পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 তৃতীয় পরিচ্ছেদ শাস্তি সাহেবকে ত্যাগ করিয়া হরিণীর দ্যায় ক্ষিপ্রচরণে বনমধ্যে কোথায় প্রবিষ্ট হইল । সাহেব কিছু পরে শুনিতে পাইলেন—স্ত্রীকণ্ঠে গীত হইতেছে— “এ ষেীবন-জলতরঙ্গ রোধিবে কে ? হরে মুরারে হরে মুরারে !" আবার কোথায় সারঙ্গের মধুর নিক্কণে বাজিল ভাই,— “এ যৌবন-জলতরঙ্গ রোধিবে কে ? হরে মুরারে হরে মুরারে !" তাহার সঙ্গে পুরুষকণ্ঠ মিলিয়। গত হইল“এ যৌবন-জলতরঙ্গ রোধিবে ক ? হরে মুরারে ; হরে মুরারে !" তিন স্বরে এক হইয়। গানে বনের লতা সকল কাপাইয়। তুলিল ! শাস্তি গায়িতে গারিতে চলিল – “এ যৌবন-জলতরঙ্গ রোধিবে কে ? হরে মুরারে ; হরে মুরারে : জলেতে তুফান হয়েছে, আমার নুতন তরী ভাসল সুখে, মাঝিতে হাল ধরেছে, করে মুরারে ! হরে মুল্লারে : ভেঙ্গে বালির বাধ, পূরাষ্ট মনের সাপ, জোন্নার গাঙ্গে জল ছুটেছে রাখিবে কে ? হরে মুরারে । তরে মুরারে !" সারঙ্গেও ঐ বাজিতেছিল-- “জোয়ার গাঙ্গে জল ছুটেছে রাখিবে ক ? হরে মুরারে ; হরে মুরারে " যেখানে অতি নিবিড় বন, ভিতরে কি আক্তে বাহির হইতে একেবারে অদৃশ্ব, শক্তি তাঙ্গরই মপো প্রবেশ করিল। সেইপানেই সেই শাখাপল্ললরাশির মধ্যে লুক্কায়িত একটি ক্ষুদ্র কুটীর আছে ; ডালের বাধন, পাতার ছাওয়া, কাঠের মেজে, তার উপর মাট ঢাল । তাঁহারই ভিতরে লতাস্বার মোচন করির। শাক্তি প্রবেশ করিল। সেখানে জীবানন্দ বসিয়া সারেঙ্গ বাজাইতেছিল । জীবানন্দ শাস্তিকে দেখিয় জিজ্ঞাসা করিলেন, “এত দিনের পর জোয়ার গাঙ্গে জল ছুটেছে কি ?” শক্তিও হাসিয়া উত্তর করিল, “লাল-ডোবায় কি জোঙ্গার গাঙ্গে জল ছুটে ?” বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী জীবাননা বিষণ্ণ হইয়া বলিলেন,—“দেখ শাস্তি! এক দিন আমার ব্রতভঙ্ক হওয়ায় আমার প্রাণ ত উৎসর্গই হইয়াছে। ষে পাপ, তাহার প্রায়শ্চিত্ত করিতেই হইবে । এত দিন এ প্রায়শ্চিত্ত করিতাম, কেবল তোমার অনুরোধেই করি নাই । কিন্তু একটা ঘোরতর যুদ্ধের বিলম্ব নাই। সেই যুদ্ধের ক্ষেত্রে, আমার সে প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে । এ প্রাণ পরিত্যাগ করিতেই হুইবে । আমার মরিবার দিন—” শান্তি আর বলিতে না দিয়া বলিল, “আমি তোমার ধৰ্ম্মপত্নী-সহধৰ্ম্মিণী, ধৰ্ম্মে সঙ্গয় । তুমি অতিশয় গুরুতর ধৰ্ম্ম গ্ৰহণ করিয়াছ । সেই ধৰ্ম্মের সহায়তার জন্মই আমি গৃহত্যাগ করিয়া আসিয়াছি । দুই জন একত্র সেই ধৰ্ম্মাচরণ করিব বলির গৃহত্যাগ করিয়৷ আসিয়া বনে বাস করিতেছি । তোমার ধৰ্ম্ম বুদ্ধি করিব। ধৰ্ম্মপত্নী ইয়া, তোমার বন্মের বিঘ্ন করিব কেন ? বিবাহ ইহকালের জন্ত বিবাহ পরপালের জন্য । ইহকালের জন্য যে বিব{ঙ্গ, মনে কর, তাহ আমাদের হয় নাই । আমাদের বিবাহ কলল পরকালের জন্ত i পরকালে দ্বিগুণ ফুল ফুলিবে । কিন্তু প্রায়শ্চিত্তের কথা কেন ? তুমি কি পাপ করিয়াছ ? তোমার প্রতিজ্ঞা স্ত্রীলোকের সঙ্গে একাসনে বসিবে ন! : কৈ, কোন দিন শু একাসনে বসে!-মষ্টি । প্রয়েশ্চিন্তু কেন ? হায়ু প্রভু ! তুমি আমার গুরু, আমি কি তোমায় ধৰ্ম্ম শিখাইব ? তুমি বীর, আমি তোমায় বীরত্রত শিখাইব ?" জীবানন্দ আছিল:দে গদগদ হইয়। বলিলেন, “শিখাঈলে :" শাস্তি প্রফুল্লচিত্ত্বে বলিতে লাগিল “আরও দেখ গ{#াষ্ট, ইহকালেই কি আমাদের বিবাহ নিস্ফল? তুমি আমায় ভালবাস, আমি তোমার ভালবাসি, ইহা অপেক্ষ ইহুকালে আর কি গুরুতর ফল আছে ? বল বন্দে মাতরম্ ? তখন দুই জনে গল৷ মিলাইয়। “বন্দে মাতরম" গাধিল । এলু* চতুর্থ পরিচ্ছেদ ভবানন্দ গোস্বামী একদা নগরে গিয়া উপস্থিত হইলেন । প্রশস্ত রাজপথ পরিত্যাগ করিয়া একটা অন্ধকার গলির ভিতর প্রবেশ করিলেন । গলির দুই পাশ্বে উচ্চ অট্টালিকাশ্রেণী ; স্বৰ্য্যদেব মধ্যাহ্নে এক একবার গলির ভিতর উকি মারেন মাত্র। তৎপরে অন্ধকারেরই অধিকার । গলির পাশের একটি দোতাল