পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধুরাণী । ছুইখানা তৃতীয় বৎসরে, গ্রীষ্মকালে একখান মোটা গড়া, অঙ্গে শুকাইতে হয়, শীতকালে একখানি ঢাকাই মলমল, অঙ্গে শুকাইয়া লইতে হয় । চতুর্থ বৎসরে, পাট-কাপড়, ঢাকাই কন্ধাদার, শাস্তিপুরে। প্রফুল্ল সে সকল ছিড়িয়া খাটো করিয়া লইয়া পরিত। পঞ্চম বৎসরে, বেশ ইচ্ছামত । প্রফুল্ল মোটা গড়াই বাহাল রাখিল ৷ মধ্যে মধ্যে ক্ষারে কাচিয়া লইত । কেশবিন্যাস সম্বন্ধেও ঐরূপ । প্রথম বৎসরে, তৈল নিষেধ, চুল রুক্ষ বাধিতে হইত। দ্বিতীয় বৎসরে, চুল বাধাও নিষেধ। দিনরাত্র রুক্ষচুলের রাশি আলু লায়িত থাকিত । তৃতীয় বৎসরে, ভবানী ঠাকুরের আদেশ অনুসারে সে মাথা মুড়াইল । চতুর্থ বৎসরে নুতন চুল হইল, ভবানী ঠাকুর আদেশ করিলেন, “কেশ গন্ধতৈল দ্বারা নিষিক্ত করিয়া সৰ্ব্বদ। রঞ্জিত করিবে ।” পঞ্চম বৎসরে স্বেচ্ছাচার অদেশ করিলেন । প্রফুল্ল পঞ্চম বৎসরে চুলে হাতও দিল না । প্রথম বৎসরে, তুলার তোষকে তুলার বালিসে প্রফুল্ল শুইল । দ্বিতীয় বৎসরে, বিচালীর বালিস, বিচালীর বিছানা ; তৃতীয় বৎসরে, ভূমিশয্যা । চতুর্থ বৎসরে, কোমল দুগ্ধফেনলিভ শয্য । পঞ্চম বৎসরে, স্বেচ্ছাচার। পঞ্চম বৎসবে প্রফুল্ল যেখানে পাইত, সেখানে শুইত । প্রথম বৎসরে, ত্রিযাম নিদ্র। । দ্বিতায় বৎসরে, দ্বিষাম । তৃতীয় বৎসরে, দুই দিন অস্তর রাত্ৰিজাগরণ । চতুর্থ বৎসরে, তন্দ্র আসিলেই নিদ্র। পঞ্চম বৎসরে স্বেচ্ছাচার । প্রফুল্ল রাত জাগিয়া পড়িত ও পুথি নকল করিত ! প্রফুল্ল জল, বাতাস, রৌদ্র, আগুন সম্বন্ধেও শরীরকে সহিষ্ণু করিতে লাগিল । ভবানী ঠাকুর প্রফুল্লের প্রতি আর একটি শিক্ষার আদেশ করিলেন, তাহা বলিতে লজ্জা করিতেছে। কিন্তু না বলিলেও কথা অসম্পূর্ণ থাকে। দ্বিতীয়, বৎসরে ভবানী ঠাকুর বলিলেন, “বাছ, একটু মল্লযুদ্ধ শিখিতে হুইবে ” প্রফুল্ল লজ্জায় মুখ নত করিল, শেষ বলিল, “ঠাকুর আর যা বলেন, তা শিখিব, এটি পারিব না ।" ভ। এটি নইলে নয় । প্র। সে কি ঠাকুর । স্ত্রীলোক মল্লযুদ্ধ শিখিয়৷ কি করিবে ? ভ। ইন্দ্রিয়জয়ের জষ্ঠ । তুৰ্ব্বল শরীর ইন্দ্ৰিয়জয় করিতে পারে না । ব্যায়াম ভিন্ন ইন্দ্ৰিয়জয় নাই । প্র । কে আমাকে মল্লযুদ্ধ শিখাইবে ? পুরুষ মানুষের কাছে আমি মল্লযুদ্ধ শিখিতে পারিব না । २.