পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

§8 তখন ঠক্ ঠক্‌ খটখট তাম্বুর খোটায় মুগুরের * পড়িতে লাগিল ॥৭ মেঘরচিত অমরাবতীর ন্যায় ৰঞ্জনগরী অন্তর্হিত হুইল । মাল গাড়ীতে বোঝাই স্থইল । মানুষ ঘোড়ায় অথবা আপনার পায়ে । :হিন্দু, মুসলমান, মাদ্রাজি, গোরা বন্দুক ঘাড়ে মসমস্ করিয়া চলিল। কামানের গাড়ী ঘড়োর ঘড়োর করিতে করিতে চলিল । #. এ দিকে মহেন্দ্র সন্তানসেন লইয়া ক্রমে মেলার পর্থে অগ্রসর। সেই দিন বৈকালে মহেন্দ্ৰ ভাবিলেন, বেলা পড়িয়া আসিল শিবিরসংস্থাপন করা যাক । তখন শিবিরসংস্থাপন উচিত বোধ হইল । বৈষ্ণবের তাবু নাই ; গাছতলায় গুণচট বা র্কাথ। পাতিয়া শয়ন করে । একটু হরিচরণামৃত খাইয়া রাত্রিযাপন করে । ক্ষুধ যেটুকু বাকি থাকে, স্বপ্নে বৈষ্ণবীঠাকুরাণীর অধরামৃত পান করিয়া পরিপূর্ণ করে ; শিবিরোপযোগী নিকটে একটি স্থান ছিল । একটা বড় বাগান—আম, কঁঠাল, বাবলা, তেঁতুল । মহেন্দ্র আজ্ঞা দিলেন, “এইখানেই শিবির কর ” তারই পাশে এক শ টিল ছিল, উঠিতে বড় বন্ধুর । মহেন্দ্র একবার ভাবিলেন, এ পাহাড়ের উপর শিবির করিলে হয় । স্থানটা দেখিয়া আসিবেন মনে করিলেন। :: এই ভাবিয়া মহেন্দ্র অশ্বে আরোহণ করিয়া ধীরে ধীরে টিলার উপরে উঠতে আরম্ভ করিলেন । তিনি কিছুদুর উঠিলে পর এক যুবা বৈষ্ণব সেনার মধ্যে প্রবিষ্ট হইয়া বলিল, “চল, টিলায় চড়।” নিকটে যাহারা ছিল, তাহার বিস্মিত হইয়। বলিল, “কেন ?” যোদ্ধা এক মৃত্তিকাস্ত,পের উপর উঠিরা দাড়াইয়। বলিল, “চল, এই জ্যোৎস্নারাত্রে ঐ পৰ্ব্বতশিখরে নুতন বসন্তের নূতন ফুলের গন্ধ শুকিতে শুকিতে আজ জামাদের শত্রুর সঙ্গে যুদ্ধ করিতে হইবে।” সন্তানের দেখিল, সেনাপতি জীবানন্দ । তখন 'হরে মুরারে ੋਲ শব্দ করিয়া যাবতীয় সস্তানসেনা বল্লমে ভর দিয়া উচু হইয়া উঠিল এবং সেই সেনা জীবানন্দের অনুকরণ পূর্বক বেগে টিলার উপর অরোহণ করিতে লাগিল । এক জন সজ্জিত অশ্ব আনিয়। জীবানন্দকে দিল । দুর হইতে মহেন্দ্ৰ দেখিয়া বিস্মিত হইলেন । ভাবিলেন, এ কি এ ? না বলিতে ইহার আসে কেন ? এই ভাবিয়া মহেন্দ্র ঘোড়ার মুখ ফিরাইয়া চাবু ঙ্কের; ঘায়ে ধোয় উড়াইয়া দিয়া পৰ্ব্বত অবতরণ করিত্বে লাগিলেন । সন্তানবাহিনীর অগ্রবর্তী জীকানদের সাক্ষাৎ পাইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন,—“ আবার কি আনন্দ ?” পতনশীল শিলারাশির বঙ্কিমচন্দ্রের গ্রন্থাবলাঃ बीबानून ;#:###लबङ्ग¥ॉर्मक টিলার ও পিঠে "তাঁধে: ৰে আঙ্গ উপরে उठेिव, डांब्रई छिड़*** ..