পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

కాక్జాకfఆఆ প্রথম পরিচ্ছেদ শয়নাগারে “রাধিকার বেড়ি ভাঙ্গ, এ মম মিনতি ” —বজাঙ্গনা কাব্য । লুৎফউন্নিসার আগ্রা-গমন করিতে এবং তথা হইতে সপ্তগ্রাম আসিতে প্রায় এক বৎসর গত হইয়াছিল। কপালকুণ্ডলা এক বৎসরের অধিককাল নবকুমারের গৃহিণী । যে দিন প্রদোষকালে লুৎফউন্নিসা কাননে, সে দিন কপালকুণ্ডলা অন্যমনে শয়নকক্ষে বসিয়া আছেন । পাঠক মহাশয় সমুদ্রতীরে আলুলায়িতকুঞ্জলা ভূষণহীন যে কপালকুণ্ডল দেখিয়াছিলেন, এ সে কপালকুণ্ডল নহে । শু্যামাসুন্দরীর ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হইয়াছে ; স্পর্শমণির স্পর্শে যোগিনী গৃহিণী হইয়াছে, এক্ষণে সেই অসংখ্য কৃষ্ণোজ্জল, ভুজঙ্গের বৃহতুল্য, আগুলুফণম্বিত কেশরাশির বর্ণ সেইরূপ চন্দ্ৰাৰ্দ্ধকৌমুদীময় বটে, কিন্তু যেন পূৰ্ব্বাপেক্ষা ঈষৎ সমল যেন আকাশপ্রান্তে কোথা কাল মেঘ দেখা দিয়াছে ৷ কপালকুণ্ডলা একাকিনী বসিয়াছিলেন না ; সখী শু্যামাসুন্দরী নিকটে বসিয়াছিলেন । তাহাদিগের উভয়ের পরস্পরে কথোপকথন হুইতেছিল । তাহার কিয়দংশ পাঠক মহাশয়কে শুনিতে হইবে । কপালকুণ্ডল কহিলেন, “ঠাকুরজামাই আর কত দিন এখানে থাকিবেন ?” শুমি কহিলেন, “কালি বিকালে চলিয়া যাইবে । আহা! আজ রাত্রে যদি ঔষধটি তুলিয়। রাখিতাম, তবু তারে বশ করিয়া মনুষ্যজন্ম সার্থক করিতে পারিতাম । কালি রাত্রে বাহির হইয়াছিলাম বলিয়৷ নাথি বাট খাইলাম, আর আজি বাহির হইব কি প্রকারে ?” ক । দিনে তুলিলে কেন হয় না ? শু| দিনে তুলিলে ফল্বে কেন ? ঠিক দুই প্রহর রাত্রে এলোচুলে তুলিতে হয় । তা ভাই, মনের শুশ্চাদ্ভাগে স্থলবেণী সংবদ্ধ হইয়াছে । বেণীরচনারও সাধ মনেই রহিল । "শিরপুরিপাট্য লক্ষিত হইতেছে, কেশবিদ্যাসে ক । আচ্ছা, আমি ত অীজ দিনে সে গাছ :নেক স্বক্ষ কারুকার্য্য স্যামাসুন্দরীর বিন্যাস- চিনে এসেছি, আর যে বনে হয়, তাও দেখে এসেছি । কৌশলের পরিচয় দিতেছে। কুমুমদামও পরিত্যক্ত তোমাকে আজি আর যেতে হবে না, আমি এক গিয়া }হয় নাই, চতুষ্পার্শ্বে কিরাটিমণ্ডলস্বরূপ বেণী বেষ্টন করিয়া রহিয়াছে । কেশের যে ভাগ বেণীমধ্যে দ্যস্ত হয় নাই, তাহ যে শিরোপরি সৰ্ব্বত্র সমানোচ হুইয়া রহিয়াছে, এমত নহে । আকুঞ্চন প্রযুক্ত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কৃষ্ণতরঙ্গলেখায় শোভিত হইয়া রহিয়াছে। মুখমণ্ডল এখন আর কেশভারে অৰ্দ্ধলুক্কায়িত নহে ; জ্যোতিৰ্ম্ময় হইয়৷ শোভ। পাইতেছে ; কেবলমাত্র স্থানে স্থানে বন্ধনবিত্রংসী ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অলকাগুচ্ছ তদুপরি স্বেদবিজড়িত হইয়। রহিয়াছে। বর্ণ সেই অৰ্দ্ধপূর্ণশশাঙ্করশ্মিরুচির। এখন দুই কর্ণে হেমকণভূষ! তুলিতেছে ; কণ্ঠে হিরন্ময় কণ্ঠমালা দুলিতেছে । বর্ণের নিকট সে সকল স্নান হয় নাই, অৰ্দ্ধচন্দ্রকৌমুদীবসনা ধরণীর অঙ্গে নৈশ কুমুমবৎ শোভা পাইতেছে । তাহার পরিধানে শুক্লা ম্বর ; সে শুক্লাম্বর অৰ্দ্ধচন্দ্রদীপ্ত আকাশমণ্ডলে অনিবিড় শুক্ল মেঘের স্তায় শোভা পাইতেছে। ঔষধ তুলিয়া আনিব । শু । এক দিন ষ হইয়াছে, তা হইয়াছে। রাত্রে তুমি আর বাহির হইও না । ক । সে জন্য তুমি কেন চিস্ত কর ? শুনেছ ত রাত্রে বেড়ান আমার ছেলেবেলা হইতে অভ্যাস । মনে ভেবে দেখ, যদি আমার সে অভ্যাস না থাকিত, তবে তোমার সঙ্গে আমার কখনও চাক্ষুষ হইত না । শু । সে ভয়ে বলি না, কিন্তু এক রাত্রে বনে বনে বেড়ান কি গৃহস্থের বউ ঝির ভাল ? দুই জনে গিয়াও এত তিরস্কার খাইলাম, তুমি একাকিনী গেলে কি রক্ষা থাকিবে ? - .. ক ক্ষতিই কি ? তুমি কি মনে করিয়াছ যে, আমি রাত্রে ঘরের বাহির হইলেই কুচরিত্রা হইব ? শু্যা । আমি তা মনে করি না । কিন্তু মন্দ লোকে মন্দ বলুবে । ক । বলুক, আমি তাতে মন্দ হব না ।