পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

š' २७ কাটালটিকেও সেই ধ্বংসপুরে পাঠাইলেন । নিমাই হাসিয়া বলিল, “দাদ। আর কিছু নাই।" দাদা বলিলেন, “তবে যা, আর এক দিন আসিয়া খাইব ।” অগত্য নিমাই জীবানন্দকে অঁাচাইবার জল দিল । জল দিতে দিতে নিমাই বলিল, “দাদ। তামার একটি কথ। রাখিবে কি ?” জীবা । কি ? নিম । আমার মাথা খা ও । জীব। কি বলু না পোড়ারমুখী ! নিম । কথা রাখবে ? জীব । কি আগে বলু ন! । নিম । আমার মাথা খাও–পীয়ে পড়ি । জীব । তোর মাথাও খাই—তুষ্ট পয়েও পড়, কিন্ত কি বল ? নিমাই তখন এক তাতে আর এক জ্ঞান্ডের অঙ্গলী টিপিয়া ঘাড় ক্টেট করিয়া, সেইগুলি নিরীক্ষণ করিয়| একবার জীবানন্দো মুখপানে ঢাক্তিস একবার মাটীপানে চাতিয়া শেষে মুখ ফুটির বলিল, “একবার বোঁকে ডাকবে ?” জীবানন্দ আঁচাইবার গাড় তুলির নিমির মাথায় মারিতে উদ্যত ; বলিলেন, “আমার মেয়ে ফিরিয়ে দে, আর আমি এক দিন তোর চালন্দাল ফিরিয়ে দিয়! যাইব । তুষ্ট বাদরী, তুষ্ট পোড়ারমুখী তুষ্ট যা না বল্‌ বার, তাই আমাকে বলিস ” নিমাই বলল, “ত হউক, আমি বঁাদরী. আমি পোড়ারমুখী, একবার বউকে ডাকবে ?” জীব । “আমি চল্লাম ।” এই বলিয়া জীবানন হনৃ-হন করিয়া বাহির হইয় যায়, নিমাই গিয়। দ্বারে দাড়াইল ; দ্বারের কপাট রুদ্ধ করিয়া দ্বারে পিঠ দিয়। বলিল, “আগে আমায় মেরে ফেল, তবে তুমি যাও । বোঁয়ের সঙ্গে না দেখা করে তুমি যেতে পারবে না ।” জীবাননী বলিলেন, “আমি কত লোক মারিয়া ফেলিয়াছি, তা তুই জানিস ?” এইরার নিমি রাগ করিল, বলিল, “বড় কাৰ্টিষ্ট করেছ—স্ত্রী ত্যাগ করবে, লোক মারবে, আমি তোমায় ভয় করবো ! তুমিও যে বাপের সস্তান, আমিও সেই বাপের সন্তান—লোক মারা যদি বড়াইয়ের কথা হয়, আমায় মেরে বড়াই কর।” জীবানন্দ হাসিলেন, বলিলেন, “ডেকে নিয়ে আয় —কোন পাপিষ্ঠীকে ডেকে নিয়ে আসবি, নিয়ে আয় ; কিন্তু দেখ, ফের যদি এমন কথা বলুবি, তোকে কিছু বলি না বলি, সেই শালার ভাই শালাকে মাথা তখন বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী মুড়াইয়া দিয়া ঘোল ঢেলে উলুট গাধায় চড়িয়ে দেশের বার ক’রে দিব |" নিমি মনে মনে বলিল, “আমিও তা হলে বাচি !” এই বলিয়া হাসিতে হাসিতে নিমি বাহির হইয়া গেল । নিকটবৰ্ত্তী এক পর্ণকুটীরে গিয়া প্রবেশ করিল। কুটারমধ্যে শতগ্রন্থিযুক্ত বসন-পরিধান রুক্ষকেশ এক স্ত্রীলোক বসিয়। চরক কাটিতেছিল । নিমাই গিয়া বলিল, “বেী, শীগ গীর " বে বলিল, “শীগগীর কি লো ? ঠাকুরজামাই তোকে মেরেছে না কি, ঘায়ে তেল মাখিয়ে দিতে হবে ?” নিমি । কাছাকাছি বটে, তেল আছে ঘরে ? সে স্ত্রীলোক ভৈলের ভাণ্ড বাহির করিয়া দিল । নিমাই ভাণ্ড হক্টতে তাড়াতাড়ি অঞ্জলি অঞ্জলি তেল লষ্টয়| সেই সালোকের মাথায় মাখাইয়া দিল ! তাড়াতাড়ি একট। চলনসই খোপা বাধিয়া দিল । তার পর তাহাকে এক কিল মারিয়া বলিল, “তোর সেই ঢাকাই শাড়ী কোথায় আছে, বল্‌ ৷” সে স্ত্রীলোক কিছু বিস্মিত হইয়া বলিল, “কি লো, তুই কি ক্ষেপেছিস ন! কি ?” নিমাই কুম্ করিয় তাহার পিঠে এক কিল মারিল, ৰলিল, “শাড়ী বের কর ।" রঙ্গ দেখিবার জন্য সে স্ত্রীলোক শাড়ীখানি বাহির করিল । রঙ্গ দেখিবার জন্ত-কেন না, এত দুঃখেও রঙ্গ দেখিবার যে বৃত্তি, তাহ। তাহার হৃদয়ে লুপ্ত হয় নাই । নবীন যৌবন, ফুল্লকমলতুল্য তাহার নববয়সের দৌন্দর্ঘ্য ; ভৈল নষ্ট, বেশ নাই, আহার নাই—তবু সে প্রদীপ্ত অননুমেয় সৌন্দর্য্য সেই শতগ্রন্থিযুক্ত বসনমধ্যেও প্রস্ফুটিত । বর্ণে ছায়ালোকের চাঞ্চল্য, নয়নে কটাক্ষ, অধরে হাসি, হৃদয়ে ধৈর্য্য । আহার নাই— তবু শরীর লাবণ্যময় ; বেশভূষা নাই, তবু সে সৌন্দর্য্য সম্পূর্ণ অভিব্যক্ত । যেমন মেঘমধ্যে বিদ্যুৎ, যেমন মনোমধ্যে প্রতিভা, যেমন জগতের শব্দমধ্যে সঙ্গীত, যেমন মরণের ভিতর সুখ, তেমনি সে রূপরাশিতে অনিৰ্ব্বচনীয় কি ছিল। অনিৰ্ব্বচনীয় মাধুর্য্য, অনিৰ্ব্ব চনীয় উন্নত ভাব, অনিৰ্ব্বচনীয় প্রেম, অনিৰ্ব্বচনীয় ভক্তি । সে হাসিতে হাসিতে ( কেহ সে হাসি দেখিল ন, ) সেই ঢাকাই শাড়ী বাহির করিয়া দিল । বলিল, “কি লো নিমি, কি হইবে ?” নিমাই বলিল, “তুই পৰ্ববি।” সে বলিল, “আমি পরিলে কি হইবে ?” তখন নিমাই তাহার কমনীয় কণ্ঠে আপনার কমনীয় বাহুবেষ্টন করিয়া বলিল, “দাদা এসেছে, তোকে ধেতে বলেছে ।” সে বলিল, “আমায় যেতে বলেছেন ত ঢাকাই শাড়ী কেন ? চল না, এমনি যাই ।” মিমাই