পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দেবী চৌধুরাণী হরবল্লভ বলিলেন, “তা সেই দিন সেইখানেই টাকা পাঠাইয়া দেওয়া যাইবে ।” - ব্ৰজেশ্বর বিদায় হইলেন । হরবল্লভ তখন মনে মনে বুদ্ধি খাটাইয়া কথাটা ভাল করিয়া বিচার করিয়া দেখিলেন । শেষে স্থির করিলেন, “হাঃ ! সে বেটীর আবার টাকা শোধ দিতে যাবে! বেটীকে সিপাহী এনে ধরিয়ে দিলেই সব গোল মিটে যাবে। বৈশাখী সপ্তমীর দিন সন্ধ্যার পর কাপ্তেন সাহেব পণ্টন শুদ্ধ তার বজরায় না উঠে—ত আমার নাম হরবল্লভই নয় । তাকে আমার কাছে টাকা নিতে হবে না ।” হরবল্লভ এই পুণ্যময় অভিসন্ধিটা আপনার মনে মনেই রাখিলেন—ব্রজেশ্বরকে বিশ্বাস করিয়া বললেন না । এ দিকে সাগর আসিয়া ব্ৰহ্মঠাকুরাণীর কাছে গিয়া গল্প করিল যে, ব্রজেশ্বর একটা রাজরাণীর বজরায় গিয়া তাহাকে বিবাহ করিয়া আসিয়াছে,— সাগর অনেক মানা কবিয়াছিল, তাহ শুনে নাই । মাগী জেতে কৈবৰ্ত্ত—আর তার দুইটা বিবাহ আছে —সুতরাং ব্রজেশ্বরের জাতি গিয়াছে । সুতরাং সাগর অরি ব্রজেশ্বরের পাত্রাবশিষ্ট ভোজন করিবে না, ইহ। স্থির প্রতিজ্ঞ করিয়াছে। ব্ৰহ্মঠাকুরাণী এ সকল কথা ব্ৰজেশ্বরকে জিজ্ঞাসা করায় ব্রজেশ্বর অপরাধ স্বীকার করিয়া বলিল, “রাণীজি জাত্যংশে ভাল—আমার পিভাঠাকুরের পিসী হয় । আর বিয়ে—তা আমারও তিনটা, তারও তিনটা ?” ব্ৰহ্মঠাকুরাণী বুঝিল, কথাটা মিথ্যা । কিন্তু সাগরের মতলব যে, ব্রহ্মঠাকুরাণী এ গল্পটা নয়নতারার কাছে করে । সে বিষয়ে তিলদ্ধ বিলঙ্গ হইল না । নয়নতারা একে সাগরকে দেখিয়া ভলিয়াছিল, আবার শুনিল যে, স্বামী একটা বুড়া কস্ত বিবাহ করিয়াছে । নয়নতারা একেবারে আগুনের মত জলিয়া উঠিল ; সুতরাং কিছু দিন ব্রজেশ্বর নয়নতারার কাছে ঘেঁসিতে পারিলেন না--সাগরের ইজারা-মহল হইয়া রহিলেন । সাগরের অভিপ্রায় সিদ্ধ হইল। কিন্তু নয়নতার বড় গোল বাধাইল—শেষে গিল্পীর কাছে গিয়া নালিশ రిఫ్ట్-ని 8న করিল। গিল্পী বলিলেন “তুমি বাছ পাগল মেয়ে বামনের ছেলে কি কৈবৰ্ত্ত বিয়ে করে গা ? তোমাকে সবাই ক্ষেপায়, তুমিও ক্ষেপ ।” নয়ান-বে। তবু বুঝিল না। বলিল, “যদি সত্য সত্যই বিয়ে হয়ে থাকে ?” গিল্পী বলিলেন, “যদি সত্যই হয়, তবে বউ বরণ করে ঘরে তুলবো । বেটার বউ ত আবার ফেলতে পারব না ।” এই সময় ব্রজেশ্বর আসিল, নয়ান বউ অবশ্য পলাইয়া গেল । লজেশ্বর জিজ্ঞাসা করিল, “ম!, কি বলুছিলে গা ?” গিন্নী বলিলেন, “এই বলুছিলাম যে, তুই যদি আবার বিয়ে করিস, তবে আবার বে। বরণ করে ঘরে তুলি ।” ব্ৰজেশ্বর অন্যমন হইল, কিছু উত্তর না করিয়া চলিয় গেল । প্রদোষকালে গিন্নী ঠাকুরাণী কর্তৃ। মহাশয়কে বাতাস করিতে করিতে ভর্তুচরণে এই কথা নিবেদন করিলেন । কর্তা জিজ্ঞাস করিলেন, “তোমার মনটা কি ?” গিনী । আমি ভাবি কি যে, সাগর-বউ ঘর করে না। নয়ান বউ ছেলের যোগ্য বউ নয়। তা যদি একটি ভাল দেখে ব্ৰজ বিয়ে ক’রে সংসারধৰ্ম্ম করে, আমার সুখ হয় । কর্তা । ত ছেলের মন যদি সে রকম বোঝ, তা অীমায় বলিও । আমি ঘটক ডেকে ভাল দেখে সম্বন্ধ করব । গিল্পী । আচ্ছা, আমি মন বুঝিয়া দেখিব । মন বুঝিবার ভার ব্রহ্মঠাকুরাণীর উপর পড়িল । ব্ৰহ্মঠাকুরাণী অনেক বিরহসন্তপ্ত এবং বিরহ-প্রয়াসী রাজপুত্রের উপকথা ব্রজকে শুনাইলেন, কিন্তু ব্রজের মন তাহাতে কিছু বোঝা গেল না। তখন ব্রহ্মঠাকুরাণী স্পষ্ট জিজ্ঞাসাবাদ আরম্ভ করিলেন । কিছুই খবর পাইলেন না । ব্ৰজেশ্বর কেবল বলিল, “বাপ-মা ষে আজ্ঞা করবেন, আমি তাই পালন . করিব ।” কথাটার আর বড় উচ্চবাচ্য হইল না :