পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৬২ অমাত্যবর্গ বিদায় হইলেন । তখন নবাব রত্নসিংহাসন ত্যাগ করিয়া উঠিলেন, হীরকখচিত উষ্ণষ দুরে নিক্ষেপ করিলেন—মুক্তার হার কণ্ঠ হইতে ছিড়িয়া ফেলিলেন–রত্নখচিত বেশ অঙ্গ হইতে দুর করিলেন । —তখন নবাব ভূমিতে অবলুষ্ঠিত হইয়। ‘দলনী ! দলনী ? বলিয়া উচ্চৈঃস্বরে রোদন করিতে লাগিলেন । এ সংসারে নবাবী এইরূপ ! চতুর্থ পরিচ্ছেদ জন ষ্ট্যালুকার্ট পূৰ্ব্ব পরিচ্ছেদে প্রকাশ পাইয়াছে যে, কুলুসমের সঙ্গে ওয়ারেন হেষ্টিংস সাহেবের সাক্ষাৎ হইয়াছিল । কুলসমৃ আত্মবিবরণ সবিস্তারে কহিতে গিয়া, ফষ্টরের কার্য্যসকলের সবিশেষ পরিচয় দিল । ইতিহাসে ওয়ারেন হেষ্টিংস পরপীড়ক বলিয়৷ পরিচিত হইয়াছেন । কৰ্ম্মঠ লোক কৰ্ত্তব।iনুরোধে অনেক সময়ে পরপীড়ক হইয় উঠে । যাহার উপর রাজ্যরক্ষার ভার, তিনি স্বয়ং দয়াল এবং দ্যায়পর হইলেও রাজ্যরক্ষার্থ পরপীড়ন করিতে বাধ্য হন । যেখানে তুই এক জনের উপর অত্যাচার করিলে সমুদয় রাজ্যের উপকার হয়, সেখানে তাহারা মনে করেন যে, সে অত্যাচার করা কৰ্ত্তব্য । বস্তুতঃ ধাঙ্গার ওয়ারেন্‌ হেষ্টিংসের দ্যায় সামাজ্যসংস্থাপনে সক্ষম, তাহার যে দয়ালু এবং স্যারনিষ্ঠ নহেন, ইহা কখনও সম্ভব নহে । যাহার প্রকৃতিতে দয়। এবং দ্যায়পরতা নাই—তাই1র দ্বার রাজ্যস্থাপনাদি মহৎ কার্য হইতে পারে ন। -- কেন না, তাহার প্রকৃতি উন্নত নহে--মুদ্র । এ সকল ক্ষুদ্রচেতার কাজ নহে । ওয়ারেন হেষ্টিংস দয়ালু ও দ্যায়নিষ্ঠ ছিলেন । তখন তিনি গবর্ণর হন নাষ্ট ! কুলুসমূকে বিদায় করিয়া তিনি ফক্টরের অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইলেন । দেখিলেন, ফষ্টর পীড়িত। প্রথমে তাহার চিকিৎস। করাইলেন। ফষ্টর উৎকৃষ্ট চিকিৎসকের চিকিৎসায় শীঘ্রই আরোগ্যলাভ করিল। তাহার পরে তাহার অপরাধের অনুসন্ধানে প্রবৃত্ত হইলেন। ভীত হইয় ফষ্টর তাহার নিকট অপরাধ স্বীকার করিল। ওয়ারেন হেষ্টিংস কেন্সিলে প্রস্তাব উপস্থিত করিয়া ফষ্টরকে পদচ্যুত করিলেন ; হেষ্টিংসের ইচ্ছা ছিল যে, ফষ্টরকে বিচারালয়ে উপস্থিত করেন ; কিন্তু সাক্ষীদিগের কোন সন্ধান নাই এবং ফষ্টরও নিজ বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী কার্য্যের অনেক ফলভোগ করিয়াছে, এই ভাবিয়া তাহাতে বিরত হইলেন । ফষ্টর তাহা বুঝিল না। ফষ্টর অত্যন্ত ক্ষুদ্রাশয় । সে মনে করিল, তাহার লঘুপাপে গুরুদণ্ড হইয়াছে। সে ক্ষুদ্রাশয়, অপরাধী ভৃত্যদিগের স্বভাবানুসারে পূৰ্ব্বপ্রভুদিগের প্রতি বিশেষ কোপাবিষ্ট হইল । তাহাদিগের বৈরিতাসাধনে কৃতসঙ্কল্প হইল । ডাইস সম্বর নামে এক জন সুইস বা জাৰ্ম্মাণ মীর কাসেমের সেনাদলের মধ্যে সৈনিককার্য্যে নিযুক্ত ছিল । এই ব্যক্তি সমরু নামে বিখ্যাত হইয়াছিল। উদয়ন লায় ষবন-শিবিরে সমরু সৈন্য লইয়। উপস্থিত ছিল । ফষ্টর উদয়নালায় তাহার নিকট আসিল । প্রথমে কৌশলে সমরুর নিকট দূত প্রেরণ করিল। সমরু মনে ভাবিল, ইহার দ্বারা ইংরেজদেগের গুপ্ত মন্ত্রণ। সকল জানিতে পারিব । সমরু ফষ্টরকে গ্রহণ করিল । ফষ্টর আপিন নাম গোপন করিয়া জন ষ্টালুকার্ট বলিয়। আপনার পরিচয় দিয়া সমরুর শিবিরে প্রবেশ করিল । ধখন আমীর হোসেন ফক্টরের অনুসন্ধানে নিসক্ত, তখন লরেন্স ফষ্টর সমরুর তাম্বুতে । আমীর হোসেন কুলুসম্কে যথাযোগ্য স্থানে রাখিশ ফষ্টরের অনুসন্ধানে নির্গত হইলেন । অন্তচরবর্ণের নিকট শুনিলেন যে, এক আশ্চর্য্য কাণ্ড ঘটিয়াছে। এক জন ইংরেজ আসিয়া মুসলমানসৈন্তভুক্ত হইয়াছে । সে সমরুর শিবিরে আছে । আমার হোসেন সমরুর শিবিরে গেলেন । যখন তাiমার হোসেন সমরুর তাম্বুতে প্রবেশ করিলেন, তখন সমরু ও ফষ্টর একত্রে কথাবাৰ্ত্তা কহিতেছিলেন । আমার হোসেন তাসন গ্ৰহণ করিলে, সমরু জন ষ্ট্যালুকার্ট বলিয়। তাহার নিকট ফষ্টরের পরিচয় দিলেন । আমার হোসেন ষ্ট্যাল্কার্টের সঙ্গে কথোপকথনে প্রবৃত্ত হইলেন । আমীর হোসেন অন্যান্ত কথার পর ষ্ট্যালুকার্টকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “লরেন্স ফষ্টর নামক এক জন ইংরেজকে আপনি চিনেন ?" সষ্টরের মুখ রক্তবর্ণ হইয়া গেল । সে মৃত্তিকাপানে দৃষ্টি করিয়৷ কিঞ্চিৎ বিকৃতকণ্ঠে কহিল, “লরেন্স ফষ্ট্রর ? टैक-न! ।” ş. আমার হোসেন পুনরপি জিজ্ঞাসা করিলেন, "কখনও তাঁহার নাম শুনিয়াছেন ?” ফষ্টর কিছু বিলম্ব করিয়া উত্তর করিল—“নাম— লরেন্স ফষ্টর—হঁ।-- কই ? না ।” আমীর হোসেন আর কিছু বলিলেন না, অন্যান্য কথ। কহিতে লাগিলেন । কিন্তু দেখিলেন, ষ্ট্যালুকার্ট