१ ভ। নিশি শিখাইবে নিশি ছেলেধরার মেরে । তারা বলিষ্ঠ বালক বালিকা ভিন্ন দলে রাখে না ... তাহাদের সম্প্রদায়ে থাকিয়া, নিশি বাল্যকালে ব্যায়াম', শিখিয়াছিল ! আমি এ সকল ভাবিয়া চিন্তিয়াই নিশিকে তোমার কাছে পাঠাইয়াছি । প্রফুল্ল চারি বৎসর ধরিয়া মল্লযুদ্ধ শিখিল । প্রথম বৎসরে, ভবানী ঠাকুর প্রফুল্লের বাড়ীতে কোন পুরুষকে ধাইতে দিতেন ন বা তাহাকে বাড়ীর বাহিরে কোন পুরুষের সঙ্গে আলাপ করিতে দিতেন না । দ্বিতীয় বৎসরে, আলাপ পক্ষে নিষেধ রহিত করিলেন। কিন্তু তাহার বাড়ীতে কোন পুরুষকে যাইতে দিতেন না। পরে তৃতীয় বৎসরে, যখন প্রফুল্প মাথা মুড়াইল, তখন ভবানী ঠাকুর বাছ বাছ শিষ্য সঙ্গে লইয়। প্রফুল্লের নিকটে যাইতেন-প্রফুল্ল নেড়া মাথায়, অবনত মুখে তাহদের সঙ্গে শাস্ত্রীয় আলাপ করিত । চতুর্থ বৎসরে, ভবানী নিজ অনুচরদিগের মধ্যে বাছা বাছা লাঠিয়াল লইয়া আসিতেন ; প্রফুল্লকে তাহাদিগের সহিত মল্লযুদ্ধ করিতে বলিতেন। প্রফুল্ল তাহার সম্মুখে তাহাদের সঙ্গে মল্লযুদ্ধ করিত । পঞ্চম বৎসরে, কোন বিধি-নিষেধ রহিল না। প্রয়োজনমত প্রফুল্ল পুরুষদিগের সঙ্গে আলাপ করিত । নিম্প্রয়োজনে করিত না । যখন প্রফুল্ল পুরুষমানুষদিগের সঙ্গে আলাপ করিত, তখন তাহাদিগকে আপনার পুত্ৰ মনে করিয়া কথা কহিত । , এইমত নানারূপ পরীক্ষা ও অভ্যাসের দ্বারা অতুল সম্পত্তির অধিকারিণী প্রফুল্লকে ভবানী ঠাকুর ঐশ্বৰ্য্যভোগের যোগ্যপাত্ৰী করিতে চেষ্টা করিলেন। পাচ বৎসরে সকল শিক্ষা শেষ হইল । একাদশীর দিন মাছ ছাড়া আর একটি বিষয়ে মাত্র প্রফুল্ল ভবানী ঠাকুরের অবাধ্য হইল। আপনার পরিচয় কিছুই দিল না । ভবানী ঠাকুর জিজ্ঞাসাবাদ করিয়াও কিছু জানিতে পারিলেন না । ষোড়শ পরিচ্ছেদ পাঁচ বৎসরে অধ্যাপন সমাপ্ত করিয়া ভবানী ঠাকুর প্রফুল্লকে বলিলেন, “পাচ বৎসর হইল, তোমার শিক্ষা আরম্ভ হইয়াছে । আজ সমাপ্ত হইল। এখন তোমার হস্তগত ধন তোমার ইচ্ছামত ব্যয় করিও— আমি নিষেধ করিব না। আমি পরামর্শ দিব-ইচ্ছা ।

  • a sqi Warren Hastings face লিখিয়াছেন ।