} • তখন জীবানন্দ সন্তানসৈঙ্গের প্রতি ডাকিয়৷ বলিলেন, “চেন তোমরা? আমি জীবাননা গোস্বামী । সহস্ৰ শত্রুর প্রাণবধ করিয়াছি ।” তুমুল নিনাদে কানন-প্রস্তর সব ধ্বনিত করিয়া শব্দ হইল, “চিনি আমর! তুমি জীবানন্দ গোস্বামী ।” জীব । বল “হরে মুরারে!” কানন-প্রাস্তর সহস্ৰ সহস্র কণ্ঠে ধ্বনিত হইল, “হরে মুরারে!” জীব। টিলার ওপিঠে শত্রু। আজই এ স্তুপশিখরে এ নীলাম্বরী যামিনী-সাক্ষাৎকার সস্তানের রণ করিবে । দ্রুত আইস, যে আগে শিখরে উঠিবে, সেই জিতিবে । বল, “বনে মাতরম্!” তখন কানন-প্রান্তর ধবনিত করিয়া গীতধ্বনি উঠিল, “বন্দে মাতরম্ " ধীরে ধীরে সস্তানসেন পৰ্ব্বতশিখর আরোহণ করিতে লাগিল ; কিন্তু তাহারা সহসা সভয়ে দেখিল, মহেন্দ্র সিংহ অতি দ্রুতবেগে স্তপ হইতে অবতরণ করিতে করিতে তুৰ্য্যনিনাদ করিতেছেন। দেখিতে দেখিতে শিখরদেশে নীলাকাশপটে কামানশ্রেণী সঙ্গিত ইংরেজের গোলন্দাজ সেন। শোভিত হইয়াছে । উচ্চৈঃস্বরে বৈষ্ণবী সেন। গায়িল— “তুমি বিদ্য৷ তুমি ভক্তি, তুমি মা বাহুতে শক্তি, চুং হি প্রাণাঃ শরীরে " কিন্তু ইংরেজের “কামানের গুডুম্‌ গুডুম্‌ গুম্ শব্দে সে মহাগীতি ভাসিয়া গেল। শত শত সন্তান হত আহত হইয়া অস্ত্ৰ-শস্ত্র সহিত টিলার উপর গুইল। আবার গুডুম্‌ গুডুম্‌ দধীচির অস্থিকে ব্যঙ্গ করিয়া, সমুদ্রের তরঙ্গভঙ্গকে তুচ্ছ করিয়া ইংরেজের বজ্র গড়াইতে লাগিল। চাষার কৰ্ত্তনীসম্মুখে সুপক্ক ধান্তের ন্যায় সন্তানসেন খণ্ড-বিখণ্ড হইয়া ধরাশাস্ত্রী হইতে লাগিল । বৃথাই জীবানন্দ, বৃথাই মহেন্দ্র যত্ন করিতে লাগিলেন । ন্যায় সন্তানসেনা টিলা হইতে ফিরিতে লাগিল । কে কোথায় পলায় ঠিকানা নাই । তখন একেবারে সকলের বিনাশসাধনের জন্য “হুরূরে !" "হুরূরে!” শব্দ করিতে করিতে গোরার পল্টন টিলা হইতে নামিল। সঙ্গীন উচু করিয়া অতি দ্রুতবেগে পৰ্ব্বতবিমুক্ত বিশালতটিনী প্রপাতবৎ দুর্দম অসংখ্য অজেয় বৃটিশ সেনা, পলায়নপর সস্তানসেনার