পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/১৮৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কপালকুণ্ডল অনিশ্চিত বলিয়া কপালকুণ্ডল এতদুর সঙ্কোচ করিতেছিলেন । প্রথমে ব্রাহ্মণবেশীর কথোপকথন, পরে কাপালিকের দর্শন, তৎপরে স্বপ্ন, এই সকল হেতুতে কপালকুণ্ডলার হৃদয়ে আত্মসম্বন্ধে মহাভীতিসঞ্চার হইয়াছিল। নিজ অমঙ্গল যে অদূরবর্তী, এমত সন্দেহ প্রবল হইয়াছিল । সেই অমঙ্গল যে কাপালিকের আগমনসহিত সম্বন্ধমিলিত, এমত সন্দেহও অমূলক বোধ হইল না। এই ব্রাহ্মণবেশীকে র্তাহারই সহচর বোধ হইতেছে—অতএব তাহার সহিত সাক্ষাতে সেই আশঙ্কার বিষয়ীভূত অমঙ্গলে পতিতও হইতে পারেন । সে ত স্পষ্টই বলিয়াছে যে, কপালকুণ্ডলা-সম্বন্ধেই পরামর্শ হুইতেছিল । কিন্তু এমনও হইতে পারে যে, ইহা হইতে তল্লিরাকরণ-স্বচন৷ হইবে । ব্রাহ্মণকুমার এক ব্যক্তির সহিত গোপনে পরামর্শ করিতেছিল, সে ব্যক্তিকে এই কাপালিক বলিয়। বোধ হয় । সেই কথোপকথনে কাহারও মৃত্যুর সঙ্কল্প প্রকাশ পাইতেছিল, নিতান্ত পক্ষে চিরনিৰ্ব্বাসন । সে কাহার ? বাহ্মণবেশী ত স্পষ্ট বলিয়াছেন যে, কপালকুণ্ডল সম্বন্ধেই কুপরামর্শ হইতেছিল । তবে তাহারই মৃত্যু বা তাহারই চিরনিৰ্ব্বাসনকল্পনা হইতেছিল । তবে যখন এই সকল ভীষণ অভিসন্ধিতে ব্রাহ্মণবেশী সহকারী, তখন তাহার নিকট রাত্রিকালে একাকিনী দুর্গম কাননে গমন কর! কেবল বিপদেরই কারণ হইতে পারে । কিন্তু কালি রাত্রে স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন ; সে স্বপ্ন ;--সে স্বপ্নের তাৎপৰ্য্য কি ? স্বপ্নে ব্রাহ্মণবেশী মহাবিপত্তিকালে আসিয়া তাহাকে রক্ষা করিতে চাহিয়াছিলেন, কার্য্যেও তাহাই ফলিতেছে । ব্রাহ্মণবেশী সকল ব্যক্ত করিতে চাহিতেছেন । তিনি স্বপ্নে বলিয়ছিলেন, “নিমগ্ন কর,” কার্য্যেও কি সেইরূপ বলিবেন ? ব্রাহ্মণবেশীর সাহাস্য ত্যাগ করিয়া বিপসাগরে ডুবিবেন ? ন-ম, - ভক্তবৎসলা ভবানী অনুগ্রহ করিয়৷ স্বপ্নে তাহার রক্ষাহেতু উপদেশ দিয়াছেন, ব্রাহ্মণবেশী আসিয়া তাহাকে উদ্ধার করিতে চাহিতেছেন ; তাহার সাহায্য ত্যাগ করিলে নিমগ্ন হইবেন । অতএব কপালকুণ্ডল র্তাহার সহিত সাক্ষাৎ করাই স্থির করিলেন । বিজ্ঞ ব্যক্তি এইরূপ সিদ্ধাস্ত করিতেন কি না, তাহাতে সন্দেহ ; কিন্তু বিজ্ঞ ব্যক্তির সিদ্ধাস্তের সহিত আমাদিগের সংস্ৰৰ নাই। কপালকুণ্ডলা বিশেষ বিজ্ঞ ছিলেন না, সুতরাং বিজ্ঞের ন্তায় সিদ্ধাস্ত করিলেন না । কৌতুহল পরবশ রমণীর ষ্ঠায় সিদ্ধান্ত করিলেন, ভীমকান্ত রূপরাশিদর্শনলোলুপ যুবতীর ন্যায় সিদ্ধাস্ত করিলেন, নৈশবনভ্রমণবিলাসিনী সন্ন্যাসিপালিতার ৩য়—২৪ 8S স্তায় সিদ্ধান্ত করিলেন, ভবানী-ভক্তিভাব-বিমোঙ্গিতার ন্তায় সিদ্ধাস্ত করিলেন, জলন্ত বহ্নিশিখায় পতনোমুখ পতঙ্গের দ্যায় সিদ্ধাস্ত করিলেন । সন্ধ্যার পরে গৃহকৰ্ম্ম কতক কতক সমাপন : করিয়া কপালকুণ্ডল পূৰ্ব্বমত বনাভিমুখে যাত্র। করিলেন। কপালকুণ্ডল যাত্রাকালে শয়নাগারে প্রদীপটি উজ্জল করিয়া গেলেন । তিনি যেমন কক্ষ হইতে বাহির হইলেন, আমনি গৃহের প্রদীপ নিবিয়া গেল । যাত্রাকালে কপালকুণ্ডল এক কথা বিস্তৃত হইলেন । ব্রাহ্মণবেশী কোন স্থানে সাক্ষাৎ করিতে লিখিয়াছিলেন ? এই জন্য পুনৰ্ব্বার লিপিপাঠের আবশ্বক হইল । গৃহে প্রত্যাবৰ্ত্তন করিয়া যে স্থানে প্রাতে লিপি রাখিয়াছিলেন, সে স্থানে অন্বেষণ করিলেন, সে স্থানে লিপি পাইলেন না। স্মরণ হইল যে, কেশবন্ধনসময়ে ঐ লিপি সঙ্গে সঙ্গে রাখিবার জন্য কবরীমধ্যে বিন্যস্ত করিয়াছিলেন । অতএব কবরীমধ্যে অঙ্গুলী দিয়া সন্ধান করিলেন । অঙ্গুলীতে লিপি স্পর্শ না হওয়াতে কবরী আলুলায়িত করিলেন, তথাপি সে, লিপি পাইলেন না । তখন গৃহের অন্যান্ত স্থানে তত্ত্ব করিলেন । কোথাও না পাইয়ু পরিশেষে পূৰ্ব্বসাক্ষাৎ স্থানেই সাক্ষাৎ সস্তব সিদ্ধাস্ত করিয়া পুনর্যাত্রা করিলেন। অনবকাশপ্রযুক্ত সে বিশাল কেশরাশি পুনর্বিন্যস্ত করিতে পারেন নাই, অতএব আজি কপালকুণ্ডল অনুঢ়াকালের মত কেশমণ্ডলমধ্যবৰ্ত্তিনী হইয়। চলিলেন । পঞ্চম পরিচ্ছেদ গৃহদ্বারে =4ھ “Stand you awhile apart, Consine yourself but in a patient list.” —Othello. যখন সন্ধ্যার প্রাক্কালে কপালকুণ্ডল গৃহকার্য্যে ব্যাপৃত ছিলেন, তখন, লিপি কবরীবন্ধনচু্যত হইয়া ভূমিতলে পড়িয়া গিয়াছিল। কপালকুণ্ডলা তাহা জানিতে পারেন নাই । নবকুমার তাহ দেখিয়াছিলেন। কবরী হইতে পত্র খসিয়া পড়িল দেখিয়া নবকুমার বিস্মিত হইলেন । কপালকুণ্ডল কাৰ্য্যাস্তরে চলিয়া গেলে লিপি খুলিয়। বাহিরে গিয়া পাঠ করিলেন ; সে লিপি পাঠ করিয়া একই সিদ্ধাস্তু