পাতা:বিশ্বকোষ চতুর্দশ খণ্ড.djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মনসা মিদ্রাভঙ্গের পর জরৎকারু মনসার প্রতি কুপিত হইয়া কহিলেন, ভদ্ৰে ! তুমি কেন আমার নিদ্রাভঙ্গ করিলে। তুমি জান,—যে স্ত্রী স্বামীর অপ্রিয়কারিণী হয়, তাহার কুন্তীপাক নরক এবং ইহ ও পরলোকে দুৰ্গতির সীমা থাকে না । তখন মনসা স্বামীকে ক্রুদ্ধ দেখিয়া অত্যন্ত ভীত চিত্তে তাহার চরণগ্রাস্তে পড়িয়া কহিলেন, ভগবন্‌! আমি জানি,— বে ব্যক্তি শৃঙ্গার, আহার ও নিদ্রাভঙ্গ করে, তাহার দুৰ্গতির শেষ থাকে না, তথাচ আপনার সন্ধ্যালোপ হয়, এই ভয়ে নিদ্রাভঙ্গ করিয়াছি ; কারণ যদি কোন ব্রাহ্মণ সায়ংকাল অতীত হইলে সন্ধার উপাসনা না করে, তাহা হইলে তাহার ব্ৰহ্মহত্যার পাতক হয়। আমি ধৰ্ম্মলোপভয়ে এই নিদ্রাদ্যঙ্গ করিয়৷ যদি অপরাধিনী হইয়। থাকি, তাহা হইলে আপনি তাহার উপযুক্ত শাস্তি দিতে পারেন। জরৎকারু মনসার এই কথা শুনিয়। স্বৰ্য্যদেবকে অভিশাপ দিতে উদ্যত হন। ভগবান স্বৰ্য্য তাহ জানিতে পারিয়া সন্ধ্যায় সহিত তৎসমীপে উপস্থিত হন এবং তাহাকে সম্বোধনপূৰ্ব্বক বলেন, আপনার নিদ্রাভঙ্গ ন হইলে আমি অস্তমিত ছইতাম না, আমার অস্তের সময় দেখিয়া মনসা আপনার নিদ্রা ভঙ্গ করিয়াছে। অতএব আমাকে আপনার শাপ দেওয়া উচিত নহে, হে ব্ৰহ্মন ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। সূর্য্যের এই কথায় জরৎকারু স্বর্য্যের প্রতি সন্তুষ্ট হইয়া তাহাকে আর শাপ দিলেন না । তখন সূৰ্য্যদেব হৃষ্টমনে স্বস্থানে গমন করিলেন। জরৎকারু পুৰ্ব্ব-প্রতিজ্ঞানুসারে মনসাকে পরিত্যাগ • করেন। তখন মনসা স্বামী কর্তৃক পরিত্যক্ত হইয়া ইষ্ট গুরু মহাদেব ও জন্মদাত কগুপকে স্মরণ করিতে লাগিলেন। মহাদেব ও কণ্ডপ তথায় সমাগত হইলে জরৎকারু তাহদিগকে প্রণাম করিয়া কহিলেন, আপনারী কিজান্ত এখানে আগমন করিয়াছেন, তাহা আমাকে বলুন, আমি তদনুসারে কাৰ্য্য করিব । ব্ৰহ্ম। এই কথা শুনিয়া তাহাকে কহিলেন, যদি ধৰ্ম্মপত্নী মনসা তোমার ত্যজ্য হয়, তাছা হইলে স্বধৰ্ম্মপালনের জন্ত ইহাতে পুত্রোৎপত্তি করিয়া ত্যাগ করাই বিধেয় । কারণ যদি কেহ ধৰ্ম্মপত্নীতে পুত্রোৎপত্তি না করিয়া জাহাকে ত্যাগ করে, তবে তাহার তপস্তার ফল হয় না, বরং তপোড়ঙ্গ झई प्रां शृt८क । জরৎকারু ব্ৰঙ্গার এই কথা শুনিয়া মন্ত্রপাঠ পূৰ্ব্বক মনসার নাভিস্পর্শ করিয়া কহিলেন, মনসে ! আমার এই করম্পর্শে ভোমার গর্ভ হইল, এই গর্ভে ধাৰ্ম্মিক প্রবর এক সস্তান জন্ম [ ১১৬ ] মনসা গ্রহণ করিবে। এই পুত্র বৈষ্ণবাগ্রণী, তেজস্বী, তপস্বী ও যশস্বী প্রভৃতি নানা সদগুণশালী হইবে। পরে জরৎকারু মনসাকে নানাপ্রকার উপদেশ বাক্যে প্রবোধ দিয়া তপস্তার্থ গমন করিলেন। পরে মনসা মহাদেবের আলিয়ে গমন করিলেন যথা কালে তথায় তাহার এক পুত্র জন্মিল । 'মহাদেব স্বয়ং এই পুত্রকে বেদবেদান্ত অধ্যয়ন করাইলেন। এই পুত্র অতিশয় ধৰ্ম্মপরায়ণ ছিল বলিয়া ইহার নাম আস্তিক হয় । ‘অস্তি’ অর্থাৎ ঈশ্বরে বিশ্বাস আছে বলিয়া আস্তিক নাম হইয়ছিল । তদনন্তর মনসা গুরু মহাদেবকে প্রণাম করিয়া পিতা কগুপের আশ্রয়ে আগমন করেন । (ব্রহ্মবৈবৰ্ত্তপুরাণ প্রকৃতিখণ্ড ৪৬ অধ্যায় ) মহাভারতে "আস্তিক মুনির মাতা জরৎকারুর পত্নীর’ উল্লেখ দেখিতে পাওয়া যায়, তিনি মনসাদেবী কি না, তাহ। স্থিররূপে বলা যায় না। কারণ মনসা বলিয় তাহার নামের কোন উল্লেখ নাই। মনসার দ্বাদশ নামের মধ্যে জরৎকারু একটা নাম, মহাভারতে জরৎকারু নামেরই উল্লেখ আছে। মহাভারতোক্ত উপাখ্যান এইরূপ — বাসুকির জরৎকার নামে এক ভগিনী ছিল । জরৎকারু বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশ করিলে নাগরাজ বাসুকি অলঙ্কত। ভগিনীকে লইয়। অরণ্য মধ্যে জরৎকারু মুনির নিকট গমন করিলেন এবং স্টাহাকে কহিলেন, হে দ্বিজসত্তম । তপস্বিনী এই কলু আমার ভগিনী ও আপনার স্বনামী, ইহাকে ভাৰ্য্যার্থে পরিগ্রহ করুন, যথাশক্তি আমি ইহার ভরণ পোষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করিব । আমি আপনার নিমিত্তই এতদিন এই কন্স রাথিয়াছি। ঋষি কহিলেন, আমার এই নিয়ম থাকিল যে, আমি ইহার ভরণপোষণ করিব না এবং এই কন্তু কখন আমার অপ্রিয়কৰ্ম্ম করিবে না, করিলে আমি ইহাকে পরিত্যাগ করিব । এই প্রতিজ্ঞায় জরৎকারু যথাবিধি জরৎকারুর পাণিগ্রহণ করিলেন । কিছুদিন পরে বামুকিভগিনী জরৎকারু ঋতুস্নাত হইয়। মহামুনি ভৰ্ত্তার নিকট যথাবিধানে গমন করাতে হুতাশনসদৃশ দীপ্তিযুক্ত এক গর্ভ ধারণ করিলেন। শুক্লপক্ষীয় শশধরের দ্যায় ঐ গর্ভ দিন দিন বদ্ধিত হইতে লাগিল । একদিন মহাযশা জরৎকার নাগভগিনীর ক্রোড়ে মস্তক স্থাপন করিয়া নিদ্রিত হন। এদিকে ভগবান্‌ স্বৰ্য্যদেব অস্তাচলচুড়াবলম্বী হইলেন, তথাপি তাহার নিদ্রাভঙ্গ হইল না। তখন মনস্বিনী বামুকিভগিনী দিবাবসান হওয়াতে ধৰ্ম্মলোপভয়ে উীত হইয়। চিস্তা করিতে লাগিলেন ষে, স্বামীর নিজ।