পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতদশেখর নবাব বলিলেন, “আচ্ছা, তুমি এখন গৃহে যাও ।” শৈবলিনী বলিল, “আমার গৃহ কৈাথা—কোথ। যাইব ?” নবাব নিস্তদ্ধ হইলেন, পরক্ষণে বলিলেন, “তবে তুমি কোথায় যাইবে ? শৈ । আমার স্বামীর কাছে । আমার স্বামীর কাছে পঠাইয়া দিন । আপনি রাজা, আপনার কাছে নালিশ করিতেছি ;–আমার স্বামীকে ইংরেজ পরিয়া লষ্টয়া গিয়াছে ; হয় আমার স্বামীকে মুক্ত করিয়৷ দিন, নচেৎ আমাকে তাহার কাছে পঠাইয়। দিন, যদি আপনি অবজ্ঞা করিদ্র। ইহার উপায় ন৷ করেন, তবে এইখানে আপনার সম্মুখে আমি মরিব, সেই জন্য এখানে আসিয়াছি । সংবাদ আসিল, গুবৃগন্‌ গা ভঙ্গির । নবাব শৈবলিনীকে বললেন, “আচ্ছা, তুমি এইখানে অপেক্ষ কয়, আমি আ!সিন্তেহি ।” তৃতীয় পরিচ্ছেদ নতন সখ নবাব গুরুগন পাকে অন্যা) সংবাদ জিজ্ঞাস করিয়া কহিলেল, “ষ্ট বেঙ্গদিগেপ সঙ্গে বিবাদ করাষ্ট শ্ৰেয়ঃ হইতেছে । সামার বিবেচনায় বিবাদের পূৰ্ব্বে আমিয়টকে অবরুদ্ধ কর। কর্তৃব। ; কেন না, অমিয়ট আমার পরম শত্রু । কি বল ?” গুরুগন প। কহিলেন, “দ্ধে আমি সকল সময়েই প্রস্তুত । কিন্তু দূত অস্পৰ্শনীয়। দূতের পীড়ন করিলে বিশ্বাসঘাতক বলিয়। আমাদের নিন্দ চইলে –আর —” নবাব । আমিয়ট কাল রালে এষ্ট সহরমধ্যে এক ব্যক্তির গৃহ আক্রমণ করিম। তাহাদিগকে ধরিয়া লষ্টয়া গিয়াছে। যে আমার অধিকারে থাকিয়। অপরাধ করে, সে দূত হইলেও আমি কেন তাহার দণ্ডবিধান না করিব ? গুরু । যদি সে এরূপ করিয়া থাকে, তবে সে দগুযোগ্য । কিন্তু তাহাকে কি প্রকারে ধৃত করিব ? সবাব । এখনই তাহার বাসস্থানে সিপাহী ও কামান পাঠাইয়া দাও । তাহাকে সদলে ধরিয়া লইয়া আসুক । গুর। তাহার এ সহরে নাই । অদ্য দুই প্রহরে চলিয়া গিয়াছে । নবাব । সে কি ! বিনা এত্তেলায় ? ৩য়ু—১৪ ری (ی গুর। এত্তেল দিবার জন্ত হে নামক এক জনকে রাখিয়। গিয়াছে । নবাব । এরূপ হঠাৎ বিন অনুমতিতে পলায়নের কারণ কি ? ইহাতে আমার সহিত অসৌজন্য হইল, তাহা জানিয়াই করিয়াছে। গুরু । তাহদের হাতিয়ারের নৌকার চড়নার ইংরেজকে কে কা’ল রাত্রে পুন করিয়াছে। অামিয়ট বলে, আমাদের লোকে পুন করিয়াছে । সেই জন্য রাগ করিয়। গিয়াছে । বলে, এখানে থাকিলে জীবন অনিশ্চি ষ্ট । নবাব ; কে খুন করিয়াছে, শুনিয়াছ ? গুরু । প্রতাপ রায় নামক এক ব্যক্তি । - নবাব । আচ্ছ। করিয়াছে । তাহার দেখা পাইলে খেলোয়াং দিব । প্রতীপ রায় কোথায় ? গুরু ; তাঙ্গাদিগের সকলকে বাধিয়া সঙ্গে করিয়া লষ্টযু। গিয়াছে সঙ্গে লইয়া গিয়াছে, কি আজিমাবাদ পাঠাইয়াছে, ঠিক শুনি নাই । নবাব এতক্ষণ আমাকে এ সকল সংবাদ দাও নাই কেন ? গুরু । আমি এইমাত্র শুনিলাম । এ কথাটি মিথ্যা , গুবৃগন্‌ গ৷ আদ্যোপাস্ত সকল জানিতেন, তাহার অনভিমতে অমিয়ট কদাপি মুঙ্গের তাগ করিতে পারিতেন না ; কিন্তু গুরুগন গার দুইটি উদেশ্ব ছিল— প্রথম, দলনী মুঙ্গেরের বাহির হইলেই ভাল ; দ্বিতীয়, আমিয়ট একটু হস্তগত থাক। ভাল ; ভবিষ্যতে তাহার দ্বার উপকার ঘটিতে পারিঞ্চে । নবাব গুরুগন পাকে বিদায় দিলেন । গুরগন খ যখন যান, নবাব তাহার প্রতি বক্রবৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেন। সে দৃষ্টির অর্থ এই—“ষত দিন না যুদ্ধ সমাপ্ত হয়, তত দিন তোমায় কিছু বলিব না-যুদ্ধ কালে তুমি আমার প্রধান অস্ত্র । তার পর দলনী বেগমের ঋণ তোমার শোণিতে পরিশোধ করিব।” নবাব তাঙ্গর পর মীর মুন্সীকে ডাকিয়া আদেশ প্রচার করিলেন যে, “মুরশিদাবাদে মহম্মদ তকি খার নামে পরওয়ানা পাঠাও যে, যখন অমিয়টের নৌকা মুরশিদাবাদে উপনীত হইবে, তখন তাহাকে ধরিয়া আবদ্ধ করে এবং তাহার সঙ্গের বন্দিগণকে মুক্ত করিয়া হুজুরে প্রেরণ করে। স্পষ্ট যুদ্ধ না করিয়া কলে-কৌশলে ধরিতে হুইবে, ইহাও লিখিয়া দিও । পুরওয়ানা তটপথে বাহকের হাতে যাউক—অগ্ৰে পইছিবে ”