পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

o বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী * . . . . $ মধেই গহন । দেবী তাহাকে নুতন গহনা দিয়াছিলেন বলিয়া সেগুলি নিশি পরিত না। এক্ষণে দেবীকে নিরাভরণ দেখিয়া সেগুলি পরাইল । তার পর আর .ক্লোন কাজ নাই, কাজেই তিন জনে কঁাদিতে বসিল । :"র্নিশি গহন। পরাইবার সময়েই সুর তুলিয়াছিল, দিব৷ তৎক্ষণাৎ পো ধরিলেন। তার পর পো সানাই ছাপাইয়া উঠিল । প্রফুল্ল কঁাদিল না—কাদিবার কথা কি ? তিন জনের আস্তরিক ভালবাসা ছিল ; কিন্তু প্রফুল্লের মন আহ্বাদে ভরা, কাজেই প্রফুল্ল অনেক নরম গেল। ...নিশিও দেখিল যে, প্রফুল্পের মন মুখে ভরা। নিশিও সে মুখে সুখী হইল, কান্নায় সে-ও একটু নরম গেল। সে বিষয়ে যাহার যে ক্রটি হইল, দিব ঠাকুরাণী তাহা সারিয়া লইলেন । যথাকালে বজর ভূতনাথের ঘাটে পৌছিল। সেইখানে দিবা ও নিশির পায়ের ধূলা লইয়া, প্রফুল্ল তাহাদিগের কাছে বিদায় লইল । তাহার কঁাদিতে কাদিতে সেই বজরায় ফিরিয়া যথাকালে দেবীগড়ে পৌঁছিল। দাড়ি-মাঝি বরকন্দাজের বেতন হিসাব করিয়া দিয়া তাহাদের জবাব দিল । বজরাখানি রাখা আকৰ্ত্তব্য—চেন বজরা । প্রফুল্ল বলিয়া দিয়াছিল, “উহ। রাখিও না।” নিশি বজরাখানিকে চেলা করিয়া দুই বৎসর ধরিয়৷ পোড়াইল । এই চেলা-কাঠের উপঢৌকন দিয়া পাঠকমহাশয় নিশি ঠাকুরাণীর কাছে বিদায় লউন। অনুপযুক্ত হইবে না । দ্বাদশ পরিচ্ছেদ ভূতনাথের ঘাটে প্রফুল্লের বজরা ভিড়িবামাত্র কে জানে, কোথা দিয়া, গ্ৰামময় রাষ্ট হইল যে, ব্রজেশ্বর আবার একটা বিয়ে ক’রে এনেছে ; বড় না কি ধেড়ে বউ। সুতরাং ছেলে, বুড়ো, কাণ, খোড়া যে যেখানে ছিল, সব বউ দেখিতে ছুটিল ; যে রাধিতেছিল, সে হাড়ি ফেলিয়৷ ছুটিল ; যে মাছ কুটিতেছিল, সে মাছের চুপড়ি চাপা দিয়া ছুটিল ; যে স্নান করিতেছিল, সে ভিজে কাপড়ে ছুটিল । যে খাইতে বসিয়াছিল, তার আধপেট বই খাওয়া হইল না । যে কোন্দল করিতেছিল, শত্রপক্ষের সঙ্গে হঠাৎ তার মিল হইয়া গেল । যে মাগী ছেলে ঠেঙ্গাইতেছিল, ভার ছেলে সে যাত্র বঁাচিয়া গেল, মার কোলে উঠিয়া ধেড়ে বউ দেখিতে চলিল। কাহারও স্বামী আহারে বসিয়াছেন, পাতে ডালতরকারী পড়িয়াছে, মাছের ঝোল পড়ে নাই, এমন সময়ে বউয়ের খবর আপিল, আর তার কপালে সে দিন মাছের ঝোল হইল না । এইমাত্র বুড়ী নাতিনীর সঙ্গে কাজিয়া করিতেছিল যে, “আমার হাত ধরিয়া না নিয়ে গেলে, আমি কেমন ক’রে পুকুরঘাটে যাই ?” এমন সময় গোল হইল, বউ এসেছে, অমনি নাতিনী আয়ি ফেলিয়া বউ দেখিতে গেল, আয়িও কোন রকমে সেই স্থানে উপস্থিত । এক যুবতী মা’র কাছে তিরস্কার খাইয়৷ শপথ করিতেছিলেন যে, তিনি কখন বাড়ীর বাহির হন না, এমন সময়ে বউ আসার সংবাদ পৌছিল, শপথটা সম্পূর্ণ হইল না ; যুবতী বউয়ের বাড়ীর দিকে ছুটিলেন । মা শিশু ফেলিয়া ছুটিল, শিশু ম'র পিছু পিছু কাদিতে কঁাদিতে ছুটিল। ভাগুর স্বামী বসিয়া আছে, ভ্রাতৃবধু মানিল না, ঘোমটা টানিয়া সম্মুখ দিয়া চলিয়া গেল । ছুটিতে যুবতীদের কাপড় খসিয়া পড়ে, আঁটিয়া পরিবার অবকাশ নাই। চুল খুলিয়া পড়ে, জড়াইবার অবকাশ নাই। সামলাইতে কোথাকার কাপড় কোথায় টানেন, তারও বড় ঠিক নাই। হুলস্থল পড়িয়া গেল। লজ্জায় লজ্জাদেবী পলায়ন করিলেন । বর-কন্ত আসিয়া পীড়ির উপর দাড়াইয়াছে। গিল্পী বরণ করিতেছেন, বউয়ের মুখ দেখিবার জন্ত লোকে ঝুঁকিয়াছে, কিন্তু বউ বউ গিরির চাল ছাড়ে না, দেড় হাত ঘোমটা টানিয়া রাখিয়াছে, কেহ মুখ দেখিতে পায় না । শাশুড়ী বরণ করিবার সময়ে একবার ঘোমটা খুলিয়া বধুর মুখ দেখিলেন । একটু চমকিয়া উঠিলেন, আর কিছু বলিলেন না, কেবল বলিলেন, “বেশ বউ ! তার চোখে একটু জল আসিল । a * বরণ হইয়া গেলে, বধু ঘরে তুলিয়া শাশুড়ী সমবেত প্রতিবাসিনীদিগকে বলিলেন, “মা ! আমার বেটবউ অনেক দূর থেকে আসিতেছে,ক্ষুধাতৃষ্ণায় কাতর। আমি এখন ওদের খাওয়াই দাওয়াই । ঘরের বউ ত ঘরেই রহিল, তোমরা নিত্য দেখবে, এখন ঘরে যাও, খাও দাও গিয়া ” গিল্পীর এই বাক্যে অপ্রসন্ন হইয়া নিনা করিতে করিতে প্রতিবাসিনীর ঘরে গেল। দোষ গিল্পীর, কিন্তু নিন্দাটা বধুরই অধিক হইল । কেন না, বড় ' কেহ মুখ দেখিতে পায় নাই। ধেড়ে মেয়ে বলিয়া সকলেই ঘূণ প্রকাশ করিল। আবার সকলেই বলিল, “কুলীনের ঘরে অমন ঢের হয় ।” তখন যে যেখানে কুলীনের ঘরে বুড় বউ দেখিয়াছে, তার গল্প করিতে লাগিল । গোবিদ মুখধ্যে পঞ্চায় বৎসরের একটা