হয় । পূৰ্ব্ববঙ্গে ভয়ানক বন্য হইয়া গিয়াছে, অসংখ্য গ্রাম সলিলসমাধি লাভ করিয়াছে । গরু-বাছুর ইত্যাদি গুহপালিত পশু তো মরিয়াছেক্ট, মাতুয৪ মরিয়াছে ঢের । বন্যাপীড়িতের বুকফাটা আৰ্ত্তনাদ স্কুলকলেজের ছেলেদের বুকে আসিয়া ঘ দিয়াছে । দলে দলে ভলাণ্টিয়ার হইয়া গিয়াছে রিলিফ কাজ করিবার জন্য । যারা যায় নাই প্রত্যহ মিছিল বাহির করিয়া চাদ তুলিতেছে, সলিলসমাপি ধারা এড়াইয়াছে দুর্ভিক্ষ শু রোগের গ্রাস হইতে তাদের বঁাচাইবার জন্য । বড় থোকার অস্থখ–পাচদিন জর ছাড়ে নাই । শিবপদ ঔষধ ও পথা আনিতে যাইবার জন্য প্রস্থত হইতেছিল, বাড়ীর সামনে ছেলেদের মিছিল আসিয়া দাড়াইল । খন্দর-পরিহিত স্বদশন একটি যুবক শিবপদর সম্মুখে আসিয়া বলিল “ফ্লাড রিলিফ ফাণ্ডে কিছু চাদ দিন। ছেলেদের সমবেত তরুণকণ্ঠে তখন অসংখ্য জার্ভ