পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধুরাণী প্র। বলি, তুমি কি লোক ? . গো, মা । আর তোমার লোকে কাজ কি মা ! আমি একাই তোমার সব কাজ করে দেব । কেবল দুই একটা কাজ পারব না । প্র । পাৰ্ববে না কি ? গোবরার মা'র কান ফুটিল। বলিল, “পারব না কি ? এই জল তুলুতে পারব না। আমার র্কাকালে জোর নাই । আর কাপড়-চোপড় কাচা—তা না হয় अb তুমিই ক'রে. প্র । আর সব পারবে ত? গো, ম| বাসনটাসনগুলে। মাজ–তাও না হয়, তুমি আপনিই করলে । প্র । তাও পারবে না ; তবে পারবে কি ? গো, মা । আর এমন কিছু না—এই ঘর ঝে টোন, ঘর নিকোন, এটাও বড় পারিনে । প্র। তবে পারবে কি ? গে, মা । আর যা বল। সল্তে পাকাব, জল গড়িয়ে দেব, আমার এটো পাত ফেলুবে,—আর আসল কাজ যা যা, তা করব—হাট করব । প্র । বেসাতির হিসাবটা দিতে পাবৃবে ? গে, মা ! ত- ম! আমি বুড়ে মানুষ, হালাকাল, আমি কি আ ত পারি ? তবে কড়িপাতি যা দেবে, তা সব খরচ করে আসব—তুমি বলতে পাবে ন যে, আমার এই খরচটা হলো না । প্র । বাছা, তোমার মত গুণের লোক পাওয়৷ ভার । গে, ম৷ ৷ তা ম৷. ষা বল, তোমার আপনার গুণে বল । প্রফুল্ল অপরাকে তখন বলিল, “তোমার নাম কি গা ?” নবাগত সুন্দরী বলিল, “ত ভাই, জানি না।” প্রফুল্ল হাসিয়া বলিল, “সে কি ? বাপ-মায় কি নাম রাখে নাই ?” সুন্দরী বলিল, “রাখাই সম্ভব । কিন্তু আমি সবিশেষ অবগত নহি ।” প্র । সে কি গো ? সুন্দরী । জ্ঞান হইবার আগে হইতে আমি বাপ-মার কাছ ছাড়া । ছেলেবেলায় আমায় ছেলেধরায় চুরি করিয়া লইয়া গিয়াছিল। প্র । বটে ! তা তারাও ত একটা নাম রেখেছিল । সুন্দরী । নানা রকম । প্র । কি কি ? ২৩ সুন্দরী । পোড়ারমুখী, লক্ষ্মীছাড়া, চুলোমুখী । - এতক্ষণ গোবরার মা আবার কান হারাইয়াছিল । এই কয়টা সদাশ্রত গুণবাচক শব্দে শ্রীতি জাগরিত ' হইল। সে বলিল, “যে আমায় পোড়ারমুখী বলে, . সেই পোড়ারমুখী, যে আমায় চলোমুখী বলে, সেই চুলোমুখী, যে আমায় অঁাটকুড়ী বলে, সেই । আঁটকুড়ী--” সুন্দরী । ( হাসিয়া ) অঁাটকুড়ী বলি নাই, বাছা ! গো, মা । তুই আঁটকুড়ী বলিলেও বলেছিস, ন্য বলিলেও বলেছিস্—কেন বলুবি লা? প্রফুল্ল হাসিয়া বলিল, “তোমাকে বল্‌চে না গো —ও আমাকে বলুচে ” তখন নিশ্বাস ফেলিয়া গোবরার মা বলিল, “ও কপাল! আমাকে না ? তা বলুক মা, বলুক, তুমি রাগ করো না। ও বামনীর মুখটা বড় কড়স্থিা । তা বাছ । রাগ করতে নেই।” গোবরার মা’র মুখে এইরূপ আত্মপক্ষে বীররস ও পক্ষাস্তরে শান্তিরসের অবতারণ শুনিয়া যুবতীদ্বয় প্রীত হইলেন। প্রফুল্ল অপয়াকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বামনী ? তা আমাকে এতক্ষণ বল নাই ? আমার প্রণাম করা হয় নাই ।” প্রফুল্ল প্রণাম করিল। বয়স্তা আশীৰ্ব্বাদ করিয়া বলিল, “আমি বামুনের মেয়ে বটে—এইরূপ শুনিয়াছি—কিন্তু বামনী নই ৷” প্র । সে কি ? বয়স্তা । বামুন যোটে নাই । * প্র । বিবাহ হয় নাই ? সে কি ? বয়স্ত। ছেলেধরায় কি বিয়ে দেয় ? প্র । চিরকাল তুমি ছেলেধরার ঘরে ? বয়স্তা । না, ছেলেধরায় এক রাজার বাড়ী বেচে এয়েছিল । - প্র । রাজার বিয়ে দিল না ? বয়স্তা । রাজপুত্র ইচ্ছুক ছিলেন–কিন্তু বিবাহট গান্ধৰ্ব্বমত । প্র । নিজে পাত্র বুঝি ? বয়স্তা। তাও কয়দিনের জন্য বলিতে পারি না । প্র । তার পর ? বয়স্তা। রকম দেখিয়া পলায়ন করিলাম । প্র । তার পর ? বয়স্তা। রাজমহিষী কিছু গহন দিয়াছিলেন, গহনাসমেত পলাইয়াছিলাম । সুতরাং ডাকাইতের হাতে পড়িলাম। সে ডাকাইতের দলপতি ভবানী ঠাকুর, তিনি আমার কাহিনী শুনিয়া আমার গহনা হতভাগী,