পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী তন্মধ্যে রক্তবর্ণ দ্রবপদার্থ রহিয়াছে। চতুদিকে স্থানে স্থানে অস্থি পড়িয়া রহিয়াছে—এমন কি, যোগাসীনের কণ্ঠস্থ রুদ্রাক্ষমালামধ্যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অস্থিখণ্ড গ্রথিত রহিয়াছে । নবকুমার মন্ত্রমুগ্ধ হইয়া রছিলেন । অগ্রসর হইবেন কি স্থানত্যাগ করিবেন, তাহা বুঝিতে পারিলেন না । তিনি কাপালিকদিগের কথা শ্রুত ছিলেন । বুঝিলেন যে, এ ব্যক্তি দুরন্ত কাপালিক । যখন নবকুমার উপনীত হইয়াছিলেন, তখন কাপালিক মন্ত্রসাধনে বা জপে ব৷ ধ্যানে মগ্ন ছিল, নবকুমারকে দেখিয়া ভ্ৰক্ষেপও করিল না । অনেকক্ষণ পরে জিজ্ঞাসা করিল, “কত্বম্ ?" নবকুমার কহিলেন, “ব্রাহ্মণ " কাপালিক কহিল, “ভিষ্ঠ ” এই কহিয়৷ পূৰ্ব্ব কাৰ্য্যে নিযুক্ত হইল । নবকুমার দাড়াইয়৷ রহিলেন । এইরূপে প্রহরার্দ গত হইল । পরিশেষে কাপ|লিক গাত্ৰোখান করিয়া নবকুমারকে পূৰ্ব্ববত সংস্কুতে কছিল, “মামনুসর " ইহা নিশ্চিত বল যাইতে পারে যে, অন্তসময়ে নবকুমার কদাপি ইহার সঙ্গী হইতেন না । কিন্তু এক্ষণে ক্ষুধাতৃষ্ণায় প্রাণ কণ্ঠাগত ; অতএব কহিলেন, “প্রভুর যেমত আজ্ঞ । কিন্তু আমি ক্ষুধাতৃষ্ণায় বড় কাতর, কোথায় গেলে আহাৰ্য্যসামগ্ৰী পাইব, অনুমতি করুন " কাপালিক কহিল, “তুমি ভৈরবীপ্রেরিত : আমার সঙ্গে আইস, আহার্য সামগ্রী পাইতে পরিবে ।” নবকুমার কাপালিকের অনুগামী হইলেন। উভয়ে অনেক পথ বাহিত করিলেন–পথিমধ্যে কেহ কোন কথা কহিল না। পরিশেষে এক পূর্ণকুটার প্রাপ্ত হইল, কাপালিক প্রথমে প্রবেশ করিয়া নবকুমারকে প্রবেশ করিতে অল্পমতি করিল এবং নবকুমারের অবোধগম্য কোন উপায়ে এক খণ্ড কষ্ঠে অগ্নি জালিত করিল । নবকুমার তদালোকে দেখিলেন যে, ঐ কুটীর সর্বাংশে কিয়াপাতায় রচিত। তন্মধ্যে কয়েকখানা ব্যাঘ্ৰচৰ্ম্ম আছে—এক কলস বারি ও কিছু ফলমূল আছে। কাপালিক অগ্নি জালিত করিয়া কহিল, “ফল-মূল যাহা আছে, আত্মসাৎ করিতে পার । পৰ্ণপাত্র রচন। করিয়া কলসজল পান করিও । ব্যাঘ্ৰচৰ্ম্ম আছে, অভিরুচি হইলে শয়ন করিও । নির্বিঘ্নে তিষ্ঠ— ব্যান্ত্রের ভয় করিও না । সমস্খাস্তরে আমার সহিত সাক্ষাৎ হইবে । ষে পর্য্যন্ত সাক্ষাৎ না হয়, সে পৰ্য্যন্ত এ কুটীর ত্যাগ করিও না " । এই বলিয়া কাপালিক প্রস্থান করিল। নবকুমার সেই সামান্য ফলমূল আহার করিয়া এবং সেই ঈষক্তিক্ত জল পান করিয়া পরম পরিতোষ লাভ করিলেন । পরে ব্যাঘ্রচৰ্ম্মে শয়ন করিলেন, সমস্ত দিবসজনিত ক্লেশহেতু শীঘ্রই নিদ্রাভিভূত হইলেন। পঞ্চম পরিচ্ছেদ সমুদ্রতটে “--ষোগপ্রভাবে ন চ লক্ষ্যতে ভে । “বিভধি ঢাকারমনিৰ্ব্বতানাং মৃণালিনী হৈমমিবোপরাগমৃ ॥”—রঘুবংশ । প্রাতে উঠিয়। নবকুমার সহজেই বাটীগমনের উপায় করিতে ব্যস্ত হইলেন ; বিশেষ এ কাপালিকের সান্নিধ্য কোনক্রমেই শ্রেয়স্কর বলিয়া বোধ লইল না । কিন্তু আপাততঃ এ পথহীন বনমধ্য হইতে কি প্রকারে নিষ্ক্রাস্ত হইবেন ? কি প্রকারেই বা পথ চিনিয়া বাট যাইবেন ? কাপালিক অবশু পথ জানে ; জিজ্ঞামিলে কি বলিয় দিবে না ? বিশেষ যত দুর দেখা গিয়াছে, তত দূর কাপালিক তাহার প্রতি কোন শঙ্কাস্থচক আচরণ করে নাই—কেনই বা তবে তিনি ভীত হন ? এ দিকে কাপালিক তাহাকে পুনঃসাক্ষাৎ পর্যাস্ত কুটীর ত্যাগ করিতে নিষেধ করিয়াছে, তাহার অবাধ্য হইলে বরং ত{হার রোষোৎপত্তির সম্ভাবন । নবকুমার শ্রত ছিলেন যে, কাপালিকের মন্ত্রবলে অসাধ্যসাধনে সক্ষম । এ কারণে তাহার অবাধ্য হওয়৷ অনুচিত ৷ ইত্যাদি বিবেচনা করিয়া নবকুমার আপাততঃ কুটারমধ্যে অবস্থান করাই স্থির করিলেন । কিন্তু ক্রমে বেল অপরাহ্ল হইয়! আসিল, তথাপি কাপালিক প্রত্যাগমন করিল না। পূৰ্ব্বদিনের উপবাস, অষ্ঠ এ পর্য্যস্ত অনশন, ইহাতে ক্ষুধ প্রবল হইয়া উঠিল। কুটারমধ্যে যে অল্পপরিমাণ ফলমূল ছিল, তাহ পূৰ্ব্বরাত্রেই ভুক্ত হইয়াছিল--এক্ষণে কুটার ত্যাগ করিয়৷ ফলমুলান্বেষণ না করিলে ক্ষুধায় প্রাণ যায় । অল্প বেলা থাকিতে ক্ষুধার পীড়নে নবকুমার ফলান্বেষণে বাহির হইলেন । - নবকুমার ফলান্বেষণে নিকটস্থ বালুকাস্তুপসকলের চারিদিকে পরিভ্রমণ করিতে লাগিলেন। যে দুই একটা গাছ বালুকায় জন্মিয়া থাকে, তাহার ফলাস্বাদন