পাতা:বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস গ্রন্থাবলী (তৃতীয় ভাগ).djvu/৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

- '; নাই—এখন কোথায় ষাইবে চল । ঐ সস্তানসেনার জয়ের উৎসবের গোল শুন যাইতেছে।” শাস্তি বলিল, “আর ওখানে না । মা'র কার্য্যোদ্বার হইয়াছে। এ দেশ সপ্তানের হইয়াছে । আমরা রাজ্যের ভাগ চাহি না, এখন আর কি করিতে যাইব ?” জী। ষা কাড়িয়া লইয়াছি, তা বাহুবলে রাখিতে হইবে । শ। । রাখিবার জষ্ঠ মহেন্দ্র আছেন, সত্যানন্দ স্বয়ং আছেন । তুমি প্রায়শ্চিত্ত করিয়৷ সন্তানধৰ্ম্মের জন্য দেহত্যাগ করিয়াছিলে । এ পুনঃপ্রাপ্ত দেহে সন্তানের আর অধিকার নাই । আমরা সস্তানের পক্ষে মরিয়াছি। এখন আমাদের দেখিলে সস্তানের বলিবে, জীবানন্দ যুদ্ধের সময়ে প্রায়শ্চিন্তভয়ে লুকাইয়াছিল, জয় হইয়াছে দেখিয়া রাজ্যের ভাগ লইতে আসিয়াছে । জী। সে কি শাস্তি ? লোকের অপবাদভয়ে আপনার কাজ ছাড়িব ? অামার কাজ মাতৃসেবা, ষে যা বলুক না কেন, আমি মাতৃসেবাই করিব । শ। । তাহাতে তোমার আর অধিকার নাই— কেন না, তোমার দেহ মাতৃসেবার জন্য পরিত্যাগ করিয়াছ । - যদি আবার মা’র সেবা করিতে পাইলে, তবে তোমার প্রায়চিত্ত কি হইল ? মাতৃসেবায় বঞ্চিত হওয়াই এ প্রায়শ্চিত্তের প্রধান অংশ । নহিলে শুধু তুচ্ছ প্রাণপরিত্যাগ কি বড় একটা ভারি কাজ ? জী। শাস্তি ! তুমিই সার বুঝিতে পার। আমি এ প্রায়শ্চিত্ত অসম্পূর্ণ রাখিব না, আমার মুখ সস্তানধৰ্ম্মে—সে সুখে আমাকে বঞ্চিত করিব । কিন্তু ষাইব কোথায় ? মাতৃসেবা ত্যাগ করিয়া গৃহে গিয়া ত সুখভোগ করা হইবে না । শ। তা কি আমি বলিতেছি ? আমরা আর গৃহী নহি ; এমনই দু’জনে সন্ন্যাসীই থাকিব—চিরব্রহ্মচৰ্য্য পালন করিব। চল, এখন গিয়া আমরা দেশে দেশে তীর্থদর্শন করিয়া বেড়াই । জী। তার পর ? শী। তার পর হিমালয়ের উপর কুটীর প্রস্তুত করিয়া দুই জনে দেবতার আরাধনা করিব - ষাতে মা'র মঙ্গল হয়, সেই বর মাগিব । তখন দুই জনে উঠিয়া হাত ধরাধরি করিয়া জ্যোৎস্নাময়ী নিশীথে অপ্তহিত লইল । হায় ! আবার আসিবে কি মা ! জীবাগণের ন্যায় পুত্র, শাস্তির স্তায় কষ্ঠা আবার গর্ভে ধরিবে কি ? ৬9, অষ্টম পরিচ্ছেদ { সত্যানন্দ ঠাকুর রণক্ষেত্র হইতে কাহাকেও কিছু ন৷ বলিয়া আনন্দমঠে চলিয়া আসিলেন । সেখানে গভীর রাত্রে বিষ্ণুমণ্ডপে বসিয়৷ ধ্যানে প্রবৃত্ত। এমন সময়ে সেই চিকিৎসক, সেখানে আসিয়া দেখা দিলেন । দেখিয়া সত্যানন্দ উঠিয়া প্রণাম করিলেন । চিকিৎসক কহিলেন, “সত্যানন্দ, আজ মাধী পূর্ণিমা" - সত্য । চলুন-আমি প্রস্তুত আছি । কিন্তু হে মহাত্মন! অামার এক সন্দেহ ভঞ্জন করুন। আমি যে মুহূৰ্ত্তে যুদ্ধজয় করিয়া সনাতনধৰ্ম্ম নিষ্কণ্টক করিলাম —সেই সময়েই আমার প্রতি এ প্রত্যাখ্যানের আদেশ কেন হুইল ? যিনি আসিয়াছিলেন, তিনি বললেন, “তোমার কাৰ্য্য সিদ্ধ হইয়াছে, মুসলমান-রাজ্য ধ্বংস হইয়াছে । আর তোমার এখন কোন কাৰ্য্য নাই । অনর্থক প্রাণিহত্যার প্রয়োজন নাই । সত্য । মুসলমানরাজ্য ধ্বংস হইয়াছে, কিন্তু হিন্দুরাজ্য স্থাপিত হয় নাই—এখন কলিকাতায় ইংরেজ প্রবল । তিনি । হিন্দুরাজ্য এখনও স্থাপিত হইবে ন— তুমি থাকিলে এখন অনর্থক নরহত্য হইবে ; অতএব চল । শুনিয়া সত্যানন্দ তীব্র মৰ্ম্মপীড়ায় কাতর হইলেন। বলিলেন, “হে প্ৰভু ! যদি হিন্দুরাজ্য স্থাপিত হইবে না, তবে কে রাজা হইবে ? আবার কি মুসলমান রাজা হইবে ?” তিনি বলিলেন, “ন। এখন ইংরেজ রাজা হইবে।” সত্যানন্দের দুই চক্ষে জলধারা বহিতে লাগিল । তিনি উপরিস্থিত, মাতৃরূপ জন্মভূমি-প্রতিমার দিকে ফিরিয়া ষোডুহাতে বাস্পনিরুদ্ধ স্বরে বলিতে লাগিলেন, *হায় মা ! তোমায় উদ্ধার করিতে পারিলাম না— আবার তুমি স্নেচ্ছের হাতে পড়িবে । সস্তানের অপরাধ লইও না । হায় মা ! কেন আজ রণক্ষেত্রে আমার মৃত্যু হইল না ?” চিকিৎসক বলিলেন, “সত্যানন্দ, কাতর হইও না । তুমি বুদ্ধির ভ্রমক্রমে দক্ষাবৃত্তির দ্বারা ধন সংগ্ৰহ করিয় রণজয় করিয়াছ । পাপের কখন পবিত্র ফল হয় না । অতএব তোমরা দেশ উদ্ধার করিতে পরিবে না। আর যাহা হইবে, তাহা ভালই হইবে । ইংরেজ রাজা ন হইলে সনাতনধৰ্ম্মের পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা নাই। মহাপুরুষেরা যেরূপ বুঝিয়াছেন,