পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলী . . • ہو& প্রাচীসমুদিত উষামুকুটজ্যোতিঃসন্দর্শনে আলোদিত এক কোকিলের রব । বেলা এক প্রহর হইল । সেখানে শাস্তি, জীবানন্দ আসিয়া দেখা দিলেন । কল্যাণী শাস্তিকে বলিলেন,—“আমরা আপনার কাছে বিনামূল্যে বিক্রীত । আমাদের কন্যাটির সন্ধান বলিয়া দিয়া এ উপকার সম্পূর্ণ করুন।” শাস্তি জীবানন্দের মুখের প্রতি চাহিয়া বলিল, “আমি ঘুমাইব । অষ্টপ্রহরের মধে! বসি নাই— দুই রাত্রি ঘুমাই নাই—আমি পুরুষ।" কল্যাণী ঈষৎ হাসিলেন । জীবানন্দ মহেঞ্জের মুখপানে চাহিয়৷ বলিলেন, “সে ভার আমার উপর "হিল । আপনার পদচিহ্নে গমন করুন-সেইখানে কন্যাকে পাইবেন ।” জীবানন্দ ভরুইপুরে নিমাইয়ের নিকট হইতে মেয়ে আনিতে গেলেন—কাজটা বড় সহজ বোধ হইল না । তখন নিমাই প্রথমে ঢোক গিলিল, একবার এদিক্‌ ওদিক্‌ চাহিল । তার পর একবার তার ঠোট নাক ফুলিল । তার পর সে কাদিয়া ফেলিল । তার পর বলিল, “আমি মেয়ে দিব না ।” নিমাই গোল হাতখানির উল্টাপিঠ চোখে দিয়৷ খুরাইয়া ঘুরাইয়া চক্ষু মুছিলে পর জীবানন্দ বলিলেন, *ভ দিদি, র্কাদ কেন, এমন দূরেও তো নয়--তাদের বাড়ী তুমি না হয় গেলে, মধ্যে মধ্যে দেখে এলে ।” নিমাই ঠোঁট ফুলাইয়। বলিল, “তা তোমাদের মেয়ে তোমরা নিয়ে যাও না কেন ?” নিমাই এষ্ট বলিয়া মুকুমারীকে আনিয়া রাগ করিয়৷ গুম্‌ করিয়া জাব। নন্দের কাছে ফেলিয়া দিয়া প। ছড়াইয়া কাদিতে বসিল । সুতরাং জীবানন্দ তখন আর কিছু ন বলিয়। এদিক্‌ ওদিক্‌ বাজে কথা কহিতে লাগিলেন । কিন্তু নিমাইয়ের রাগ পড়িল না। নিমাই উঠিয়া সুকুম রীর কাপড়ের বোচক, অলঙ্কারের বক্স, চুলের দড়ি, খেলার পুতুল, ঝুপ ঝুপ করিয়া জীবানন্দের সম্মুখে ফেলিয়া দিতে লাগিল । সুকুমারী সে সকল আপনি গুছাইতে লাগিল । সে নিমাইকে জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল, “ই মা—কোথায় যাব মা ?” নিমাইয়ের আর সহ হইল না । নিমাই তখন মুকুকে কোলে লইয়। কঁাদিতে কঁাদিতে চলিয়। গেল । তৃতীয় পরিচ্ছেদ পদচিহ্নে নুতন দুর্গমধ্যে আজ মুখে সমবেত মহেন্দ্র, কল্যাণী, জীবানন্দ, শান্তি, নিমাই, নিমাইয়ের স্বামী, সুকুমারা ; সকলে মুখে সম্মিলিত । শান্তি নবীনানন্দ বেশে আসিয়াছিল । কল্যাণীকে যে রাত্রে আপন কুটীরে আনে, সেই রাত্রে বারণ করিয়াছিল যে, নবীনানন্দ যে স্ত্রীলোক, এ কথা কল্যাণী স্বামীর সাক্ষাতে প্রকাশ না করেন । এক দিন কল্যাণী তাহাকে অস্তঃ পুরে ডাকিয়া পাঠাইলেন । নবানানন্দ অন্তঃপুরমধ্যে প্রবেশ করিল। তৃত্যগণের বারণ শুনিল না । শাস্তি কল্যাণীর নিকট আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “ডাকিয়াছ কেন ?" ক । পুরুষ সাজিয়। কত দিন থাকিবে ? দেখা হয় ম৷ –কথা কহিতেও পাই না । আমার স্বামীর সাক্ষাতে তোমায় প্রকাশ হইতে হইবে । নবীনানন্দ বড় চিন্তিত হইয়। রহিল, অনেকক্ষণ কথ। কহিল না । শেষে বলিল, “তাহাতে অনেক বিঘ্ন কল্যাণি ! দুই জনে সেই কথাবাৰ্ত্ত হইতে লাগিল । এ দিকে ধে ভূত্যবর্গ নবানানন্দের অন্তঃপুরে প্রবেশ নিষেধ করিয়াহিল তাতারা গিম্ব। মহেন্দুকে সংবাদ দিল যে নবনানন্দ জোর করিয়৷ অন্তঃপুরে প্রবেশ করিল, লিষপ মানিল না : কৌতুহলী হইয়| মহেন্দ্রও অস্তঃপুবে গেলেন । কল্যাণীর শয়নঘরে গিয়া দেখিলেম স, নবানানন্দ গৃহমধ্যে দাড়াইয় আছে, কল্যাণী তাহার গায়ে হাই দিয়। বাঘছালের গ্রন্থি খুলিয়া লিতেছেন । মহেন্দ্র অতিশয় বিস্ময়াপন্ন হইলেন,— অতিশয় রুষ্ট হইলেন । নবানানন্দ ঠাকাকে দেখিয়া হাসিয়। বলিল, “কি গোসাই ! সস্তানে সস্তানে অবিশ্বাস ?” মহেন্দ্র বলিলেন -“ভবানন্দ ঠাকুর কি বিশ্বাসী ছিলেন ?" নবানানন্দ চোখ ঘুরাইয়। বলিল, “কল্যাণী কি ভবানদের গারে হাত দিয়া বাঘছাল খুলিয়া দিত ?” বলিতে বলিতে শান্তি কল্যাণীর হাত টিপিয়া ধরিল, বাঘছাল খুলিতে দিল না । ** ম । তাতে কি ? ন। আমাকে অবিশ্বাস করিতে পারেন— কল্যাণীকে অবিশ্বাস করেন কোনূ হিসাবে ? এবারে মহেন্দ্র বড় অপ্রভিত হইলেন । বলিলেন, “কই, কিসে অবিশ্বাস করিলাম ? '